রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_১৭ এবং শেষ
#হাফসা_ইরিন_রাথি
ওরা সবাই প্রাণপণ যুদ্ধ শুরু করলো জীবন বাজি রেখে কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিকেই সেনাপতি সৈন্যদের নিয়ে ভিড়ে যায় শত্রু পক্ষের দলে আর এর কারণ হিসেবে জানায় রাজকন্যা নির্বিচারে ওর ছেলের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।রাজকন্যা আর কি করবে,কিন্তু তিনি যথেষ্ট ধৈর্যের সাথে সাথে মাত্র ৩০০ জন সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে।যুদ্ধে যখন ওদের হার প্রায় নিশ্চিত ঠিক তখনই বিরোধীপক্ষ একটা চুক্তি করতে চায় ওদের সাথে।তারা জানায় তারা সব প্রজাদের প্রাণ ভিক্ষা দিতে পারে রাজকন্যা রিদের কাটা মুণ্ডুর বিনিময়ে!এমন কথা শুনে সবাই ভয়ে শিউরে উঠে, ইহান খুবই রেগে যায় কিন্তু রাজকন্যা কিছুই বলেন না।
রাজাকে দ্রুত খবর পাঠানো হলো যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা বেগতিক দেখে।তিনি আসতেই রিদ তাকে জানালো সে শত্রুপক্ষের শর্তে রাজি আছে। ইহানের পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো রিদের সিদ্ধান্ত শুনে।না চাইতেই মুখে থেকে তীব্র আর্তনাদ বেরিয়ে এলো।
–”নাহ্,এটা হতে পারে না। রিদ তুমি এসব কি বলছো কি?তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?”
–”এর চেয়ে ভালো কোনো সমাধান নেই।আমি জানি এখন আমরা আমাদের সবটা দিয়ে যুদ্ধ করলেও আমরা হেরে যাব আর তারপর আমাদের সব সৈন্যকে,প্রজাকে মেরে ফেলবে ওরা।আমি ওদের শাসনকর্তা হয়ে এটা মেনে নিতে পারবো না।আমার প্রজাদের রক্ষার দায়িত্ব আমারই।”(গম্ভীর মুখে)
ইহান রাজকন্যার মুখে এমন কথা শুনে রাজার কাছে গেলো সমর্থনের আশায় কিন্তু রাজা কিছুই করলেন না।তিনি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছেন সেটা তার চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
–”আমি প্রজাদের স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারি না নিজের মেয়ের স্বার্থের কথা চিন্তা করে।”
ইহান অশ্রুসিক্ত নয়নে রিদের সামনে এসে দাড়ালো,নিজের হাত দিয়ে ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।
–”কিন্তু আমি যে তোমায় ভালোবাসি রিদ!”
–”আমিও তোমায় ভালোবাসি কিন্তু আমার প্রজাদেরও আমি ভালোবাসি ইহান।তুমি আমায় কথা দাও তুমি আমাদের রাজ্যেই থাকবে আর আমাদের রাজ্যকে নিজের রাজ্য হিসেবে ভালোবাসবে।”
ইহান যেখানে ভেবেছিলো রিদকে ছাড়া ও নিজেও থাকবে না, রিদের সাথে সাথে নিজেরও মুন্ডুপাত করবে সেখানে রিদ কিনা ওর উপর এক সুবিশাল দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছে! রিদের অনেক অনুরোধের পর ইহান বাধ্য হলো বেঁচে থাকতে আর কর্তব্য পালন করতে।
রিদের মুন্দুচ্ছেদ হলো, ইহানের চোখের সামনে যেনো আজও সেই দৃশ্যটা ভেসে উঠছে। রিমাদ আর রোজা সেদিন ওকে অনেক কষ্টে সামলেছিল,আজও সামলালো।কথাগুলো বলতে বলতে ইহানের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। রিমাদ আর রোজা ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।মিলি খেয়াল করলো ওর নিজের চোখও জলসিক্ত হয়ে আছে।মিলি বুঝতে পারলো না এই ইহানের ঐসবের সাথে কি সম্পর্ক যে ও কাদছেন?না বুঝতে পেরেই প্রশ্ন করলো,
–”তারপর কি হলো?”
এইবার জ্বীনরাজ একটা বড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন।
–তারপর আমরা রিদের প্রাণের বিজটা অনেক সুরক্ষিত ভাবে সংরক্ষণ করে রাখলাম।ওর বাচার আর কোনো মাধ্যম ছিল না কিন্তু কোনো মানুষের মধ্যে ওর প্রাণের বীজের স্পর্শ দিলে রিদ ধীরে ধীরে তার মধ্যেই বেড়ে উঠবে একেবারে আগের মতো করে,নিজের আসল সত্তায়, আসল রূপ।এমনটাই আমাদের বড় ইমাম জানিয়েছিলেন।কিন্তু আরেকটা আশ্চর্যজনক কথাও তিনি জানিয়েছিলেন আর সেটা হলো,আত্মত্যাগের বিনিময়ে রিদের প্রাণের বীজে একটা আলাদা শক্তি উৎপন্ন হয় যেটা কেবলমাত্র তখন সে পাবে যখন বেড়ে উঠার পর আগের সব কথা আবার মনে করতে পারবে।কিন্তু হয়তো সম্পূন্নভাবে ভুলেও যেতে পারে সব।এই শক্তির কথা শত্রু পক্ষ জেনে যায়।ওরা শর্ত অনুযায়ী সব প্রজাকে ছেড়ে দেয় আর সেখান থেকে যে কোথাও যায় কেউ বলতে পারে না।সবাই মনে করে তারা রিদের সব মনে পড়ার অপেক্ষায় আছে যখন রিদের শক্তি তারা নিয়ে নিতে পারবে।
জ্বীনরাজের কথাগুলো সব মিলির মাথার উপর দিয়ে গেলো।ও কিছুই বুঝতে পারলো না কথাগুলোর।কিন্তু চোখের সামনে সব কুয়াশাচ্ছন্ন হতে লাগলো।হঠাৎ মিলি জ্ঞান হারালো।
ইহান দৌড়ে এসে মিলিকে ধরে ফেললো।তারপর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জ্বীনরাজের দিকে। ইহান হঠাৎ করে মিলির কি হলো বুঝতে পারছে না।
–”কিছুই হয় নি,দুশ্চিন্তা করিও না।”
–”তাহলে ও জ্ঞান হারালো কেনো?”
–”আমি ওকে মন্ত্রবলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।”
–”কিন্তু কেনো?”
–”সব শুনতে শুনতে ও কান্না করেছে।এখন ওর ভিতরে বিজটার রস শোষণ করা যাবে।”
ইহান আনন্দে বাক্যহারা হয়ে গেলো। রিমাদ আর রোজার দিকে তাকালো,ওদেরও একই অবস্থা। জ্বীনরাজ ওদের অবস্থা বুঝতে পেরে হাসলো তারপর বললো,
–”এখন আমাকে সাহায্য করো কাজ করতে।আনন্দ পরে করিও যদি সত্যি আমরা সফল হই।”
ওদের সাথে রানীও যোগ দিলো। ইহান,রোজা, রিমাদ, রাণী সবাই মিলিকে সামনে নিয়ে বসে আছে আর জ্বীনরাজ কি যেনো করছেন চোখ বন্ধ করে।মিলির শরীরটা একটু পর পর কেপে উঠছে সামান্য।
প্রায় ৩০ মিনিট পর জ্বীনরাজের মুখে হাসি ফুটলো।তুমি চোখ খোললেন।সবাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তিনি মুচকি হেসে বললেন,
–”কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর জ্ঞান ফিরবে।সব আগের মতো হয়ে যাবো কিন্তু ওর দিকে এতক্ষণ কড়া নজর রাখবে কারণ ওকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে তারা।”
ওরা সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ইহান মিলিকে নিয়ে বসে পড়লো।মিলির মাথাটা ওর কোলে রেখে ওর চুলগুলো নাড়তে লাগলো আর ওর নিষ্পাপ মুখটা দেখতে লাগলো।আনন্দে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।রোজা আর রিমাদ ওর পাশে বসে আছে।রাজা আর রানি ওদের একা ছেড়ে গেলেন ওদের সময় কাটাতে দিয়ে আর যাবার আগে বারবার সতর্ক করে গেলেন যাতে ওকে ছেড়ে কোথাও না যায়।
সন্ধ্যা হয়ে গেলো,আস্তে আস্তে রাত হতে লাগলো গভীর থেকে গভীরতর কিন্তু ইহানের কোনো হেরফের নেই ও সেভাবেই বসে আছে রিদকে নিয়ে।রাত যখন অনেক গভীর হলো তখন রিমাদ আর রোজা বসা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লো।রোজার মাথাটা রিমাদের কাধে এতো সুন্দর করে রাখা যে এটা দেখে ইহানের মনে নতুন একটা কথা আসলো যেটা কখনো ভাবেনি,সম্ভবপর হবে চিন্তা করেনি।রাতে অনেকবার চুপিচুপি রাজা আর রানি ওদের দেখে গেলেন। ইহানকে জেগে থাকতে দেখে তারা অনেক খুশি হলো, জ্বীনরাজ ইহানকে আগে সন্দেহ করার জন্য নিজের কাছে অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো।
সকালের আযানের ধ্বনি কানে যেতেই মিলির চোখ নড়ে উঠলো। ইহান তখন ১২ বছরের বাচ্চার বেশে ছিল। রিদ নিজেকে ইহানের কোলে দেখে আস্তে আস্তে সব মনে করতে লাগলো। ইহান তখন একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল আর রিমাদ রোজা পাহারা দিচ্ছিলো মিলিকে।মিলির চোখ খুলতে দেখে রোজা দৌড়ে গেলো রাজা রাণীকে সংবাদ দিতে। ইহানেরও ঘুম ভেঙে গেলো। ইহান চোখ খুলে দেখলো রিদ সেভাবেই শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ওর ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা করছে,ওর যাতে ঘুম না ভেঙ্গে যায় সেজন্য নড়াচড়া করছে না।
–রিদ
রিদের মুখে একটা আশ্চর্য হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ইহান বুঝতে পারলো না ওর এমন হাসির কারণ কিন্তু ও নিজেও হাসলো। রিদকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে,ওর চোখে মুখে অনেক চুমু খেলো।সবাই আসার পর রিদ উঠে বসলো। রানী আর রাজা ওকে ধরে অনেকক্ষন যাবৎ কান্না করলো। ইহান রিদকে জিজ্ঞেস করলো ওর হাসির কারণ।
–”আমি এমন একটা শক্তি পেঁয়েছি যেটা কারো কাছে নেই,কোনো জ্বিনের কাছে নেই।এখন শত্রুদের পরাজিত করা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না তা সে যতই শক্তিশালী হোক।”
রিদ কথাটা বলে রাগে ফেটে যাচ্ছে।চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেদিনকার সব দৃশ্য।ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
–”কিন্তু ওরা তো তোমার কাছ থেকে শক্তি কাড়ার চেষ্টা করবে!”
ইহান যেনো জ্বীনরাজের কথাটাই বললো। রিদের হাসিটা আরো চওড়া হলো।
–”তোমরা কি ভাবছো ওরা এখনো সেই চেষ্টা করে নি?”
ইহান সহ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না কারণ সারারাত তো ওরা জেগে ছিল তবে কখন তারা এলো! রিদ ওদের মনের কথা বুঝতে পেরে হেসে বললো,
–”সাফিয়া যে তোমাদের একটা কালো সরিষার বীজের মতো জিনিস দিয়েছিল তোমাদের মনে আছে?”
ওরা সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো।
–”সেটা তোমরা আমার উপর প্রয়োগ করেছিলে আমার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।সেটা ছিল মন্ত্রপূত।সেটা কি এখন তোমাদের কাছে আছে?”
–”হ্যাঁ”
ইহান সেটা যেখানে রেখেছিলো সেখানে অনেক খুঁজলো কিন্তু তাও পেলো না।
–”আর খুঁজতে হবে না।ঐটা পাবে না ইহান।ওরা ওটা নিয়ে গেছে।ঐটা দিয়ে ওরা আমার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমার শক্তির কাছে ঐটা কিছুই না।ওরা চেষ্টায় ব্যাহত হয়ে আহত হয়েছে।আমি ওদের খুঁজে বের করে সেভাবেই মারবো যেভাবে ওরা আমার প্রজাদের নির্মনভাবে মেরেছিলো।”
শেষের কথাগুলো বলার সময় রিদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
–”কিন্তু যাই করো না কেনো সবার আগে তোমার আগের শরীর পেতে হবে।তুমি এখনও ১০ বছরের বাচ্চা।”
রিদ ওর চোখ বন্ধ করে দুহাত প্রশস্ত করলো আর সবার সামনে চলে এলো সেই হারিয়ে যাওয়া রিদ। ইহান দেখতে পেলো ওর কালো চুলগুলো পরিবর্তিত হয়ে আবারো সেই ঝলমলে সোনালী চুলে পরিণত হয়েছে।সকালের রোদের আলো এসে চুলে পড়ায় চুলগুলো আরো আকর্ষণীয় ঝলমলে হয়ে আছে। ইহান নিজেও নিজের আসল রূপ চলে এলো।
রিদ আর কোনো কথা না বলে চোখ বন্ধ করলো।ওর চারপাশটা আলোয় ভরে গেলো,ওর শরীর থেকে আলো বের হচ্ছে। রিদ হাতে তুড়ি বাজাতেই ওর সামনে এক গামলা পরিষ্কার দুধ চলে এলো। রিদ কি যেনো একটা মন্ত্র পড়ে ওর মাথা থেকে একটা চুল ছিড়ে দুধের গামলায় ফেললো আর সাথে সাথে দুধের রংটা পাল্টাতে লাগলো।আস্তে আস্তে লাল বর্ন ধারণ করছে সেটা,আস্তে আস্তে আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে।ওরা কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারলো না।এভাবে আস্তে আস্তে পুরো গামলাটা রক্তে পূর্ণ হয়ে গেলো যেনো ওখানে কোনো দুধ ছিলই না।
রিদ একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে তুড়ি বাজাতেই গামলাটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।সবার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সবাই প্রশ্ন করার অপেক্ষায় আছে। রিদ হেসে বললো,
–”আর কেউ নেই।আর কোনো শত্রু বেঁচে নেই,আর না আছে কোনো গুপ্তচর।আমাদের রাজ্যের যতো বিশ্বাসঘাতক ছিল সবাই মরে গেছে।আমাদের রাজ্যে আর কোনো অশান্তি আসবে না,শুধু আনন্দ আর আনন্দে বেঁচে থাকবে সবাই।”
রাজামশাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
–”কিন্তু তুমি এখানে বসেই কিভাবে সব করলে?”
–”বাবা,আমি এমন সব শক্তি পেয়েছি যার দ্বারা আমি শত্রুর মোকাবেলা সহজেই করতে পারি।শত্রুদের জন্যই আমার নির্বিচারে নির্মম মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু মারা যাবার পর আল্লাহর কাছ থেকে আমি কিছু শক্তি পাই।আমি ছিলাম শহীদ জ্বিন।জ্বিনদের ইতিহাসে এমনটা আগে কেউ করেনি তাই আমি অনেক শক্তি লাভ করি পুরস্কার স্বরূপ।এখন আর এসব বলিও না।যুদ্ধের এই জীবনে আমি হাপিয়ে উঠেছি।আমি এইবার সাধারণভাবে বাঁচতে চাই মা।”
জ্বীনরাজ আর কোনো প্রশ্ন করলেন না।পুরো রাজ্যে ইহান আর রিদের বিয়ের ঘোষণা করে দেওয়া হলো কিন্তু ইহান বললো ওরও কিছু বলার আছে।আর সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে ইহান রিমাদ আর রোজার বিয়ের কথাও ঘোষণা করলো ওদের বিয়ের সাথেই। রিমাদ আর রোজা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ফোরিত চোখে।
–”ওই তোর সাহস তো কম না।তুই আমারে বউ বানাইতে চাস?”
–”একদম মুখ সামলে কথা বলবি।তোর মতো পাগলেরে বউ বানানোর আগে যেনো আমার মৃত্যু হয়।আমারে সুন্দর পায়া তুই বিয়ে করার জন্য কান্নাকাটি করছিস নিশ্চয়ই ইহানের কাছে,নাহলে ও এমন ঘোষণা কেনো করবো?”
–”পাল্টি মারস?যেই কথা আমার বলার কথা সেই কথা তুই বলস?”
রোজা রিমাদের চুল টেনে ধরলো, রিমাদ নিজেও রোজার চুল টেনে ধরলো ওরা দুজন চুল টানাটানি করছে এটা এতক্ষণে নজরে পড়লো ইহানের।
–”আরে তোরা থামবি?এমন বাচ্চামি করতেছিস ক্যান?”
দুজন একই সাথে বলে উঠলো,
–”এইটা কি ঘোষণা করলি তুই?”
–”যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন আর সিদ্ধান্ত পাল্টানো যাবে না,তোরা বরং আরেকটু মারামারি কর,আমি আমার বউএর কাছে যাই।”
ওরা দুজন বোকার মতো ইহানের চলে যাওয়া দেখলো তারপর একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো কতক্ষন তারপর আবারো ঝগড়া।
***
ওদের ৪ জনের বিয়ে হলো একই সাথে।এখন যে যার রুমে। ইহান আর রিদ একরুমে,রোজা আর রিমাদ আরেক রুমে।ওদের রুম গুলো পাশাপাশি। ইহান আর রিদের রুম থেকে পাশের রুমের দুজনের ঝগড়া স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ইহান দেঁয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বললো,
–”তোরা কি থামবি?নিজেরা বাসর না করলে না কর,আমার বাশরটা যেনো নষ্ট করছিস,মেরে ভাই?”(চাপা স্বরে)
–”চুপ করে থাক।তুই আমারে এই পেত্নীর সাথে এক রুমে ঢোকাইছিস,এখন নিজে শান্তিতে বাসর করবি? তা তো হবে না।”
–”ওই কে পেত্নী?তুই নিজে যে একটা সেউডা গাছের ভূত।আমার জিবনটা নষ্ট কইরা দিছস তুই ইহান,বন্ধুত্বের এই প্রতিদান দিলি?”
ইহান দেঁয়ালের কাছ থেকে সরে এসে দেখলো রিদ মন খারাপ করে বসে আছে।
–”কি হয়েছে রিদ?”
–”আমার না খুব মনে পড়ছে আমার পৃথিবীর বাবা মায়ের কথা।মা নিশ্চয়ই অনেক কান্নাকাটি করছেন।”
–”তুমি মণ খারাপ করো না।এমনিতেই তো ওদের জন্য এখানে বাসর কি,ঘুমানোও সম্ভব হবে না।চলো আমরা তাদের সাথে দেখা করে আসি।”
রিদ অনেক খুশি হলো।খুশিতে লাফিয়ে উঠলো ঠিক মিলির মতো।তারপর দুজন পৃথিবীতে গেলো।
রিদ জারিফ সাহেব আর মালিহা বেগমকে সব বুঝিয়ে বললেন।মালিহা বেগম অনেক কান্নাকাটি করলেও শেষে বুঝতে পারলেন আর মিলিকে আটকালো না।মিলি ওদের প্রতিজ্ঞা করলো কিছুদিন পর পর দেখা করতে আসবে।
রিদ আর ইহান এখন প্রতিদিন তন্ময়ির পাড়ে বসে থাকে বিকেলে।প্রতি সপ্তাহে একবার গিয়ে দেখা করে আসে জারিফ সাহেব আর মালিহা বেগমের সঙ্গে আবার মাঝে মাঝে সেখানে কিছুদিনের জন্য থেকেও আসে।আর রোজা ও রিমাদ আগের মতোই ঝগড়া আর খুনসুটিতে কাটিয়ে দিচ্ছে ওদের জীবন,তবে ভালোবাসার কমতি কোনোকালেই ছিল না সেই ঝগড়ায়।ভালোবাসা আজীবন বেচেঁ থাকে না কিন্তু ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলেও দুটি মনের মধ্যে যেই বন্ধুত্বটা থাকে সেটা আজীবন বেচেঁ থাকে,চিরস্থায়ী সেই বন্ধন। জ্বীনরাজ্যে এখন শান্তি আর শান্তি,ভালোবাসা আর ভালোবাসা বিরাজ করছে যেটা আমরা সচারচর শুনে থাকি রূপকথার গল্পে!
সমাপ্তি”””””
(গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।)