মেঘবৃত্ত পর্ব_৩৪

মেঘবৃত্ত
পর্ব_৩৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

‘প্রিয় মানুষ’ এর থেকে পাওয়া প্রথম উপহার মেঘার ছোট্ট মনটাকে ক্রমশ খুশির নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। মেঘার বিশ্বাস হচ্ছে না। সে এখনো বৃত্তের হাতের গাজরাটার দিকে চেয়ে। মেঘা জিজ্ঞেস করলো,
— তুই সত্যিই আমার জন্যে এটা এনেছিস? আমার জন্যে?

মেঘার কণ্ঠ কাঁপছে, থরোথরো করে। বৃত্ত বুঝতে পারছে সেটা। বৃত্ত মাথা নুইয়ে ফেললো। বড্ড লজ্জা লাগছে তার। মাথা চুলকে মৃদু কণ্ঠে বললো সে,
— হুম, ভাবলাম তোর হয়তো ভালো লাগবে। ভালো না লাগলে ফেলে দিতে পারিস। আমি মাইন্ড করবো না।

শেষের বাক্যটা বলতে বৃত্তের মনে একটুখানি কষ্টবোধ হলো। তবুও, সে বললো। কারো উপর যে কিছু চাপিয়ে দিতে নেই, বোঝা মনে হয়। বৃত্ত চায়না, সে মেঘার জন্যে বোঝা হোক। বৃত্তের কথাটা শুনে মেঘার ভারী রাগ হলো। বৃত্তের হাত থেকে গাজরাটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো সে। বৃত্ত প্রায় বোকা বনে গেলো তাতে। চোখ বড়বড় করে তাকালো মেঘার দিকে। মেঘা আগুন চোখে বললো,
— তুই খুব খারাপ বৃত্ত, আস্ত এক অসহ্য লোক। তোর সাথে আমার কথা বলাই উচিত না।

বৃত্তের সামনে নিজের অভিমানের পাহাড় ধ্বসিয়ে, মেঘা বিছানা ছাড়লো। গাজরাটা চুপচাপ নিজের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে হনহন পায়ে হেঁটে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বৃত্ত তখনো হতভম্ভ! মেঘার এমন হঠাৎ করে রেগে যাওয়া তার ঠিকঠাক বোধগম্য হচ্ছে না। সে কি কোনো ভুল করলো তবে?
_________________________
রাত বেড়েছে, রাতের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবেশের শীতলতা। ঠাণ্ডা হাওয়া ছুঁইয়ে দিচ্ছে বৃত্তকে। ঠাণ্ডায় বৃত্ত প্রায় জমে গেলো। বৃত্তের ঘুম ছেড়ে গেলো। শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসলো সে। চোখ গেলো, নিজের গায়ে জড়িয়ে থাকা মোটা কম্বলের দিকে। কম্বলটা দেখেই বৃত্তের ভ্রু কুঁচকে গেলো। তার যতদূর মনে আছে, সে তো একটা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছে। এখন সেই কাঁথাটা সোফার উপর ভাঁজ করে রাখা। কে রাখলো? নিজের গায়ের এই মোটা কম্বল কেইবা জড়ালো? বৃত্ত এখনো বিস্ময়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিরাজ করছে। বৃত্তের হঠাৎ মেঘার কথা মনে পড়লো? বিছানায় তো নেই, কোথায় মেঘা?

বৃত্ত বাথরুম খুঁজলো, আশপাশ খুঁজলো! কোথায় মেঘার দেখা নেই। অবশেষে, বারান্দায় আসা মাত্রই অস্থির বৃত্ত শান্ত হলো। বারান্দার দোলনায় মেঘাকে দেখে বৃত্ত স্বস্থির শ্বাস ফেললো। পা বাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়েও, থমকালো সে। মনে হলো, মেঘা প্রতিদিন বারান্দায় কি করে একবার পরখ করা যাক। ভাবনা অনুযায়ী, বৃত্ত দাঁড়িয়ে রইলো বারান্দার দরজার সামনে।

মেঘার হাতে সেই গাজরা। একবার খোঁপায় গাজরা লাগাচ্ছে, আরেকবার হাতে বাঁধছে বকুল ফুলের গাজরাটা। মাঝেমধ্যে, চুমু খাচ্ছে বকুল ফুলে। মেঘা গাজরাটা নিয়ে পাগলামি করছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে। বৃত্ত প্রায় হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে মেঘার দিকে। বৃত্তের সচেতন মস্তিষ্ক জানান দিল তাকে,
‘বৃত্ত, তোর মেঘ প্রেমে পড়েছে। তোর ন্যায় এক অগোছালো ছেলের প্রেমে পড়ে তোর মেঘ পাগল হয়ে গেছে’

বৃত্ত আর সেখানে দাঁড়ালো না। মেঘার দিকে একপল চেয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। একহাত মাথার নিচে রেখে স্থির ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো সে। তার মাথা আপাতত কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মেঘা তাকে ভালোবাসে, বিষয়টা তার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। একে একে মনে পড়তে লাগলো, বৃত্তের প্রতি মেঘার একেকটা কেয়ার। তার কাপড় ইস্ত্রি করে দেওয়া, সুন্দর করে সেই কাপড় তাকে সাজানো, প্রতিদিন তাকে অ্যালার্ম বাজিয়ে ঘুম থেকে তোলা, বৃত্তের প্রতিটা সুবিধা অসুবিধার খেয়াল পুঙ্খানুপঙ্খভাবে রাখা, বৃত্তের কি পছন্দ , কি অপছন্দ সবকিছুর খেয়াল রাখা। এসব কিছু কি শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে? নাহ, একদম না। বরং, বৃত্তের প্রতি মেঘার সীমাহীন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপই এসব। বৃত্ত চোখ বুজে ফেললো। কোথাও যেন এক শান্তির স্রোত বয়ে গেলো। বুকটা বোধহয় আজ একটু বেশিই ‘পূর্ণ,পূর্ণ’ মনে হচ্ছে। কিন্তু, কেনো? কিসের এত শান্তি তার, কিসের এত পূর্ণতা?
__________________________
পরদিন, অফিস থেকে বাসায় একটু তাড়াতাড়ি ফিরলো বৃত্ত। মেঘার সাথে তার অনেক হিসাব-নিকাশ বাকি আছে।
রাতের খাবারের পর্ব শেষ হওয়ার পর, বৃত্ত রান্নাঘরে এলো। মেঘা তখন বাসন পরিষ্কার করছে। বৃত্ত মেঘার পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীর সুরে ডাক দিলো,
–মেঘ?
মেঘা একের পর এক বাসন ধুয়ে তাকে সাজিয়ে রাখতে রাখতে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
— হু, বল।
বৃত্ত মেঘার এমন বেপরোয়া আচরণ সহ্য করলো না। মেঘার হাত ধরে জোর করে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। বৃত্তের এমন অদ্ভুত আচরনে মেঘা চোখ বড়বড় করে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত মেঘার চোখে চোখ রেখে ভীষন শান্ত সুরে বললো,
— তোর সাথে জরুরি কথা আছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোকে আমার রুমে চাই।
বাঁধ সাধলো মেঘা। তাড়াহুড়ো করে বললো,
— কেনো? দেখ, পাগলামি করিস না। তুই যা, আমি কাজ শেষ করে আসছি।

বৃত্ত কিছুক্ষণ মেঘার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে বেশ তেজ নিয়ে বললো,
— পাঁচ মিনিট মানে পাঁচ মিনিট। এক মিনিট দেরি হলে, আমি তোর হাল বেহাল করে দিবো। সো, কাম ফার্স্ট!

হনহনিয়ে বৃত্ত চলে গেলো। মেঘা তখনো বিস্ময় নিয়ে দরজার দিকে চেয়ে। আজ এই বৃত্তের হলোটা কি? এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেনো সে?
______________________

বৃত্ত আর মেঘা সামনাসামনি বসে আছে। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে কথা বললো বৃত্ত। তার কথার শুরুটা ছিল খানিক এমন,
— তুই কি আমায় ভালোবাসিস, মেঘ? আমার মনে হয় তুই আমার প্রতি দূর্বল? আমি কি ঠিক বলছি, মেঘ?

#চলবে
আপনাদের এত এত ভালোবাসার কারনে এই পর্ব আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্যে উপহার ❤️

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/100063985747587/posts/272631578213032/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here