#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_24
বাসায় এসে ক্লান্ত মুখে সোফায় বসে রইল সাহেলা বেগম। অনুষ্ঠান শেষ না হতেই চলে আসতে হলো। রুপার হঠাৎ হলোটা কি তাও বুঝতে পারছে না। প্রায় স্বাভাবিকই তো হয়েছিলো রুপা আবার কেন এমন করছে? এত বড় সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়া সত্ত্বেও মাঝে মাঝে রুপার ব্যাপারে মাথা কাজ করে না সাহেলা বেগমের। আর রুপার প্রতি অসম্ভব মায়া পড়ে গেছে,ওর সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহারও করতে পারে না সাহেলা বেগম। হয়ত নিঃসন্তান হওয়ায় জন্য মায়াটা আরো তীব্র রুপার প্রতি।
কারো কাছে কিছু না বলেই রুপা কে নিয়ে চলে এসেছে। আজিজ চৌধুরী যদি খোঁজ করে? সাহেলা বেগমের মনে হলো ফোনে একবার জানিয়ে দেওয়া উচিত।রুপার এমন অসময়ের পাগলামির জন্য নিশ্চয়ই রেগে যাবে আজিজ চৌধুরী।
রুপা ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত রুমে বসে আছে। রুপার বুক ফেটে কান্না আসছে। তুরান অন্য মেয়ের সাথে কেন কথা বললো? আবার ছবিও তুললো! রুপা থাকতে তুরানের কেন দরকার অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার? তুরান ভার্সিটি, টিউশনে আরও কত জায়গায় যায়। তখনো কি এভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলে? এই বিষয় নিয়ে কখনো ভাবা হয় নি রুপার। এমন সন্দেহ রুপার মনে কখনোই ঢুকে নি। রুপা ড্রেসিং টেবিলের কাছে রাখা ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারলো। সাহেলা বেগমের কানে গিয়ে এই বিকট শব্দ টা পৌঁছলো। হতাশ ভঙ্গিতে বসে রইল সাহেলা বেগম। প্রায় এক বছর ধরে রুপাকে ভালো করার চেষ্টা করছে, রুপা হান্ড্রেড পার্সেন্ট না হলেও ফিফটি পার্সেন্ট সুস্থ হয়েছিলো। নিজেকে একটু হলেও সফল মনে হয়েছিল সাহেলা বেগমের। কত ভরসা করে রুপার মা-বাবা চিকিৎসার জন্য সাহেলা বেগমের কাছে রাখলো। রুপা যদি আবার এবনরমাল আচরণ করে ,কি জবাব দিবে রুপার মা-বাবার কাছে? রুপা যে স্টেডে আছে এই স্টেডের রোগিরা খুব বেশী সেনসেটিভ মাইন্ডের হয়। কারো কাছ থেকে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরন পেলেই পাগলের মত আচরন করে। বিয়ে বাড়িতে কত মানুষ ,কে রুপার সাথে কি বিহেভ করছে কে জানে।
উদ্ভ্রান্তের মত রুম থেকে বের হয়ে আসে রুপা। ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে,
-‘ আমি আবার ওখানে নিয়ে যাও।’
সাহেলা বেগম ব্যস্ত হয়ে বললো,
-‘ কি হয়েছে তোর? কেউ কি তোর সাথে খারাপ বিহেভ করছে? আমার কাছে বল অন্তত।’
সাহেলা বেগম রুপার সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো,
-‘ কি হয়েছে আম্মু টা? আমায় বলো।’
-‘ একটা মেয়ে আমার সাথে খারাপ বিহেভ করছে। ওই মেয়ের সাথে আমার কথা আছে চলো।’
-‘ আরে এই টুকু বিষয়ের জন্য কেউ এমন করে? আমি তো ভয় পেয়েছিলাম। তখনই তো আমার কাছে বললেই হতো। আমরা দুই মা-মেয়ে মিলে মেয়েটার হাত -পা ভেঙে দিতাম।’
-‘ কিছু করতে হবে না তোমার তুমি আমার সাথে চলো।’
-‘ এখন আর কোথায়ও যেতে হবে না। এখন একটু ঘুম দে। আর ওখানে গিয়েই বা এখন কি করবি? অত মানুষের ভিতর কারো সাথে সিন ক্রিয়েট করলে মানুষ খারাপ বলবে।’
-‘ আমি কোন খারাপ বিহেভ করব না। তুমি যাবে কিনা?’
সাহেলা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললো,
-‘ আমি তোকে চিনি। এখন কোথায়ও যেতে হবে না।’
সাহেলা বেগমের কোন কথা মানতে রাজি না রুপা। সোফার উপর থাকা চায়ের গ্লাস টা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। সাহেলা বেগম কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। বলে আর কি হবে? ওর মাথা ঠিক থাকলে ও তো এমন করত না। কত লক্ষ্মী,ভদ্র ছিলো রুপা। সাহেলা বেগম একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-‘ চল।’
গাড়িতে বসে ফুঁসছে রুপা। সাহেলা বেগম শঙ্কায় পড়ে গেল। কিসের জন্য রুপা আবার অনুষ্ঠানে যাবে? গাড়ি থামাতেই নেমে যায় রুপা, গেটের ভিতরে ঢুকে আশেপাশে কাউকে খুঁজতে থাকে। সাহেলা বেগম রুপা কে অনুসরণ করেছে। কি করে বসে রুপা কে জানে।
তীব্র বেগে একটা মেয়ের দিকে ছুটে যায় রুপা। সাহেলা বেগম বুঝতে পারলো রুপা সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে খুঁজে পেয়েছে।সাহেলা বেগম কে উপেক্ষা করে রুপা চড় বসিয়ে দেয় তুরানের সাথে বসে থাকা সেই মেয়েটার গালে। চার দিকের সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মুর্তির মত। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে বললো,
-‘হোয়াট ইজ দিজ?’
মেয়েটা বোধ হয় কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছিল না। এভাবে অপরিচিত কেউ যদি এসে কারো গালে চড় মারে, সবারই তখন বিস্ময় লেগে যায়।
একটু দুরে দাঁড়িয়ে ছিলো তুরান। রুপা চোখ লাল করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে । তুরান দ্রুত গতিতে সেখানে আসলো। তুরানও যথারীতি হাঁ করে তাকিয়ে রইল। মেয়ে টা আর কিছুই বলছে না।
-‘ আরে রুপা হয়েছে কি? তুমি ওর গালে থাপ্পড় দিলে কেন?’
-‘ তুরান তুমি ওকে চিনো? কি একটা অবস্থা দেখো। কোত্থেকে এসে চড় মারলো।’
রুপার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,
-‘ এই মেয়ে প্রবলেম কি তোমার? মাথায় সমস্যা নাকি? কি হয়েছে কি তোমার?’
রুপাকে এভাবে কথা বলার তুরানের গায়ে লাগলো।
-‘ রুপা তুমি ওকে থাপ্পড় দিলে কেন?’
রুপা ঘৃন্য ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-‘ সেটা তোর কাছে বলতে হবে? ক্যারেক্টারলেস কোথাকার।’
রুপা এ কথাটা কাকে বললো ঠিক বুঝতে পারলো না সাহেলা বেগম। রুপা কেন ক্যারেক্টারলেস বললো তুরান কে? তুরানও কিছুই বুঝতে পারলো না। সাহেলা বেগম পাশে থাকায় কিছুই বলতে পারলো না।
সাহেলা বেগম বিনয়ী গলায় বলল,
-‘ প্লীজ মা তুমি ওর আচরণে কিছু মনে করো না।’
এই টুকু বলে সাহেলা বেগম থেমে আবার ইশারায় বললো,
-‘ ওর মাথায় সমস্যা আছে।’
মাথায় সমস্যা থাকলে সে মানুষ কে আর কি বলা যায়।
মেয়েটা শুধু বললো,
-‘ ইট’স ওকে আন্টি।’
পাশ থেকে এক ভদ্র মহিলা বললো,
-‘ মাথায় সমস্যা পাগলা গারদে রাখলেই তো পারেন। নয়ত তো মানুষ কে এভাবে জ্বালাতন করবে।’
কথাটা সাহেলা বেগমের মনে যতটা লাগলো তার চেয়ে বেশি লাগলো তুরানের মনে। দোষ যেহেতু রুপার তাই এর প্রত্যুত্তরে কি আর বলা যায়? ভদ্র মহিলার দিকে তেড়ে গেলো রুপা। সাহেলা বেগম রুপার হাত ধরে ফেললো। রুপা মহিলা টার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে বললো,
-‘ আমি পাগলা গারদে যাবো কেন? তুই যা পাগলা গারদে। হাতা কাটা ব্লাউজ পড়ে অসভ্য,বেহায়া মহিলা।’
রুপা কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। মহিলা টা চরম অপমান বোধ করলো। মহিলাটা কিছু বলতে গেলো কড়া গলায় কিন্তু সাহেলা বেগম হাত ধরে টেনে রুপাকে নিয়ে গেলো। আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রুপাকে জোর করে গাড়িতে বসালো।
আজিজ চৌধুরী এই কান্ড দেখি নি তো? দেখলে বলবে রুপা কে ওর মা-বাবার কাছে দিয়ে আসতে। অন্যের মেয়ের জন্য নিজের মান- সম্মান নষ্ট করতে কেউই চাইবে না।
সারা পথে রুপাকে রাগালো সাহেলা বেগম। রুপার এমন আচরণের জন্য সাহেলা বেগম সত্যিই লজ্জিত।
মেয়েটা রুপাকে এমন কি বললো যার জন্য রুপা এভাবে রেখে আছে? সাহেলা বেগম যত যাই জিজ্ঞেস করছে রুপা নির্বিকার। একটা কথাও বলছে না।
একটু পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে রুপা। অভিমানী গলায় বলল,
-‘ সবাই আমায় পাগলা গারদে দিয়ে আসতে বলো। আমায় পাগলা গারদে দিয়ে আসো।’
রুপা কে পাগলা গারদে দিয়ে আসাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? রুপার যদি মানসিক উন্নতিই না হয় তবে ওকে এভাবে সাহেদা বেগমের কাছে রেখেই কি লাভ?
চলবে…