মেঘের পরে রংধনু পর্ব-১২

0
1161

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_১২
লিখা: Sidratul Muntaz

” আপনি কি এতোক্ষণ লুকিয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন? নাহলে হঠাৎ কোথ থেকে আসলেন?”
অরিন সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্নটা করলো ইলহানকে। ইলহান হতবাক হয়ে বললো,
” আরে, তোমার কাজিন সেন্সলেস হয়ে গেছে। সেইটা না দেখে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো আমি কই ছিলাম? স্ট্রেইঞ্জ! আরে ওকে ধরো না। আমার গাড়িতে তোলো।
অরিন রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” আপনার গাড়িতে কেনো তুলবো?”
” হসপিটালে নিতে হবে না?”
” হসপিটালে কেনো নিবো?”
” ওর তো কোনো সেন্সই নেই। হঠাৎ করে ফিট হয়ে গেল। তোমার টেনশন হচ্ছে না?”
” একদমই না। সুন্দর ছেলে দেখলে ফিট হয়ে যাওয়া, ড্রেনে পড়ে যাওয়া, জ্বর বাঁধিয়ে ফেলা, এইসব ওর সহজাত ধর্ম। এটা নিয়ে টেনশনের কিচ্ছু নেই। আপনি সামনে থেকে চলে যান। ও এমনিই ঠিক হয়ে যাবে।”
ইলহান অরিনের কথার আগা-মাথা বুঝতে না পেরে বিহ্বল চেহারায় কি যেনো একটা ভাবলো। তারপর হঠাৎ ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে সরুদৃষ্টিতে বললো,
” তার মানে তুমি আমাকে সুন্দর বলছো? ”
” আমার মাথা বলছি। সরুন সামনে থেকে।”
অরিন এই কথা বলে দুইহাতে নৌশিনকে উঠানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ইলহান বললো,
” আমি হেল্প করি?”
” লাগবে না।”
অরিনের কর্কশ গলা শুনে খানিক দূরে সরে দাঁড়ালো ইলহান। অরিন খুব কষ্টেও নৌশিনক দাঁড় করাতে পারলো না। এই মেয়ের এতো ওজন কিভাবে হলো? দেখতে তো শুকনা কাঠির মতো লাগে। ইলহান নিচুগলায় বললো,
” তুমি পারবে না অরিন। মেয়েটাকে ফেলবে, নিজেও পরে হাত-পা ভাঙবে।”
” তাতে আপনার কি?”
” তোমার হাত-পা ভাঙলে আমারও তো ব্যথা লাগবে।”
অরিন অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। ইলহান চুপ করে গেল। অরিন বললো,” এ ধরণের ফালতু কথা আরেকবার বললে আমি আপনার নাক ফাটিয়ে দিবো।”
ইলহান উপহাসযুক্ত হাসি দিয়ে বললো,
” সেটা করতে গেলেও তোমাকে বেঞ্চে উঠতে হবে।”
অরিন মনে মনে ইলহানকে গালি দিয়ে রাগ ঠান্ডা করলো। তারপর যখন বুঝলো নৌশিনকে তোলা তার সাধ্যি না তখন হার মেনে বললো,
” আচ্ছা শুনুন, আপনি একসাইড থেকে ধরুন আমি অন্যসাইড থেকে ধরছি।”
ইলহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” ফাইনালি!”
দু’জন কোনোমতে ধরে নৌশিনকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে গেল। নৌশিনের কাছে একটা ছোট পার্স ছিল। ভোরে অরিনের মামী হয়তো ঘুমিয়ে ছিলেন। তাই নৌশিন চাবি নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিল। অরিন নৌশিনের ব্যাগে সেই চাবিটা খুঁজে পেল। তারপর সেটা দিয়েই দরজার লক খুললো। মামী নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছেন। তাঁর ঘরের দরজায় পর্দা লাগানো। অরিনের মামা এইখানে থাকেন না। গতমাসে তাঁর চট্টগ্রামে পোস্টিং হয়েছে। তিনি একজন পুলিশ অফিসার। অরিন আর ইলহান চুপি চুপি নৌশিনকে নিয়ে ভেতরে চলে আসলো। অরিন যত্ন করে নৌশিনকে বিছানায় শুইয়ে দিল। মেয়েটার এখনও কোনো হুশ নেই। অরিনের এবার সত্যি ভয় লাগছে। কিন্তু ভয়টা ইলহানের সামনে প্রকাশ করতে চায় না সে। আলতো হাতে নৌশিনের গালে চাপড় দিতে দিতে অরিন ডাকলো,
” এই নৌশিন, এই। উঠ না।”
নৌশিন কোনো সাড়া দিল না। অরিন ভয়ে ঘামতে লাগলো। ইলহান পুরো রুম জুড়ে পায়চারী করতে করতে বললো,
” নাইস রুম। এইখানে কি তুমি থাকো? তোমার ছবি কেনো?”
” আমার কাজিনের ঘরে আমার ছবি থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে আমি এইখানে থাকি। অযথা প্রশ্ন করা বন্ধ করুন।”
ইলহান দেয়ালের মরিচবাতি গুলো ধরে বললো,
” ডেকোরেশন সুন্দর। আমার পছন্দ হয়েছে। বিয়ের পর কি আমাদের রুমও এইভাবে সাজানো থাকবে?”
অরিন তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো,” বিয়ের পর মানে?”
” আমাদের বিয়ে।”
” এইদিকে আমার বোন মরে যাচ্ছে আর আপনি ফাজলামি করছেন? আপনি এখনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবেন।”
” তোমরা বাসায় গেস্ট এনে এইভাবেই তাড়িয়ে দাও নাকি? ভালোই।”
” আপনি যাবেন না?” অরিন প্রায় চিৎকার দিল। ইলহান দুইহাতে কানে আঙুল গুজে নিয়ে বললো,” শাউট করছো কেনো? মামী শাশুড়ী উঠে যাবে তো।”
অরিন রাগে দাঁত খিচলো। টেবিল থেকে টিস্যুবক্সটা তুলে ইলহানকে মারতে মারতে বললো,
” আপনার এতোবড় সাহস আমার মামীকে মামী শাশুড়ী বলেন? এখনি বের হোন এই বাসা থেকে। কখনও আসবেন না।”
অরিন ইলহানকে ঠেলে বের করে দিল। ইলহান এতোক্ষণ হাসছিল কিন্তু যখন তাকে বের করে অরিন দরজা আটকে দিতে নিচ্ছিল তখনই সে আচমকা অরিনের ডানহাত চেপে ধরে কঠোর মুখভঙ্গি করে বললো,
” অরিন, আমি খুব সিরিয়াসলি বলছি। আই লভ ইউ। আই ওয়ান্না বি উইথ ইউ ইন এভরি সিঙ্গেল মোমেন্ট অফ মাই লাইফ।”
” আমি আরও সিরিয়াসলি আপনাকে বলছি। আই হেইট ইউ। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি উইথ ইউ ইন এনি মোমেন্ট অফ মাই লাইফ।”
অরিনের কণ্ঠে এই কথাগুলো ইলহানের এতোই নিষ্ঠুর মনে হলো যে সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ হালকা ভিজে উঠলো। সে দূর্বলগলায় প্রশ্ন করলো,
” কেনো অরিন?”
” আপনার বাবা যেটা করেছেন আর আপনি যা করছেন, আমি ভদ্র মেয়ে বলেই সহ্য করছি। অন্যকোনো মেয়ে হলে এতোক্ষণে হ্যারেসমেন্টের মামলা করতো আপনাদের নামে। সেটা কি জানেন?”
ইলহান ভ্রু কুচকে বললো,
” বাবা কি করেছে তোমার সাথে? বলো আমাকে!”
” সেটা আপনার বাবাকেই গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।”
অরিন মুখের উপর দরজা আটকে দিল। ইলহান স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বন্ধ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে রইল। তারপর ধীরপায়ে হেঁটে গাড়ি পর্যন্ত গেল। গাড়ির দরজায় কয়েকটা লাথিও মারলো। মাথার চুল খামচে, টেনে ছিঁড়লো। এই মুহুর্তে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে খুব ইচ্ছে করছে তার। সেটা করা সম্ভব না দেখে রাগে সড়কের দেয়ালে অনেকগুলো কঠিন ঘুষি মারলো সে। তার হাত ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। ইলহান ক্লান্ত হয়ে সড়কের মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। বাবা কি এমন বলেছেন অরিনকে? যার জন্য অরিন এতো অনায়াসে বলে ফেললো সে ইলহানকে ঘৃণা করে! আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে যে বাবার অরিনকে পছন্দই হয়নি। তাই তিনি ইচ্ছে করেই অরিনকে রাগিয়ে দিয়েছেন যেনো সে ইলহানকে প্রচন্ড ঘৃণা করতে থাকে আর তাদের সম্পর্কটা কখনও পরিপূর্ণ না হয়। সত্যিই কি বাবা এমন করেছেন? উনি করতে পারলেন এটা? বাবার প্রতি অভিমানে ইলহানের ভেতরটা তিক্ত হয়ে আসলো। ঠোঁট কাঁপতে লাগলো। বাবা কেনো এমন করলেন? তিনি কি নিজের ছেলের সুখ সহ্য করতে পারেন না? তাহলে কি বাবাও ইলহানকে ভালোবাসে না? শুধু দয়া দেখিয়ে তাকে এতিমখানা থেকে তুলে এনেছিলেন? দয়া দেখিয়েই খাওয়াচ্ছেন, পড়াচ্ছেন, ব্যস। এতেই দায়িত্ব শেষ। তাও বাবা তার জন্য অনেক করেছেন। ইলহানের আসল মা-বাবা তো তাকে আবর্জনার সাথে ডাস্টবিনেই ফেলে দিয়েছিল। সেই তুলনায় শায়িখ সাহেব ইলহানকে যথেষ্ট স্নেহ-মায়ার চাদরে ঢেকে বড় করেছেন। ইলহানের তো এতো যত্ন পাওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল, ডাস্টবিনের আবর্জনার সাথে পঁচে গেল নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। ইলহান কি তার মায়ের কাছে এতোই বোঝা হয়ে গেছিল যে মা তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন? অন্যকিছুও তো করতে পারতেন। কাউকে দিয়ে দিতে পারতেন। তাই বলে ডাস্টবিনে ফেলবেন? ইলহান কি এতোটাই নিকৃষ্ট, অপ্রয়োজনীয়? মা যদি তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতেন তাও ভালো ছিল। শায়িখ সাহেব প্রায়ই একটা কথা বলেন, ইলহান নাকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার মতো সন্তান যে মা-বাবা পাবে তাদের সবার জীবন ধন্য। বাবার এই কথা শুনলে ইলহান মনে মনে খুব হাসে। যদি এমনই হয় তাহলে ইলহানের আসল মা কেনো তাকে পেয়ে ধন্য হলেন না? কেনো তাকে উচ্ছিষ্টের মতো ছুঁড়ে ফেললেন?শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কেউ ডাস্টবিনে ফেলে দেয় বুঝি? ইলহানের আসল মা হয়তো তাঁকে বাঁচিয়েই রাখতে চাননি। কিন্তু এতো ছোট বাচ্চাকে মেরে ফেলতে বিবেকে বেঁধেছিল হয়তো। তাই ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন। যেনো কুকুর খেয়ে ফেলে। সেদিন কেনো কুকুর খেয়ে ফেললো না ইলহানকে? তাহলেই ভালো হতো।অরিনের মুখ থেকে ভয়ংকর বাণীগুলো শুনে প্রতি মুহুর্তে মৃত্য যন্ত্রণা সহ্য করার চেয়ে শুরুতেই মরে যাওয়া ভালো ছিল। ইলহানের বড্ড আফসোস। আসল মানুষগুলো কখনও তার মূল্য বোঝে না। যেমন, অরিন, মা। ইলহান যখন এতিমখানায় ছিল তখন নাকি হাজার হাজার দম্পতি ওকে এডাপ্ট করার জন্য অস্থির ছিলেন। অথচ তার আসল মা-ই তাকে ডাস্টবিনে ফেলে গিয়েছিল। আর এখন? পৃথিবীতে এমন খুব কম মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে যে ইলহানকে দেখে দূর্বল হয় না। কিন্তু অরিন? তার অবহেলা তো ইলহানের কাছে মৃত্যুসম। এই নির্মম সত্যিটাও সে বুঝতে চায় না। আসল মানুষগুলো আসলেই কখনও ইলহানের গুরুত্ব বুঝলো না। ইলহানের ঘোর কাটলো তীক্ষ্ণ হর্ণের শব্দে। রাস্তায় জ্যাম লেগে গেছে। মানুষ জন প্রখর বিরক্তির সাথে ইলহানকে ধমকাচ্ছে। ইলহান তৎক্ষণাৎ আবিষ্কার করলো সে এতোক্ষণ ধরে সড়কের মাঝখানেই বসে ছিল!

সন্ধ্যায় অরিন আবার ফোন করলো নৌশিনকে। সকালে নৌশিনের জ্ঞান ফেরার পর সে দূর্বলগলায় বলেছিল, তার নাকি প্রচন্ড ঘুম আসছে। সে শুধু ঘুমাবে। কারো সাথে কথা বলবে না। অরিন তারপর বাসায় ফিরে এসেছিল। দুপুরে সে খোঁজ নেওয়ার জন্য নৌশিনকে ফোন করলো। তখন মামী ফোন ধরে বলেছেন, নৌশিন ঘুমায়। এরপর যতবার অরিন ফোন করেছে, একবারও নৌশিনকে পাওয়া যায়নি। কখনও ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেছে। আবার কখনও মামী ফোন ধরে বলেছেন, নৌশিন ঘুমায়। একটা মানুষ কি সারাদিন ঘুমাতে পারে? এখন মায়ের কাছ থেকে মোবাইল এনে অরিন আবার ফোন করছে। তার আসলে খুবই চিন্তা হচ্ছে নৌশিনের জন্য। ইলহানকে দেখেই কেনো অজ্ঞান হয়ে গেল সে? রহস্যটা কি? এইবার ফোন বাজতেই নৌশিন ধরলো। কিন্তু তার কণ্ঠ ঘুমো ঘুমো শোনাচ্ছে। অরিন বাঁজখাই গলায় বললো,
” এই তোর সমস্যা কি? সারাদিন ঘুমিয়েছিস। এখনও ঘুমাচ্ছিস? উঠ।”
” হ্যাঁ অরিন? কেমন আছিস তুই?”
” আগে বল তুই কেমন আছিস? শরীর ভালো? ”
” হুম। ভালোই তো মনে হচ্ছে।”
” সকালে তোর কি হয়েছিল রে?”
” কি হয়েছিল? কোন সকালের কথা বলছিস?”
” আজকে সকালের কথা বলছি।”
” ও, আজকে সকালে কি তুই আমাদের বাড়ি এসেছিলি? মনে পড়ছে না তো।”
অরিন মনে করাতে গিয়েও আর মনে করালো না। ভাবলো থাক, যাকে দেখেই এই মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিল তার কথা এখন মনে করাতে গেলে আবার অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। অরিন এতোবড় রিস্ক নিল না। সে বললো,
” না, কিছু না। তুই সারাদিন ঘুমিয়েছিলি তো তাই টেস্ট করে দেখলাম মাথা ঠিকাছে কিনা।”
” ও৷ এখন তাহলে রাখি। ফ্রেশ হতে হবে। ক্ষিদেও পেয়েছে। পরে কথা বলবো।”
” ঠিকাছে।”
মোবাইলটা রেখেই নৌশিন জোরে হাফ ছাড়লো। ভাগ্যিস অরিন কিছু বুঝতে পারেনি। সকালে যে সে অজ্ঞান হওয়ার নাটক করেছিল সেটাও মনে হয় বুঝতে পারেনি। আসলে নৌশিনের কিছু করার ছিল না। ইলহানকে দেখা মাত্রই তার খুব জোরে মাথা চক্কর দিচ্ছিল। চোখের পাতা কাঁপছিল। হাত-পা অবশের মতো হয়ে যাচ্ছিল। তার অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে অরিন যদি বুঝে ফেলতো যে ইলহানই তার ডেলিভারিম্যান তাহলে আর লজ্জার সীমা থাকতো না। অরিন-ইলহানের সামনে বসে স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াই নৌশিনের কাছে বেশি সহজ লাগছিল। তাই সে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেছে। তবে, অরিনের বুকের পাটা আছে বলতে হবে। এইরকম একটা ছেলেকে অরিন কিভাবে ইগনোর করছে? তার উপর ছেলেটাও অরিনের জন্য দিওয়ানা। অরিন কিভাবে পারে এই ছেলেকে কাঁদাতে? এই রকম ছেলেকে যে কাঁদাতে পারে সে মানুষও খুন করতে পারে। এখন থেকে অরিনের সামনে খুব সাবধানে চলতে হবে। নাহলে অরিন তাকে খুন করে ফেলবে। আচ্ছা, এই শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলে কেমন হয়? ইলহান-অরিন কারো সাথেই আর দেখা হবে না। নৌশিন চট্টগ্রামে বাবার কাছে গিয়ে থাকবে। মা তো বাবার পোস্টিংএর খবর শুনেই চট্টগ্রাম রওনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নৌশিন রাজি হয়নি। কাজিনদের সাথে থাকার জন্য জেদ ধরে মাকে রাজি করিয়েছে যেনো ঢাকাতেই থাকে। কিন্তু এখন সে আবারও জেদ ধরবে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য। এইখানে সে আর একমুহূর্তও থাকতে পারবে না। তাছাড়া ধরা খাওয়ার ভয় তো আছেই। অরিনকে কখনও জানতে দেওয়া যাবে না যে ইলহানই নৌশিনের ডেলিভারিম্যান। আজকে না হয় ইলহান নৌশিনকে চিনতে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ করে যদি চিনে ফেলে? তাহলে তো কেলেংকারী হবে। না, না, নৌশিন আজকেই মাকে বলবে চট্টগ্রাম যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু একটা কথা নৌশিনের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। ইলহান কি আসলেই অরিনকে এতো ভালোবাসে? ইশশ, অরিনটা কত বোকা। এমন একটা ছেলেকেও সে পাত্তা দেয় না। অথচ এই ছেলে যদি নৌশিনকে জোর করে হোটেলে নিয়ে দরজা আটকে দেয় তাও তো নৌশিন কিচ্ছু বলবে না। ধূর, এসব সে কি নোংরা নোংরা চিন্তা করছে? তওবাহ তওবাহ! নৌশিন নিজের গালেই থুথুমারা চড় দিল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here