#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[০৯]
দিয়াকে সাথে নিয়ে লাইব্রেরিতে বসে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট বই পড়ছে ভূমি। যদিও পড়ার থেকে বেশী প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে তাকে। দিয়া একা একা বকবক করছে তো আবার ভূমিকে প্রশ্ন করে করে প্রশ্নের ভাণ্ডার তৈরী করে ফেলেছে। ভূমির দিয়াকে এক ধমক দিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে চুপ করে বসিয়ে দেয়। ভূমি মন দেয় বই পড়ায়। রোমিং জুলিয়েটের রোমান্টিক ডায়ালগ তার বেশ লাগে। পড়ার সময় যেন ভূমি ওদের চোখের সামনে দেখতে পায়। বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে ভূমি তখন দিয়া প্রশ্ন করলো,
” আমিকি এখন যেতে পারি। তুই পড়ছিস তোর সাথে থেকে আমি করবোটা কি?”
” আজ সারাদিন তুই আমার সাথেই থাকবি। কোন কথা নয় চুপচাপ বস এখানে।”
” ইম্পসিবল। সারাদিন তোর সাথে থাকবো মানে কি? কিছুক্ষণ পর ইমাদ আসবে। আমি ওর সাথে যাব।”
” এই সারাক্ষণ ইমাদ ইমাদ করিস কেন বলতো। একদিন দেখা না করলে মরে যাবি না।”
“মরে যাব দোস্ত। বিশ্বাস কর একদিন দেখা না হলে আমি মরে যাব। ও যে আমার অক্সিজেন। আমার প্রান, আমার কলিজা।”
” তাহলে ওর সাথে থেকেই বাচতে পারিস, শ্বাস নেস কেন?”
দিয়া কিছু বলবে তখন ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে আশা নামটা জ্বলজ্বল করছে। দিয়ার ঠোটে হাসি ফুটলো। আশা দিয়ার কাজিন। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। দিয়া কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কিছু বলল। দিয়া ” ঠিক আছে” বলে কল কেটে দিয়ে ভূমিকে বলল,
” আমি মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করে আসছি। জাস্ট যাব আর আসবো।”
” মনিরুল স্যারের সাথে তোর দরকারটা কি?”
” আমার নয় আশার দরকার। ওর এসাইনমেন্ট স্যারের কাছে রয়েছে। আশা আজ কলেজে আসেনি তাই আমাকে নিতে বলেছে।”
” আমিও যাব তোর সাথে।”
” উহ্ ভূমি, মাই ডিয়ার আমি বাচ্চা নই তোকে পাহারা দিতে হবে। আমি জাস্ট যাব আর আসবো। তোর এই বই শেষ করার আগেই চলে আসবো।”
” কথা দিচ্ছিস।”
” প্রমিস।”
ভূমিকে বলে দিয়া মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করতে যায়। মনিরুল স্যারের থেকে বিদায় নেওয়ার সময় স্যার ওকে একটা চকলেট দেয়। স্যারের এই অভ্যাসটা খুব প্রিয় সবার। স্যারও চকলেট খায় আর সবাইকে চকলেট দেয়। দিয়া খুশিমনে চকলেট খেতে খেতে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিল তখনি ইমাদের কল আসে। ইমাদ আর্জেন্ট ওকে ছাদে ডাকে। ইমাদের ডাক উপেক্ষা করার শক্তি ক্ষমতা সাহস কিংবা মনোবল কোনটাই নেই দিয়ার। তাই ইমাদ ডাকার সাথে সাথে সে উল্টোদিকে হাটতে শুরু করে। ভূমির কথা ভূলে গেল সে। ভূমিকে দেওয়া কথা, ভূমির অপেক্ষা কথা সব ভূলে গেলো।
_______________________
দিয়া ছাদে আসতেই দেখলো ইমাদ ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়া মৃদু হেসে ব্যাগ থেকে একটা চুইনগাম বের করে মুখে পুরে নিলো। যেটা কাল ইমাদ তাকে দিয়েছিলো। চুইনগাম চিবুতে চিবুতে ইমাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ইমাদ দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। দিয়া হতবম্ব। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এর আগে ইমাদ কখনো এমন হুটকরে দিয়াকে জড়িয়ে ধরেনি।দিয়ার হাত ধরার আগেও অনুৃমতি নিয়ে ধরেছে। আজ হঠাৎ হলোটা কি ছেলেটার। ভাবতেই দিয়া ওর ঘাড়ে গরম কিছু অনুভব করলো। ইমাদ কাঁদছে, ইমাদের চোখের জল পড়ছে দিয়ার ঘাড়ে। দিয়া দ্রুত ইমাদকে ছাড়িয়ে ওর চোখের জল মুখে গালে হাত রেখে বলল,
” তোমার কি হয়েছে ইমাদ। কাঁদছো কেন তুমি?”
ইমাদ দিয়ার হাতদুটো উপর নিজের হাত রেখে গভীরভাবে চুমু খেয়ে বলল,
” আমি অনেক বড় ভুল করেছি দিয়া। ভূল নয় পাপ করেছি, পাপ। তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তো।
” তুমি কোন পাপ করোনি ইমাদ। আমি জানি তো। তুমি কোন ভুল করতেই পারোনা।”
ইমাদ আবেগপ্রবণ হয়ে দিয়া শক্তকরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। দিয়াও শক্তকরে ইমাদকে জড়িয়ে ধরেছে। আর যাই হোক প্রিয় মানুষটার চোখের জল সহ্য করা অনেক কষ্টের। ইমাদ দিয়া মাথায় নিজের ঠোট ছুয়াচ্চে।কিছুক্ষণ পর ইমাদ খেয়াল করলো দিয়ার হাত আলগা হয়ে আসছে। দিয়া ক্রমশ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন এক যান্ত্রিক চালিত মানব। ইমাদ দিয়াকে ডাকলো। দিয়া উহ উহ্ শব্দকরে উত্তর দিলো। ইমাদ দিয়াকে ছেড়ে দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। দিয়ার আচরণ কথাবার্তা এমনি মুখভঙ্গি বদলে যাচ্ছে আর ইমাদ সেটা দেখছে। কিছু বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলছে সে। দিয়ার এমন আচরণ সম্পর্কে অবগত নয় সে তাই চেয়ে চেয়ে শুধু দেখছে দিয়াকে।
প্রায় আধঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও যখন দিয়া এলো না তখন ভূমি চিন্তায় পরে যায়। দিয়া কোথায় গেলো। মনে পড়লো আরাভের কথা তাহলে কি সত্যি দিয়ার কোন বিপদ হলো নাকি। বই রেখে দৌড়ে মনিরুল স্যারের অফিসে গেলো। না সেখানেও নেই দিয়া। অস্থির হয়ে পরে ভূমি। কোন উপায় না পেয়ে কল করে আরাভ করে।
” স্যার, স্যার কোথায় আপনি?”
” তোমার কন্ঠটা অস্থির লাগছে কেন?তুমি ঠিক আছো?”
” দিয়া, আমি দিয়াকে হাড়িয়ে ফেলছি স্যার।”
” ওয়াট, তোমাকে বলেছিলাম ওর সাথে থাকতে। দিয়াকে খোঁজে বের করে ফার্স্ট।”
” আপনি কোথায়?”
” আসছি আমি।”
ভূমি হন্নহয়ে দিয়াকে খুঁজতে থাকে। একটা মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারলো দিয়া ছাদে গেছে। ভূমি দেরী না করে দৌড় দিলো ছাদের উদ্দেশ্যে।
এদিকে দিয়া একদম রোবটের মতো দেখতে হয়েগেছে। কিছু বললে রোবটের মতো তার জবাব দিচ্ছে। দিয়াকে কাছে টেনে নিতে চেয়েও পারছে না ইমাদ। ছলছল দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাটুগেরে বসে পরলো ইমাদ। কিছুক্ষণ পর দিয়ার সেলফোন বেজে উঠলো।দিয়া কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠল,
” তোমার ব্যাগে একটা গান রাখা আছে সেটা দিয়ে সামনের লোকটাকে শেষ করে দাও।”
দিয়া যন্ত্রে চালিত মানবের ন্যায় জবাব দিলো,
“ঠিক আছে।”
তারপর ব্যাগ থেকে বন্দুক বের করে সেটা তাক করলো ইমাদের দিকে। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে ইমাদ তাকালো দিয়ার পানে। এটা কি করছে দিয়া? যে দিয়ার প্রান ছিলো সে আজ সেই দিয়া তার দিকে বন্দুক তাক করছে। আশ্চর্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো ইমাদ। কথা বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলছে। দিয়া ট্রিগারে হাত রাখলো, ইমাদ বলল,
” এটা তুমি কি করছো দিয়া। বন্দুকটা নিচে নামাও। নামাও বলছি। পাগল হয়ে গেছো তুমি।”
দিয়া যন্ত্রের মতো তাকিয়ে রইলো। ইমাদকে সে কখনোই মারতে পারবেনা। তবে আজ এই নিষিদ্ধ কাজ করতে ভালো লাগছে দিয়ার। আনন্দ হচ্চে, মনে হচ্ছে এটাই তার একমাত্র কাজ। দিয়া ট্রিগারে চাপ দিবে এমন সময় ছাদের শিড়ির কাছে দাঁড়ালো ভূমি। ভূমি হাতে বন্দুক দেখে ভূমি অবাক হয়ে যায়। নিজের উত্তেজনা কন্ট্রোল করে ভূমি চিৎকার কর,
” দিয়া, কি করছিস দিয়া। ইমাদকে মারছিস কেন?”
ভূমির কোন কথা পৌঁছালো না দিয়ার কানে। দিয়ার হাতে থাকা মোবাইল থেকে আবারও পুরুষালি কন্ঠশ্বর পাওয়া গেলো।
” ইমাদকে স্যুট করো দিয়া। দিয়া ফার্স্ট। স্যুট হিম।”
” ওকে স্যার।” বলেই দিয়া ইমাদের বুক বরাবর গুলি করে। ইমাদ বুকে হাত দিয়ে দিয়ার দিতে তাকিয়ে পরে ফ্লোরে। আর ভূমি শিড়ির কাছেই হাটুগেরে বসে পরে। দিয়ার মোবাইল থেকে আবারও আওয়াজ আসে,
” এবার তোমার কাজ শেষ দিয়া। তুমি সাকসেস। দিয়া তোমার তো কাজ শেষ এবার তুমি বেচে থেকে কি করবে। তুমি ছাদ থেকে লাফ দাও।শেষ করে দাও নিজেকে”
” ঠিক আছে।”
যন্ত্রের মতো বলে দিয়া। তারপর বন্দুক মোবাইল ফেলে দিয়ে সামনে এগোতে থাকে। ভূমি খেয়াল করতেই উঠে দাঁড়ায়। দিয়াকে পিছু ডাকে কয়েকবার। দিয়া রিসপন্স না পেলে ভূমি দৌড়ে দিয়ার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্ত তার আগেই দিয়া ছাদ থেকে জাম্প দেয়। আর ভূমি দিয়া বলে চিৎকার করে সেখানেই বসে কাঁদতে থাকে।
_____________________
মাঠের মাঝখানটায় স্টুডেন্টদের ভীড়। তার ভিতরে ইমাদ আর দিয়ার মৃতদেহ।ওদের ঘিরে কাঁদছে ওদের বাবা মা। দিয়ার পাশে বসে কাঁদছে ভূমি। আরাভ ভূমিকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে কিন্ত কোন লাভ হয়নি। ভূমি নিজেকে দোষ দিচ্ছে। দিয়ার,মৃত্যুর জন্যে নিজেকে দায়ী করেছে। আরাভ ভূমির মুখের দিকে নিঃপলক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ইচ্ছে করছে ভূমিকে নিজের বুকে চেপে ধরতে। সব সত্যি জানিয়ে দিতে। দিয়ার মৃত্যুর জন্যে যে দায়ী তার নাম বলতে। কিন্ত আরাভ পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার।কিছুক্ষণ পর দিয়া আর ইমাদের মৃতদেহ থানায় নেওয়া হলো। সেখান থেকে আবার ফরেন্সিক লেবে নেওয়া হবে। ধীরে ধীরে সবাই চলে যেতে আরাভ ভুমির পাশে বসে।তারপর ওকে উঠিয়ে নিজের গাড়িকরে বাড়ি নিয়ে আসে। আরাভের বাড়িতেই থাকবে সে।চোখের সামনে এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনা দেখেছে। মেন্টাল সাপোর্ট দরকার তার।
চলবে,,,,,,[ইনশাআল্লাহ]
Mahfuza Afrin Shikha.
[বিঃদ্রঃ- গল্পের প্রথম পর্বে আরাভকে নিয়ে একটা রহস্য ছিলো।এবার আরাভের রহস্যের জট খুলবে ইনশাআল্লাহ। আর বাকি রইলো দিগন্ত আরাভের কথা। সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। ধন্যবাদ সবাইকে। সবার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।]