রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_৫
#হাফসা_ইরিন_রাথি
এইবারের মতো ইহানের আর কিছু করতে হয় নি।মালিহা বেগম নিজেই ভয়ে আর হুজুরের স্মরনাপন্ন হওয়ার কথা চিন্তা করেন নি আর নিজের হাসব্যান্ডকেও করতে দেন নি।দিনকাল বেশ যাচ্ছে মিলির।
আজ বুধবার।আজকের ক্লাস শেষ করেই মিলির স্কুলের ঈদের ছুটি,শুধু মিলির না সব সরকারি স্কুলেরই। ইহান প্রতিদিনই মিলির সাথে স্কুলে আসে কিন্তু মিলির পাশে কাউকে বসতে দেখলেই তার ভালো লাগে না আর সে যদি হয় ছেলে তাহলে তো কথাই নেই,যদিও ছেলে মেয়ে আলাদা বসার ব্যবস্থা এখানে।
–ইহান,তুমি আমার পাশে বসতে পারবে না।তুমি ছেলে তাই ছেলেদের সাথে গিয়ে বসো বুঝলে।
–এটা কেমন কথা হলো?
–এটাই ঠিক কথা হলো।আমি এখন অনেকটুকু বড় হয়ে গেছি তাই তোমার সাথে বসতে আমার লজ্জা করে,হাহাহা।
–৫ বছর হতে এখনো তোমার মাসখানেক বাকি আছে বুঝলে।
মিলি কিছু একটা বলতে নিচ্ছিলো তখনি কোথা থেকে ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল এসে ওকে বললো,
–এই তুমি একা একা কার সাথে কথা বলছো?পাগল নাকি তুমি?
মেয়েটার কথা শুনে মিলির কপাল কুঁচকে এলো রাগে কিন্তু তার আগেই ইহান ওর পা দিয়ে মেয়েটার পা খুব জোরে মাড়িয়ে দিলো আর মেয়েটা ব্যাথায় পায়ে হাত দিয়ে বসে পড়লো।মিলি ইহানের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেয়েটা বুঝতে পারছে না মিলি কার দিকে তাকিয়ে হাসছে তাই ব্যাথা ভুলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে দৌড়ে পালালো।আসলে স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই এই মেয়েটা মিলির পেছন লেগে আছে ওকে ডিস্টার্ব করার জন্য।ওর নাম তমা।মিলি আসার আগ পর্যন্ত তমাই ছিল ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল কিন্তু অল্প কিছুদিনেই সব স্যার ম্যামদের মন জয় করে আর পড়াশুনাতে ভালো কর্তৃত্ব দেখিয়ে এখন ক্লাসের টপ স্টুডেন্ট হিসেবে সবার কাছে খুব আদরের মিলি।কিন্তু টপ স্টুডেন্ট হবার পরও মিলি সবসময় লাস্ট বেঞ্চে একা বসে কারণ ওর পাশে ইহান বসে সবসময়।এখন এইটুকু মিলি খুব ভালই বুঝে যে ইহানকে ও বাদে আর কেউ দেখতে পায় না।তাই আজ ইহানকে রাগ করে ছেলেদের সাথে বসার কথা বলেছিল।
–দেখলে তো আমি না থাকলে কি হতো??
–কি আর হতো??আমি এই তমাকে একটা পাঞ্চ মরলেই ও অজ্ঞান হয়ে পড়তো বুঝেছো?
–হুম খুউউব বুঝেছি।যেই না একটা শুটকির মতো মানুষ তুমি তুমি কিনা ওই মুটকির সাথে পারবা।হাহাহা
মিলি ইহানের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। ইহানের জন্য স্কুলে আসা অব্দি ওর ভালো কোনো বন্ধুও হয় নি তাই ইহানের উপর ভীষণ রকমের রেগে আছে ও। ইহান বুঝতে পারলো মিলির রাগের কারণ তাই একটু চিন্তা করার জন্য আপাতত এখান থেকে চলে গেলো।মিলি পাশ ফিরে ইহানকে না দেখতে পেয়ে খুঁজতে লাগলো।
••••••••••••♦•••••••••••••
–লুকিয়ে না থেকে সামনে আয়।
বাতাসে মধ্যে থেকে হঠাৎ একটা ২৫ বছরের মতো সুদর্শন যুবক বেরিয়ে এলো হাসি মুখে।
–তুই কিভাবে বুঝে যাস বলতো??
–আমি আমাদের জাতির অস্তিত্বটা খুব ভালই টের পাই।
–হুম বুঝলাম।তবে শুধু আমাদের জাতির না,সব জাতির অস্তিত্বই তুই টের পাস।
–হবে হয়ত।আমি এখন অনেক পাল্টে গেছি রে রিমাদ।আমার রিদকে হারানোর পর থেকে আমি অন্যরকম হয়ে গেছি।
–হারাস নি তো।সে তো তোর কাছেই আছে।শুধু একটুখানি তফাৎ।
রিমাদের কথায় ইহান অন্যমনস্ক হয়ে “হু” বললো।
–কি ভাবছিস এখানে একা একা বসে??
–রিদের কথা।
–কেনো কি হয়েছে আবার??
–আমি রিদের আশপাশে থাকতে চাই,ওকে খুশি দেখতে চাই,ওকে সবকিছু মনে করাতে চাই।কিন্তু রিদ আজ খুব মন খারাপ করে ছিল আমার জন্য ও কারো সাথে মিশতে পারে না বলে।আমি বুঝতে পারছিনা আমি কি করবো।
–ইহান ভালোবাসা হওয়া উচিৎ মুক্ত,স্বাধীন আর হালকা।ভালোবাসা যদি বোঝা হয়ে যায় তাহলে সেটা বিষাক্ত হয়ে যাবে। রিদকে তুই মুক্তভাবে থাকতে দে।ও যেনো তোকে বোঝা না ভাবে আর যদি এখনই এমন হয়ে যায়,তুই ওর বোঝা হয়ে যাস তাহলে যে জ্বীনরাজের বলা অনুযায়ী সব ভেস্তে যাবে।তোর এতদিনের পরিশ্রম, স্বপ্ন আর ভালোবাসাও।
আমি এখন যাচ্ছি।আমায় রোজা ডাকছে।
ইহান মাথা নিচু করে বসে রইলো আর রীমাদ অদৃশ্য হয়ে গেলো। ইহান ভাবতে লাগলো, সত্যিই তো রিমাদ তো ঠিকই বলেছে। ইহান যেই কাজের জন্য এতো কিছু করছে সব তো নষ্ট হয়ে যাবে।না কিছুতেই হতে পারে না সেটা। রিদকে মানিয়ে নিতেই হবে ওর।
ইহান অনেকক্ষন ভেবে চিন্তে অবশেষে কিছু একটা মাথায় আসতেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
–হ্যাঁ এতেই কাজ হবে।
এতক্ষণ ও একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের উপর বসে ছিল।এইবার গাছ থেকে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতেই খেয়াল করলো গাছটাকে।বাহ্,গাছটা দেখি বেশ সুন্দর দেখতে!আসলে দুশ্চিন্তায় থাকায় আমরা আশেপাশের সৌন্দর্য গুলো অনুভব করতেই ভুলে যাই।সাধারণ এই গাছে কতো সৌন্দর্য অপেক্ষা করছে অথচ ইহান কিনা মিলিকে নিয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর জায়গাই খুঁজে পায় না।মনে মনে ঠিক করে নিলো এর পরেরবার মিলিকে নিয়ে এখানেই আসবে।
ইহান তাড়াতাড়ি মিলির ক্লাসের চলে এলো।কিন্তু আসতেই মাথাটা রাগে গজগজ করতেছে মিলিকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে। ইহান দৌড়ে মিলির আর ছেলেটার মধ্যেখানে গিয়ে দাড়ালো।মিলি ওকে দেখে একটা হাসি দিলো কিন্তু সামনে থাকা ছেলেটা ইহানকে দেখতে না পাওয়ায় সে ভাবলো মিলি তাকে দেখেই এতো সুন্দর করে হাসলো।তাই সেও আরেকটা হাসি দিলো।ছেলেটার হাসির আওয়াজ শুনে ইহান পেছন ফিরে ব্রু কুচকে তাকিয়ে ছেলেটাকে বললো,
–এই যে কালো গরু,তোরে দেইখ্যা ও হাসে নি যে তুই হাসি ফিরত দিচ্ছিস।
ইহানের কথা শুনে মিলি মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে। ইহান মিলিকে হাত ধরে টেনে বেঞ্চে এনে বসালো তারপর নিজেও ওর পাশে বসলো।ছেলেটা এখনো সেখানেই বোকার মতো দাড়িয়ে আছে কারণ সে মিলির হাসার কারণ বুঝতে পারেনি আর নাই বা পেরেছে এভাবে চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে।
–ইহান তুমি কোথায় গিয়েছিলে??তোমায় আমি কতো খুঁজলাম পেলাম না।
–তার আগে বলো ওই কালো গরুর সাথে তুমি কি এমন কথা বলছিলে??
–কালো গরু কেনো বলছো তুমি ওকে??তুমি দেখছো না ও কতো ফর্সা,তোমার চেয়েও বেশি।
ও আমায় পড়া জিজ্ঞেস করছিলো।ও তো ক্লাসের খুব ভালো একটা ছাত্র আর আমিও ভালো ছাত্রী তাই কাল আসতে না পারায় আমায় পড়াগুলো জিজ্ঞেস করছিলো।
ইহান মিলির মুখে ওই ছেলেটার প্রশংসা শুনে আরো জেলাস হতে লাগলো।ছেলেটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথাও মনে মনে ঠিক করে একটা শয়তানি হাসি দিলো।আর এখন ওর এতক্ষণের পরিকল্পনাটা বাস্তবে রূপ দেবার কথা আরো বেশি মনে পড়তে থাকলো।ভাবলো এটা সম্পর্কে আপাতত মিলিকে কিছুই বলবে না,কালকে একেবারেই সারপ্রাইজ দিবে।
–হাসছো কেনো তুমি??
–কিছু না।আমি আসছি।তুমি এখন যেখানে খুশি বসতে পারো কারণ আমি এখন তোমার সাথে বসবো না।
কথাটা এমন রহস্যজনকভাবে ইহান বললো যে মিলি কিছুই বুঝতে পারলো না কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই ইহান সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো।মিলি আর সাত পাঁচ না ভেবে সামনের একটা বেঞ্চে চলে গেলো।সেখানে বসা একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো।মিলিও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আরেকটা হাসি দিলো।মিলি এই মেয়েটাকে আর ক্লাসে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।তবে আশ্চর্য কিছুই হলো না কারণ ইহানের সাথে খেলা করতে করতে অন্যান্য দিকে ওর তেমন খেয়ালই থাকে না। প্রথম পরিচয়েই মেয়েটার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো মিলির।ওর বেশ ভালোই লাগছে কারন ইহান বাদে আজ অব্দি আর কোনো বন্ধু ওর ছিল না। মেয়েটার নাম হলো রুশা।মিলিকে রুশা একসময় হাসতে প্রশ্ন করলো,
–মিলি তুমি কার সাথে একা একা কথা বলো??সবাই বলে তুমি নাকি মানুষ না,ভূত।
মিলি এইবার বুঝতে পারলো যে কেনো কেউ ওর সাথে মিশতে চায় না,ওকে দেখলেই অনেকে পালায়।তাদের চেহারা দেখে মনে হয় খুব ভয় পাচ্ছে।
–তুমি তাহলে আমার সাথে কথা বলছো কেনো??তোমার কি ভয় লাগছে না??
মিলির কথায় রুশা একটু হাসলো আর তেমন কিছুই বললো না।মিলির কাছে কেমন যেনো রহস্য ঠেকলো রুশার হাসিটা।
••••••••••♦••••••••••••
আজ ছুটির পর একা একা বাসায় ফিরতে মিলির অনেক বেগ পোহাতে হচ্ছে।প্রতিদিন ইহান সাথে থাকে বলে দুজন গল্প আর ঝগড়া করতে করতেই চলে যায় কিন্তু আজ ইহান সেই যে গেছে আর আসে নি এর মধ্যে। ইহান মিলির এমন মনমরা ভাব দেখে খুব মজা পাচ্ছে।ও মিলির সাথেই আছে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে যা মিলিও দেখতে পারছে না।ক্লাসের সময় চলে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ছুটির পর পরই মিলিকে নেবার জন্য আবার স্কুলে চলে এসেছে ও। ইহান জানে রোজা ঠিকই সামলে নিয়েছে মিলিকে!!প্রথম প্রথম মিলির মা আসতো ওকে নিতে কিন্তু মিলি নিজেই বারণ করেছে যে ও একাই ফিরতে পারবে আর বাসা থেকে স্কুলের দূরত্বও তেমন না মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ তাই মালিহা বেগমও তেমন আপত্তি জানান নি।আর উনার এমনিতেই মিতুকে নিয়ে আর বাসার কাজ নিয়ে খুব ঝামেলা।একটা রিক্সা অবশ্য ঠিক করা আছে মিলিকে নেবার আর আনার জন্য কিন্তু মিলি হেঁটেই যেতে পছন্দ করে।আজও হাঁটছে একা একা।
বাসায় এসেই ধপাস করে শুয়ে পড়লো বিছানায়।আজ খুব ক্লান্ত লাগছে তবে রুশার সাথে সময় ভালই কেটেছিলো ক্লাসে।আবার অনেকদিন পর যাবে স্কুলে কারণ ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ছুটি শুরু।
–কি কেমন লাগছে এখন??
ইহানের কণ্ঠ শুনে চমকে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো ইহান ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
–খুব ভালো লাগছে।তোমায় ছাড়াও আমি বেশ চলতে পারি,দেখেছো তো।আজ আমার একটা ভালো বন্ধুও হয়েছে।তোমার সাথে আজ থেকে আরি।
কথাটা বলেই মুখ ভেংচালো মিলি। ইহান ওর কাজ দেখে হাসতে লাগলো। ইহানের হাসির মানে বুঝতেই পারে না মিলি।অযথা অকারণে কেনো যে পাগলের মতো হাসে ইহান!
–কাল স্কুলে যাবে না??
–আজ থেকে তো ঈদের ছুটি!
–কিহ্!!
–জ্বী
মিলির কথাটা শুনে ইহান হতাশ হলো তারপর চুপচাপ বসে রইলো।কতো কি ঠিক করেছিল কালকে করার জন্য!! রোজাটাও ওকে কিচ্ছু জানালো না দেখে তার উপরেই সব রাগটা আসছে।
চলবে””””
(গল্পটা অনেক দিকেই মোড় নিতে পারে। হয়ত আপনি/আপনারা যা ভাবছেন সেটা হবে না,অন্যরকম হবে।আপনার মতামতটা জানিয়ে দিন।
কে এই রুশা,রোজা/রিমাদ??গল্পটা সম্পর্কে মতামত না জানালে/গঠনমূলক কমেন্ট না করলে গল্প লিখতে ইচ্ছে হয় না কষ্ট করে।তাই সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ।
ভালো না লাগলেও অবশ্যই জানাবেন।
হ্যাপি রিডিং)