#মেঘপরীর গল্প
লেখক — মাহমুদ
পার্ট ৮
।
।
সকালে ঘুম ভাঙলো তন্নির ডাকে। আমি তন্নিকে দেখে অবাক ও এতো সকালে আসবে বুঝতে পারিনি। কিন্তু পরে টাইম দেখে আরও অবাক হলাম কারণ আমি আজ অনেক লেট করে উঠেছি। এখন ১০:৩০ বাজে। উঠে ফ্রেশ হয়ে তন্নি কে নিয়ে হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। আমার পায়ে এখনো অনেক ব্যাথা তাই খাবার আমার রুমেই খেলাম। তন্নির সাথে অনেক গল্প করলাম। ও দুপুরে খেয়ে চলে গেলো। আর আমি বিকালের দিকে ডাক্তারের কাছে গেলাম। পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তেমন কিছু হয়নি ডাক্তার বললো ২-৩ দিন বেড রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে আর কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। সকাল থেকে শুভর সাথে কথা হয়নি। তাই বাড়ি ফিরে ওর সাথে কথা বললাম। এই ভাবে দুই তিন দিন কেটে যায়। এখন পাটা পুরোপুরি ঠিক আছে। তাই আজ থেকে আবার ভার্সিটিতে যাবো। অনেক দিন পরে শুভর সাথে দেখা হবে তাই ওর পছন্দের নীল রং এর একটা থ্রি পিচ পরেছি। ভার্সিটির মাঠের একপাশে একটা পুকুর আছে শুভরা সবাই ওখানে আছে আমি ওদের ওখানে গিয়ে বসলাম। আজ জয়া এই সময়ে এসেছে বলে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম
-কি রে জয়া তুই আজ এই সময়ে আসলি যে। আজতো প্রথমে ম্যাথ ক্লাস আর তুইতো আতিকুর স্যারেরর ম্যাথ ক্লাস কখনো করিস না ভয়তে। (আমি)
-এবার থেকে ও রোজ ম্যাথ ক্লাস করবে অন্য ক্লাস করুক বা না করুক। (অনিক বলার সাথে সাথে সবাই হাসলো। কিন্তু আমি কিচ্ছু বুজলাম না)
-উফ তোরা কি শুরু করেছিস বলতো। তোরা যা ভাবছিস তেমন কিছুই না ওকে।(জয়া)
-এখানে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।(আমি)
-আসলে কি বলো তো আমাদের জয়া প্রেম এ পড়েছে।(শুভ)
-বলো কি? জয়া এটা কি সত্যি। তুই প্রেমে পড়েছিস? আমাকে বলিসনি কেন? আর ছেলেটা কে? আমাদের ভার্সিটির কেউ?(আমি)
-দোস্ত শোন শুধু জয়া না আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর সব মেয়েরাই তার প্রেমে হাবুডুুবু খাচ্ছে। শুধু আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর নয় অন্য ডিপার্টমেন্ট এর মেয়েরাও।(তুবা)
-মানে? এতো গুলো মেয়ে একজনের প্রেমে পড়েছে? তা কে সেই ছেলে?(আমি)
-দোস্ত আমায় একটা হেল্প করতে পারবি( কথাটা জয়ার একটা ফ্রেন্ড এসে বললো। ও অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে। আমি ওর নাম জানি না। কিন্তু দেখলে চিনি।)
-হুম বল।(জয়া)
-আসলে আমি আজ তোদের সাথে ম্যাথ ক্লাস করতে চায়। প্লিজ না করিস না শুধু মাত্র একটা ক্লাস তোদের সাথে আমায় নিয়ে চল।(সেই মেয়েটি)
-কিন্তু,,,,(জয়া)
-কোন কিন্তু নয়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ(মেয়েটি)
-হুম বুঝেছি। ঠিক আছে নিয়ে যাবো।(জয়া)
-দোস্ত ব্যাপার কি? ও আমাদের সাথে ক্লাস করবে কেন?(আমি)
-ওকে তোকে বুঝাই বলি। আমাদের আতিকুর স্যার বদলি হয়ে একটা নতুন ম্যাথের স্যার এসেছে। নাম শাফিন এহসান। স্যার এর বয়স বেশি না আমাদের থেকে ৪-৫ বছরের বড় হবে। দেখতে সেই রকম সুন্দর, ফর্সা, তেমনি বডি, লম্বাও আছে খুব বেশি না আবার কমও না একদম পারফেক্ট, চোখ দুইটা খুব মায়াবী। তুই ওনার চোখের দিকে তাকালে ওনার চোখের গভীরে তলিয়ে যাবি, গোলাপি ঠোট দিয়ে যখন উনি মিষ্টি করে কথা বলে তখন কানে অন্য কিছু শুনতেই পারি না। ওনার কথা বলার স্টাইল, হাটার স্টাইল, ওনার পোষাক সব কিছুই অসাধারণ। ওনাকে দেখলে শুভকে তোর আর ভালোই লাগবে না।(তুবা)
-হা হা হা। শোন আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো নয় যে একটা সুন্দর ছেলে সামনে আসলে আমি শুভ কে ভুলে যাবো।(একটু রেগে বললাম)
-তুই রাগ করছিস কেন। আমরা তো জাস্ট ফান করলাম।(তুবা)
-হুম বাদ দে। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। চল সবাই ক্লাসে যায় আর তোদের ওই শাফিন এহসান স্যার কে দেখি উনি কত সুন্দর যে সব মেয়েরা ওনার জন্য পাগল।(আমি)
-শুভ? তোর জি এফ কে ধরে রাখিস না হলে পড়ে যাবে কিন্তু?(জয়া)
-পড়ে যাবে মানে? কোথায় পড়ে যাবে?(শুভ)
-কোথায় আবার শাফিন স্যার এর প্রেমে।( তুবা)
-একটু আগে নাশু কি বলেছে শুনিস নি? আমাদের ভালোবাসা এতোটা ঠিনকো না। আর আমার নাশুর উপর পুরো বিশ্বাস আছে।(শুভ আমার হাতটা ধরে বললো। আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিলাম ওই হাসলো।)
তারপর আমরা সবাই মিলে ক্লাসে গিয়ে দেখলাম অনেক মেয়েরা এসেছে। কিছু কিছু মেয়ে আছে যাদের আমি আগে কখনো ক্লাস করতে দেখিনি একদম নতুন। আমি নিয়মিত ক্লাস করি তাই মোটামুটি অনেক কেই চিনি যারা নিয়মিত ক্লাস করে। কিন্তু এদের কখনো দেখিনি। এর মধ্য অনেকেই আছে যারা ভার্সিটিতে এসে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু ক্লাস করে না। কিন্তু আজ সবাই ক্লাস করতে এসেছে তাও আবার অনেক বেশি মেকাপ করে। এতো বেশি পরিমাণ মেকাপ করেছে যে পুরাই পেত্নীদের মতো লাগছে। ছেলেরা ঠিকি বলে এরা হয়তো আটা ময়দায় মাখে। এদের দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে অথচ এরা এমন ভাব নিয়ে আছে যেন ওদের পরীর মতো লাগছে। হি হি হি। তবে এদের কিছু কিছু কথা শুনে বুঝতেই পারছি এরা সবাই পড়তে আসেনি জাস্ট নতুন স্যার মানে শাফিন এহসানের জন্য এসেছে। অন্য ডিপার্টমেন্ট এর কিছু মেয়েও এসেছে এবার আমার স্যারকে দেখার ইচ্ছাটা খুব বেড়ে গেলো। স্যার এর মধ্য কি এমন আছে যে যেই মেয়েটা ম্যাথ এর নাম শুনলেই ভয় পেতো আজ সে ম্যাথ ক্লাস এ এতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে। একটু পরেই ক্লাসে ইন করা সাদা শার্ট, গলায় টায়, হাতে ব্লাক রং এর ঘড়ি, চোখে চশমা, বুক পকেটে একটা কলম, হাতে একটা বই নিয়ে প্রবেশ করলো। ওরা যেমন বর্ণনা দিয়েছিলো দেখতে একদমই তেমন। এটাই আমাদের নিউ টিচার। যার জন্য ক্লাসের সবাই পাগল। সবাই স্যার এর দিকে তাকিকে আছে। আর আমি শুধু তাকিয়ে নেই পুরো হা করে তাকিয়ে আছি। আমার হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে স্যার আমার কাছে এসে বললো
-এনি প্রবলেম? (স্যার)
-নো স্যার।( আমি)
-তাহলে এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন।(স্যার)
-সরি স্যার। আর কখনো এমন হবে না। (বলে আবার হা করে তাকিয়ে আছি)
-হা টা তুমি এখনো বন্ধ করো নি।(স্যার)
-সরি স্যার।(আমি তাড়াতাড়ি মুখ বন্ধ করে ফলেলাম)
-ওকে। সিট ডাউন।(স্যার)
বলার সাথে সাথেই আমি বসে পরলাম। আমার মাথাটা বন বন করে ঘুরছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলে দেখলাম আমি একটা চেয়ারে বসে আছি আর শুভ আমার চোখে মুখে পানি ছিটাচ্ছে। আমার চোখ খুলা দেখে ও বললো
-এখন কেমন লাগছে?(শুভ)
-হুম। আগের থেকে অনেকটা ভালো।
-হঠাৎ করে তুৃৃমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেন। তোমার কি শরীর খারাপ ছিলো? আমাকে বলো নি কেন?
-নাহ আমি ঠিক আছি। হঠাৎ করে মাথাটা ঘুরে গেলো। বুঝতে পারি নি।(বলে সামনের দিকে তাকালাম। দেখি স্যার একটু দুরে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ এই লোকটার জন্য জীবনে প্রথমবার এর মতো জ্ঞান হারিয়েছি। কেমন ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে )
-কিরে স্যার কে দেখে মাথা ঘুরে পরে গেলি। তোকে বলেছিলাম না তুই স্যারকে দেখলে পুরো পাগল হয়ে যাবি।(তুবা)
-শুভ আমার শরীরটা কেমন করছে। আমি বাড়ি যেতে চায় তুমি আমায় একটু বাড়িতে দিয়ে আসবে প্লিজ।(তুবার কথার উত্তর না দিয়ে) তারপর শুভ আমাকে তার বাইক এ করে আমায় বাড়িতে পৌছে দিলো। আমি শুভকে বাই বলে ভেতরে চলে এলাম। আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু আমি ওকে এইভাবে এখানে দেখবো কল্পনাও করি নি।
চলবে,,,,,
।
লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ