মেঘবৃত্ত পর্ব_২৪

মেঘবৃত্ত
পর্ব_২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
অনুগ্রপূর্বক, নিচের নোট পড়বেন।

গতকাল ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার ফলস্বরূপ, আজ বৃত্তের সর্দি হয়েছে। কিছুটা জ্বর জ্বর ভাবও আছে। ফর্সা নাকটা লাল টকটকে। চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গেছে। অসুস্থতার লক্ষণ সারা দেহ জুড়ে। মেঘা বৃত্তের এই অবস্থা দেখে হন্তদন্ত হয়ে উঠছে। ক্ষণে ক্ষণে বৃত্তের মাথা মুছে দিচ্ছে, ঔষুধ খাওয়াচ্ছে, গরম পানি এগিয়ে দিচ্ছে। সবমিলিয়ে, মেঘার ব্যস্থতার শেষ নেই। তটস্থ হয়ে ভাবছে, সামান্য বৃষ্টিতে ভিজে কি এক অবস্থা হয়ে গেছে ছেলেটার। মুখের দিকে তাকানো অব্দি যাচ্ছে না। বৃত্ত বরাবরই ছোঁয়াচে ধরনের। অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে তার। এ আর নতুন কি?

বৃত্ত বিছানায় বসে হালকা গরম পানি খাচ্ছে। মেঘা পাশে বসে বৃত্তের মেডিসিন দেখছে। বৃত্ত একসময় বিরক্ত হলো। ঘনঘন গরম পানি খাওয়ার বিষয়টা তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। উল্টো, রাগ বাড়ছে। নিজের অসুস্থতা নিয়ে বৃত্ত কখনোই সচেতন ছিলো না। এমনকি তুমুল জ্বর নিয়েই বৃত্ত ঘরে থাকতো না। সেই বন্ধু বান্ধবের আড্ডাই কাটাতো সারাটা দিন। বৃত্তের মায়ের এ নিয়ে আফসোসের শেষ ছিলো না। তবে, আজকের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন! সকাল থেকে মেঘার এসব অতি মাত্রায় সেবা তার বিরক্ত লাগছে। একবার প্লেট ভর্তি ফল এনে দেয়, আরেকবার দুধ তো আবার গরম পানি। এসব অত্যাচার সইতে সইতে বৃত্ত তিক্ত-বিরক্ত! বৃত্ত এবার ধাম করে গ্লাসটা টেবিলে রেখে দিলো। গ্লাস রাখার আওয়াজ শুনে মেঘা চোখ তুলে বৃত্তের দিকে তাকালো। বৃত্ত রাগ দেখিয়ে বললো,
— অনেক হয়েছে! আই অ্যাম ডান। আমি আর ওসব ছাইপাঁশ খেতে পারবো না। যা ইচ্ছে বলে নে। বাট, আই ও’ন্ট মিনস আই ও’ন্ট।

মেঘা কয়েক পল বৃত্তের দিকে তাকালো। বৃত্ত কথা বলতে বলতে দুবার হাঁচিও দিলো। নাকটা ফুলে গেছে এবার। তবুও, কি জেদ তার। যা বলবে, অপরপাশের মানুষটার ঠিক তাই তাই করতে হবে। এই যেনো বৃত্তের শাশ্বত নিয়ম! মেঘা মুচকি হাসলো। বললো,
— ঠিক আছে, খাস না। রেখে দে ওটা।
বৃত্ত যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মেঘা দুটো ঔষুধ এনে বৃত্তের সামনে ধরলো। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ঔষুধ খেতে তো আর সমস্যা নেই, তাইনা?
বৃত্ত কিছু বললো না। চুপচাপ ঔষুধ হাতে নিয়ে খেয়ে ফেললো।
মেঘা সবকিছু গুছিয়ে লাইট নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে বৃত্তকে বারবার করে বলে গেলো,
‘ ঔষুধটা খেলে ঘুম পাবে। তাই, কোনো ঝামেলা না করে, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়তে। ‘
______________________________
মেঘা শাশুড়ির সাথে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। আজ বৃত্তের জন্যে সাতকরা দিয়ে মাছের ঝোল রান্না করা হচ্ছে। স্বাধহীন মুখে খেতে ভালো লাগবে তাই। মেঘা সেটাই শিখছে বৃত্তের মায়ের থেকে। রান্নার ফাঁকে ফাঁকে বৃত্তের মা বললেন,
— মেঘা, বৃত্ত ঔষুধ খেয়েছে তো?
মেঘা ছুরি দিয়ে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বললো,
— হ্যাঁ,মা। খাইয়ে দিয়েছি আমি। ঘুমাচ্ছে এখন।
— ওহ। আচ্ছা শোন, তাক থেকে লবণের কৌটাটা দাও তো। তরকারিতে লবণ কম হয়ে গেছে। আরেকটু দিতে হবে মনে হচ্ছে।

— মা, মা?
বৃত্তের গলা শুনে মেঘা চমকে তাকালো সামনে। বৃত্ত জ্যাকেট গায়ে দিতে দিতে রান্নাঘরের দিকেই এগিয়ে আসছে। এই হাঁটার তালে আরো তিনবার হাঁচিও দিয়েছে। মেঘা ভাবলো, এত অসুস্থতার মধ্যে কোথায় যাচ্ছে সে? বৃত্ত রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেঘা আর মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
— আমি একটু বেরুচ্ছি। রাতুল অ্যাক্সিডেন্ট করেছে হসপিটাল তাকে দেখতে যাবো। ফিরতে লেইট হতে পারে।

বৃত্তের কথা শুনে তার মা তেঁতে উঠলেন। বললেন,
— খবরদার এক পা বাড়ির বাইরে বের করবি তো! ঘরে যা আর ঘুমা। এত পরোপকারী হতে হবে না তোর। যা, নিজের ঘরে যা।

বৃত্ত শুনলো না। বরং, মৃদু হেসে মায়ের কাছে আসলো। মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ইটস আর্জেন্ট। যেতেই হবে! প্লিজ বুঝার চেষ্টা করা করো। অ্যান্ড আই অ্যাম কমপ্লিটলি ফাইন, মা!
কথাটা বলতে বলতে বৃত্ত আরো দুবার হাঁচি দিলো। বৃত্তের মা এবার যেনো জ্বলে পুড়ে উঠলেন। নিজের থেকে বৃত্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে রেগেমেগে বললেন,
— তোর ফাইনের গোষ্ঠী কিলাই আমি। আমার চোখ নেই? আমি দেখি না তুই কেমন ফাইন আছিস? ঘরে যা বলছি। নাহলে আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। যা বলছি।

মায়ের এমন রণচন্ডি রূপ দেখে বৃত্ত চুপ হয়ে গেলো। আর কথা বলার জো রইলো না। মেঘা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মা ছেলের এমন অদ্ভুত কাণ্ড দেখতে লাগলো। যখন বৃত্তের মন খারাপ করা মুখটা সে দেখলো, তার বুকটা ছেৎ করে উঠলো। বৃত্তের মন খারাপ করা চেহারা দেখতে মেঘার একটুও ভালো লাগে না। মনে হয়, মেঘার সবকিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে। মেঘা এগিয়ে গেলো শাশুড়ির দিকে। জড়তা নিয়ে বললো,
— এত করে যখন বলছে যেতে দিন না, মা। বন্ধু অসুস্থ, দেখতে না গেলে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। যেতে দিন ওকে।

বৃত্ত এবার একটু লাই পেলো। মায়ের গালে চুমু দিয়ে অনুনয়ের সুরে বললো,
— বেশি দেরি করবো না, প্রমিজ। যাবো আর ঝটপট আসবো। যাই?

অবশেষে, বৃত্তের মা রাজি হলেন। বৃত্ত সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। মেঘা দরজা লাগাতে গেল বৃত্ত হাত দিয়ে দরজা আটকে নিলো। মেঘা অবাক হয়ে বললো,
— কি?
বৃত্ত মুচকি হেসে বললো,
— থ্যাংকস!
— কিসের জন্যে?
— মাকে রাজি করাতে হেল্প করার জন্যে।
— একবার করেছি তার মানে এই নয় যে বারবার করবো। দ্রুত ফিরে আসবি। নাহলে কিন্তু, খবর আছে তোর।
— সে পরে দেখা যাবে। ওকে, বাই। দেরি হচ্ছে।
— বাই।
বৃত্ত চলে গেলো। মেঘা দরজা লাগালো না। বরং, তাকিয়ে রইলো বৃত্তের যাওয়ার পানে। চোখ স্থির, নিশ্চল। মনে মনে ভাবলো, তোর মুখের এই হাসি দেখতে আমি সব করতে পারি বৃত্ত! সব মানে সব। তুই এভাবেই হাসিস আর আমি সে হাসিতে এভাবেই বারবার মরে যেতে চাই। মরে মরে, ক্ষয় হয়ে যেতে চাই।

#চলবে

আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/273832587994642/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here