রহস্যের_কুয়াশা☠️ পর্ব_১৩

রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_১৩
#হাফসা_ইরিন_রাথি
অনেক ভাবনা চিন্তার মাঝেও মিলি তাবিজটা খোলার প্রচুর তাগিদ অনুভব করছে কিন্তু এখন খোলা বিপদজনক,যেকোনো মুহূর্তে মা চলে আসতে পারে তাই অনেক কষ্টে নিজের ইচ্ছেকে দমন করার চেষ্টা করতে লাগলো।মিলির কেনো যেনো মনে হচ্ছে মায়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে,আর করেও বেশ কিছু বছর যাবৎ।মিলি ড্রেস চেঞ্জ করে মা আর বোনের কাছে গেলো।অনেকদিন পর ওদের সাথে এমন হাসি খুশি কথা বলতে দেখে ওর মা আর বোন দুজনেই খুশি হলো খুব।এই খুশি অমূল্য,যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।মিলির খুব ভালো লাগলো ওদের সাথে কথা বলে, দুশ্চিন্তাটা অনেকাংশে কমে গেছে।কথার এক ফাঁকে মিলি মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–মা এই তাবিজটা খুলে ফেললে কি হবে?

ওর মা মেয়ের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেললো।মিলিকে বুঝানোর চেষ্টা করছে যেনো এমনভাবে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
–মা তুমি কখনো এটা খুলিও না।এটা তো ভালো জিনিস,এটা সাথে রাখো কেমন?
মিলি মায়ের কথার কোনো জবাব না দিয়ে একটু বিষন্ন হাসলো শুধু।তারপর ছোটো বোনের সাথে কতক্ষন খেলা করে ক্ষুধা নেই বলে না খেয়েই নিজের রুমে চলে গেলো।
***
রাত তখন ১ টা ছুঁই ছুঁই।মিলি এখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে হুজুরের কথাগুলো সম্পর্কে।হঠাৎ ওর মধ্যে একপ্রকার জেদ চেপে বসলো তাবিজটা খোলার।মিলি একটানে তাবিজটা ছিড়ে ফেললো।কিন্তু ছিড়ে ফেলার পর নিজেই অবাক হয়ে গেলো নিজের এত্তো শক্তি কোথা থেকে এলো ভেবে।তাবিজটা ছেড়ার ১০ সেকেন্ডের মধ্যে মিলির চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে লাগলো।একসময় ও জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে গেলো।
চোখ খুলতেই নিজেকে নিজের বিছানায় এলোপাথাড়ি হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলো মিলি।চারপাশে অন্ধকার আর ড্রিম লাইট জ্বালানো দেখে বুঝতে পারলো এখনো রাত্রি।মিলির চোখ গেলো দেয়ালে থাকা ঘড়িটার উপর।নাহ্!তেমন কোনো সময় হয় নি,মাত্র ৩ টা বাজে।মিলির আস্তে আস্তে সব মনে পড়তে লাগলো।তড়িঘড়ি করে ছুটে টেবিলের কাছে গেলো তারপর ব্যাগ থেকে গ্যাস লাইটারটা বের করলো যেটা সকালে কিনে এনেছিল।
লাইটার নিয়ে বিছানায় বসে কি করবে ভাবতে লাগলো।এখন কেমন যেনো একটা দ্বিধা কাজ করছে কিন্তু আবার ইহানকে ফিরে পেতে চায় ও।তাই মিনিটখানেক ভাবার পর আগুন জ্বালালো লাইটারে।আগুনের দিকে চোখ বড় বড় করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও,আগুনের প্রতিচ্ছায়া পড়ছে ওর চোখে আর একহাতে ধরা আছে তাবিজটা।মিলি আগুনটা ঘুরিয়ে তাবিজের নিচে ধরলো,তারপর সেটা আগুনে পুড়তে থাকলে ছুড়ে ফেলে দিলো ফ্লোরে।চোখের সামনে তাবিজটা পুড়ে ভস্ম হয়ে গেলো শুধু রয়ে গেছে তার শক্ত খোলসটা।মিলির মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়লো।কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হলো না,মিলি আবারো জ্ঞান হারালো।
সকালে ফজরের আযান কানে যেতেই চোখ খুলে তাকালো।চোখ খুলেই যা দেখলো তাতে হৃদপিন্ডটা আনন্দে বের হয়ে আসতে চাইছে যেনো।মিলি দেখলো ওর মুখের উপর ইহান ঝুঁকে আছে,উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর মুখের দিকে যেনো জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছে।মিলি উঠেই ঝাঁপিয়ে পড়লো ইহানের উপর।ঝাপটে ধরলো ইহানকে।তারপর অনেক অনেক কাদতে লাগলো,কাদতে কাদতে হিচ্কি উঠে গেছে ওর কিন্তু ইহান বাধা দিচ্ছে না। ইহান শুধু মিলির নরম চুলের মধ্যে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর নিজেও কাদছে।
প্রায় ১০ মিনিট পর মিলি মুখ তুললো।চোখ,মুখ ফুলে ঢোল হয়ে আছে।
–তুমি কোথায় গিয়েছিলে?আমি তোমায় খুব মিস করেছি,তুমি কি জানো?
ইহান কান্নার মধ্যেও মুখ টিপে হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়ালো।মিলি একপ্রকার চিৎকার করেই আবার কেদে উঠলো,
–না,তুমি জানো না।তুমি জানলে এত্তদিন আমার না কথা না বলে থাকতে পারতে না,খেলা না করে থাকতে পারতে না।

–সত্যি বলছি,জানি তো আমি।আমি সব দেখেছি।

–তাহলে আসো নি কেনো?

–আসতে পারি নি যে।তুমি এখন কান্না বন্ধ করো নাহলে তোমার আম্মু আব্বু আর ছোটো বোন ঘুম থেকে জেগে উঠবে।

–তোমার বাসায় নিয়ে যাবা না আমায়?চলো যাই।

–এখন না,আগে তোমার ১০ বছর পূর্ণ হোক।

–তাহলে তো তুমি আবারও চলে যাবে।(কাদতে কাদতে)

–আরে নারে বোকা।আমি যাবো না।তুমি তোমার হাতটা লুকিয়ে রেখো যাতে তোমার আম্মু,আব্বু বা কেউ বুঝতে না পারে যে তুমি তাবিজটা পুড়িয়ে ফেলেছো।ঠিক আছে?
মিলি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তারপর ইহানের বুক থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কারণ ওর কেমন কেমন লজ্জা লজ্জা করছিল,শত হলেও ও এখন বড় হচ্ছে। ইহান মিলির অস্বস্তি বুঝতে পেরে ওকে ছেড়ে দিলো।
–আচ্ছা তুমি এখন বিশ্রাম নাও।আমি যাই?

–চলে যাবে?

–তুমি কি বলো?

–আরেকটু থাকো।আগে তো সারাক্ষণই আমার সাথে থাকতে,এখন কেনো তবে চলে যেতে চাইছো?

–আমাদের চারপাশে এখন অনেক বিপদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রিদ।সামনে আরো অনেক বিপদ আছে।তুমি হয়তো তাদের দেখতে পাচ্ছো না কিন্তু তারা আছে।তুমি সবসময় সাবধান থাকবে,কেমন?
মিলির ইহানের কথাগুলো শুনে হুজুরের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো।যেনো সবাই একটা বিষয়েই সতর্ক করছে,কিন্তু সেটা কি?
–কেনো সতর্ক থাকবো?কি আছে আমাদের আশেপাশে?আমি তো কিছুই দেখতে পাই না।

–রিদ,দৃশ্যমান আর বাস্তব জগৎ ছাড়াও আরেকটা জগৎ আছে।সেই জগতের সব অদৃশ্য,তারা ধরা না দিলে বা কোনো কিছু না করে খালি চোখে তুমি তাদের দেখতে পাবে না।তাদের থেকে সতর্ক থাকতে তোমার এই জিনিসটা সব সময় সাথে রাখবে,উপকার হবে।
মিলির হাতে বিছানায় পড়ে থাকা গ্যাস লাইটারটা তুলে দিলো ইহান।মালিহা বেগম নামাজ পড়তে উঠেছে আওয়াজ পেয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
–মেঝেতে পড়ে থাকা ছাই গুলো পরিষ্কার করে লুকিয়ে ফেলো তোমার আম্মু উঠে পড়েছেন মনে হচ্ছে।
আর তোমার অনেক প্রশ্ন করার আছে আমি জানি কিন্তু সেসবের উত্তর তোমার ১০ বছর পূর্ণ হলে আমার বাসায় যাবার পরই পাবে। আমি আবারো একটু পর আসবো তুমি নামাজ পড়ে নাও।আমিও যাই।আল্লাহ হাফেজ।
মিলির সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।মিলি বুঝতে পারছে না ১০ বছর পূর্ণ হওয়াটা কেনো এতো জরুরি তবে এটুকু ঠিকই বুঝতে পারছে যে কোনো কিছু স্পেশাল হতে চলেছে।আর চিন্তা না করে নাচতে নাচতে বাথরুমের দিকে গেলো,এখন ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ পড়বে।
***
ইহান সকাল থেকেই যে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে সেটা দৃষ্টি এড়ায় নি রিমাদের। রিমাদ ওকে অনেকক্ষন যাবৎ আড়চোখে দেখছে সন্দেহের দৃষ্টিতে কিন্তু সেদিকে ক্রুক্ষেপ নেই ইহানের।সে হাঁটছে আর একা একা হাসছে।
–আরে এইবার তো বল কি হইছে?এতো খুশি ক্যান তুই?লটারি পাইছিস নাকি?

–পাই নি,হারানোটা জিতছি।

–তারমানে তুই কাল সারারাত কিছু একটা করেছিস! রিদ! রিদের ব্যাপারে কিছু এটা আমি সিউর।কালকে আমি আর রোজা তো আড্ডা দিছি সারারাত।

–হুম তোরা দুজন হইলি ফাঁকিবাজ,আড্ডা দিবি না তো কি আর করবি!

–আরে মার খাবি কিন্তু।কালকে আমাদের ছুটি ছিলো, তোরও ছিল কিন্তু তুই যাস নি আমরা কি করতে পারি?
এখন কথা না পেচায়া বল কি হইছিলো কাল?

–রিদের সাথে কাল দেখা করছি, মানে আজ সকালে।

–হোয়াট!!!!আর ইউ সিউর?

–অফকোর্স!
ইহান রিমাদকে সবটা খুলে বললো। রিমাদ তো খুব খুশি।তারপর দুই বন্ধু ছুটলো রোজার কাছে খবরটা দিতে।আজ তো ওরা অনেক উদযাপন করবে,আড্ডা দিবে এটা নিশ্চিত।অনেকদিন পর একটা খুব খুশির সংবাদ পেয়েছে যেনো।ওরা দৌড়ে প্রাসাদে চলে গেলো। ইহান যদিও দৌড়াতে চায় নি কিন্তু রিমাদের সাথে তাল মিলাতে দৌড়াতে হচ্ছে।ওদের এভাবে আসতে দেখে রোজাও লাফাচ্ছে কারণ ও জানে ওর বন্ধুরা নিশ্চয়ই খুব খুশিতেই এমন করে দৌড়ে আসছে।
–আরে তুই লাগাচ্ছিস ক্যান?

–তোরা লাফাচ্ছিস তাই আমিও লাফাচ্ছি।
এখন ব্যাপারটা কি বল?
ইহান আর রিমাদ দুজন একই সাথে বলতে শুরু করলে রোজা ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো,
–কুল গাইস, আস্তে আস্তে খুলে বল।
তারপর রিমাদ পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতেই ৩ জন মিলে পুরো প্রাসাদ মাথায় তুলে ফেললো হইহই করতে করতে।

চলবে”””
(কালকের পর্বে মনে হয় শেষ করতে পারবো।লাভ টুইস্ট গল্পে ভালো সাড়া পাচ্ছি না তাই দিতে লেইট হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here