মেঘবৃত্ত পর্ব_৩৩

মেঘবৃত্ত
পর্ব_৩৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সিদ্ধার্থ এসব কথা পরোয়া করলো না। বরং খুব শান্তসুরে জিজ্ঞেস করলো,
— তুই কি মেঘাকে ভালোবাসিস, বৃত্ত?

বৃত্ত চমকে উঠলো যেনো। সিদ্ধার্থের আকস্মিক এই প্রশ্ন শুনে সে স্থবির! সিদ্ধার্থ আবারও বললো,
— বল, ভালোবাসিস মেঘাকে?

বৃত্ত অবাক কণ্ঠে বললো,
— আর ইউ ম্যাড? আমরা শুধুমাত্র ফ্রেন্ডস। নাথিং এলস!
— শুধু ফ্রেন্ডস? তাহলে তোর এমন করে মেঘার জন্যে ছটফট করার কারণ কি? এই বিয়েতে আমাদের সব ফ্রেন্ড সার্কেলরাই আছে। তাহলে ঘুরেফিরে তোর মেঘার কথাই কেনো মনে পড়ছে? মেঘার নিরবতা তোকে কেনো পুড়াচ্ছে? বল, আছে কোনো উত্তর?

বৃত্ত এতগুলো যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। মুখ ফুটে নিজের কোনো যুক্তি দাঁড় করাতে পারলো না। মুখের সকল কথা আটকে গেছে তার। বৃত্ত চুপ করে রইলো। হাতের মুঠোয় দুটো কংকর নিয়ে সজোরে ছুঁড়ে ফেললো লেকের পানিতে। কঙ্করের আঘাতে পানি ছলকে উঠলো। বৃত্ত সেদিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। সিদ্ধার্থ পাশ থেকে বৃত্তের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো। বৃত্তের নিরবতাই তাকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে, বৃত্তের অনুভূতিগুলো। বৃত্ত হঠাৎ করে দুহাতে নিজের চুপ খামচে ধরলো। মাথাটা মনে হচ্ছে ব্যথায় ফেঁটে যাচ্ছে তার। বৃত্ত নতমুখে বললো,
— আমি কিছু জানিনা। আমার শুধু মেঘকে চাই। আগের রূপে, আগের বৃত্তের মেঘ রূপে। তোর কোনো প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। শুধু জানি, মেঘ আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটা অংশ। সে ছাড়া আমার অগোছালো জীবন জাস্ট শেষ হয়ে যাবে। আমি, এই বৃত্ত মেঘহীন নিঃশেষ হয়ে যাবে।

বৃত্তের কণ্ঠ কাঁপছে, স্পষ্ট। সিদ্ধার্থ হতবাক চোখে বৃত্তের পানে চেয়ে আছে। বৃত্ত যথেষ্ট ম্যাচিউর ছেলে হওয়া সত্বেও সে নিজের অনুভূতি বুঝতে পারছে না, বিষয়টা সিদ্ধার্থকে অবাক হতে বাধ্য করছে। সিদ্ধার্থ বৃত্তের কাঁধে হাত রাখলো। বৃত্ত চোখ তুলে তাকালো বন্ধুর দিকে। সিদ্ধার্থ বললো,
— ভাব বৃত্ত, ভাব। শান্ত মাথায় বসে বসে ভাব। নিজের এই অস্থিরতার কারণ তুই ঠিক বুঝতে পারবি। আমার কাজ ছিল, তোকে শুধু রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া। পথটা তোকেই পাড়ি দিতে হবে। এখনো সময় আছে! ‘সে’ হারিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে আঁকড়ে ধরে নিতে হবে। একটা কথা মনে রাখিস, ‘ প্রিয় মানুষ একবার হারিয়ে গেলে, এই পৃথিবীর সব মানুষকে তখন অপ্রিয় মনে হয় ‘

সিদ্ধার্থ চলে যাচ্ছে। ওই তো দেখা যাচ্ছে, সিদ্ধার্থের ঝাপসা চলন্ত দেহখানা। বৃত্ত এখনো লেকের অস্বচ্ছ জলের দিকে চেয়ে। মনের মাঝে ঘুরছে, হাজারো প্রশ্নের বাহার। প্রশ্নগুলো ঝাপসা! কিন্তু, উত্তর গুলো তার থেকেও বেশি ঘোলাটে। মেঘ কি তবে সত্যিই বৃত্তের ‘প্রিয় মানুষ’ ?
___________________________
বিয়ে শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেলো। বৃত্ত বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছে। মাঝপথে আটকে গেলো ঢাকা শহরের চিরচেনা সেই জ্যামে। বৃত্ত বাইক থামিয়ে নিয়েছে। বেশ লম্বা জ্যাম লেগেছে। কতক্ষনে জ্যামটা ছাড়বে বলা মুশকিল।

— ভাইয়া ভাইয়া! খোঁপার ফুল নিবেন একটা? মাত্র বিশ টাকা! নিবেন?

পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ শুনে বৃত্ত তাকালো। ছোট্ট একটা মেয়ে, পরনে ছেড়া জামা, গায়ে লম্বা করে জড়ানো ময়লা ওড়না। মেয়েটাকে দেখে পথশিশু মনে হচ্ছে। বৃত্ত তার হাতে থাকা গাজরাটার দিকে তাকালো। বকুল ফুলের খুব সুন্দর একটা গাজরা! বৃত্ত জিজ্ঞেস করলো
— কত দাম বললে?
মেয়েটা হেসে উত্তর দিলো,
— বিষ টাকা!
বৃত্তের মনে পড়লো, একদিন নবীন বরণ অনুষ্ঠান মেঘাকে এমন একটা গাজরা খোঁপায় দিতে দেখেছিলো সে। মেঘাকে দারুন মানিয়েছিলো তাতে। আজও কি বকুল ফুলের এই গাজরায় মেঘাকে সুন্দর লাগবে? বৃত্ত ভাববার অবকাশ পেলো না। পকেট থেকে মানিব্যাগ হাতে নিয়ে পঞ্চাশ টাকা বের করে মেয়েটার হাতে দিলো। মেয়েটা টাকার পরিমাণ দেখে খুশিতে প্রায় কেঁদেই ফেললো। নিজের ঢালা থেকে একটা গাজরা নিয়ে বৃত্তের হাতে দিলো। বৃত্ত মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে বললো,
— নাম কি?
— তারা।
— খুব সুন্দর নাম! কে রেখেছে?
— মা! আমি ছোট বেলায় দেখতে সুন্দর আছিলাম, তার লাইগা মা রাখছে এই নাম।
— এখনো অনেক সুন্দর তুমি।
— ধইন্যবাদ ভাইয়া।
জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। বৃত্ত মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে বাইক নিয়ে সামনে এগুলো।
______________________
বৃত্ত মাত্রই বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। মেঘা তখন চুলে চিরুনি দিচ্ছে। বৃত্ত পাঞ্জাবির পকেট থেকে গাজরাটা বের করলো। মেঘাকে দিবে দিবে বলেই এখন পর্যন্ত গাজরাটা দেওয়ার সাহস হচ্ছে না। অদ্ভুত কারণে, তার খুব লজ্জা লাগছে। মেঘা গাজরা দেখলে কি মনে করবে, বিষয়টা তাকে সংকোচে ফেলে দিচ্ছে। মেঘা ততক্ষণে বিছানায় এসে বসেছে। ঔষধ খাবে হয়তো। বৃত্ত আর ভাবলো না। হাতের মুঠোয় গাজরাটা লুকিয়ে মেঘার সামনে এসে দাঁড়ালো। মেঘা তখনো পরোয়াহীন। বৃত্ত সঙ্কোচ নিয়ে ডাক দিলো,
— মেঘ?
মেঘা ঔষধের বক্সের দিকে চেয়ে উত্তর করলো,
— হু?
মেঘাকে এখনো নিজের দিকে তাকাতে না দেখে, বৃত্তের ভারী রাগ হলো। সে ধাম করে মেঘার ঠিক সামনে বসে গেল। মেঘার হাত থেকে ঔষধের বক্স কেড়ে নিয়ে বিছানার একপাশে ফেলে দিলো। মেঘা হতবম্ব চোখে চেয়ে রইলো বৃত্তের পানে। বৃত্ত বেশ রাগ নিয়ে বললো,
— কেউ ডাকলে তার মুখের দিকে চেয়ে শুনতে হয়। এটুকু ম্যানার্স জানিস না?
মেঘা ততক্ষণে হতবম্ভ ভাব কাটিয়ে উঠেছে। নিজেকে সামলে বললো সে,
— না, জানিনা। কি বলবি, বল।

বৃত্ত এবার হাতের মুঠোয় থাকা গাজরাটা মেঘার দিকে বাড়িয়ে দিলো। মেঘা গাজরাটার দিকে চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো। বৃত্ত আমতা আমতা করে বললো,
— রাস্তায় এক মেয়ে বিক্রি করছিল। ভাবলাম তুই তো এসব পছন্দ করিস। তাই নিলাম একটা। ধর এটা।

মেঘা তখনো অবাক চোখে গাজরাটার দিকে চেয়ে। বৃত্তের প্রথম উপহার! মেঘার চোখে মুহূর্তেই জল জমে গেলো। চিকচিক করে উঠলো তার ঘোলাটে চোখের মণি!

#চলবে
নোট ১- যাদের কাছে পোস্টটা পৌঁছাবে রিয়েক্ট করার অনুরোধ। পেজের রিচ অনেক কমে গেছে। পেজের রিচ বাড়াতে আপনাদের এই ছোট্ট রিয়েক্টই সহায়ক। আশা করি, আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। ভালোবাসা।

লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/100063985747587/posts/270940681715455/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here