রক্ষিতা আশুথিনী_হাওলাদার পর্ব-১৪

রক্ষিতা
আশুথিনী_হাওলাদার
পর্ব-১৪
__‘তুই ঠিক কি চাচ্ছিস?
টেবিলে হাতের ভর দিয়ে মাথার চুল খামছে ধরে নিফান। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,,
__“জানি না”
বিরক্তি হয় আরাফ। বিরক্তিতে মুখ দিয়ে “চ” শব্দ করে। বলে,,
__‘তুই বুঝতে পারছিস তুই কি অন্যায় করে ছিস? যে কারনে অন্যায় গুলো করেছিস সেটা ভিত্তিহীন ছিল।
অভ্র তোর বোনকে ঠকায়নি। নবনীতা ভুল বুঝে ছিল তাকে। বলতে বাধছে না সম্পুর্ন দোষ নবনীতার ছিল। একবার যদি বিশ্বাস রাখতো নিজের ভালবাসায় তাহলে এ দিন দেখতে হতো না। নবিনীর সাথে সাথে অভ্রও সুইসাইড করে ফেলেছিল। ঠিক সেদিন’ই অভ্রর সাথে সাথে তার বাবা মাও গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়।
চেয়ার গা এলিয়ে দেয় নিফান। চোখ বন্ধ। তবে বন্ধ করে রাখতে পারছে না চোখ জ্বলছে। আজ যদি নবনীতার বান্ধুবি রিসার সাথে দেখা না হতো তাহলে হয়তো কখনো সত্যিটা জানতে পারতো না সে। রিসা’ই ছিল সেই মেয়ে যে নবনীতাকে বুঝেয়েছে অভ্র তাকে নয় রিসা কে ভালবাসে। নবনীতা তার কথা বিশ্বাস করে এত বড় স্টেপ নেয়।
আরাফ আবার বলে,,
__“তুই কি এটা জানিস? যে অর্ঘমা এত এত মানুষিক চাপ সহ্য করতে না পেরে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। যাকে এক কথায় পাগল বলে।”
চট করে চোখহ খুলে ফেলে নিফান। অবিশ্বাস চোখে আরাফের দিকে তাঁকায়। তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ঢোক গিলে নিফান। কাঁপা হাতে টেবিল থেকে পানির গ্লাস তুলে পানি খায়। নিজেকে শান্ত করে প্রশ্ন করে,,
__‘মানে? অওঅঅঅর্ঘ পাগল?
আরাফ বলে,
__‘নিহিতার সাথে সব ঠিক হয়ে গেছে। নিহিতা’ই আমাকে সবটা বলল। তোর ওকে ঠকানো। বাবা -মা, ভাইকে হারানো এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। এবং দীর্ঘদিন সিংগাপুরে চিকিৎসাদিন ছিল।

“বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে নিফান। এত বড় ভুল হয়ে গেল তার দ্বারা। অর্ঘমা ক্ষমা করবে তাকে?
চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আরাফ। কপালে আংগুল দিয়ে স্লাট করে। নিফানের অবস্থাটা সে বুঝতে পারছে। কিন্তু কিছু করার নেই। সব হাতের বাইরে চলে গেছে।
__‘তুই কি এটাও জানিস ? যে অর্ঘমার দাদি দুই মাস হলো মারা গেছে?
নিফান বলে,
__‘হুম”
কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে আরাফ,,
__“তোর উচিত অর্ঘমাকে মুক্ত করে দেয়া। অবশ্য এমনিতেও তোর এই ‘রক্ষিতা’ ‘রক্ষিতা’ খেলার মাত্র দুই মাস বাকি। অর্ঘমা তো এটাও জানেনা যে তুই ওকে পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেছিলি শুধু প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। ফেলেও গিয়েছিলি তাই। আর চার পর বছর ওকে “রক্ষিতা” করে ঘরেও তুলিছিলি প্রতিশোধ নেয়ার নেশায়। আমার মনে হচ্ছে তুই কখনো অর্ঘমাকে ভালইবাসিনি। ভালোবাসলে ওভাবে ফেলে যেতে পারতি না। ওকে রক্ষিতা করে ঘরেও রাখতে পারতি না। একটা বছর ধরে অত্যাচার করতে পারতিস না। বাজারি মেয়েদের স্থানে নামিয়ে ফেলিছিস তুই ওকে। একটা পতিতার মতো ব্যাবহার করেছিস। ‘ও’ বউ ছিল তোর। “রক্ষিতা” না। বউ মানে বুঝিস নিফান? তোকে আমি বারবার বলেছিলাম দোষ অভ্রর ছিল। অর্ঘমার নয়। অর্ঘমা শুধু অভ্রর বোন। আজ অর্ঘমার মতো আমারও মনে হচ্ছে তুই কখনো তাকে ভালোবাসিসনি।
অবাক চোখে তাঁকায় নিফান। আরাফ কে বলে,
__‘তুইও বিশ্বাস করিস আমি অর্ঘকে ভালবাসিনা’
আরাফ হাসে। বলে,,
__‘ভালোবাসলে নিজের বিয়ে করা বউকে রক্ষিতা করে রাখতে পারতি না ”
কথাটা নিফানের বুকে গিয়ে লাগে। কিছু বলতে নেয়। বাইরে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে দরজার দিকে তাঁকায় নিফান আর আরাফ। অর্ঘমাকে দেখে হতোবম্ব হয়ে যায় তারা। অর্ঘমা অবিশ্বাস্য চোখে তাঁকিয়ে থাকে নিফানের দিকে। অর্ঘমার এমন চাহনিতে শ্বাস আটকে যায় নিফানের। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে সে। কয়েক পিছিয়ে যায় অর্ঘমা। হাত থেকে মেডকেল রিপোর্টটা পরে যায়। পরে যেতে নেয় অর্ঘমা। হাতের ব্যালেন্স রাখতে দেয়াল আঁকড়ে ধরে। কষ্ট হচ্ছে তার। বুকের ভিতর কেমন করে জ্বলছে। কিন্তু চোখ থেকে কোনো পানি বের হচ্ছে না। বুকের ভিতর দিয়ে ঝড় ভনয়ে যাচ্ছে। সব, সব মিথ্যে? নিফান তাকে কখনো ভালোইবাসেনি। অভিনয় ছিল সব। এতো, এতোটা নিখুঁত হয় অভিনয়। তাদের ভালবাসা, বিয়ে। তাকে ছেড়ে যাওয়া। সবশেষে তাকে “রক্ষিতা” করে ঘরে তোলা। তাকে মানিষিক, যৌন অত্যাচার করা সব সব প্রতিশোধ ছিল। কোনো ভালবাসা ছিল না। এতদিন মরিচীকার পিছনে ছুটেছে সে? বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ? কিন্তু, প্রতিশোধ তো তার নেয়ার কথা। দোষ করলো নবনীতা। সেই দোষের শাস্তি পেলো তার গোটা পরিবার। তাহলে প্রতিশোধের বলির পাঠা কেন সে হলো? নবনীতার ভাই নিফান? ভাই বোন দু’জনেই এক গোটা পরিবার টাকে শেষ করে দিয়েও আশা মিটলো না।
রিপোর্ট ফ্লোর থেকে হাতে তুলে। অফিস থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে যায় অর্ঘমা। নিফান সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। অর্ঘমা সব জেনে গেছে?
ভয় হচ্ছে নিফানের। অর্ঘমাকে তাকে ভুল বুঝছে? এটা ভাবছে যে, নিফান তাকে কখনো ভালবাসেনি। শুধু প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অভিনয় ছিল সব। দিশেহারা হয়ে যায় নিফান। টেবিলের সব জিনিস ফেলে দেয় সে। আরাফ নিশচুপ হয়ে দাঁড়িয়ে। সে কখনো চায়নি অর্ঘমা সবটা জেনে যাক। মুখে বললেও আরাফ নিজে জানে। নিফান অর্ঘমাকে পাগলের মতো ভালবাসে। কিন্তু এবার কি হবে?

রিপোর্ট টা পাওয়া মাত্র নিফানের অফিসে ছুটে এসেছিল অর্ঘমা। তাকে জানাতে সে বাবা হতে চলেছে। তাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে। তাচ্ছিল্য হাসে অর্ঘমা। নিফান কে সারপ্রাইজ দিতে আসলেও সব চেয়ে বড় সারপ্রাইজটা তো সে পেয়েছে। এত বড় সারপ্রাইজ এ জীবনে সে পায়নি। তার ভালোবাসা। তার স্বামী তাকে ঠকিয়েছে। নাটক করেছে তার সাথে। সব ভালোবাসা মিথ্যে ছিল। নিফানের তাকে হঠাৎ বিয়ে তারপর ডিভোর্স পেপার দিয়ে উধাও হওয়া। আবার যখন ফেরত আসলো তখন তাকে রক্ষিতা করে ঘরে তুলল। তার বাইয়া কে ব্লেম করে নিফান তাকে ঠকালো? এভাবে?
অর্ঘমা নিফানের অফিস থেকে বেড়িয়ে বাসায় চলে যায়। গিয়ে নিফানের দেয়া ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেয়৷ হাত কাপলেও কিছু করার ছিলনা। কারন যেখানে ভালবাসা নেই। শুধু প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলা ছিল সেখানে অর্ঘমা থাকবেনা। ডিভোর্স পেপারের সাথে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট রেখে দেয় অর্ঘমা। নিফানের জানা উচিত সে বাবা হতে চলছিল। তার করা “রক্ষিতার” গর্ভে তার সন্তান তার অংশ একটু একটু করে বেড়ে উঠছে। এক কাপুড়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে অর্ঘমা। কথা যাবে কি করবে কিছু জানে না। শুধু এটুকি জানে। এ জীবনে সে আর নিফানের দারপ্রান্ত হবে৷ না।

“১৫ বছর পর”
__“ম্যাডাম ম্যাডাম।
ভার্সিটির ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছিলো অর্ঘমা। তখন কারো ডাকে দাঁড়িয়ে যায় সে।
আশু দৌড়ে অর্ঘমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
মৃদু হাসে অর্ঘমা। মেয়েটা ভারি চঞ্চল। আশুকে দেখলে মাঝে মাঝে তার ছোটো বেকার কথা মনে পরে যায়।
আশুকে প্রশ্ন করে অর্ঘমা,,
__“কিছু বলবে আশু?
আমতা আমতা করে উত্তর দেয় আশু,,
__‘ইয়েস ম্যাম। আসলে ম্যাম আপনি,, আপনি
__‘আমি কি? (ভ্রু কুচকে বলে অর্ঘমা)
চোখ বন্ধ করে বলে আশু,,
__‘ম্যাম আপনি আমার ভাইয়া কে বিয়ে করবেন? আমার ভাবি হবেন? আমার আপনাকে খুব ভালো৷ লাগে।
বিষম খায় অর্ঘমা। বলে কি মেয়ে।
ঠোঁট প্রসারিত করে হাসি অর্ঘমা। চোখের চশমা ঠিক করে বলে,,
__“তোমার ভাইয়ের বয়স কত আশু?
আমতা আমতা করে বলে আশু,
__‘জি ম্যাম ৩১
হাসে অর্ঘমা। প্রশ্ন করে,
__‘আর তোমার,
__১৯ ম্যাম
এক গাল হেসে বলে অর্ঘমা,
__‘আমার বয়স কত জানো?
আশু ঠোঁট কামড়ে মাথা এদিক ওদিক ঘুরায়।
মানে না।
আবার হাসে অর্ঘমা। হেসে বলে,
__‘আমার বয়স ৪২। তুমি আমার মেয়ের বয়সি। জানোতো তোমার মতো ১৪ বছর বয়সি আমার দু’টো বাচ্চা আছে। একবার আমার বাসায় এসো ওদের সাথে মিট করবে।
হেসে চলে যায় অর্ঘমা আশু হাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। কি বলল? ম্যাম। তার বয়স ৪২? কি করে পসিবল ম্যাম কে দেখে বড় জোর ২৯-৩০ লাগে।
মাথা ঘুড়ে ওঠে আশুর।

চলবে?
(ভেবে ছিলাম দেবো না কিন্ত্য লিখে ফেললাম আজকের পর্ব গুলো কিছুটা খাপছাড়া হচ্ছে তার কারম আমি লিখতে পারছিনা। মাথা হ্যাং হয়ে আছে। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here