যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ২৮

0
1484

#যদি_বলি_ভালোবাসি ♥
#PART_28
#FABIYAH_MOMO🍁

মনিরা দরজা খুলতে গিয়েছে, আমি আয়াতুল কুরসি জপা শুরু করেছি। নির্ঘাত আমার রক্ষে নেই! উনি খুন করে দিবেন! আমি ভয় পাইনা। কিন্তু যখন পাই! কলিজা কাপিয়ে বোকার মতো হয়ে যাই! সেম অবস্থা আমার এখন হচ্ছে। শিফার বেঘোরে নাক ঢেকে ঘুমানোটা সহ্য হচ্ছেনা, টেবিলের উপর থেকে কাপড়ের ক্লিপ নিয়ে নাকে বসিয়ে দিলাম। শিফা শ্বাসকষ্টের রোগীর মতো মোচড়াতে শুরু করলে ধুপ করে ঘুম থেকে জেগে উঠে। আমি আড়চোখে লক্ষ করলেও ফ্লোরে তাকিয়ে পড়াশোনা দেখাচ্ছি, শিফা নাকের ক্লিপ খুলে নিল। দিল এক ধমক!

–তুমি আমার নাকে ক্লিপ লাগিয়েছো মম?
–ছি! আশ্চর্য! নাকে কেউ ক্লিপ লাগায়? চুল গজালে ভিন্নকথা হতো, ক্লিপ লাগিয়ে আটকাতে হতো।

শিফা প্যাঁচার মতো মুখটা করে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। আমি মেইন দরজা লাগানোর শব্দ পাচ্ছি। মনিরাও রুমে হাজির। আমাকে দেখেও না দেখার মতো চাহনি দিলো। এরপর শিফাকে নিয়ে রান্নাঘরে খাবার আনতে চলে গেল। আমি মুগ্ধের আসা নিয়ে কলম কামড়ে দরজার বাইরে পর্দার আড়ালে উকিঝুকি করছি। উনি আসেননি? কে আসলো? মনিরাও কথা বলছেনা, শিফা ক্লিপের কান্ডে বেলুন হয়ে আছে। ফ্লোরে বসে আমি জানালার থাইগ্লাস লাগাতে যাই, রাতে বৃষ্টি হবে, আকাশ চমকাচ্ছে। থাইগ্লাস লাগাচ্ছি হঠাৎ পেছন থেকে দরজা আটকানোর শব্দ এলো! চোখজোড়া অজান্তেই বড় হয়ে হাত থেমে গেলো। ঘুরে তাকাতেই সাথেসাথে কয়েক ঢোক গিলে ফেললাম। দরজা লাগিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে হাত ভাজ করে শক্ত হয়ে তাকিয়ে আছেন মুগ্ধ! বুকটা ধকধক শুরু করে দিয়েছে।অনিচ্ছাকৃত ভাবে হাতও কাপছে, পায়ের হাটু থেকে পাতা পযর্ন্ত কাবু হারিয়ে যাচ্ছে। আমি ভয় পাচ্ছি কেন? উনি রাগ দেখিয়ে হামলা করেন কি এই ভেবে? না…স্টপ! মুগ্ধকে ভয় পাবি না। এক ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে ঘায়েল করে দিবি! উনি আসছেন। গায়ে মাখন রঙের পান্জাবী, নেভি জিন্স, হাতে ঘড়ি নেই, বামহাত কবজি অবধি ব্যান্ডেজ, কনুইয়ে হাতা ফোল্ড করা। মুগ্ধ আজ মুগ্ধতার স্পর্শ নিয়ে সামনে আসলেও তাকে দেওয়া কষ্টের পরিক্রমা আমি ভুলিনি এখনো। চুপচাপ থাকেন, এর মানে এটা কখনোই না, রাগ জানেননা। জানেন। খুব মাত্রাতিরিক্ত জানেন। আমার এই মতাবস্থায় কি হাল বানাবেন! উপর আল্লাহ জানেন!

প্রথমেই দানবের শরীরটা নিয়ে দেয়ালে চেপে আছেন। হাত দিয়ে নয়! উনার শরীর দিয়ে। “মাইনকা চিপায় ফাসা” বলে ফেসবুকে উক্তি মার্কা পোস্ট দেখেছিলাম। মাথায় রসগোল্লার মতো উহা ঘুরপেঁচ খাচ্ছে। আমি উনার কাধের নিচে পড়ে থাকি আগেই বলেছি, এখন আমি সিরিয়াসলি ফেসে গেছি। ভাব-গম্ভীর গলায় বললেন,

–ডিভোর্স চাওয়ার অপশন ক্লোজ করি? ওয়েডিং নাইট তো হয়নাই! কি বলিস!! ক্লোজ করবো?
–আমি দম নিতে পারছিনা! দূরে সরুন!
–দম বন্ধ করতেই এখানে এসেছি! খুব দম নিয়ে চলাফেরা করেছো। বেশি মাথায় উঠিয়ে রেখেছি বলে পাখির ডানা মেলে আকাশে উড়াল দিচ্ছো!
–কিসব থার্ড ক্লাস কথা বলছেন মুগ্ধ! বাজে কথা বলবেন না প্লিজ!
–হাতটা দেখেছিস? স্টেচ পড়েছে। দুইবার টেনে খুলে ফেলেছি। লাইফে কেমন মেন্টালি প্রেসারে ছিলাম বোঝাতে পারছিনা। শর্ট অফ ওয়ার্ড!
–আপনার কথা শোনার ইচ্ছে নেই! চলে যান!
–নো! কথা ও কাজ স্টিল বাকি। ফিনিশ করবো দ্যান আই উইল গো!
–উফ! সরুন বলছি! ছাড়ুন! যেতে দিন!
–ডোন্ট মুভ! হাতে পেইন। সেলাই কাচা হলে ব্লিডিং হবে এন্ড ইউ নো! ইউ হেভ হ্যা ফোবিয়া!

উনি ডানহাতে থুতনি উচিয়ে ধরলেন, আমি ঠেলাঠেলি করছি আমার কাছ থেকে দূরে সরাতে। ঠোট ঠোট ডুবিয়ে ডানহাতে কোমর আকড়ে ধরলেন। উনার চোখ বন্ধ! কারেন্টও চলে গেল। রুম অন্ধকারে ছায়া। এমন হতো আমি উনার চেয়ে একটু বেশী শক্তিমান হতাম তা না! আমি উনার ফ্যাসাদে ফেসে গেছি। মুগ্ধের রাগ বিয়ের পর কম দেখেছি, দেখিনি বলতে গেলে উনি ঠোট কামড়ে চলছেন। কুকুড়ে উঠলেও উনার ছাড়ার অবস্থা দেখছিনা, উনি রাগের বহিঃপ্রকাশ করছেন। ঠোট কেটে রক্ত বেরুচ্ছে উনি ছাড়ছেন না। ধাক্কা দিচ্ছি, জোর খাটাচ্ছি, নখ বসাচ্ছি ছাড়ছেন না। আজ উনি ভিন্নরূপী মুগ্ধ। ফ্রাস্টেড এঙরিম্যান রাদিফ মুগ্ধ! চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে পড়ছে আমার, অন্ধকারে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিনা। উনি কোমরে আরো চেপে ধরলেন, হঠাৎ গালের উপর টপ টপ করে একজোড়া পানি পড়লো। চোখ খুললাম অন্ধকার, বাইরে ঝড় ঝাপটানো বৃষ্টি। আমি কাদলে গাল গড়িয়ে পড়ে যেতো, কিন্তু অজ্ঞাত ফোটার রহস্য কি? উনি কাদছেন? আমাকে এখনো ছাড়েননি। আরেকদফা গালের উপর পানি জোড়া পড়লো। আমার হাত দিয়ে অন্ধকারে উনার কাধ ধরে ধরে গালে রাখলাম। আঙ্গুল উনার চোখের বন্ধ পাতার উপর আসতেই মনে হলো ভিজা। উনি কাদছেন? কাদছেন কেন? বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি? অনেক? কেন যেন অস্থির হয়ে উঠলাম। আমার ঠোটের উপর টর্চার ভুলে উনার চোখের পাতায় আঙ্গুল ছুয়িয়ে কনর্ফাম হলাম উনিও কাদছেন। ছেড়ে দিলেন উনি। জানালার কাছে মুখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন। বাইরে থেকে আসা কমগতির আলোতে উনাকে দেখতে পাচ্ছি। থাইগ্লাস পুরোটা লাগাতে পারিনি। অর্ধেকের চেয়ে কম লাগাতে পেরেছি, তার বদৌলতে বৃষ্টির পানি এসে উনাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। আমি ঠোটে হাত দিলাম। দুই আঙ্গুলে ঘষে বুঝলাম রক্ত। ওড়নাটা ঠোটে চেপে জানালা আটকাতে উনার কাছে গেলাম, উনি চুপ ঠাঁই হয়ে আছেন। উনার হঠাৎ স্পর্শে জড়তা কাজ করছিল, তবুও নম্র গলায় বললাম,

–আপনি টর্চার করে কাদছিলেন কেন?

টনক নড়লো না। চুপটি হয়েই দাড়িয়ে আছেন। অগোচরে উনার বামহাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকালাম, মনটা কেদেঁ উঠলো। দুইবার টেনে খুলেছেন!! ফ্লোরে মনিরার ফোন রাখা ছিলো, টুকে টুকে খুজে ফ্ল্যাশ অন করি। উনি জানালার বাইরে বৃষ্টি দেখছেন। কাধে হাত দিয়ে আমার দিকে ঘুরালে উনি জাপটে ধরেন। উনার পান্জাবী ভিজে গেছে।

–আপনি ভিজে গেছেন মুগ্ধ, পান্জাবীটা খুলে ফেলুন। জ্বর চলে আসবে।
–না।

অভিমান সুরে নাবোধক কথাটা বললেন। উনার বৃষ্টির পানি লাগলেই জ্বর ডেকে আসে। এখন ভিজা পোশাক গায়ে! জ্বর কাশি সব চলে আসবে।

–আমি কোথাও যাচ্ছি না মুগ্ধ, আপনি পান্জাবীটা খুলে ফেলুন।
–সিউর যাবি না?
–সিউর যাবো না।
–ডিভোর্স চাবি না?
–আপনি পান্জাবি খুলুন আগে।
–পান্জাবী খুললে ডিভোর্স চাবিনা?
–আপনি খুলুন প্লিজ। কথার জালে ফাসাবেন না। জ্বর আসলে এই মূহুর্তে ডাক্তার আনতে পারবো না।

উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা নিয়ে টেবিলের উপর উপুড় করে রাখলাম যাতে রুমটা আলোকিত হয়। পান্জাবির বোতাম খুলে আমার দিকে বললেন-

–হেল্প কর। হাতে ব্যান্ডেজ আমি খুলতে পারবো না।

আমি লাইটটা ঠিকঠাক রেখে কথা শুনে তাকালাম। পান্জাবী খুলে দিতে জিজ্ঞেস করলাম,

–পান্জাবী খুলতে জানেননা নাকি ঢঙ করলেন? পড়িয়ে দিল কে? রূপা?

পান্জাবীর গলা দিয়ে মাথাটা বের করে উনার বামহাতের ব্যান্ডেজের উপর ধীরেসুস্থে খুলে আনছি। উনি শান্ত করে বললেন,
–আম্মু।

খোলা শেষ। ভেজা উল্টো পান্জাবী নিয়ে আমি চেয়ারে মেলে দিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো উনাকে পড়তে বলবো কি? খালি গায়ে থাকবেন? আমি উনার পোশাক নিয়ে চিন্তা করলে উনি আমার সামনে এসে দাড়ান। পলক ঝাপটাতেই আমার ওড়না টেনে গায়ে পেচিয়ে নিলেন।

–কফি নিড! আমি কফি খাবো।

আশ্চর্য হয়ে আছি। গায়ের ওড়না টেনে, কফি খাবেন বলে হুকুম করছেন। নিরুপায় আমি। কফি না আনলে কতরকম টর্চার করবেন উনি ভালো জানেন। দরজা খুলতেই মনিরা হুমড়ি খেয়ে ধপাস করে পড়লো। “ওমাগো…আমার কোমর ভাঙ্গলো!!” মুগ্ধ দরজার দিকে কপালকুচকে তাকিয়ে আছেন। আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই বুকটা কেপে উঠল। ভয় লাগছে! মনিরার বাচ্চায় দরজায় কান লাগিয়ে গোয়েন্দাগিরি চালু রেখেছিলো, আমার হুটহাট দরজা খোলায় সব কিছু ভেস্তে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাতেঁর কেলানি মেরে জোরপূর্বক ভেটকি দিলো।

–চামড়া তুলে ট্যানারিতে সাপ্লাই দেওয়া উচিত কুত্তি! তুই মুগ্ধকে বাসায় ঢুকিয়ে চুপ মেরে ইদুরের গুহায় গেছিস! এখন আবার কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টায় আছিস কি করি আমরা!
–এই ছি ছি কি যে কস না!! আমি ভাবছিলাম ভাই তোরে তুইল্লা আছাড় মারবো। আমি বাইরেরতে তোর “আম্মা গো আল্লাহ গো” চিল্লানি শুনমু!!
–তোরে শালি…জুতা দিয়ে পিটাইলেও জুতা আমারে অভিশাপ দিবো! যা ফুট! রাস্তার সামনে কোমর মটকায়া বসিস না!

মুগ্ধ সব কথা শুনে পেছন থেকে ডাকলেন,
–শ্যালিকা প্লিজ রুমে আসো। কথা আছে তোমার সাথে!

মুগ্ধের কথা শোনামাত্র মনিরা তুরতর করে উঠে দাড়িয়ে আমার পাশ কেটে ভেতরে ঢুকলো। আবার বললেন-
–আমি কাউকে কফি আনতে বলেছিলাম! দুলাভাই ও শ্যালিকার মাঝে থার্ড পার্সনের জায়গা নেই।

এই লোক ইনসাল্ট করেন প্রচুর! রান্নাঘরে গিয়ে পানি চুলায় বসিয়ে কফি পাউডার নিচ্ছি। শিফা ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিং করছে। আমাকে দেখে বলল-

–মম তোমার বর তো ভালোই হ্যান্ডসাম। ট্রায়াল করার অপশন আছে!!!
–হুম যাও। ট্রায় করো। লবন, মরিচ কষিয়ে যদি চড় না দেয় আমার কাছে কাদতে কাদতে এসো না।
–ধরু! আমার জান্টুস আছে। তোমার জামাই দেখলে আমার জান্টুসরে অন্য মাতারি ধরে নিয়ে ফুরুৎ!!
–ভালো।
–গায়ের ওড়না কই মম!! উম উম!!! বর আসতে দেরি রোমান্স করতে দেরি নেই!!ঠোটও বেশি সুবিধার দেখতে লাগেনা!!
–রাগ তুলবানা শিফা! কতক্ষণ ধরে তোমার আজাইরা কথার উত্তর দিতেছি আমার কিন্তু বিরক্তিকর লাগছে!
–আচ্ছা আচ্ছা থাক বাবা…কাবাবে চিকেন হাড্ডি হওয়ার ইচ্ছা নাই!!

কফি বানিয়ে রুমে গেলাম মুগ্ধ ও মনিরা দূরত্ব রেখে দাড়িয়ে কিছু কথা বলছে। আমি আসাতেই উনারা চুপ। মুগ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারায় বললেন,
–কফিটা মনিরাকে দে।

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মনিরার হাতে কফি দিলাম। মনিরা কফি নিয়ে কিছু বলবে উনি বললেন,
–মনিরা তুমি যাও। মনে আছে তো কি কি বলেছি? মাথায় রাখবা। আর শুনো দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিবা।

আমি মনিরাকে বাধা দিয়ে বললাম-
–না না মনিরা যাবে না… মনিরা কেন যাবে? গেলে আমি যাব। আপনি না বললেন, শ্যালিকা ও দুলাভাইয়ের মাঝে থার্ড পার্সন আসতে নেই!!
–ওয়েট! পাজেল ঠিক করে দেই। ও আমার শ্যালিকা এন্ড আমি ওর দুলাভাই, রাইট? কার কারনে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়েছে?
–আমার জন্য,
–একজেক্টলি! মনিরা যাও। তোমার বান্ধবীর সাথে অনেক কিছুই বলার আছে।
–যাচ্ছি ভাইয়া।

মনিরা চলে গেল। দরজাটাও বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলো। উনি গা থেকে ওড়না সরিয়ে বিছানায় রাখলেন। আমার ভয়ের শঙ্কা আবার তাড়া করছে। কি করবেন? আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে বললেন,
–ঘুমাবো! কাল রাত থেকে ঘুমাইনি।

বিছানায় নিয়ে জোর করে শুয়িয়ে দিলেন। উনিও শুয়ে পড়লেন। বামে আমি ডানে উনি। বামহাতটা শরীরের উপর আস্তে করে রেখে আমার গলায় মুখ গুজিয়ে দিলেন,
–হাত প্লিজ সরাবি না! স্টেচ জায়গা পেইন করবে।
–আপনি দূরে গিয়ে ঘুমান না! পারলে চলে যান!
–হাতে ব্যাথা করছে চুপ! ডাক্তার হাত নাড়াতে বারন করেছে আমি বারবার নাড়াচ্ছি।
–আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন মুগ্ধ!
–ভালোবাসি প্লিজ। দূরে ঠেলে দিস না। আমার ভুল হলে আমায় সংশোধন করার একটা সুযোগ দে।

নরম হয়ে আসছিলো উনার কথা। কঠিন মানুষের মনকে উনি গলিয়ে দিতে পারবেন। উনার চুল গুলোতে পাচ আঙ্গুল বসিয়ে দেই, আলতো একটা চুমু উনার কপালে একেঁ দেই।
–আমি কখনো বলেছি ভুল আপনার হয়েছে?
–না,
–তাহলে?
–তুই ডিভোর্স চেয়ে আমায় খুন করছিস কেন?
–খুন করছি?
–ক্রাইম করছিস!
–ক্রাইমও করছি?
–প্লিজ আমি ডিভোর্স চাইনা।
–অপমান-লান্ঞ্চনা শুনতে চান?
–মন্জুর! আমার তাতেও আপত্তি নেই।
–আপনি তো ম্যাচিউর মুগ্ধ সাহেব। উজ্জ্বল ক্যারিয়ার আপনার পড়ে আছে। এখনো তো সফলতার চূড়ায় উঠা বাকি।
–আমার যা বাকি আমি তোকে নিয়ে উঠতে চাই। প্লিজ ডিভোর্স না।
–ভালোবাসেন?
–কি করলে প্রমাণ পাবি? কি করলে তুই বুঝবি আমি পাগলের মতো ভালোবাসি।
–আমি তো অভিশাপ বয়ে এনেছি ডাক্তার সাহেব। আমার জন্য আপনার কপালে সুখ ছোয়া হবেনা। বিশ্বাস করুন! আপনার চেয়ে বেশি আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি বোঝাতে পারবো না। আমার ব্যক্ততা কেউ বুঝতে আসেনা। সবাই শুধু শোনাতে আসে।
–আমার অধিকার নেই? আমিও কি অবুঝ?
–ছি কে বলেছে? আপনি আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি বুঝতে পারেন। আমি আপনার কাছে তুচ্ছ ছাড়া কিছুই না।।
–প্লিজ আমার যোগ্যতা দিয়ে নিজের অপমান করিস না। আমি ডাক্তার হয়েছি বলে তুই কিছু পারবি না আমি এমনটা কখনো বুঝাতে চাইনি।
–আমিও না। সুইসাইড কেন করতে চেয়েছিলেন? আমার কথা মাথায় আসেনি? শুনলে আমার কি অবস্থা হবে জানেন?
–প্লিজ ডিভোর্স চাইনা।
–কথা ঘুরালে চলবে মুগ্ধ? আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন।
–আমি তোকে স্বাধীনতা দিয়েছি প্লিজ স্বাধীনচেতা হয়ে আমাকে ছাড়া কথা মাথায় আনিস না।
–ঘুমাবেন?
–না,
–খেয়েছেন?
–কাল থেকে খাইনি।
–উঠুন খেয়ে নিন। তারপর ঘুমান।
–রুচি নেই।
–ঔষুধ নিয়েছেন?
–সকালে।
–এখন রাত। এতো অবহেলা?
–তুই ছাড়া। প্লিজ ছাড়ার কথা বলিস না।
–আমি ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছি? বলুন তো ডিভোর্সের কথা কেন বলেছি? জবাব দিতে পারলে বুঝবো আপনি আমায় বুঝেন।
উনি একটু চুপ। ঘন ঘন ছাড়া নিশ্বাসের শব্দ শুনছি উনার।
–আব্বুর মৃত্যুতে দায়ী তুই নিজেকে ভাবছিস। বদদোয়া দীর্ঘনিশ্বাসের খারাপ প্রভাব নিজেকে মনে করছিস। তুই ভাবছিস আমার জীবনে তুই থাকলে তোর কর্মের ফল আমিও ভোগ করবো। ভবিষ্যতে ভোগান্তিতে পড়বো, তোকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করবো। তোর প্রতি অবহেলা চলে আসবে, সম্পর্কের ইতি টানবো।ফুপি ব্রেনওয়াশ করে দিয়েছে আমি একসময় রূপাকে বিয়ে করবোই। তুই….
উনার ঠোট ঠোট ছুয়িয়ে দিলাম। উনি বাকি কথাগুলো বলতে পারলেন না। চোখ দিয়ে আমার পানি পড়ছিলো। একেকটা মুখনিঃসৃত বাক্য উনার সত্য। একেক শব্দ, বর্ন সত্য। বিয়েটা প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিক ভাবে হলে কতোই না হাসিখুশি জীবনযাপন করতাম। উনাকে নিয়ে পরিবার মিলে শান্তিতে বাস করতাম। দুই পরিবারের মেলবন্ধনে আমরা থাকতাম। “ওয়াদা” নামক বয়ানের কাছে আমিও বেকায়দায় চলে গিয়েছি উনাকেও তাতে ভাগীদার বানিয়েছি।
–আমি এখানে রাগ দেখাতে এসেছিলাম পাকনি। আমি তোর সামনে কেন রাগ দেখাতে পারিনা…
–আপনি রাগ দেখিয়ে ঠোট কামড়ে নিজেই কেদেঁ দিয়েছেন মুগ্ধ সাহেব। ব্যাথায় রক্ত আমার বেরুচ্ছিলো অনুভবটা আপনি টের পাচ্ছিলেন।
–বেশি ব্যাথা দিয়েছি?
–এখন বলে কি লাভ। যেই রাগী ফেসটা করেছিলেন আমি তো সেই ভয়েই থেতলে গিয়েছিলাম।
–ডিভোর্স চাই না প্লিজ।
–এই নিয়ে তিন কি চারবার বলে ফেলেছেন। উঠুন খেয়ে নিন। আমি ভাইয়াকে বলে আপনার ঔষুধ আনিয়ে দিচ্ছি।
–প্লিজ পাকনি আমাকে ডিভোর্স দিস না। আমার কিচ্ছু চাইনা।
–আর কিচ্ছু চাই না?
–আমি কিচ্ছু চাইনা বিলিভ!
–উঠুন, খেতে হবে।
–আমি খাব না প্লিজ। ঘুমাবো।
–তখন যে বললেন ঘুমাবেননা।
–এখন বলছি ঘুমাবো।
–হাতে এখনো ব্যাথা?
–কম।
–মুগ্ধ পারফিউম দিয়েছেন? কিসের স্মেল?
–আমি পারফিউম দেই না! কিসের স্মেল কিভাবে বলবো।
–আপনার গায়ের স্মেল এটা?
–তুই কি প্রথম এভাবে ধরেছিস! লজিক ছাড়া কথা বলছিস!
–প্রথম তো ধরিনি। কিন্তু এই স্মেলটা বিয়েরদিন গাড়িতে পেয়েছি, আপনার কোলে।
–গা ভিজা ছিলো। বৃষ্টির পানি এসেছিলো।
–কই নাতো! আপনার জ্বর এসেছিলো আমি কেদেকুটে সবার ঘুম হারাম করে দিয়েছি।
–গাধা! খালি গায়ে ফাস্ট টাইম ধরেছিস! মেবি দ্যাটস দ্যা রিজ্যান।
–পান্জাবির ভিজা থেকে আপনার জ্বর আসলে কি হবে ভাবুন! ডাক্তার কোথায় পাবো?
–ডাক্তার নিয়ে শুয়ে আছিস। কিসের ডাক্তার আবার!
–আপনি তো তাল ছাড়া গোঙানো শুরু করেন। কি যে বলেন আমার মাথা হেলে যায়।
–সত্য বলি সত্য। মানুষ তিন সময়ে সত্য কথা উগলে দেয়। ১. মদের নেশায় ২. ঘুমের ঘোরে ৩. জ্বরের মাথায়।
–সাইকোলজিক্যাল জিনিস আমি বুঝিনা।
–বোঝানোর জন্য আমি আছি। জাস্ট ডিভোর্স চাই না।
–পাচঁ। পাচঁ বার বলে ফেলেছেন।
–একহাজার বার বলবো। গুনতে থাক।
–রূপাকে কেমন লাগে?
–ছ্যাচড়া!
–ওতো সুন্দর স্টাইলিশ মেয়েকে ছ্যাঁচড়া বলছেন?
–ঠোট কেটেছে না? ওর নাম নিলে আবার কাটবো!
–এভাবে থ্রেড দেয়? আল্লাহ !
–ভালোবাসি মম। প্লিজ ডিভোর্সের কথা মেমোরি সেল থেকে ডিলিট করে ফেল।
–ছয়বার।
উনি হেসে দিলেন। গলায় চুমু একে বললেন,
–মম পাকনি আমি না আসলে ডিভোর্স দিয়ে দিতি?
–হয়তো।
–ভালোবাসলেই বিচ্ছেদ হতে হয়?
–কোথাও বলা নেই।
–তোর সাথে রাফিন ভাইয়ের বিয়ে পাকা টা ছোট থেকে ছিলো.. কথাটা জানলে কি করতি?
–রাফিনকে কুটিকুটি করে মেরে ফেলতাম। তারপর আপনাকে বিয়ে করতাম।
–তাও আমাকেই?
–আপনার সমস্যা? নতুনমুখের মেয়ে লাগতো?
–একটা দিয়ে জীবন পার করার সাহস আছে পাকনি। এই দুনিয়া শেষে পরবর্তী জীবনেও একটা চেহারার মানুষ রাখতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।
–ঘুমান মুগ্ধ। মাথাব্যথা করবে।
–প্লিজ আমার কথাটা রেখে ঘুমের শান্তিটা দে?
–কোন কথা?
–ডিভোর্স!
–রাখব। ঘুমান।

উনার শরীর গরম হয়ে আসছিলো। জ্বরের প্রকটতা খুব করে আসবে। কপালে হাত রাখলাম, গরম হচ্ছে। পিঠে গরম গরম ভাব। এবার জ্বর আসলে আমি হাউমাউ করে বাড়ি উঠিয়ে ফেলবো! গাড়িতে কম ভয় পাইনি!
–মুগ্ধ ঔষুধ নিয়ে আসি প্লিজ!! আমাকে যেতে দিন। আমি আসব প্রমিস!
–না। আমি ঘুমাবো।
–প্লিজ আমি আপনার পায়ে পড়ি মুগ্ধ প্লিজ। আপনার জ্বর আসলে ডাক্তার কোথায় পাবো?ওয়ার্ডেন মহিলা ছেলে দেখলে বকবে!
–বকবে না। ঘুমা প্লিজ।
–আমাকে এক মিনিট দিন!!! আমি এই এক মিনিটে না আসলে চড় মেরে দিয়েন!!
–এক সেকেন্ডও দিবো না! আমি চড় দিতেও চাইনা।
–জ্বর আসবে বোঝার চেষ্টা করুন!! আমি আপনার জ্বরের অবস্থা দেখতে পারিনা!!
–সমস্যা নেই তোর সামনেই জ্বরে মরবো।
–কসম মুগ্ধ! আমি ভয় পাচ্ছি!
–জ্বর আসুক।
–আপনার দোহাই!! প্লিজ আমি জ্বরের মধ্যে আপনাকে দেখতে পারবো না!!
–ডিভোর্স কোন মুখে চাচ্ছিলি?
–ডিভোর্স দিবো না!! আমি ডিভোর্স দিচ্ছি না, আপনি ছাড়ুন না!! জ্বর চলে এসেছে!!

–চলবে🍁

-Fabiyah_Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here