মেঘবৃত্ত পর্ব_২১

#মেঘবৃত্ত
পর্ব_২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

মেঘাকে একহাত দিয়ে আগলে দিয়ে অস্থির কণ্ঠে বললো
— কি, কি হয়েছে মেঘ? তুই ঠিক আছিস? মেঘ?

মেঘা কথা বলতে পারলো না। নাক, মুখ খিচে পেটে হাত দিয়ে অস্ফুটসুরে গোঙাচ্ছে। পেটের মধ্যখানটায় চিনচিনে ব্যথায় মেঘার প্রাণটাই বুঝি বেরিয়ে আসছে। বৃত্ত আর অপেক্ষা করলো না। বরং, মেঘাকে পাজকোলা করে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মেঘা ততক্ষণে কিছুটা শান্ত হয়েছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। শ্বাসটা যেনো ফুরিয়ে আসছে তার। বৃত্ত টি টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে মেঘার হাতে দিলো। বললো,
— পানি খা।

মেঘা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেলো। মেঘার তৃষ্ণা মিটতেই বৃত্ত পানির গ্লাসটা আবার জায়গায় রেখে দিলো। মেঘাকে আলগোছে আবার বালিশে শুইয়ে দিলো সে। মেঘা পেটে হাত দিয়ে শুধু ছটফট করছে। বৃত্ত বুঝে গেলো, মেঘার পেটেই ব্যথা করছে। সে মেঘার চুলে হাত বুলিয়ে আলতো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— ব্যথা কমেছে?

মেঘা পেটে হাত চেপে অস্ফুট সুরে বললো,
— না.নাহ। খুব ব্যথা করছে। আমি কি মারা যাচ্ছি বৃত্ত?
বৃত্ত কথাটা শুনে দিলো এক রামধমক। চোখ রাঙিয়ে বললো,
— দিবো এক থাপ্পর! একটু ব্যাথা করলেই মানুষ মরে যায়? চুপচাপ শুয়ে থাক। আমি ঔষুধ আনছি।

বৃত্ত উঠে যেতে চাইলো। কিন্তু, বাঁধ সাধলো মেঘা। বৃত্তের হাতটা চেপে ধরলো শক্ত করে। বৃত্ত প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো মেঘার দিকে। মেঘা ক্লান্ত মুখে মানা করলো ঔষুধ আনতে। বৃত্ত বললো,
— ঔষুধ না খেলে ব্যথা আরো বাড়বে। কেনো পাগলামি করছিস? ছাড় আমাকে।
মেঘা খুব কষ্টে মুখ খুললো,
— কেনো বুঝছিস না? এ ধরনের ব্যথা প্রেগন্যান্সি টাইমে হয়েই থাকে। ঔষুধ খেলে বাচ্চাটার আরো ক্ষতি হবে।

বৃত্ত নাছোড়বান্দার মত বললো,
— এসব ফাউল কথা কে বলেছে তোকে? ব্যথা বাড়লে বাচ্চাটার আরো বেশি প্রবলেম হবে।

বৃত্ত কথাটা বলে মেঘার হাত নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। মেঘা ছাড়লো না। বরং, বৃত্তের হাত খামচে ধরে মাথা নেড়ে করুন সুরে বললো,
— এই বাচ্চাটার কিছু হলে আমি সত্যিই মরে যাবো রে! প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর।

মেঘার ওমন করুন স্বরের কথা বৃত্ত আর ফেলতে পারলো না। এ কদিনে সে এটা বুঝে গেছে, এই বাচ্চাটা বৃত্তের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও, মেঘার কাছে বাচ্চাটা তার প্রাণ! মেঘা নিজে মরে যাবে, তবুও বাচ্চাটার কিছু হতে দিবে না। বৃত্ত আর যায় হোক, মেঘার বেঁচে থাকার সম্বল কেড়ে নিতে পারবে না। বৃত্ত মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। মেঘার দিকে চেয়ে বললো,
— ঠিক আছে। কিছু করবো না আমি। এখন ঘুমা। অনেক রাত হয়ে গেছে।
মেঘা যেনো এবার একটু স্বস্তি পেলো। বৃত্তের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো সে। বৃত্ত গাম্ভীর্য বজায় রেখে মেঘার গায়ে কাথা টেনে দিলো। বড় বাতি নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো। নিজের মোবাইল চার্জে রেখে নিজেও মেঘার পাশে শুয়ে পড়লো।

রাত কটা তখন? দুটো কিংবা তিনটা। মেঘা জানে না। আর জানতে চায়ও না। পাশে তার প্রাণভোমরা, তার অস্তিত্ব, তার সমগ্র জীবন থাকতে আর কিসের দরকার মেঘার? উহু, কিছুরই না। বৃত্তের নিষ্পাপ ঘুমন্ত চেহারার দিকে চেয়ে আছে মেঘা। আজ হঠাৎ করেই মেঘার মনে হচ্ছে, তার জীবনটা এবার পূর্ণ হলো। এক জীবনে যা চাওয়ার ছিলো, সে সব পেয়ে গেছে, সব! মেঘা বৃত্তের দিকে খানিক দূরে শুয়ে আছে। বৃত্তের কাছাকাছি আসবে, সে সাহস এখনো হয়ে উঠে নি তার। সে বৃত্তকে মনে প্রাণে চাইলেও, বৃত্ত তো চায় না। তাই, মেঘা বৃত্তের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরেই রাখছে। কি দরকার, নিজের আত্মসম্মামে আঘাত হানার?
বৃত্তের ঘুমন্ত চেহারা মেঘার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষের চেয়ে কম লাগছে না। মেঘার মনে হচ্ছে, এই একটা মানুষের জন্যে মেঘা নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে। সারাটা জনম মানুষটার হাত ধরেই অবলীলায় কাটিয়ে দিতে পারে। বৃত্তকে দেখলেই মেঘা নিজের দুনিয়াটাই যেনো ভুলে যায়, নিজের সত্তা ভুলে যায়। হারিয়ে যায় বৃত্তের গভীরে, মিশে যায় বৃত্ত নামক অনুভূতিতে! একটা মানুষকে ঘিরে এত প্রেম, এত মায়া, এত ভালোবাসা?
______________________________
পূর্ব আকাশে দগদগে এক সূর্য! ভোরের পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙলো মেঘার। গতকাল সারারাত মেঘা বৃত্তের দিকে ঝুঁকেই ছিলো। বসে থাকা অবস্থায় কখন যে চোখ লেগে এসেছিল মেঘা জানেই না। নিজের অবস্থান লক্ষ্য করতেই মেঘা ছিটকে সরে এলো। ডান হাত মনে হয়ে অবশ হয়ে গেছে। নড়াচড়া করানো যাচ্ছে না। কি অসহ্য ব্যথা! শরীরটাও মনে হয়, ম্যাজম্যাজ করছে। মেঘা ঘড়ির দিকে তাকালো। সাতটা পাঁচ বাজে। মনে হলো, আজ তো ভার্সিটিতে ফরম পুরন করার কথা ছিলো। নয়টার মধ্যেই ভার্সিটি পৌঁছাতে হবে। মেঘা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। পরনের শাড়ি ঠিকঠাক করে বাথরুমে চলে গেলো।

সকালের নাস্তা বানানোর কাজে শাশুরীকে সাহায্য করলো। ইতোমধ্যে, বেশ দেরি হয়ে গেছে। খাবার টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে বৃত্তের ঘরের দিকে ছুটলো মেঘা।
বৃত্ত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মেঘা বৃত্তের পাশে বসে দুবার ডাক দিলো,
— বৃত্ত? এই বৃত্ত? উঠ! আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে। ফরম পূরণ করতে হবে। উঠ না রে। বৃত্ত?

বৃত্ত শুনলো না। বরং, পাশ ফিরে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। অস্ফুট সুরে শুধু বললো,
— যা তো। বিরক্ত করিস না।

মেঘা ডাকতে ডাকতে একসময় ক্লান্ত হয়ে গেলো। দ্বিতীয় কোনো উপায় না পেয়ে বাথরুম থেকে এক মগ পানি এনে বৃত্তের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলো। নিজ মুখে পানির স্পর্শ পেতে বৃত্তের ঘুম ছেড়ে গেলো। পিটপিট করে চোখ খুললো সে। মেঘার দিকে চোখ যেতেই মেঘা চোখ রাঙিয়ে বললো,
— এবার না উঠলে আমি কিন্তু তোকে বিছানা থেকে ঠাস করে ফেলে দিবো। উঠ বলছি।

বৃত্ত বিরক্তি নিঃশ্বাস ফেললো। দু চোখে আস্ত এক আগ্নেয়গিরি পুষে নিয়ে বললো,
— জীবনটা আমার একবারে ত্যানা ত্যানা করে দিলি। সর, উঠছি।

মেঘা দুবার বৃত্তকে না ঘুমানোর হুমকি দিয়ে ঘর থেকে চলে গেলো। বৃত্ত ঘুমঘুম চোখে দুবার হাই তুললো। অতঃপর, হেলে দুলে বিছানা ছেড়ে বাথরুমে চলে গেলো।

#চলবে
নোট ১- যাদের কাছে পোস্টটা পৌঁছাবে রিয়েক্ট করার অনুরোধ। পেজের রিচ বাড়াতে আপনাদের এই ছোট্ট রিয়েক্টই সহায়ক। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। ভালোবাসা।

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/272007821510452/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here