মেঘবৃত্ত পর্ব_৩৯

মেঘবৃত্ত
পর্ব_৩৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সেদিনের পর আরো কটা দিন কেটে গেছে। ধীরে ধীরে মেঘবৃত্তের বন্ধুত্ত্বের সম্পর্ক ভালোবাসায় পরিণত হচ্ছে। পৃথিবীতে তৈরি হচ্ছে আরও এক মিষ্টি প্রেম কাহিনী।
আজ মেঘবৃত্তের ভার্সিটিতে বিদায় অনুষ্ঠান আছে। এ বছর যারা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি চেয়ে বেরিয়ে গেছে, তাদের বিদায় জানাতেই আজকের এই আয়োজন। সে উপলক্ষে মেঘবৃত্তও তৈরি হচ্ছে সেখানে যাওয়ার জন্যে।
তখন, বৃত্ত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করছিল। পাঞ্জাবির রংটা খানিক ‘ হিমু, হিমু ‘ টাইপের। হলুদ রঙা ঝকঝকে এক পাঞ্জাবি। বৃত্তের ফর্সা শরীরে হলুদ রংটা বেশ মানিয়েছে। বৃত্ত রেডি হতে হতে মেঘাকে একবার ডাক দিলো,
— মেঘ, দেরি হচ্ছে আমাদের। এতক্ষণ বাথরুমে কি করিস? বের হ জলদি।

একটু পর মেঘা বের হলো। তার পরনে নীল রঙের শাড়ি। শাড়ির পাড়ে সোনালী রঙের কাজ করা। একদম হুমায়ূন আহমেদের ‘ রূপার ‘ মত লাগছে তাকে। মেঘা তাড়াহুড়ো করে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। বকবক করতে লাগলো,
— ইশ, খুব দেরি হয়ে গেছে না? উফ। একটু দাঁড়া। এইতো, আমার শেষ।

বৃত্ত হাসলো। মেঘার শাড়ির কুচি ইতিমধ্যে এলোমেলো হয়ে গেছে। বৃত্ত চুপচাপ মেঘার পায়ের কাছে হাঁটু গেরে বসলো। মেঘা চকিতে সরে গেলো। বৃত্ত এতে বড় বিরক্ত হলো। মাথা উচুঁ করে বললো,
— সরলি কেনো? কুচি নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে আয়, ঠিক করে দেই।
বৃত্তের কঠিন কথা শুনে মেঘার ঠোঁট উল্টে গেল। বাক্য খরচ না করে সে বৃত্তের সামনে এসে দাঁড়ালো। বৃত্ত শাড়ীর কুচিতে হাত দিলো। একে একে সবগুলো কুচি ঠিক করে দিয়ে হাতে আগলে রাখলো। মেঘার দিকে চেয়ে বললো,
— সেফটিপিন?

মেঘা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটা সেফটিপিন নিয়ে বৃত্তের হাতে দিল। মেঘা তখনো মুগ্ধ হয়ে বৃত্তের দিকে চেয়ে আছে। চোখে জল জমতেই আঙ্গুলের ডগা দিয়ে জলটুকু মুছে নিয়ে আবারও বৃত্তের দিকে চোখ রাখলো। বৃত্ত সেফটিপিন লাগাতে লাগাতে বললো,
— শাড়ির নিচে একদম ভিজিয়ে ফেলেছিস। বাথরুমে শাড়ি পড়ার কি দরকার ছিলো, হ্যাঁ?

মেঘা মিনমিনিয়ে বললো,
— রুমে তো তুই ছিলি!
বৃত্ত থমকে গেলো। নতমুখে ঠোঁট চিপে হেসে উঠলো সে। শাড়ীর কুচিটা ঠিকঠাক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো সে। মেঘার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো,
— বরের সামনে শাড়ি পড়লে, বরের ভালোবাসা আরো বেশি করে পাওয়া যায়! তোর বেশি ভালোবাসা চাইনা?

ইশ, মেঘা তো লজ্জা পেয়ে গেলো। চোখ খিঁচে ফেললো সে। লজ্জাটা প্রকাশ করবে না, মনোভাব নিয়েও প্রকাশ করে ফেললো ও। ভালোবাসার মানুষের সামনে নিজের লজ্জা প্রকাশ করার অনুভূতিটা খুব দারুন। মেঘার গাল ক্রমশ লাল হয়ে উঠলো। ঠোঁট টিপে বলল,
— ইশ, কি সব কথা!

কথাটা বলে মেঘা বৃত্তের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো। বৃত্ত সরে গেলো না। বরং মুচকি হেসে মেঘার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মোহাচ্ছন্ন কণ্ঠে বললো,
— ‘ আমার রূপা ‘
_________________
সম্পূর্ণ ভার্সিটি সেজেছে নতুন উৎসবে। এদিক ওদিক মরিচ বাতি, ব্যানার, ফুলের গেইট আরো কত কি! বৃত্তের ব্যাচ সেই ফুলের গেইট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে, আর জুনিয়ররা তাদেরকে ফুল ছিটিয়ে বন্দনা করলো তাদের।

মেঘবৃত্তরা একজায়গায় জড়ো হয়ে বসেছে। মেঘা বৃত্তের ঠিক সামনের চেয়ারটাতে বসেছে। কথা বলতে বলতে দুজনের চোখাচোখি হচ্ছে। মেঘা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে বৃত্ত মুচকি হেসে ঘাড় ঘষছে। তার নিজেরও একটু আকটু লজ্জা লাগছে।
মেঘবৃত্তের এই চোখাচোখি বন্ধু মহলের আর কারো নজরে না পড়লেই রাতুলের নজরে পড়েছে। ঠোঁটকাটা রাতুল তো বলেই ফেললো,
— কিরে মামা, মেঘার দিকে এত লুতুপুতু চোখে চাইয়া রইছো ক্যান? আমাগো কি চোখে পড়ে না? আমাগো দিকেও একবার তাকাও। আমরাও আজ বহুত পার্ট শার্ট মাইরা আইছি।

বৃত্ত কি বলবে খুঁজে পেলো না। চোরের চুরি ধরা পড়ায় সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কথা এড়ানোর জন্যে বললো,
— তুমি তো অনেক সুন্দ্রি এক পোলা, মামা। তোমারে তো সবসময় রূপসী লাগে দেখতে। এ আর নতুন কি?

বৃত্তের এহেন প্রশংসায় রাতুল খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। বুক ফুলিয়ে গর্বের নিশ্বাস নিবে তার আগেই তার মনে পড়লো বৃত্তের কথার অর্থ। সে বজ্রধ্বনির ন্যায় চেঁতে উঠলো। বললো,
— ওই, আমি রূপসী মানে? আমি কি মাইয়া, যে রূপসী হইমু? মজা লস আমার লগে?

রাতুলের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। বৃত্ত হাসতে হাসতে তো চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। রাতুলের কথা শুনে সিদ্ধার্থ যা বোঝার বুঝে গেলো। মনে মনে একটুখানি খুশি হলো সে। বন্ধু নিজের অনুভূতি বুঝতে পারলো তবে। সিদ্ধার্থ কথা কাটালো। বললো,
— গাইস, একটা গেইম খেলা যাক। কি বলিস?

সিদ্ধার্থের গেইমের কথা শুনে টেবিল ঘিরে বসে থাকা সবাই চমকে উঠলো। নেহা বলে ফেললো,
— না, না, না। তোর গেইম মানে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাওয়া। ওই গেইম আমি খেলবো না। নেভার!

রাতুল দুঃখী দুঃখী কণ্ঠে বললো,
— হ। ওই গেইমে আমার কোন জনমে কোন ক্রাশের পিকে ‘হট’ কমেন্ট করসিলাম এগুলাও চিপা-চুপা থেকে বাইর কইরা ফালায়। নাহ ভাই, আমি খেলুম না।

সবাই একে একে মানা করতে লাগলো। কিন্তু সিদ্ধার্থ নাছোড়বান্দার মত শেষমেশ সবাইকে রাজি করিয়ে ফেললো। প্রথম প্রশ্ন করা হলো বৃত্তকে। প্রশ্নটা ছিলো,
— লাইফে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো? মা নাকি বউ?

প্রশ্নটা একদম হকচকিয়ে দেওয়ার মত হলেই বৃত্ত মোটেও চমকালো না। বরং ধীরে সুস্থে বললো,
— মা হলো জান্নাত। আর বউ হলো অর্ধাঙ্গিনী। নিজের একটা অংগবিহীন জান্নাতে কি করে যাবো?

সবাই বৃত্তের কথা শুনে একদফা বলে উঠলো,
— ওহো, জিও জিও। মেঘা ইউ, দ্য লাকি ওয়ান।

মেঘা তখনো থমকানো। বৃত্তের দিকে চেয়ে আছে। চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। বৃত্ত তার সন্মান সবার সামনে এতটা উচুঁ করেছে? মেঘার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। আজকাল বৃত্তের এমন ভালোবাসা দেখে মেঘার মন চায়, সারাক্ষণ বৃত্তকে ঝাপটে ধরে বসে থাকতে। একটা মানুষ এতটা ‘প্রিয়’ কি করে হতে পারে?

#চলবে
যাদের কাছেই পোস্ট পৌঁছাবে রিয়েক্ট করার অনুরোধ। কদিন গল্প না দেওয়ায় পেজের রিচ প্রবলেম হতে পারে।আপনাদের ছোট্ট রিয়েক্টই পেইজের রিচ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। ভালোবাসা!

লেখিকার পাঠকমহল, ( গল্প সম্বন্ধে সমস্ত আপডেট আমার গ্রুপে পাবেন। )
গ্রুপ লিংক,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri
আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/100063985747587/posts/275985371210986/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here