#মেঘবৃত্ত
পর্ব_৪২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
অনুগ্রহপূর্বক, নিচের নোট পড়বেন।
মেঘা বৃত্তের বুকের আরো গভীরে মাথা গুজলো। বৃত্তও সুন্দর করে আগলে নিল তাকে। মেঘা মিনমিনিয়ে বললো,
— বৃত্ত, আই থিঙ্ক আই অ্যাম প্রেগন্যান্ট।
বৃত্তের হাত থেমে গেলো। চুলে বিলি কাটা বন্ধ হয়ে গেলো। এ কি বললো মেঘা? তার কান ধপধপ করছে। সে কি ঠিক শুনলো? বৃত্তের শ্বাস ভারী হয়ে এলো। মেঘার লুকিয়ে রাখা মুখশ্রীটা নিজের দিকে উচুঁ করে চেয়ে রইল ক্ষণিক। মেঘা লজ্জায় দু চোখ বুজে ফেললো মুহূর্তেই। বৃত্ত নরম কণ্ঠে সুধালো,
— সত্যি বলছিস তুই? আমরা আবার মা বাবা হবো?
বৃত্তের এহেন নরম কণ্ঠ শুনে মেঘার খুব আদর আদর পেলো। লজ্জাবতী গাছের ন্যায় মিইয়ে গেলো ও। দু হাতে ঝাঁপটে ধরলো বৃত্তের বলিষ্ট দেহখানা। চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ধরা কণ্ঠে বলল,
— হুম। আমরা দুজন আবার বাবা মা হবো। আবারো আমাদের কোল আলো করে এক ছোট্ট বাচ্চা আসবে। আমরা এবার সত্যি সত্যিই পূর্ণ হবো রে বৃত্ত।
বৃত্তের চোখ টলমল করে উঠলো। আগের বাচ্চাটা নিয়ে বৃত্তের শুধু দায়িত্তনোধ ছিলো ঠিকই, কিন্তু বাচ্চাটা মারা যাওয়ায় বৃত্তের এক মুহূর্তের জন্যে মনে হচ্ছিল, তার বুকটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। বুকের মধ্যে কেউ ছুরি ঢুকিয়ে বুকটাকে একদম এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে। এত ব্যথার মধ্যেও সে নির্বাক ছিলো। বৃত্ত ভেঙে পড়লে, মেঘাকে সামলাবে কে? বৃত্ত জানতে অপারগ, তার এই কষ্টের কারণ। শুধু এটুকু জানতো, বাচ্চাটার জন্য মেঘার মত কষ্ট না পেলেও তার কষ্টের ঝুঁলিটাও কম ছিল না বটে।
বৃত্ত চোখ মুছলো। মেঘাকে দুহাতে আগলে নিয়ে মেঘার চুলে ঠোঁট বসালো। মিহি সুরে বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ!
মেঘা নিজেও ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ আলহামদুলি্লাহ ‘.
অতঃপর, কেটে গেলো কতক মুহূর্ত। হঠাৎ মেঘা ডাক দিল,
— বৃত্ত?
বৃত্তের মাথায় তখন ঘুরছে নানা চিন্তা। তার সব চিন্তাটা যেনো এই আগত বাচ্চাকেই ঘিরে। মেঘার ডাকে তার হুশ এলো। জবাব দিলো সে,
— হু, বল।
— এই বাচ্চাটাও কি তোর জন্যে শুধু দায়িত্ত্ব হয়েই থেকে যাবে রে? প্লিজ, আমার বাচ্চাকে এবার অন্তত বাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করিস না। পায়ে পড়ি তোর। প্লিজ!
মেঘা কেঁদে উঠলো শব্দ করে। মেঘার কান্না দেখে অপরাধবোধ বৃত্তকে আস্টেপিস্টে ঘিরে ফেললো। বৃত্ত শশব্যস্ত হয়ে উঠলো। মেঘার মুখটা নিজের দিকে তুলে সারামুখে অজস্র চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুললো। মেঘা চোখ বন্ধ করে শুধু উপলব্ধি করলো বৃত্তের এই ভালোবাসার স্পর্শ। বৃত্ত মেঘার কপালে নিজের কপাল ঠেকালো। ধরা কণ্ঠে বলল,
— আমি সরি রে মেঘ। আর আমাকে মনে করিয়ে দিস না, আমি কত বড় অপরাধ করেছি। বৃত্ত সরি বলছে তার মেঘকে। একবার, দুবার, হাজারবার। সে তার বাচ্চাকে আর কখনো অবহেলা করবে না। কখনো না। বৃত্ত তার বাচ্চা আর বাচ্চার মাকে মাথায় তুলে রাখতে জানে। কি, জানে না?
মেঘা মাথা নাড়লো, উপর নিচে। বৃত্ত হাসলো। মেঘার কপালে চুমু খেয়ে মেঘার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। মেঘা একদম গুটিয়ে গেলো বৃত্তের বুকের মধ্যিখানে। বৃত্ত টিটকারী মেরে বললো,
— তুই অনেক ছিঁচকাদুনে রে মেঘ। এখন তো আমার নিজের কথা ভেবেই টেনশন হচ্ছে। বাচ্চাটা হয়ে গেলে আমি কাকে সামলাবো। বাচ্চাকে না তার বাচ্চা মাকে?
মেঘা হেসে ফেললো। বৃত্তের কাঁধে চাপর মেরে বললো,
— চুপ, আর একটা কথা বললে মাইর খাবি আমার থেকে।
— তুই তোর হাসবেন্ডকে মারবি? হাসবেন্ডকে মারলে গুনাহ হয় জানিস না?
— না, জানিনা। আর জানার দরকারও নেই আমার। এত জেনে কি হবে?
— আমাদের আরো ডজন খানেক বাচ্চা হবে, আরকি!
মেঘা এবার লজ্জায় গুটিয়ে গেল। বৃত্তের বুকে আদুরে দুয়েক কিল ঘুষি দিয়ে গাল ফুলিয়ে বললো,
— চুপ, একদম চুপ। খালি অসভ্য কথাবার্তা।
বৃত্ত হেসে হেসে মেঘাকে নিজের বুকের সাথে একদম মিশিয়ে ফেললো। ইশ, ভালোবাসা কি ভীষন সুন্দর!
________________________
আজ মেঘার প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট দিবে। বৃত্ত মেঘার প্রেগন্যান্সি টেস্ট এর সাথে তার মাথার আরো একটা টেস্ট করিয়েছে। আজ এসব গুলোর রিপোর্ট দিবে। বৃত্ত অফিসের কাজ শেষ করে হাসপাতালে এসেছে রিপোর্ট নেওয়ার জন্যে।
একটু পর বৃত্তের সিরিয়াল এলে, বৃত্ত চেম্বারে প্রবেশ করলো। ডাক্তার একদম মধ্য বয়স্ক। বৃত্ত তাকে সালাম দিয়ে চেয়ারে বসলো। ডাক্তার চোখের চশমা নাকের ডগায় তুলে বেশ কিছুক্ষণ নজর বুলালেন রিপোর্ট দুটিতে। বৃত্ত একসময় জিজ্ঞেস করলো,
— অ্যানি প্রবলেম, ডক্টর?
ডাক্তার এবার মুখ তুলে তাকালেন বৃত্তের দিকে। রিপোর্ট দুটো টেবিলের একপাশে রেখে দুহাত ভাঁজ করে টেবিলে রাখলেন। বললেন,
— কংগ্রাচুলেশন, ইউ আর গোইং টু বি অ্যা ফাদার।
বৃত্ত হেসে ফেললো। মাথা চুলকে লজ্জামিশ্রিত কণ্ঠে বললো,
— থ্যাংকস!
— বাট, মিস্টার বৃত্ত। আই অ্যাম সরি টু সে দ্যাট, আপনার স্ত্রীর একটা ম্যাজর রোগ হয়েছে। সেই প্রবলেম তার লাইফকে অব্দি রিস্কে ফেলে দিতে পারে।
#চলবে
নোট: আজকের পর্বে ৬৭০ রিয়েক্ট না আসলে, আমি আগামী পর্ব দিতে দেরি করবো। পেইজের রিচ দ্বিগুণ কমে গেছে। তাই এটা করা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই। ভালোবাসা সবাইকে।
লেখিকার পাঠকমহল,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri
আগের পর্ব,
https://www.facebook.com/100063985747587/posts/279268617549328/?app=fbl