মেঘকন্যা☁️ Part_15

মেঘকন্যা☁️
Part_15
#Writer_NOVA

চোখ খুলতেই নিজেকে ঘন কালো জঙ্গলে আবিষ্কার করলাম। মাঝারি সাইজের একটা গাছের সাথে শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা আমি।চারিদিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।অসংখ্য কালো কুচকুচে বিষাক্ত সাপ কিলবিল করছে। আমি যেই গাছের সাথে বাঁধা, তার ৪/৫ হাত দূর পর্যন্ত গোল দাগ টানা।সেই দাগের বাইরে সাপগুলো।আশ্চর্যের বিষয় হলো,কোন সাপ ঐ গোল দাগ ভেদ করে আমার কাছে আসছে না।তারা তাদের গন্ডির মধ্য আছে।শরীর নিস্তার হয়ে আসছে।কাঁপা কাঁপা গলায় থেমে থেমে চিৎকার করে উঠলাম।

আমিঃ কেউ কি আছেন?আমাকে এভাবে আটকে রেখেছেন কেন?আমি বাসায় যাবো।আমার আম্মির কাছে যাবো।আমাকে যেতে দিন।

আমার কথাগুলো বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেল।কিন্তু কারো কানে পৌছালো বলে মনে হলো না।আমার চিৎকার শুনে সাপগুলো খুব তীক্ষ্ণ নজরে আমার দিকে তাকালো। কিরকম অদ্ভুত দেখতে সাপগুলো।চোখ দুটো টকটকে লাল, বিষ দাঁত দুটো একটু বেশি বড়।যার কারণে মুখের বাইরে চলে এসেছে।মাঝে মাঝে সারা শরীর আলোতে ঝলকানি দিচ্ছে। আমার ভীষণ ভয় করছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঢোক গিলে গলা ভিজাতে চাইলাম।কিন্তু কাজ হলো না।

আমিঃ পানি,পানি।একটু পানি দিতে পারবেন।আমাকে একটু পানি দিন না।আমার সারা শরীর দূর্বল হয়ে পরছে।এক ফোঁটা পানি হলেও চলবে।আমি আর পারছি না।কেন কষ্ট দিচ্ছেন আমাকে?

এবারো কথা বাতাসে মিইয়ে গেলো।কলেজ থেকে ফেরার পথে পেছন থেকে কেউ আমার মুখের সামনে স্প্রে জাতীয় কিছু একটা নাকের সামনে মারলো।আমি ঢুলে নিচে পরে গেলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে নিজেকে ঘন জঙ্গলে পেলাম।আশিশ আমাকে বারবার মানা করেছিলো আজ কলেজে যেতে না।আমি ওর কথা তোয়াক্কা না করে একরকম জিদ করে গিয়েছিলাম কলেজে।জিদের ফলটা এখন বের হচ্ছে।

বেশ কিছু সময় পর আমি শুকনো পাতার মরমর আওয়াজ পেলাম।চোখ পাতা দুটো ছোট হয়ে আসছে।ধীরে ধীরে বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। তবুও জোর করে চোখ দুটো মেলে রাখলাম। যেদিক থেকে শব্দ আসছে সেদিক তাকালাম।

আমি একজন কালো অদ্ভুত পোশাক পরিহিত ব্যাক্তিকে আমার দিকে আসতে দেখলাম।সে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মুখে তার অদ্ভুত দেখতে মাস্ক।
মাস্কের পুরোটা সাপের ডিজাইন। চোখ দুটো গাঢ় হলুদ। পরনে রাজপুত্রের পোশাক। পেছনে বিশাল পর্দা ঝুলছে। কোমড়ে তলোয়ার কোষবদ্ধ। আমার ইচ্ছে করছে নিজেকে চিমটি মারতে।দূর্বল শরীরে উল্টো পাল্টা দেখছি না তো।কিন্তু হাত দুটো তো গাছের পেছনে বাঁধা। এখন পৃথিবীতে কোন রাজা শাসন করে না।তহলে রাজপুত্র আসবে কোথা থেকে?

ইশালঃ কেমন আছো মেঘকন্যা?আহারে, আমার হবু বউটার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কি আর করার বলো?তোমাকে ভালো করে আনতে চাইলাম তুমি তো মানা করে দিলে।তাই বাঁকা পথে নিয়ে এলাম।আমার কথা না শোনার যদি এটা তোমার শাস্তি। সমস্যা নেই, এখন একটু কষ্ট করো।বিয়ের পর আদর করে পুষিয়ে দিবো নে।ইস,মুখটা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমাদের রাজ্য নিয়ে যাবো।তবে তার আগে তোমার বর্তমানের স্বামীকে তো মারতে হবে।ওকে না মারলে তোমাকে তো আমি হাসিল করতে পারবো না।

আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।তখনি মুখের মধ্যে লোকটা পানির ঝাপটা মারলো।চমকে তার দিকে তাকালাম।তিনি বাজ পাখির নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম।খুব কষ্ট করে বললাম।

আমিঃ আমাকে একটু পানি দিবেন?আমার বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে। আমার গলা শুকিয়ে গেছে।

🌨️🌨️🌨️

আমার কথা শুনে সে হো হো করে হেসে উঠলো। মনে হচ্ছে আমি খুব মজার একটা জোকস বলেছি।জঙ্গল কাঁপানো হাসি থামিয়ে আমার সামনে এসে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।

ইশালঃ খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্ট। তোমাকে তো কষ্ট দিতেই এখানে এনেছি আমার রাণী।তোমার কষ্ট টের পেয়ে তোমার নাগর ছুটে আসবে।আর তাকে আমি মেরে এই জঙ্গলে পুঁতে দিবো।তোমার শ্বশুর, শাশুড়ী কান্নার জন্য মেঘপুত্রের লাশটাও পাবে না।

আমিঃ আপনি আমার স্বামীর কোন ক্ষতি করবেন না।তাহলে আমি আপনাকে ছারবো না।

ইশালঃ তুমি তো বিয়েই মানো না।এখন আবার স্বামীর জন্য ভালোবাসা উথলে পরছে কিভাবে?বিষয়টা অনেক আকর্ষণীয়।আমার বউ আমার সামনে আরেকজনের নাম নেয়। তা কি আমি মেনে নিবো বলো।চুপচাপ আমায় বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাও।আমি কোন ঝামেলা করবো না।

আমিঃ আমি বিবাহিত। আমি বিয়েটা মানি কিংবা না মানি।আমার বিয়ে হয়েছে। যার সাথে হয়েছে সে আমার স্বামী। আমি তাকে তালাকনামা দেইনি।কিংবা সেও আমায় দেয়নি।আল্লাহর হুকুমে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আপনি কি জানেন?প্রত্যেক নর-নারীকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইশালঃ গলার তেজটা একটু বেশি বেরে গেল মনে হলো।এতক্ষণ তো ক্ষীণ শোনা যাচ্ছিলো।একদম উঁচু গলায় কথা বলবে না।তাহলে কিন্তু ভুলে যাবো তুমি কে?

মুখ ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগে।এবার এগিয়ে এসে আমার গলা চেপে ধরলো। আমার চোখ মুখ উল্টে আসছে।সবকিছু অন্ধকার দেখছি।কিছু সময় পর সে আমাকে ছেড়ে দিলো।

ইশালঃ এটা শুধু একটু ঝাপসা দেখিয়ে দিলাম।ভালো থেকো।আমার আবার তোমার মেঘপুত্রের আদর,যত্নের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। একবার তো মরতে মরতে বেঁচে গেছে। এবার বাঁচতে পারবে না। আমি বাঁচতে দিবো না। একদম পালানোর চেষ্টা করো না।যদিও তুমি তোমার শক্তি কাজে লাগাতে পারো না।তারপরেও সাবধানের মার নেই। এই যে সাপগুলোকে দেখছো।তুমি এই গোল দাগের বাইরে গেলেই তোমাকে দংশন করবে।কিন্তু এই গোল দাগের ভেতরে কখনো প্রবেশ করবে না।আমি ফিরে এসে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো।এখন একটু আরাম করো।আগামীকাল তো আবার আমাদের বিয়ে।

আমিঃ মরে যাবো তাও তোর মতো কাপুরুষকে বিয়ে করবো না।আমার স্বামী আছে।বিয়ে জীবনে একবারি হয়।হাজার বার নয়।

ইশালঃ আচ্ছা, তুমি কি জানো তোমার স্বামী কে?ওহ্ তুমি জানবে কি করে? তুমি তো তখন নিজের মধ্যে ছিলে না।আমি বলছি তোমার স্বামী কে?মেঘরাজ্যের একমাত্র মেঘপুত্র আবরার আওসাফ আয়িশ। আয়িশকে চিনেছো?তোমার প্রাণ প্রিয় বন্ধু আয়িশ রহমান। যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারো।সেই তোমাকে ধোকা দিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।

আমিঃ আমার যদি আয়িশের সাথে বিয়ে হয় তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আমি অনেক খুশি।আল্লাহ আমার মনের মানুষের সাথে আমাকে মিলিয়ে দিয়েছে। তাতে আপনার এতো টেনশন করতে হবে না।আমি আয়িশকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিলাম।তারপরেও তোর মতো কুলাঙ্গার কে বিয়ে জীবনেও না।আমার স্বামী যদি সত্যি আয়িশ হয়। তাহলে এখান থেকে আমায় ঠিক নিয়ে যাবে।

ইশালঃ মুখে কথার খই ফুটছে মনে হচ্ছে। এখন এত শক্তি পাচ্ছো কোথা থেকে? চুপ একদম চুপ।

আমিঃ আমি কথা বলবোই। আমাকে থামাতে পারবেন না।

ইশালঃ খুব বেশি কথা বলছো।কিছু বলছি না বলে চটাস চটাস কথা বের হচ্ছে। সারা পৃথিবী এক করলেও তোমাকে আয়িশ খুঁজে পাবে না। কারণ তুমি এখন কোথায় আছো তা একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।

আমিঃ কে বলেছে কেউ জানে না?আমার আল্লাহ সব দেখছে।সে তোকে ছারবে না। আল্লাহ ঠিক আমাকে সাহায্য করতে আমার আয়িশকে পাঠাবে।ও আমাকে খুঁজে বের করে তোকে শেষ করবে।

ইশালঃ এতো বিশ্বাস আয়িশের ওপর।বিশ্বাস করা ভালো তবে অতিরিক্ত নয়।তোমার স্বপ্ন আয়িশ তোমাকে বাঁচাবে। এবার মনে হয় সেটা স্বপ্নই থাকবে।বাস্তবে রূপান্তর হবে না।

হঠাৎ করে আমার কথা বলার জোর কি করে আসলো কে জানে? নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। আমি দূর্বল থাকলেও এখন কথা বলতে পারছি।অনেকটা রেগে বললাম।

আমিঃ আমি পৃথিবীর যেই প্রান্তে থাকি আয়িশ আমাকে ঠিক খুঁজে নিবে।তোর বিয়ের স্বপ্ন এবার চুরমার হবে।কবরে গিয়ে বাকিটা বুঝিস।আয়িশ যদি আমার স্বামী হয় তাহলে তোকে আমাকে আটকে রাখার শাস্তি ইনশাল্লাহ দিবে।কাপুরুষের মতো মুখে মাস্ক পরে সামনে কেন এসেছেন। লজ্জা করে না। যে নিজের চেহারা আমার থেকে লুকিয়ে রাখে সে নাকি আমার আয়িশের সাথে লড়াই করবে।হাউ ফানি।

আমার কথা শুনে সে তেড়ে এসে আমাকে এত জোরে একটা থাপ্পড় মারলো যে আমি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।ঠোঁট কেটে গেছে। মাথাটা ভন ভন করছে।কানে ঝিম ধরে আছে। ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।তারপর_______

#চলবে

আমি জানি কিছু বুঝেননি।সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছে। যদি এই পর্বে সবার নেক্সট, নাইস বাদ দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য পাই। তাহলে আজকে আরেকটা এক্সট্রা পার্ট দিবো। তাহলেই সব কিছু বুঝতে পারবেন।কে কে এক্সট্রা পার্ট চাও,বাচ্চারা হাত তুলোতো দেখি।শুধু হাত তুললে হবে না।গল্পের আলোকে দু চার লাইন বলতে হবে।🙃🙃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here