মেঘে ঢাকা চাঁদ পর্ব-২৪

0
1014

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ২৪)
সায়লা সুলতানা লাকী

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর রৌশন ওর নিজের রুমেই ঘুমিয়ে পড়ল। রেশমার রুমটাতে বসে ছিল ওর মা। লাবন্য নিজের রুমে বসে পড়ছে। তাসলিমা এখন ওর খালাম্মার সাথেই ঘুমায়। ফ্লোরে নিজের তোশক বেডিং বিছিয়ে নেয়। খালাম্মার সাথে থাকতে ওর খুব ভালো লাগে, ঘুম না আসা পর্যন্ত গল্প করা যায় তার সাথে, এতদিনে এ বাসায় মন খুলে কথা বলার একজন মানুষ পাওয়া গেছে।তাকে বড় আপন বলে মনে হয় ওর।
হঠাৎ করেই নানির মোবাইলটা বেজে উঠল, নিস্তব্ধ বাসায় রিংএর শব্দটা সবারই কানে বাজল।
“হ্যালো”
“আসসালামু আলাইকুম আম্মা।”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম। ”
“আম্মা আপনে রেশমার বাসায় কি করেন? আমিতো শুনেই তাজ্জব হয়ে গেছি। আপনে ওই বাসায় কেন?”
” তাজ্জব হওয়ার কি আছে? আমার ইচ্ছেতেই আমি আছি।”
“এটা আবার কেমন ইচ্ছা আপনার, আম্মা?”
“আমার মনে হয় এতটা তোর না জানলেও চলবে।”
“আম্মা আপনে জানেন যে রেশমার কারনে আমরা আমাদের আব্বাকে….”
“আহ! রেহেনা, পুরোনা সুরটা আর তুলিস নাতো! একই সুর আর শুনতে ভালো লাগে না।”
“আম্মা আপনের হইছেটা কি? আমারতো এসব ভালো ঠেকতেছে না।”
“তোর ভালো ঠেকা আর না ঠেকাতে তো আর আমি চলব না। আমি আর তুইতো এক না।”
“আম্মা আপনার তিনটা ছেলে থাকতে আপনে এখন মরা মেয়ের বাসায় থাকবেন এটা মানুষ শুনলেই বা কি বলবে?”
“মানুষের বলা আর না বলা এখন আর আমার মনকে প্রভাবিত করে না। আমি এখন এগুলোর থেকে অনেক দূরে আছি।”
“বুঝি না এই পুচকা মেয়ে কি এমন যাদু জানে যে একে একে সবাইরে নিজের মতো করতাছে। আপনে এখন পুরাই লাবন্যের সুরে কথা বলতাছেন।”
“রেহেনা তোর মাথাটা একটু নিজের সংসারে খাটা। আমার কিংবা লাবুর দিকে তাকিয়ে অযথা সময় নষ্ট করিস না। নিজের বুদ্ধিটুকু নিজের সংসার গোছাতে কাজে লাগা। অন্তত নিজের বুদ্ধিতে সংসারটা চালাতে পারলে আর অন্যের বুদ্ধি নিয়ে সংসারে অশান্তি বাড়াতে হবে না বলেই মনে হয়। দেখ নাজমুল কি বলে, ও কি চায়। তোর ছেলের মনকে বোঝার চেষ্টা কর। ভবিষ্যতে কাজে আসবে তাতে। অহেতুক এদিক ওদিক বুদ্ধি অপচয় করিস কেন?”
“ছেলের মন বোঝতে বললেন পরে বুঝলাম ঘটনাটা কি? এই হল তাহলে মেয়ের বুদ্ধি! ”
“মাথা মোটা মেয়ে তুই আমার। অসুবিধা নাই তোর যা বোঝার তাই বুঝে নিজের মধ্যেই থাক। আমার কোন বিষয়ে নাক গলাতে আসিস না। ভালো থাক, সুখে থাক নিজের সংসার নিয়ে। রাখি অনেক রাত হয়েছে, ঘুমোবো।” কথাগুলো বলে কলটা কেটে দিলেন তিনি।

লাবন্য বাহিরে দাঁড়িয়ে অপর প্রান্তের কথাগুলো শুনতে পারে নাই ঠিকই কিন্তু এপ্রান্তের কথাগুলো শুনে বুঝতে পারলো নানি বড় চাপে আছে এখানে চলে আসায়। আগ বাড়িয়ে নানিকে কিছু বলা উচিৎ হবে কি না, ভাবতেই দেখল তিনি রুম থেকে বের হয়ে এলেন।

“কি হল তুই এখানে কি করছিস?”
“কিছু না পানির জন্য এসেছিলাম। ”
“কাল থেকে এক বোতল পানি রুমে নিয়ে যাবি।
পড়া রেখে বারবার উঠবি না।” কথাটা বলেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। লাবন্য আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে এল।

“খালামনি কি কারনে আমাকে পছন্দ করেন না?” প্রশ্নটা একবার নিজের মনকে করে আবার মাথা ঝাড়া দিয়ে বসল। “বাদ এসব চিন্তা বাদ। এখন ইজ্জত বাঁচাতে লড়তে হবে। ফেল করলে ওল্ড লেডি আমার ব্যান্ড বাজাবে।” বলে আবার পড়ায় মনোযোগ দিল।

দুদিন যাবৎ রাতে ঘুমটা ভালো হয়। যখনই বালিশে মাথা রাখে সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর তাই সকালে নিজেকে বড় ফ্রেশ লাগে লাবন্যের। রুশকে এখন নানিই রেডি করান। ফযরের নামাজের সময় ওঠে আর ঘুমান না তিনি। কোরআন নিয়ে বসার আগেই রুশকে উঠিয়ে দেন। তাই সকালে রুশ বেশ ভালো সময় পায় রেডি হতে।
সকালে নাস্তা শেষ করে নিজের ব্যাগটা নিয়ে নানির রুমের দিকে গেল তাকে ডাকতে। নানি নিজের রুমে গিয়েছিল শাড়ি চেঞ্জ করতে, কিন্তু এখনও বের হননি। দরজার কাছে যেতেই শুনতে পেল নানি কার সাথে যেন মোবাইলে কথা বলছেন খুব মিনমিনা স্বরে

“তোমাকে না আমি বারন করেছি আমাকে কল দিতে, তবে কেন কল দিচ্ছো বারবার? দেখছো যে রিসিভ করছি না, তারপরও দিয়েই যাচ্ছো দিয়েই যাচ্ছো।তুমি জানো না এই সময়তে কি কাজ থাকে?”

অপর প্রান্তে থেকে কি বলল তা শুনতে পেলো না তবে নানি তার কথা শুনে এবার একটু রেগে গিয়ে বললেন
“খবরদার, এসব সরি টরি আমাকে বলবে না। আমি এসব শুনতে চাই না। আর কান খাঁড়া করে শুনে নাও আমি কোনো দিনও তোমাকে ক্ষমা করব না। তুমি বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক। তুমি ইচ্ছে করেই আমার মেয়েকে অনেক কষ্ট দিয়েছো। তোমার কোনো ক্ষমা নাই।”

এবার লাবন্য কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো অপরপ্রান্তে কে। একটু থেমে নানি আবার বলতে শুরু করলেন

“উঁহু, তোমার ওসব দায়সারা সস্তা অযুহাত আমি শুনব কেন? অসম্ভব ওসব আমাকে শুনিও না।
শোনো শোনো শোনো, এটা তোমার ভুল ধারনা। আমি তোমার জন্য কিছু করছি না। আমি যা করছি তা আমার কাছে উচিৎ মনে হচ্ছে বলেই করছি। আমার মেয়েটার এত দিনের পরিশ্রমকে একটা সার্থক রুপ দিতে করছি। মেয়ের রেখে যাওয়া আমানতের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি মাত্র । তোমার অত বিনয় হতে হবে না আমার কাছে।”

কথাটা শুনে লাবন্যের গা’টা জ্বলে উঠল। “এমন কাজ যে করতে পারে সে আবার বিনয়ীও হতে চায়, আজব!” মনে মনে ভাবতেই শুনল নানি বলছেন-

“সেকি কথা! এখন? না না না আমরা এখন বের হচ্ছি।এখন তুমি আসবে কেন?”

এতটুকু চুপচাপ শুনতেই ও যা বোঝার বুঝে উঠল, ওর আব্বু কি চায়, কেন কল দিছে। আর তা বুঝতেই চিৎকার করে উঠল
“কে আসবে? কেন আসবে? এখানে তার কি আছে? কার জন্য আসবে? আমরা চাই না সে আসুক। আমাদের আম্মুর মতো আব্বু চলে গেছে না ফেরার দেশে তেমনটাই মনকে বোঝাচ্ছি । আর কাউকে লাগবে না আমাদের । নানি তুমি মানা করে দাও, সে যেনো এখানে কোনদিনও আসার কথা মাথায় না আনে।”

“আহ লাবু! চুপ কর। আমি কথা বলছি না তুই মাঝখানে কেন কথা বলছিস? আমাকে কথা বলতে দে। বলে তিনি আবার বললেন কলে-
“হ্যা বলো কি বলতে চাচ্ছো?” কিছুক্ষণ নানি চুপচাপ শুনলেন তার কথা। এরপর বললেন-
“হুমম বুঝলাম, আচ্ছা তুমি সন্ধ্যার পর আসো। আর কোন কথা বলবা না।রাখলাম”

“নানি তুমি তাকে বাসায় আসার পারমিশন কেন দিলা?”
“কারন তার এখানে আসাটা দরকার। তার সব ডকুমেন্ট, অফিসিয়াল কাগজপত্র, পাসপোর্ট, ব্যাংকের কার্ড সবই আলমারিতে রাখা এগুলো ছাড়া সে মুভ করতে পারছে না। এতদিন অফিস করেছে কিন্তু খুব ঝামেলা হয়েছে। এগুলো ছাড়া সে কীভাবে টাকা তুলবে আর কীভাবে তোদের জন্য টাকা দিবে?”

“কিন্তু সে যদি আলমারি খুলে আম্মুর জিনিসপত্র নিয়ে যায়?”
“তোর আম্মুর জিনিসপত্রের হেফাজত করা তোদের দায়িত্ব। সেটা যদি তোরা সঠিকভাবে না করতে পারিস তবেতো তা খোয়া যাবেই। এই লোক না নিলেও তা অন্য কেউও নিতে পারবে। আসল কাজ হল রেশমার জিনিসপত্রগুলোকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা যাতে তা কখনও নষ্ট না হয়। সেটা যদি না করতে পারিস তবে আর তা নষ্ট হওয়া নিয়ে টেনশন করে কি হবে?”

“আমি চাচ্ছিলাম আম্মু যেভাবে রেখে গেছে সেভাবেই রাখতে। রুমটায় ঢুকলে মনে হয় আম্মু এখনও এখানেই আছে। এখনই রুমে ঢুকবে আর বলবে, কিরে লাভ এখানে কি করিস? কিছু লাগবে?”

“মানুষটাই নাই আর জিনিস? এসব করে কি হবে?ওতো আর ফিরবে না, শুধু শুধু কষ্ট বাড়ানো ছাড়া আর কিছু নারে নানু আপু।”

“আম্মুর গন্ধটা পাই রুমটায়। সবকিছুতে আম্মুর ছোয়া লাগা ওখানে।”
“রেশমার গায়ের গন্ধ তোদের গায়েই আছে। আমিতো পাই।”
“আমি আজ ভার্সিটি যাব না নানি। বাসায় থেকে আগে এগুলো সরাবো, গোছাবো।যাতে সে আম্মুর কোনো কিছুই না নিতে পারে।”
“অসম্ভব, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া যাবে না। পড়া বাদ দিয়ে কিছু না। ক্লাস শেষ করে বাসায় এসে পরে এগুলো গোছানোর অনেক সময় পাওয়া যাবে। এখন চল দেরি হয়ে গেছে।” বলে রুশ কে নিয়ে নানি আগে আগে বের হয়ে গেলেন বাসা থেকে ।

লাবন্য দরজায় লক লাগিয়ে নিচে নেমে এল। আজ আর একরাম সাহেব নাই আর গার্ডও পুরোপুরি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা লম্বা সালাম দিয়ে গেইট খুলে দিল। এরপর নিজেই একটা সিএনজি ডেকে আনল। লাবন্য বিষয়টা খুব উপভোগ করল। এই মানুষটার উপস্থিতিতে এতটা স্বস্তি ফিরবে ওদের জীবনে তা কখনও ভাবেনি আগে।

আজ ক্লাস শেষ হতেই লাবন্য তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরল। মায়ের রুমে ঢুকে সব কিছু ভালো করে লকড করল। ওর নানি চুপচাপ লাবন্যের অস্থিরতা দেখতে লাগল। মেয়েটাকে আগে যখন দেখতো তখন এমন ছিলো না। মায়ের মৃত্যুর পর যেদিন দেখেছিলো তখনও এমনটা মনে হয়নি অথচ এখন একেবারেই অন্য একজন লাবন্য বলে মনে হল। মেয়েটা বারবার চেক করছে ওর মায়ের ব্যবহার্য কোন কিছু এদিক সেদিক পড়ে রইল কি না।

রৌশন যখন শুনলো ওর আব্বু আসবে আজকে বাসায় তখন থেকেই কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেল। নানি আসার পর যাও একটু নরমাল আচরণ করছিল আজ হঠাৎ করেই চেঞ্জ হয়ে গেল। দুপুরে খেয়ে নিজের রুমেই ঘুমিয়ে পড়ল। সকাল সকাল উঠে যায় বলে দুপুরে এমনিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। মাগরিবের আগেই উঠে গেলো। নানুর সাথে নামাজ পড়ে দুধ খেয়ে নিজের রুমে চুপচাপ পড়তে বসে গেল। ওর এমন আচরনটা ওর নানুর মনটাকে আরও বেশি নাড়া দিল। ওদের আব্বু আসবে বাসায় আজ কয়টা দিন পর অথচ ওদের কারউ মনেই কোন আনন্দের লেস মাত্র দেখতে পেলেন না।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঠিকই লিখন আসল এই বাসায়।বুয়া খালা দরজা খুলে দিল। লিখন ভিতরে ঢুকে দেখল কেউ নাই আশেপাশে।জিজ্ঞেস করতেই জানল যে যার রুমে পড়ছে। একটা সময় রেশমার মা বের হয়ে এলেন।

“আসসালামু আলাইকুম আম্মা ”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম, যে কাজে এসেছো তাই করে যাও।”
“জি আম্মা ” বলে নিজের রুমে ঢুকে গেল। নিজের বাসা নিজের রুম কিন্তু চিরচেনা সেই জায়গায় আজ ঢুকতে কেমন চোর চোর অনুভূতি অনুভব করল। নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ডুকরে কেঁদে উঠল। বিছানায় বসতেও যেনো কেউ মানা করছে এমনটাই মনে হল লিখনের। আলমারিটা খুলে নিজের দরকারি জিনিসপত্রগুলো নিয়ে নিল সাথে কিছু কাপড় চোপড়ও গুছিয়ে নিল। রুমটাতে থাকতে পারছে না। কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো ওর। পুরো রুমটার সৌন্দর্যই মনে হল গায়েব। রেশমার এত সুন্দর করে সাজানো ড্রেসিং টেবিলটা পুরো খালি। মনে হল শুধু আসবাবপত্রগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রেশমার জন্য কাঁদছে। একটা সময় নিজেকে কেমন জানি অসহায় বলে মনে হল। সাজানো গোছানো জীবনটা হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে গেল। যাও চাইল নতুন করে গোঁছাতে তাতে আরও বেশি ঝামেলা পাকিয়ে গেল।এখন একেবারে ছন্ন ছাড়া হয়েগেল সবটা। রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসল। বারবার মুখ তুলে চারপাশ দেখতে লাগল কিন্তু ছেলেমেয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না। চুপচাপ বসে আছে দেখে রেশমার মা আবার লিখনের সামনে এসে দাঁড়ালো ।

“কিছু বলবে? বসে আছো যে?”
“আমাকে সবাই বলল, বিয়ে করলেই সংসারটা আবার আগের মতে হয়ে যাবে। বিয়ের কথা আগে বললে লাবু অমত করবে তাই আগে কিছুই বলা হল না। দিন দিন লাবু যেনো ওর মায়ের অভাবে কেমন হয়ে যাচ্ছিল। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যদি কোন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যায় ওর! তাই চাচ্ছিলাম যত দ্রুত সম্ভব সব যেনো আবার আগের মতো হয়ে উঠে। লাবু আবার নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দিবে, রুশ আগের মতো খেলবে আনন্দ করবে। আমার মা’ও নিজের ঘরে আগেরমতো শান্তিতে থাকবে। কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ। সব ঠিক হওয়ার জায়গায় সবকিছু যা ছিল তার চেয়ে আরও খারাপ হয়ে গেল। আমার মেয়ের এমন রুপ আমি কোনো দিনও আশা করিনি যা আমি এখন দেখছি। এই এক জীবন আমার এমনভাবেই নষ্ট হয়ে গেল। আমার রুশ আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আমি আসছি অথচ ও আমার সাথে দেখাটা পর্যন্ত করতে আসলো না। এ জীবনের আর কি দাম আছে আম্মা বলতে পারেন? ”

“না আমি কিছুই বলতে পারি না। আমি শুধু জানি তুমি চাইলে আমার মেয়েটা আরও একটু আরাম পেতে পারতো। আরও একটু শান্তিতে থাকতে পারতো। তুমি ওর ভালোবাসাকে পুঁজি করে ওকে শুধু তোমার প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছো।”

“আম্মা আমি বারবার বলছি আমার অপারগতার কথা। আমি আমার মায়ের কাছে বন্দি। আমার পায়ের পাতায় এক্সিমা ছিল ছোটবেলায়, ভয়ংকর কষ্ট হত আমার। আমি দেখেছি আমার মা কি কষ্ট করেছে আমাকে নিয়ে। দিন নাই রাত নাই, শীত গরম সব সময়ই আমার জন্য কষ্ট করেছেন। আমি কি করে তাকে কষ্ট দেই। তার সব কথা রেশমা মেনে নিত, আমিও তাই আর কিছু বলতাম না।”

“বাদ দাও এসব বলে এখন আর কোন লাভ নেই, আমার মেয়েটাই নেই ও তো আর ফিরবে না। তোমরা এখন যে যার কর্মফল ভোগ করবে এটাই নিয়ম।”

“আম্মা একবার একটু রুশকে ডাকবেন, লাবন্য বড় শক্ত ও আসবে না। একবার একটু রুশকে ডাকেন, ওকে দেখি না অনেক দিন হল। ওকে না দেখে ঘুমোতে যেতে পারতাম না। সকালে ওর রুমে গিয়ে ওর বিছানায় প্রায় সময় ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম রেশমার চিৎকারে দুজন লাফিয়ে উঠে রেডি হতে যেতাম। আম্মা প্লিজ একবার ডাকেন না ওকে।”

“তুমিই ডাকো।”

“রুশ, রুশ, এই রুশ। আব্বু আয় না একবার, রুশ-” আর ডাকতে হলো না। রৌশন বের হয়ে এল রুম থেকে । চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল সামনে এসে। লিখন এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু ওর মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। টেনে এনে পাশে বসিয়ে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল লিখন।

“এই নে তোর ফেবারিট চকলেট আছে এতে। এমন গোমড়া মুখে আছিস কেন? আব্বুর উপর অনেক রাগ তোর? তুই জানিস তোর জন্য তোর আব্বুরও মন খারাপ হয়। কতদিন হল আমরা একসাথে ক্রিকেট খেলতে যাই না সকাল বেলা। যাবি খেলতে? তোর স্ট্যাম্পগুলো ঠিক করা হয়নি। এবার ঠিক করে দিব। তুই যতক্ষণ বল করতে বলবি আমি ততক্ষণ বল করব একটুও টায়ার্ড হব না বাপ। ছুটিরদিন বিকেলে ডমিনেন্স পিজ্জা খাব। হট চকলেট……..”
আর বলতে পারলো না, রুশ উঠে দৌড়ে ওর নানুর কাছে গিয়ে নানুকে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল

“নানু আমি আর জীবনেও ক্রিকেট খেলবো না। আই হেট ক্রিকেট। আমি জীবনও কোন চকলেট খাব না পিজ্জাও না। হট কেক না। আই হেট দেম। আমি এসব কিছু চাই না। আমার এগুলোর কোন দরকার নাই। আমার কিছু লাগবে না।”

রৌশনের কান্নাতে ওর নানুরও চোখ ভিজে গেল। তিনি বেশ শক্ত করে রুশকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা চুমুও খেলেন। এরপর বেশ শক্ত গলায় বললেন
“আমার মনে হয় তোমার কাজ শেষ। তুমি এখন আসতে পারো।”
রৌশনের এমন আচরনে লিখন হতভম্ব হয়ে গেল। ছেলের কান্নার জোয়ারে নিজের চেপে রাখা কষ্টটা মনে হল ও গিলে ফেলল। ঢোক গিলে বলল
“আম্মা আমি প্রতি মাসে টাকাটা কি আপনার একাউন্টে দিব নাকি লাবন্যের একাউন্টে দিব। ওতো এখন বাচ্চা মেয়ে…….”

“সে বিষয়ে না হয় পরেই কথা বলি। এখন তুমি আসো। ”

“জি আচ্ছা”। বলে আর দাঁড়ালো না লিখন, বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। বুয়া খালা এসে দরজাটা আটকিয়ে দিল সাথে সাথে। তারও চোখ ভিজা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here