যদি তুমি জানতে’পর্ব-৬

0
583

#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_6
রুপাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো তুরান । রুপার বিষয়টা তুরান কে ভাবাচ্ছে খুব। মেয়েটার সাথে যতই খারাপ বিহেভ করুক কখনো রাগ করবে না। নাকি রাগ,অভিমানও বুঝে না রুপা?.. কি জানি!
হাতে প্লেট নিয়ে বাসায় ঢুকতেই সাহেলা বেগম বলল,
-‘ভাত নিয়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে রুপা?’
সামনে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো রুপা। হাসিমাখা মুখে বলল,
-‘আরে এই বাসায় একটায় ভ্যাবলাকান্ত আছে না? যাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছলাম।’
এই পর্যন্ত বলেই আবার উচ্চশব্দে হেসে উঠে রুপা। রুপার কারন ছাড়া হাসি তে বেশ বিরক্ত হচ্ছে সাহেলা বেগম। রাগী গলায় বলল,
-‘আবার কি করেছো তুমি তুরানে সাথে?’
উত্তর না দিয়ে সোফার উপর দুই পা তুলে দারুন ভঙ্গি নিয়ে বসলো রুপা।
-‘আরে কি আর করবো? উনার সাথে ভাব জমাতে উনার বাসায় গিয়েছিলাম খাবার নিয়ে। কিন্তু আম্মু উনি একদম সুবিধার না।’
ভ্রু কুঁচকে সাহেলা বেগম বলল,
-‘সুবিধার না মানে?’
আবার হেসে উঠে রুপা। বলে,
-‘উনার রুমে একটু গিয়েছি তা বলে মানুষ দেখলে বাজে বলবে, আর কখনো আমার রুমে আসবে না ব্লা ব্লা ব্লা।’
-‘তুরান সুবিধার বলেই এসব বলেছে। এসব কথার মানে তুমি বুঝবে না।’
একটু থেমে গম্ভীর হয়ে সাহেলা বেগম বলল,
-‘রুপা তুমি কিন্তু আমার কথা শুনছো না। আর আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু তোমার বাবা-মায়ের কাছে তোমায় দিয়ে আসবো। তখন আর এমন করতে পারবে না। ‘
মা-বাবার কথা শুনে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় রুপার।
-‘কত দিন না বলছি উনারা আমার মা-বাবা না। আমায় তো তুমি মারো না,উনারা আমায় মারে। উনারা আমার বাবা-মা হয় কিভাবে?’
রুম থেকে ডাক দেয় আজিজ চৌধুরী। আজিজ চৌধুরীর ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায় সাহেলা।
-‘আমার এখানে একটা বই রেখেছি? বইটা কোথায়?’
-‘আমি কিভাবে বলব তোমার বইয়ের কথা? আমি কি পড়ি বই?’
-‘পড়ো না সেজন্য কি তুমি বইটা অন্য জায়গায় রাখতে পারো না?’
ক্ষীপ্ত কন্ঠে সাহেলা বেগম বলল,
-‘না,পারি না। সারাক্ষন বই বই আর বই। বাসায় যতক্ষন থাকো বই নিয়ে বসে থাকো।’
বিড়বিড় করতে থাকে সাহেলা বেগম। বাসায় এসে যে দুই দন্ড কথা বলবে তা না! সারাটা ক্ষন বই পড়বে। বাড়িতে পুরো লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলছে।
আজিজ চৌধুরী হেসে বলল,
-‘এখন কি আর প্রেম ভালোবাসার বয়স আছে যে বাসায় এসে তোমার সাথে প্রেম করে টাইম পাস করবো।’
মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সাহেলা বেগমের । চোখ লাল করে তাকায়।
আজিজ চৌধুরী আবার বলে,
-‘আরে ভুল কি বলেছি? এভাবে চোখ লাল করে তাকাও কেন?’
সাহেলা বেগম কোন উত্তর দেয় না। বইটা খুঁজে পেয়ে ছুঁড়ে মারে আজিজ চৌধুরীর দিকে। হাত দিয়ে আচমকা বইটা ধরে ফেলে আজিজ চৌধুরী।
-‘এত ভারী বইটা যদি আমার মাথায় উপর পরতো তাহলে কি আমি বাঁচতাম?’
-‘যে বই গুছিয়ে রাখতে পারে না তার বই না পড়াই ভালো।’
-‘আহা সাহেলা! তুমি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। তোমার মাথাই যদি এত গরম থাকে। রোগীদের অবস্থা কি হবে?’
-‘এত সব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।’
এই বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সাহেলা বেগম। রুপার রুমে গিয়ে দেখে শুয়ে আছে রুপা। জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও চার পাশের বড় বড় বিল্ডিং গুলোর জন্য আকাশ দেখার জো নেই।
সাহেলা বেগম কে দেখেই উঠে বসে রুপা। মুচকি হেসে সাহেলা বেগম রুপার পাশে বসলো।
-‘আগের মত মাথায় পেইন হয়?’
মাথা ঝাঁকিয়ে রুপা বলে,
-‘না। আগের থেকে কম।’
-‘ওই যে তোমার হঠাৎ করে মাথা গরম হয়ে যায়। নিজের শরীরে নিজে আঘাত করো, ভাংচুর করো। কান্না করো । এখন কি এরকম হয়?’
রুপা একটু ভেবে বলল,
-‘না। দুই দিন এরকম হয় নি ।’
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাহেলা বেগম। কিছুটা হলেও তাহলে সাকসেস উনি। মনের ভিতর একটাই চিন্তা রুপার মাকে দেওয়া কথা রাখতে পারবে তো?
সাহেলা বেগম ফোনের গ্যালারি থেকে একটা ছবি বের করে রুপাকে দেখালো।
সাদা অ্যাপ্রন পরে বাইকের উপর বসে আছে রুপা। সাহেলা বেগমের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছবিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে রুপা বলে,
-‘আমি।’
-‘তোমার বাবা-মা যদি এখানে তোমায় দেখতে আসে তাহলে কি পাগলামী করবে?’
চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে রুপা। যেন সাহেলা বেগম খুব বিশ্রী কথা বলেছে।
-‘উফ! উনাদের আমার সহ্য হয় না। বুঝো না কেন তুমি ব্যাপারটা? উনারা আমায় কত মেরেছে!’
বলেই কেঁদে দেয় রুপা।
-‘ভালো হয়ে চললে কেউই মারবে না।’
শক্ত গলায় রুপা বলে,
-‘উনারা যেন এখানে না আসে। ভালো হবে না কিন্তু!’
হতাশ হয়ে যায় সাহেল বেগম।
-‘উনারা তোমার বাবা-মা। উনাদের কি তোমায় দেখতে ইচ্ছা করে না?’
সাহেলা বেগমের আর একটু কাছে ঘেঁষে বসে রুপা বলে,
-‘না তুমিই আমার আম্মু।’
সাহেলা বেগম রুপাকে সব কথাটা শুনাতে পারলে এই কথাটা কিছুতেই শুনাতে পারছে না। ভুল কিছু রুপার মা-বাবারও আছে। উনাদের রুপাকে বুঝা উচিত ছিলো।
এ ব্যাপারে আর কিছু বলে না সাহেলা বেগম।
-‘তোমার ঘুমের টাইম হয়েছে ঘুমিয়ে যাও। ছাদে যাবে না কিন্তু। আমার কথা না শুনলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।’
চুপ-চাপ শুয়ে পরলো রুপা। অনেকক্ষন ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। ঘুম আসছে না। পা টিপে টিপে ছাদে গেলো। এই টাইমে ছাদে গেলেই তুরানের দেখা মিলে।
ছাদে গিয়ে হতাশ হয়ে গেলে রুপা। মনটাও খারাপ হয়ে গেল। তুরান ছাদে নেই! রুপা তুরানের দরজার কাছে গিয়ে দেখলো দরজায় তালা ঝুলানো। জানালাও বন্ধ। উনি কি এই বাসা চলে গেলো?
ছাদে গিয়ে দেখলো শুধু একটা শার্ট শুকাতে দেওয়া । তুরান ছাড়া আর কার শার্ট? আজকে আর শার্ট নেয় নি রুপা।
ব্লেড দিয়ে শার্টের এক হাতা কেটে ফেললো। তারপর দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। রুমে গিয়ে শার্টের হাতাটা হাতে নিয়ে আপন মনে হাসছে। মজার তো ব্যাপার! এক হাতা আছে আর এক হাতা নেই । একা একা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রুপা।
তুরান হয়ত কোথায়ও গেছে। বাসা ছেড়ে গেলে কি শার্ট রেখে যেত?
একটু পর ছাদে চেঁচামেচি শুনা গেলো। পাশের বাসায় আন্টি চিল্লাচ্ছে। তাঁর হাজবেন্ডের নতুন শার্টের হাতা পাচ্ছে না। এগুলো কেমন অসভ্যতামি? কান খাড়া করে সবটা শুনছে রুপা। ভয়ে চুপসে গেল! যদি কোন ভাবে জেনে যায়?
চুপ-চাপ ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। চেঁচামেচি শুনে ছাদে গেলো সাহেলা বেগম । সাহেলা বেগম কে ছাদে দেখেই শার্ট’টা উনাকে দেখিয়ে বলল,
-‘দেখেন খালা কালকে শার্ট’টা কিনে এনেছে। ইজি ব্যান্ডের! তিন হাজার টাকা শার্ট টার মূল্য।’
কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে শার্টের মালিক অনেক রেগে আছে। রুপা কি এমন টা করেছে? না জেনে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সাহেলা বেগম দ্রুত পায়ে রুপার রুমে আসলো। এসে দেখলো রুপা ঘুমাচ্ছে।
কয়েক বার ডাক দিলো রুপাকে । কোন সাড়া নেই। সাহেলা বেগম নিশ্চিত হলো রুপা এসব করে নি তাহলে!
সাহেলা বেগম চলে যাওয়ার পরই উঠে বসে রুপা। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। শার্টের হাতাটা দ্রুত লুকিয়ে ফেলল।
কিন্তু মন ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। তুরানের রুমের দরজায় তালা ঝুলানো। জামা- কাপড়ও ছাদে রোদ দেওয়া নেই। তবে কি সত্যি চলে গেল তুরান?
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here