মেঘে_ঢাকা_চাঁদ পর্ব ৩৫

0
932

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ৩৫)
সায়লা সুলতানা লাকী

কিছুক্ষন কাঁদার পর হুট করে কী যেনো হল লাবন্যের? হঠাৎ করেই পাশে রাখা বক্স থেকে শাড়িটা বের করল। আর তখন ফিক করে হেসে ফেলল, শাড়িটার উপর থেকে চোখ সরাতে পারলো না কিছুক্ষণের জন্য । কচুপাতার রঙের জমিন, তার উপর লতাপাতা,ফুল আর পাখির যেনো জড়াজড়ি করা ছাপ, পুরো আঁচল জুড়ে রয়েছে এক পেখমতোলা ময়ুর । মনে পড়ল হিমেলের পুরনো কথাগুলো। একদিন এক সাদা শাড়ি পড়েছিল কলেজের অনুষ্ঠানে, আর তা দেখে ও মুখটা গম্ভীর করে বলেছিলো “উঁহু, মানায় নাই একটুও! বন্যকে বন জঙ্গলেই মানায়। অন্য কিছুতে মনে হয় জোর করে ওকে আটকে রেখেছে কেউ। ”
সেদিন লাবন্য খুব করে বকেছিল হিমেলকে এমন সব বাজে কথা বলার জন্য। ভেবেছিলো হিমেল দুষ্টমি করেই বুঝি বলেছিলো কথাটা । কিন্তু আজ এই শাড়ি দেখে মনে হল ও আসলে ভেতরে ভেতরে তা’ই মিন করে সবসময়। ওর ভাষায় ও সেদিন বলেছিলো —

“তুই বন্য,
তুই অনন্য।
তুই আঁটসাঁট এই ধরনীর বুকে-
পাখা ঝাপটে উড়ে বেড়ানো বাঁধাহীন এক বিহঙ্গ।
যার কাছে এসে সব শৃঙ্খলতার অপশক্তি
মুখ থুবড়ে পড়ে হয়ে উঠে অতি নগন্য।
তুই সেই বন্য, শুধুই বন্য, আমার বন্য ।”

আজ সেসব কথা মনে হতেই ভেতরটা যেনো কেমন করে উঠলো লাবন্যের। অমন করেই সেদিন প্রথম প্রথম প্রকাশ করেছিলো ওর মনে অভিব্যক্তিগুলোকে। সেদিন ওর মনের অনুভূতি গুলো নাড়িয়ে দিয়েছিলো লাবন্যের মনকেও।
আপন মনে বিরবির করে বলল “ওতো এখনও ওর মনের বন্যই ভাবে আমাকে। ভাবনারতো কোনো পরিবর্তন হয়নি দেখছি! তবে আমি কেন একটু একটু করে দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি? কেন নিজেকে অনবরত ঠকাচ্ছি নিজের কাছেই ?” এর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে শাড়িটা খুলে নিজের গায়ের সাথে লাগিয়ে আয়নার কাছে দাঁড়ালো। মুগ্ধতা মিশিয়ে অস্ফুটস্বরে শুধু বলে উঠল
“অসম্ভব সুন্দরতো!”

সাথে সাথেই ইচ্ছে হল শাড়িটাকে তখনই পড়ে দেখার । যেমন ভাবনা তেমন কাজ। শাড়ি হাতে নিয়ে শুরু হল আনুষঙ্গিক ব্লাউজ পেটিকোট মিলানোর পায়তারা । ঠিক মতো মিলছে না দেখে আশাহত হয়ে বিছানায় বসে পড়ল একটা সময়। আর তখনই মনে পড়ল ওর আম্মুর আলমারির কথা। সাথে সাথে শাড়ি নিয়ে দিলো দৌড় মায়ের রুমের দিকে ।

লাবন্যের নানি ওর ছুটাছুটির বিষয়টা একটু একটু আন্দাজ করতে পারলেন তবে নিজের রাগ চোখেমুখে ফুটিয়ে রেখেই স্থির থাকলেন নিজের দমে। লাবন্য আলমারি খুলে ঘন্টা খানেক ঘেঁটেঘুঁটে মিলিয়ে ফেলল সব। জুয়েলারিও রেডি করল। সব কিছু গুছিয়ে আবার নিজের রুমে চলে এল। মাঝ রাস্তায় নানির সাথে চোখাচোখি হল কিন্তু কোন কথাই বলল না দুজন দুজনাকে।

রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে শুরু হল শাড়ি পড়ার আয়োজন। বেশ কিছু সময় ব্যয় করে সাজালো নিজেকে মনের মতো করে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন ও নিজেকে দেখছিলো ঠিক তখনই ডোরবেলটা বেজে উঠল। লাবন্যের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই এখন। ইদানিং ওর আব্বু যখন তখন তার ছেলের কাছে আসে। ওর ধ্যান এখন শুধু নিজের দিকে। হঠাৎ করেই মনটা আনচান করে উঠল হিমেলের জন্য। ওর দেওয়া শাড়িটা পরল অথচ ওকেই দেখাতে পারলো না। ও নিশ্চয়ই ওর বন্যকে এই রুপে দেখতে পেলে খুশি হয়ে যেত। ওর মনের ভালোবাসাটা মনে হয় কয়েকশো গুন বেড়ে যেত এই ধাক্কায়। কিন্তু কেন যে হিমেলকে এমন করে রাগিয়ে দিলো তখন! আর অমনি সে’ও এত অল্পতেই রেগে গিয়ে আস্ত এক বনের মালিক তার বন্যকে ফেলে বন নিয়ে চলে গেল।এটা কোনো কথা হল? বনের বাহিরে কি বন্য ভালো থাকতে পারে? মনটা যখন এতসব কষ্টে ভারাক্রান্ত ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ল।
“কে?”
“খোল।”
“তুমি?” বলেই কোনকিছু চিন্তা না করেই দৌড়ে দরজাটা খুলে দিল লাবন্য ।

হিমেল নিজের দু’হাত পেছন করে, রাজ্যজয়ের তৃপ্তি চোখেমুখে মাখিয়ে ভেতরে ঢুকল আর বলল
“হুমম আমি, বেলি ফুলের মালা আনতে গিয়েছিলাম, এগুলো ছাড়া আবার তোর সাজ কমপ্লিট হয় নাকি? সাজ শেষ করেইতো অর্ডার করতি মালা এনে দাও। আমি শালা তখন তোকে দেখব নাকি তোর হুকুম পালন করব। তাই আগেভাগেই নিয়ে এলাম। বন্যতো বন্যই, তারতো সবসময় চাওয়া মাত্রই পাওয়া চাই। নে ধর, এবার আমাকে আমার বন্য দে।”

লাবন্য কোন কথা বলতে পারল না। মনে হল এতদিনে সব হরতালে থাকা আবেগ ভালোবাসার অনুভূতিগুলো দলছুট হয়ে যত্রতত্র দিয়ে ছুটে নিজেকে প্রকাশ করার প্রতিযোগীতায় মেতেছে। নিজেকে আর ধরে রাখার ক্ষমতা রইল না, হিমেলের বুকে নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে দিয়েই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। হিমেল যেন এইটুকুরই অপেক্ষায় ছিল এতদিন। মেঘ ঘন হতে হতে কালো আর ভারী হয়ে উঠেছিল বন্যের মন আকাশে। তখন শুধু একটু সময়ের দরকার ছিল তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার। এরপরে আবার আগের মতো করে পাওয়া যাবে ওর বন্যের মন আকাশের রঙিন চমক । পাবে হাস্যোজ্জল রোদেলা ঝকঝকে চকচকে এক মন আকাশ যেখানে থাকবে বাঁধহীন ভালোবাসার ঢেউ অবশ্য তাতে দুষ্টমির টুকরো টুকরো কিছু সাদা মেঘের ভেলার উপস্থিতিরও প্রয়োজন আছে বৈকি , এছাড়াতো আবার তাকে মানাবে না। এমন এক ফুরফুরা আকাশের প্রত্যাশায় এখন এই বৃষ্টি ঝরার সময়টাতে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখল নিজের বুকে টেনে নিয়ে । দুহাত দিয়ে আজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওর বন্যকে।

“কেন আমার সাথে এমন হল? কেন আমি এমন হলাম? বলতে পারো?” কাঁদতে কাঁদতেই বলল লাবন্য।

” উফফ এটা কোনো প্রশ্ন হল? আর কত কাঁদবি? সাঁজতো নষ্ট হয়ে যাবে। পরে আমি বন্যকে বনে খোঁজতে গিয়ে পেয়ে যাব এক পেত্নী। ”

“আমার জীবনের সবকিছু কবে আবার আগের মতো হবে? কখনও কী আর আগের মতো হতে পারবে?”

“সবইতো সেই আগের মতোই আছে, আগের মতোই চলছে তবে তুই কেন আগের মতো হতে পারবি না, অমন করে চলবি না বলতো? পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী না।সবাই চলে যাবে, কেউ আগে কেউ পরে। কেউ যখন চলে যায় তখন তার জায়গায় সাময়িক চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে কিন্তু তারপর পৃথিবী আবার তার আগের ছন্দেই ফিরে আসে। এটাই নিয়ম এভাবেই চলে৷ তুই আমি এর বাহিরে না। অনেক কিছুই আমরা অপছন্দ করি, সহ্য করতে পারি না। কিন্তু এসবকে আবার একেবারে ত্যাগও করতে পারি না। এসব কিছুর মাঝেই আমাদেরকে এডজাস্ট করে চলতে হয়। এই এডজাস্ট করাটাই হলো জীবন।”

“এতই যদি সহজ তবে আমি কেন পারছি না?”
“পারবি, অবশ্যই পারবি।পারতেই হবে। রুশের জন্য পারবি, তোর জন্য পারবি। আমার জন্য পারবি।”

“তোমার জন্য কেন আমি পারতে যাবো? তুমি আমার কে? আমার প্রয়োজনেতো আমি তোমাকে পাইনি। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে চেয়ে রয়েছি কিন্তু কোথাও তোমাকে পাইনি। আমি কেন তোমার জন্য অযথা পারতে যাবো?”

“যাকে মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিস তাকে বাহিরে খুঁজে পাবি কি করে? আমাকে খুঁজেছিস তুই শুনেইতো হাসি পাচ্ছে।”
“ফাইজলামি করো না। আমার প্রয়োজনে তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছো!”

“কে কাকে দূরে ঠেলে দিছে সেই হিসাব না হয় মন ভালো হলে পরে করি?”

“আমার মন ভালো করতেই তো জানতে হবে। আমার কাছে সব পুরুষ তোমরা স্বার্থপর, ঠিক রেশমার স্বামীর মতো। যতক্ষণ পাশে আছে ততক্ষণ তার, দূরে গেলেই অন্য কারো হাত ধরে ফেলো সহজেই ।”

“রেশমার স্বামীর এই বিয়েটা জরুরি ছিল তবে তা এখনই না আরও কিছু সময় পর করলে ভালো হত। তখন নয়তো আমরাই তাকে আরেকজনের সাথে হাত মিলিয়ে দিতাম। কিন্তু এই সময়ে তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্তটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি আমিও।”

“আম্মুর জায়গায় যদি আব্বু মারা যেতো তবে কি আম্মুও বিয়ে করতো? করতো না আমাদেরকে নিয়ে আব্বুর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতো। তাহলে আব্বু কেন পারল না। ”

“মায়েরা অনেক কিছু পারে, তা বাবারা পারে না। খালুজি মারা গেলে এই ফ্ল্যাটটা এমনিতেই তোরা পেয়ে যেতি। তাই তোকে এতবড় পদক্ষেপ নিতে হতো না। গ্রামের সম্পদ সহ ব্যাংক ব্যালেন্স যা খালামনি পেতো তা দিয়ে তোদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে নিশ্চিন্ত একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু খালুজির একটা সময় পর সঙ্গীর দরকারটা…..

“তোমরা পুরুষরা নিজেদের বোঝটা এভাবে বোঝো কেন?”

“আচ্ছা সরি, তুই এখন বুঝবি না বুঝছি। উল্টো বোঝার দরকার নাই। যখন বোঝার তখন বুঝলেই হবে। এখন এসব বাদ। আজ আমি আমার বন্যকে পেয়েছি অনেকদিন পর। আগে একটু তাকে দেখতে দে।”

“কি লাভ দেখে, আমি মরলেইতো তখন আরেকজনকে দেখতে আকুপাকু করবে।”

“উঁহু, তুই থামবি না বুঝছি। তোর দুশ্চিন্তা দূর করতে না হয় তোর আগে আমিই মরে যাই, কি বলিস? তাতে যুদি তুই একটু নিশ্চিন্তিত হতে পারিস।”

“কিসব কথা বলছো? আমি কখন বললাম তোমাকে আগে মরতে?”

“তাহলে তুই কেন আমার আগে মরার কথা ভাবছিস? আমিওতো তোর আগে মরতে পারি। ”

“না মানে…..”
হিমেল লাবন্যের ঠোঁট চেপে ধরে আস্তে করে বলল
“এসব মানে টানে এখন থাক,
সব যুক্তি তর্ক কিছু সময়ের জন্য তুঙ্গে যাক।
সব দুঃখ কষ্ট হতাশা, নিরাশা আত্মঘাতী আন্দোলন নিঃশেষ হয়ে যাক।
আজ শুধু কিছু স্বপ্ন তার রঙিন পাখনা মেলুক।
কিছু প্রত্যাশা আজ শুধু পূর্নতার মুখ দেখুক।
আজ এই সময়টা শুধু কিছু ভালো লাগায় ডুবুক।
আজ এই তৃষ্ণার্ত ঠোঁট শুধু তার তৃষ্ণা মেটাতে ভালোবাসা চুমুক…. ”
আর শেষ করতে পারলো না হিমেল। নানুমনির ডাক পড়ল
“হিমু, রাত হল অনেক। খেতে বসছি আমি।তুই কি করবি?”

লাবন্য হিহিহি করে হেসে উঠল হিমেলের থেমে যাওয়া দেখে।

“এইতো নানুমনি আসছি।” গলা চড়িয়ে উত্তরটা দিয়েই লাবন্যের দিকে তাকিয়ে আবার বলল
“চল, আজ দুই ঘণ্টা তোকে রিকশায় ঘুরাবো।এরপর পেট চুক্তি ফুচকা খাওয়াবো।”

“ওল্ড লেডি মানবে না। আমার উপর মনে হল এমনিতেই একটু রেগে আছে। দেখলে না নিজেরা খেতে বসছে কিন্তু আমাকে ডাকেনি।”

“আরে মানবে মানবে, আসার সময় ঘুষ দিয়ে আসছি না!”
“কি ঘুষ দিয়েছো?”
“এইতো কয়টা মালা দিলাম খোঁপায় জড়িয়ে। দেখলাম খুব খুশি হয়েছে তাতে।”
“মালা? এগুলা তুমি কার জন্য এনেছো? আমার জন্য আনা জিনিস তুমি আবার ভাগ করেছো কেন? তোমাকে না আমি বারন করেছি যা আমার তা আমার, তা কখনও কাউকে ভাগ দিবে না। আজ তুমি আমার মালায় ভাগ বসিয়েছো কেন?”

“ইন্না-লিল্লাহ, আমি আরও ভাবলাম নানুমনিকে তুই অনেক ভালোবাসিস, তাকে দিলে তুই রাগ করবি না। তাইতো দিলাম।”

“মানে? আমি ভালোবাসি বললেই তুমি তাকে আমার ভালোবাসার ভাগটা দিয়ে দিবে? কি আশ্চর্য তোমার চিন্তা ভাবনা। তোমরা পুরুষরা কীভাবে পারো এসব করতে? সব কিছুর ভাগ সহ্য হয় না বুঝছো?” বলে রাগে গজগজ করতে করতে লাবন্য রুম থেকে বের হয়ে এল।
হিমেল মুগ্ধ চোখে ওর বন্যকে বন্য রুপে বের হতে দেখছিলো হঠাৎ মনে হল “ও মাই গড! এই বন্য না জানি কী করে বসে নানুমনির সাথে!” বলে নিজেও দৌড়ে বের হল।

“ইয়ে মানে নানি শোনো, আসলে হয়েছে কি জানো? তোমার ওই কাঁচা পাকা চুলের এত্তোবড় খোঁপায় ওই কয়টা মালা না একটুও সুন্দর লাগছে না। জানি তুমি নিজে ইয়ং বয়সে অনেক সুন্দর ছিলা যা দেখে নানা কুপোকাত হয়েছিল। কিন্তু এই বয়সে এসে আর তুমি তেমনটা নাই। আর এখনকার ছেলেরা তোমার মতো………. ”
“চুপ একদম চুপ, মালাগুলো নিতে চাচ্ছিস নিয়ে যা। আবোল তাবোল কথা বলে এতো পাকাচ্ছিস কেন বিষয়টা? বেশি কথা বলা যেনো একটা বদাভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”
“থ্যাংক য়ু নানি।” বলে আর দেরি করল না মালাগুলো খুলে নিয়ে নিজের খোঁপায় জড়িয়ে নিতে নিতে বলল
“আসলে এগুলো আমার জন্যই এনেছিলো, মাঝে তোমাকে দিয়েছিল ঘুষ সরুপ। আমি যতটুকু জানি তাতে তুমি ঘুষ খাও না। যদি জানো যে তোমার হিমু তার বন্যকে নিয়ে এই রাতে রিকশায় দুই ঘণ্টা ঘুরতে যেতে চায় কিন্তু তুমি এই দাবি নাও মানতে পারো তাই তোমাকে ঘুষ খেতে প্রবুদ্ধ করেছিল। ধরে নাও আমি তোমাকে তা থেকে বাঁচিয়ে দিলাম। ছোট হোক আর বড় হোক। টাকা হোক আর মালা হোক।ঘুষতো ঘুষই, তাই না। আবার এখন যদি তুমি আমাদেরকে ঘুরতে যেতে বারন কর। তবে মনে হবে তুমি আসলেই মনে মনে ঘুষটা চেয়েছিলে আমি নিতে দিলাম না বলে এখন রেগে গিয়ে পারমিশনটা দিতে চাচ্ছো না। সেটাও কিন্তু একপ্রকার গুনাহ। মানে তুমি মনে মনে ঘুষটার পক্ষেই ছিলে…….”

“উফফ!হিমু তুই এই বাঁচালটাকে নিয়ে এক্ষনি বের হবি। আমার সামনে থেকে এক্ষনি যাবি।আর ঠিক টাইম মতো এটাকে আবার বাসায় দিয়ে যাবি। জলদি কর। এর বকবকে আমার মাথার পোকা সব কিলবিল কিলবিল করে উঠছে। ওরে আল্লাহ! না জানি একে কীভাবে সবাই হজম করে?”

“নানি নানি শোনো, তোমাকে যে পাপের হাত থেকে বাচিয়ে দিলাম সেই জন্য তুমি চাইলে আমাকে পুরস্কারও দিতে পারো। বলতে পারো আমি দেখতে কতটা সুন্দর লাগছি! অবশ্য তুমি না বলতে চাইলেও আমি বুঝি আমি জানি আমি কতটা…..”

“হিমু তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে? যাবি নাকি….?”

“উফফ বুঝেছি, ওল্ড লেডির রোষানলে পড়েছি, এখন আর সম্ভব না। এই রুশ দেখ, আঁচলটা দেখ।” বলতে বলতে আঁচলটা মেলে ধরল ওর সামনে।

“ওয়াও! দারুন একটা পিকক।” রুশ খেতে খেতে বলল।
“ইয়েস! পিকক। দারুন, ভীষন দারুন” বলে হিহিহি করে হেসে উঠল লাবন্য।
“আচ্ছা হয়েছে, এখন আয়।” বলে দরজাটা খুলে দাঁড়াল হিমেল।
লাবন্য দরজার দিকে একটু এগিয়ে আবার ফিরে নানির কাছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে গালের সাথে গাল লাগিয়ে একটু চুমু খেয়ে নানিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে এল। হিমেলও তখন দরজাটা বাহির থেকে টেনে দিয়ে গেল।

তাসলিমা দরজাটা আটকে দিতে দিতে বলল
“ওরে আল্লাহ! বহুদিন পর লাবু খালারে এমন কইরা খুশি হইতে দেখলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ দয়া।”

রুশ খেয়াল করল , সামনে বসা ওর নানুর চোখ থেকে তখন টপটপ করে পানি পড়ছে। কিন্তু কেন পড়ছে তা বুঝতে পারল না।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here