মেঘকন্যা Part_16_Extra

মেঘকন্যা
Part_16_Extra
#Writer_NOVA

তারপর চোখ দুটো ফট করে খুলে ফেললাম। যতটা ধড়ফড়িয়ে উঠতে চাইলাম শরীরে বিশাল ভারী ওজনের কারণে উঠতে পারলাম না।নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম।এতক্ষণ যা দেখছিলাম সব স্বপ্ন ছিলো।এরকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখার মানে কি?সারা শরীর বেশ শীত করছে। তারপরও আমি দরদর করে ঘামছি।আসলেই কি আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি সত্যি ছিলো?গায়ে চিমটি কেটে দেখি তো।কিন্তু চিমটি দেওয়ার জন্য তো হাত উঠাতে পারছি না।দূর থেকে ফজরের আজান ভেসে আসছে। আজানের শব্দ পেয়ে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম।ছোট বেলা থেকে লোকমুখে শুনেছি,আজানের আগের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।তাহলে আমি যা দেখেছি তাও সত্যি হবে।

আমিঃ ঐ ছেলেটা কি জানি বলেছিল?আয়িশ আমার স্বামী। কিন্তু কিভাবে?স্বপ্নের কথা বিশ্বাস করে কি আমি আয়িশকে স্বামী হিসেবে মানবো।এটা তো নিত্যান্ত বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়।কিন্তু আমার মাথা খাটাতে হবে।

নিজের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলাম।একে একে সবকিছু আমার কাছে খোলসা হতে লাগলো।একের পর এক জট খুলতে লাগলো।অপরদিকে কেউ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে ঘুমোচ্ছে।তার হাতটা আমার কোমড় জড়িয়ে রাখা।প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। অনেক দিন পর সেই চিরচেনা ঘ্রাণ পাচ্ছি রুমে। সাথে হিম শীতল বাতাস।

আমিঃ আচ্ছা, আমাকে যে জরিয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। সে কি আয়িশ?আমি তো একমাত্র আয়িশের মনের কথা শুনতে পাই না।তাছাড়া বিয়ের দিন আয়িশকে আমি সবার আগে রাস্তায় পেয়েছিলাম।আয়িশকে আমার সবসময় অন্যরকম মনে হতো।মানে আমাদের পৃথিবীর নয়।কিরকম অদ্ভুত অদ্ভুত লাগতো।এখন আমার মাথায় সব খেলছে।ও তো সবসময় আমার মনের কথা বুঝে নিতো।কখনো কিছু বলতে হতো না?জিজ্ঞেস করলে বলতো, ও নাকি এমনি বুঝতে পেরেছে। আমার বিপদে সবার আগে আমি ওকে কাছে পেতাম।তাহলে কি সত্যি সেদিন আয়িশের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। তাহলে এতদিন আমার সাথে যে ছিল, যাকে আমি জ্বীন বলে জানতাম। সে আর কেউ না আমার আয়িশ।কিন্তু কিভাবে?আয়িশ অদৃশ্য হতে পারে? আমার আগে অনেকবার মনে হয়েছে আয়িশের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন শক্তি আছে। ও কিরকম অদ্ভুত টাইপের।কিন্তু এখন আমি কিভাবে বুঝবো ও আমার স্বামী। এখন যে আমার সাথে আছে,সে কি আয়িশ?ছেলেটাকে দেখবো কিভাবে? নিশ্চয়ই অদৃশ্য হয়ে আছে।

খুব কষ্ট করে হাত ছুটিয়ে নিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম।তাকে ঠেলে ধাক্কিয়ে আমার থেকে সরালাম।
সে আমাকে ছেড়ে অন্য দিকে সরে গেল।তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু ঘুমের ঘোরে বন্ধ করে রেখেছি।মোবাইলের আলোতে আমি দেখতে পেলাম একটা ছেলে উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। বুকটা ধক করে উঠলো।পেছনের সাইডটা পুরো আয়িশের মতো দেখতে।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আয়িশকে যেই সরাতে নিবো, আব্বি নামাজের জন্য ডাক দিলো।আমি দরজার দিকে পুরো ধ্যান দিলাম,আব্বির কথা শোনার জন্য।

আব্বিঃ মেঘা,মেঘা মা-মণি। ফজরের আজান হয়ে গেছে। নামাজ পরতে উঠে পরো।নামাজ কাযা করো না।সবার আগে নামাজ তারপর ঘুম। নিশ্চয়ই ঘুম থেকে সালাত উত্তম।

আমিঃ উঠছি আব্বি।তুমি মসজিদে চলে যাও।বাইরে থেকে গেইটে তালা মেরে যেও।

আব্বিঃ তোমার আম্মিকে তুলে দিও।আমি ডাক দিয়ে এসেছি। তবুও যদি না উঠে। তাই তোমাকে বললাম।

আমিঃ আচ্ছা আব্বি।

আব্বি নামাজ পরতে মসজিদে চলে গেল।আমি ফ্লাশ লাইট বিছানার দিকে মেরে আৎকে উঠলাম।বিছানায় কেউ নেই। আমি স্পষ্ট দেখেছি এখানে কেউ ছিলো।জলদী করে লাইট জ্বালিয়ে এদিক সেদিক খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও নেই।

আমিঃ আয়িশের রুমে চেক করে দেখিতো ও রুমে আছে কিনা।দরজাটা বন্ধ। গেল কিভাবে? আমিও না।মাথা পুরো গেছে।যার আসতে কোন দরজা লাগে না, বাইরে যেতে দরজা কেন লাগবে?

🌨️🌨️🌨️

যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছুটে গেলাম আয়িশের রুমে। ওর রুমের দরজা আবজানো থাকে।আম্মি লাগাতে মানা করেছে। যদি মাঝরাতে কিছু হয় তাই।
আমি দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে দেখলাম আয়িশ উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি কি তাহলে ভুল দেখলাম।গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে গিয়ে ওযু করতে ওয়াসরুমে ঢুকে পরলাম।

আয়িশ এক লাফে বিছানায় বসে বুকে ফুঁ দিলো।আর এক মিনিট রুমে থাকলে মেঘার কাছে ধরা পরে যেতো।তিনবার সূরা ইখলাস পরে বুকে ফুঁ দিলো।

আয়িশঃ আরেকটু হলে ধরা পরে যেতাম।আল্লাহ তোমার দরবারে লাখো কোটি কোটি শুকরিয়া। আজ হঠাৎ আমার বউয়ের কি হলো?ওর মনে কিছু একটা খিচুড়ি পাকাচ্ছে।এতো তাড়াতাড়ি কি ও জেনে যাবে আমার পরিচয়। তাহলে ওর জন্য বিপদ।

আয়িশ দুই হাঁটু মুড়ে দুই গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবতে লাগলো।কি করবে?

দিন গড়িয়ে রাত নামলো।সারাদিন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাইনি।আয়িশকে এক প্রকার এড়িয়ে চলি।
সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছি। আয়িশ, আব্বির সাথে দেশের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।আমি খাবার নেড়েচেড়ে সকালের স্বপ্নের কথা ভাবছি।
কিছুতেই স্বপ্নটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। আমার বারবার মনে হচ্ছে এটা আমার সাথে ঘটবে।কথা বলার ফাকে ফাকে কিছু সময় পর পর আয়িশ আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। আমি ওর থেকে এখন দূরত্ব বজিয়ে রাখি।কোন কথা বলি না।স্বপ্নের কারণে নয়।আমাকে একদিন টিকটিকি দিয়ে ভয় দেখিয়েছে।সেদিন ভয়ে ওকে জরিয়ে ধরেছিলাম।তখন মনে হয়েছে ওর ছোঁয়া আমার খুব চেনা।কোন রকম খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলাম।সারা রুমে পায়চারি করছি আর বিরবির করছি।

আমিঃ আয়িশ কোন সাধারণ ছেলে নয়।কারণ ও যে আঘাত পেয়েছিলো তা কোন সাধারণ মানুষের ৪ দিনে ভালো হওয়ার কথা নয়।কমপক্ষে ১ মাস লাগবে।কিন্তু আয়িশ পুরো সুস্থ। আসলেই আয়িশ কে?ওর বাবা-মায়ের কথা বললে রেগে যায় কেন?আমার ওর পরিচয় এবার বের করতেই হবে।ও কি সত্যি আমার স্বামী?যদি সত্যি আমার স্বামী হয় তাহলে আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছে কেন?আমি ওর পেছনের সব রহস্যের সমাধান খুঁজে বের করবোই করবো। আচ্ছা আম্মি,আব্বির সাথে ভাব নিয়ে দেখিতো তারা আয়িশের বিষয় কিছু জানে কিনা।

দরজা খুলে উকি মেরে আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম আয়িশ আছে কিনা।ওকে না দেখে আম্মির রুমের দিকে হাঁটতে লাগলাম।রুমের সামনে এসে আমি শুনতে পেলাম তারা কোন বিষয় কথা বলছে।আম্মির মুখে আয়িশের নাম শুনে আমি লুকিয়ে রইলাম দরজার আড়ালে।তারা কোন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে।আমি কান খাঁড়া করলাম।তারপর আমি যা শুনলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।তারা বলছিল___________

#চলবে

গতপর্ব-টাকে আপনারাও শুধু স্বপ্ন ভেবে ফেলে রেখেন না।পরবর্তী পর্বে এই স্বপ্নটাও কাজে লাগবে।
অনেকদিন ধরে অনেকে বলছিলেন একটা এক্সট্রা পার্ট দিতে।তাই আজ দিয়ে দিলাম।দয়া করে প্লিজ আর কখনো এক্সট্রা পার্ট চেয়েন না।আমার উপর জুলুম হয়ে যায়।দুইটা গল্প লিখে আরেকটা এক্সট্রা পার্ট লিখতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।সময় বের করা যায় না,হিমশিম খেতে হয়।আশা করি আপনারা বিষয়টা বুঝতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here