#মেঘপরীর গল্প
লেখক — মাহমুদ
পার্ট ১
।
।
আজকের সকালটা অন্য দিনের তুলনায় অনেক সুন্দর রাতে ঘুমটাও ভালো হয়েছে। হালকা হালকা ঠান্ডায় বিছানা থেকে উঠতেই মন চাইছে না। কিন্তু তবুও উঠতে হবে না হলে দেরী হয়ে যাবে আর আজ যদি দেরী হয় তাহলে শুভ অনেক রেগে যাবে। বলতে বলতেই শুভর কল। রিসিভ করলাম
-হ্যাপি বার্থডে বুড়ি
-এটা কি হলো?
-কি হলো?
-তুমি আজকের দিনেও আমায় বুড়ি বলে ডাকলে। একটু ভালোভাবে উইস করতে পারলে না (একটু অভিমান করে)
-আমার বুড়িটার বুঝি অভিমান হয়েছে?
-হুম
-অনেক অভিমান হয়েছে?
-হুম
-ঠিক আছে তাড়াতাড়ি উঠে একটু বেলকনিতে আসো
-কি? তুমি এতো সকালে কেন এসেছো?
-আজ আমার বুড়ির জন্মদিনে আমি চায় তার হাসি মাখা মুখটা সবার আগে আমিই দেখবো।
-পাগল একটা আমি এখনই যাচ্ছি।
তারপর তাড়াতাড়ি উঠে বেলকনিতে গিয়ে দারালাম। আর ও একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা ট্রাওজারের সাথে সবুজ হাফ হাতা গেন্জিতে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। সকালের হালকা মিষ্টি রোদে ওর নাকে আর কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো চিকচিক করছে। আলতো করে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়েi আছে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলে আমার ঘোর কাটে। শুভ কল করেছে আমি ভালো করে দেখে নিলাম ও নিচে আছে নাকি আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি। নাহ ও সত্যি সত্যি আছে। ইশারায় আমায় ফোন রিসিভ করতে বললো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই
-এই ভাবে তাকিয়ে থাকলে নজর লেগে যাবে
-লাগুক আমি নজর দিবো না তো কে দেবে শুনি?
-এরপর যদি নজর লেগে অসুস্থ হয়ে যায় তখন?
-আমি আছি না দিন রাত সেবা করে তোমায় সুস্থ করে তুলবো।
-হা হা হা। ওকে তুলো। এখন ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে অবশ্যই ব্রেক ফাস্ট করে তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে চলে আসো আমি ওয়েট করবো ওকে?
-ওকে
-রাখি তাহলে।
-হুম
-শনো?
-কি?
-লাভ ইউ
-লাভ ইউ টু
-বাই
-বাই
আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে। অনেক প্রেম হয়েছে এখন পরিচয়টা দি। আমি মেহজাবিন নাশরাহ। সবাই নাশু বলে ডাকে। আর শুভ হলো আমার স্বপ্নের রাজকুমার মানে বয়ফ্রেন্ড। আমি আর শুভ দুজনই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। আমি বাবা মার দুই মাত্র মেয়ে মানে আমার একটা ছোট বোন আছে নিশাত ক্লাস নাইন এ পড়ে। পাজির পা ঝাড়া। বাড়িতে আমি মা, আর নিশাত থাকি। মা স্কুল টিচার। বাবা গত দুই বছর আগে মারা গেছেন। বাবা মারা যাবার পর মাহাবুব আংকেল আমাদের দেখা শোনা করেন। যদিও মায়ের বেতন আর বাবার পেনশিয়ান এর টাকায় আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। তবুও আংকেল আমাদের জন্য অনেক করেন। বাবা আর মাহবুব আংকেল ছোট বেলার বুন্ধু। আংকেল তার পরিবার নিয়ে আমাদের পাশের ফ্লাটে থাকেন। আমাকে আর নিশাতকে খুব ভালোবাসেন। বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পরই শুভ আসে আমার জীবনে। বাবার মৃত্যুতে আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। তখনি শুভ এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমার মনে সাহস জুগিয়ে ছিলো। ও পাশে না থাকলে আমি তখন কিভাবে নিজেকে সামলাতাম জানি না। বাবার কথা খুব মনে পরছে। বাবা আমার জন্মদিনে নিজের হাতে আমায় পায়েস রান্না করে খাওয়াতো।
বাবা খুব ভালো পায়েস রান্না করতে পারতো। কিন্তু আজ আমার জন্মদিনে বাবা আমায় একবারোও বললো না মামনি হ্যাপি বার্থডে। বাবা তুমি কোথায় চলে গেলে আমাদের ছেড়ে। তোমার কি আমাদের কথা মনে পড়ে না। আমরা সবাই যে তোমায় খুব মিস করি। নিশাত এখনো মাঝে মাঝে রাতে তোমার কথা ভেবে কান্না করে। তুমি ফিরে এসো বাবা প্লিজ ফিরে এসো। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। হঠাৎ মনে হলো কেউ দরজা ধাকাচ্ছে। আমার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম।
-কে?
-নাশু তুই ঠিক আছিস তো,,,?
-হ্যা মা আমি ঠিক আছি। কেন?
-কখন থেকে ডাকছি কোন উত্তর দিচ্ছিস না আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-সরি মা আসলে শুনতে পায়নি।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি খাবার টেবিলে আয়।
-ওকে মা।
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম। মা আর নিশাত বসে আছে। আমি নিশাতের পাশের চেয়ারটা টেনে বসলাম। খাবারের আইটেম গুলো দেখে আমার জ্বীবেতে পানি চলে আসলো। আজ অনেক রকমের খাবার রান্না হয়েছে। কোনটা রেখে কোনটা খাবো বুঝতে পারছি না। সব গুলাই আমার পছন্দের খাবার। একটাও বাদ দিতে পারবো না তাই আমি সব গুলা আইটেম থেকেই অল্প অল্প করে তুলে নিলাম আমার প্লেটে। কিন্তু একটা জিনিস খুব মিস করছি। মা পায়েসটাই রান্না করেনি।
-মা তুমি পায়েস রান্না করোনি?
-আম্মু তো পায়েস রান্না করতে যাচ্চিলো কিন্তু সকালে অনু কাকিমা এসে বলে গেছে আজ পায়েস উনি রান্না করে আনবেন। আম্মু যেন রান্না না করে।(নিশাত)
-ওহ আচ্ছ।
অনু কাকিমা হলো মাহাবুব আংকেলের স্ত্রী। কাকিমা আমায় খুব ভালোবাসেন নিজের মেয়ের মতো। হয়তো নিজের কোনো মেয়ে নেই তাই আমায় এতো ভালোবাসেন।
-শুভ জন্মদিন নাশু।(কাকিমা)
-থ্যাংক ইউ কাকিমা।(আমি)
-এই নে তোর জন্য পায়েস এনেছি।
-ওয়াও, খুব সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছ।
আমি পায়েসটা মুখে দিলাম খেতেও তো দারুন হয়েছে। কিন্তু এটাতো কাকিমার হাতের রান্না বলে মনে হচ্ছে না। আমি এর আগেও কাকিমার রান্না করা পায়েস খেয়েছি। তাই কাকিমাকে জিজ্ঞাসা করলাম
-কাকিমা পায়েস টা কে রেধেছে?
-কেন খেতে ভালো হয় নি?(কাকিমা)
-না খেতে খুবুই ভালো হয়েছে কিন্তু এটা তোমার রান্না বলে মনে হচ্ছে না।(আমি)
-বলতো কে রান্না করতে পারে।(কাকিমা)
-ঝুমা?( কাকিমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে)
-না হয়নি।(কাকিমা)
-তাহলে কে? তোমাদের বাড়িতে তো রান্না করবে এমন আর কেউ নেই। বলো না কাকিমা কে রান্না করেছে?(আমি)
-আর বলিস না সকালে তোর মাকে এসে বলেছিলাম যে আজ আমি তোর জন্য পায়েস রাধবো কিন্তু বাড়ি ফিরে রান্না ঘরে ডুকতেই পা পিছলে পরে গেলাম। (কাকিমা)
-কি বলছেন ভাবি কোথাও লাগেনি তো আপনার?(মা)
-না তেমন কিছু হয়নি শুধু কমোড়ে একটু লেগেছে। ঔষধ লাগানোর পর এখন ঠিক আছি। শুধু বসতে একটু সমস্যা হচ্ছে। (কাকিমা)
-কাকিমা এই শরীর নিয়ে তুমি আবার আসতে গেলে কেনো। ঝুমা কে দিয়ে তো আমায় ডেকে পাঠাতে পারতে আমি যেতাম। (আমি)
-কিন্তু কাকিমা রান্নাটা কে করলো? (নিশাত)
-হুম কে কাকিমা।(আমি)
-কে আবার মেঘ করেছে।(কাকিমা)
-কিহ্( আমি অনেক অবাক হয়ে বললাম)
চলবে,,,,