রহস্যের_কুয়াশা☠️ পর্ব_১৫

রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_১৫
#হাফসা_ইরিন_রাথি
সিড়ি দিয়ে নেমে জ্বীন রাজ আর জ্বীন রাণী দিকে ব্যাথাকাতর স্নেহের দৃষ্টিতে তাকালেন।মিলির বুকের ভেতরটা কেমন ধুক্ করে উঠলো।মিলি বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে,যেনো অসম্ভব তোলপাড় চলছে ভেতরটায়,ইচ্ছে করছে ওদের জড়িয়ে ধরে কিন্তু সেটা কয়েক মুহূর্তের জন্য মাত্র। কয়েক মুহূর্তের এই অদম্য অনুভূতির কোনো ব্যাখা খুঁজে পেলো না ও।মিলি খেয়াল করলো জ্বীন রানীর চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে।হঠাৎ তিনি মিলিকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলেন। জ্বীনরাজ অনেক কষ্টে নিজের স্ত্রীকে সামলে নিজের কাছে নিলেন।
মিলিকে পুরো প্রাসাদটা ঘুরিয়ে দেখালো রুশা, ইহান গেলো না ওদের সাথে কারণ ওর মনটা খারাপ আর আশাহত হয়ে আছে।মিলি বুঝতে পারলো না হঠাৎ ইহণের কি হলো কিন্তু জিজ্ঞেস করার আগেই রুশা ওকে টেনে নিয়ে গেলো সব ঘুরে দেখাবে বলে।
–”আমাদের প্রাসাদ,রাজ্য তোমার ভালো লাগছে তো?”

–”হুম খুব।
(একটু ইতস্তত করে)
আচ্ছা ওরা কারা?”
রুশা বুঝেও না বুঝার ভান করে বললো,
–”কারা?”

–”ওই যে সুন্দর মহিলা আমায় জড়িয়ে ধরে কাদলেন,চুমু খেলেন?আর তার সাথে যেই ভদ্রলোক ছিলেন? তিনিই বা কে?”
রুশা অনেক কষ্ট নিজের দীর্ঘশ্বাস চেপে মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,
–”রিদ তুমি তো জানো যে আমরা তোমাদের মতো সাধারণ মানুষ না,আমরা জ্বীন।”

–”হ্যাঁ আমি জানি। ইহান আমায় বলেছিলো অনেক আগেই।আর মা বাবাও বলতো।কেনো বলোতো?”

–”উনাদের দুজন দুজনকে যে তুমি দেখলে,তারা ছিল জ্বীন রাজ আর জ্বীন রাণী।”

–”আমায় জড়িয়ে কাদলেন কেনো তবে?”(অবাক হয়ে)

–”অনেক বড় ইতিহাস আমাদের জ্বিনদের ইতিহাসে সেটা। পরে শুনিও অন্য কোনোদিন।আজ চলো, ইহানের কাছে যাই আর তোমার সাথে আরেকজনের পরিচয় করিয়ে দিবো।”

–”কার?”

–”চলই না।”
***
–”ওরা আবারো হামলা করতে চলেছে আমাদের জ্বীন রাজ্যে।আর সেটা সম্ভবত ১ সপ্তাহের মধ্যেই।”

–”সেটা কিভাবে সম্ভব? রিদের সব মনে পরার আগে ওরা কিছুতেই হামলা করবে না।”

–”কিন্তু ওরা সেটাই করছে। নিশ্চয়ই অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে ওদের।এটা কোনো নতুন চাল।”
মিলি আর রুশা রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু ইহান আর রিমাদ সেটা খেয়াল করে নি।মিলি সব কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে দেখে রুশা গলা খাকারি দিয়ে ওদের সতর্ক করে দিলো। রিমাদ কথা বলা থামিয়ে ওদের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললেন,
–”আরে তোমরা এসে গেছো!”
রিমাদের কথা বলার আগ্রহ চলে গেলো রুশার তীব্র দৃষ্টির সামনে। রুশা রিমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো মিলির। ইহান এতক্ষণে মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,
–”চলো তোমায় বাসায় রেখে আসি।”

–”না আমি যাবো না,আমিও তোমাদের সাথে যুদ্ধে যাবো।”
মিলির কথা শুনে ওরা ৩ জন মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। রিমাদ জানে এখন ওরা দুজন ওকেই দোষারোপ করবে মিলির কানে ব্যাপারটা পৌঁছানো নিয়ে তাই সে আগে বাগেই বললো,
–”যুদ্ধ?কিসের যুদ্ধের কথা বলছো তুমি?তুমি বাসায় যাও আবারো পরে আসিও ইহানের সাথে।”

–”হ্যাঁ চলো।তোমার মা বাবা তোমায় খুঁজবে।”
ইহান যাওয়ার জন্য উদ্ধত হয়ে মিলির হাত ধরলো কিন্তু মিলি এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে দিয়ে একরোখা ভাবে বললো,”আমি যাবো না,যাবো না,যাবো না।”
ইহান অবাক হয়ে গেলো সাথে রুশা, রিমাদও।মিলিকে এমন জেদী হতে কখনো দেখেনি ওরা কেউই। ইহান মিলিকে শান্ত করতে বললো,”তোমার বাসার সবাই তো তোমায় খুঁজবে।কেনো এমন জেদ করছো হঠাৎ?”

–”আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।আমি কিছুতেই যাবো না এখন।আমি যেতে পারি না।”(বিড়বিড় করে)
ইহান চিন্তিত হয়ে রুশা আর রিমাদের দিকে তাকালো। রুশা ওকে চোখ টিপে আশ্বস্ত করলো তারপর অন্যমনস্ক হয়ে দাড়িয়ে থাকা মিলির দিকে তাকিয়ে বললো,”তুমি এখানে অপেক্ষা করো আমরা আসছি।চিন্তা করিও না,এখানে তুমি নিরাপদ।”
মিলিকে ঘরের মধ্যে রেখে দরজাটা চাপিয়ে রেখে ওরা তিনজন বেরিয়ে বারান্দায় হাটতে লাগলো।
–”রিমাদ,তুই এত্তো কেয়ারলেস কেনো? দেখলি তো এখন কি হলো?”

–”ওমা দোষ কি আমার একার নাকি?ইহানেরও দোষ আছে তাহলে।”

–ইহানের কিভাবে দোষ হয়?তুই ওর রুমে ঢুকেছিলি দরজা বন্ধ করার খেয়াল ছিল না?”

–”প্লিজ তোরা থামবি?এখন নিজেদের মধ্যে না লড়ে কি করা যায় সেটা বল। রিদের হঠাৎ কি হলো কিছুই তো বুঝতে পারছি না!”

–”আমার মনে হয় এখন জ্বীন রাজের সাথে দেখা করতে যাওয়াই বেটার।”

–”আমিও সেটাই বলি।”(রিমাদ)
রিমাদের কথা শুনে রুশা ওর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। ইহান ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
–”এখন অন্তত তোদের ফালতু ঝগড়া রাখ,প্লিজ।

–”আমি ঝগড়া করছি নাকি?রোজা নিজেই তো আমার সাথে পায়ে পায়ে ঝগড়া করছে।”

–”হেই ইউ ননসেন্স,আমি মোটেও এমন ঝগরুটে না।তোর ভুলের জন্য সতর্ক করছি আর তাতেও তুই তর্ক শুরু করে দেস যেনো ডিবেটিং এ অংশগ্রহণ করেছিস জিতলে পুরস্কার পাবি।”

–”একদম বাজে কথা বলবি না রোজা।তুই সবসময় আমার পেছন ক্যান লেগে থাকস বলতো?তোর দরকার ছিল মানুষের ওই যে যুক্তিবিদ্যা না কি যেনো নামের একটা ফালতু ক্লাস আছে না?সেটা করা।আমি রাজা মশাই এর কথা বলে তোকে পৃথিবীতে স্থায়ীভাবে পাঠিয়ে দেবার ব্যাবস্থা করছি।”
ইহান ওদের এসব আজাইরা ঝগড়ায় বিরক্ত হয়ে কানে আঙ্গুল গুজে জ্বীন রাজের রুমে দিকে হাটা শুরু করলো তাড়াতাড়ি। ইহানকে চলে যেতে দেখে রোজা রিমাদকে একটা চাটি মেরে ইহানের পেছনে দৌড়াতে লাগলো।

জ্বীনরাজ ওদের সব কথা শুনে চিন্তিত মুখে ভাবতে লাগলো ব্যাপারটা।
–”তুমি তো একবার রিদকে তোমার আর ওর ব্যাপারে একটা গল্প বলেছিলে।তখন ওর রিএক্ট কি ছিল?”

–”ওর কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ছিল না,এমনকি ও গল্পের মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়েছিল।ও সেটাকে শুধুমাত্র একটা গল্পই ভেবেছিলো।”
জ্বীনারাজ আবারো চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগলেন। রিমাদ আর রোজা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া ইতিমধ্যে ভুলে গিয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকাতে লাগল প্রশ্ন সূচক ভাবে।ওরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জ্বীনরাজের উত্তরের প্রতীক্ষায়।
–”এখন দুটো উপায়ই বাকি আছে এর সমাধানের।প্রথমে সহজ উপায়টাই অবলম্বন করবো আমরা।”

–”কি সেটা?”

–”রিদকে অতীতের গল্প শুনাতে হবে।প্রথম থেকে।যেটুকু তুমি বলেছো তার পর থেকে।”

–”কিন্তু………”

–”কোনো কিন্তু নেই,এটাই সমাধানের পথ।”
জ্বীনরাজ ওদের সবাইকে নিয়ে রিদের কাছে যেতে লাগলো।

দরজায় ধাক্কা পড়ায় তাকিয়ে দেখলো মিলি।দরজার সামনে সবাইকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো। জ্বীনরাজ ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
–”তুমি বসো মা।”
মিলি আবারো বসলো।মিলি ইহানের দিকে প্রশ্ন সূচক ভাবে তাকিয়ে আছে দেখে জ্বীনরাজ বললো,”তুমি কি ইহানের কাছ থেকে একটা গল্প শুনেছিলে?”
মিলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো।
–”বাকিটা শুনতে ইচ্ছে করে না?”
মিলির সত্যি পরেরটা জানতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু সেটা অনেকদিন পর আর তখন ইহান জ্বীন রাজ্যে থাকায় জিজ্ঞেস করতে পারে নি।যখন ইহান গল্পটা শুনিয়েছিল তখন ও অনেক ছোট থাকায় গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।আর ব্যাপারটা একপ্রকার ভুলেই ছিল এতদিন কিন্তু আজ জ্বিনরাজের কথা শুনে খুব আগ্রহ হলো জানতে।মিলি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
জ্বীনরাজ বাদে ওরা ৩ জনই খুশি হয়ে মুচকি হাসলো কিন্তু জ্বীনরাজ জানেন এটাই হয়তো সমাধান না।

চলবে””
(পরের পর্বে সব রহস্য উন্মোচন হবে আর হ্যাঁ পর্বটা ২/৩ দিনের মধ্যেই দিয়ে দেবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here