রহস্যের_কুয়াশা☠️ পর্ব_৬

রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_৬
#হাফসা_ইরিন_রাথি
ঈদের ছুটি আর কদিন তাও আবার কোরবানির ঈদের! কোথা দিয়ে যে এলো আর গেলো টেরই পাওয়া গেলো না।কিন্তু ইহান,মিলি,মিতু আর রুশা খুব মজা করেছে এইবার। রুশাকে মিলিই ঈদের দাওয়াত দিয়েছিল কিন্তু সে কিভাবে যে ওর বাসা চিনে এলো সেটা মিলির অজানা।সকালেই মিলিকে নিয়ে রুশা মালিহা বেগমের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসার পাশের পার্কে গিয়েছিল ঘুরতে।জায়গাটা কাছেই তাই মায়ের পরিশ্রম কমাতে মিতুকেও সাথে করে নিয়ে যায় মিলি।মিতুর বয়স এখন বছর ৩,হাটতে পারে আর একটু একটু কথাও বলতে পারে।মিতুর হাত ধরে রুশা একটু সামনে হাটছে।মিলি ভাবছে রুশা কি ইহানকে দেখতে পাচ্ছে কি না?মিলি একটু পেছনে টেনে নিয়ে গেলো ইহানকে।তারপর ফিসফিসিয়ে বললো,
–তোমায় কি রুশা দেখতে পাচ্ছে ইহান??
ইহান তখন একটা আপেল খাচ্ছিলো,খেতে খেতেই বললো,
–হুম পায় তো।আমরা দুজন তো অনেক আগের বন্ধু!
মিলি খুব অবাক হলো।তাহলে ইহান আর রুশা একে অন্যকে চেনে!মিলি আবারো প্রশ্ন করলো,
–আচ্ছা রুশাও কি তোমার মতো ম্যাজিক জানে??
ইহান দাঁত কেলিয়ে মিলির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।মিলির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো কারণ ইহান, রুশা দুজনেই ম্যাজিক জানে অথচ সে জানে না।




আজ ঈদের পর প্রথম ক্লাস।মিলির কদিন ক্লাস করতে না করতেই একটা মায়া জন্মে গেছে ক্লাসের প্রতি।আজ যেহেতু অনেকদিন পর ক্লাস তাই খুব খুশি ও আর তাড়াতাড়ি রওনা দেবার কথা ভাবলো।কিন্তু ইহানের কোনো খোঁজ নেই।সে কোথায় যে আছে!মিলি অনেকক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছে,সেই সকাল থেকে।ঘুমানোর আগেও ওর পাশেই ছিল ইহান,এমনকি ঘুমানো অব্দিও ছিল কিন্তু সকাল থেকেই সে লাপাত্তা।
মিলির ক্লাস ১০ টায়।৯:০০ টা বাজতেই স্কুলে যাবার জন্য রেডী হতে লাগলো।হঠাৎ দরজায় কলিংবেল পড়ায় দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে।যদিও ইহান কখনো দরজায় বেল দিয়ে আসে না তবুও ইহান হতে পারে ভেবেই দরজা খুলতে গেলো মিলি।কিন্তু দরজা খুলে আশাহত হলো কারণ এটা ইহান না, রুশা!মালিহা বেগম কিচেন থেকে বললো,
–কে রে এলো মিলি??

–মা, রুশা এসেছে।

–আচ্ছা রুশাকে ভেতরে এনে বসতে বল।আমি তোদের খাবার দিচ্ছি।
মিলি রুশাকে টেনে ভেতরে এনে সোফায় বসিয়ে ওর দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
–ইহানকে তুমি দেখেছো কোথাও??ও কোথায় বলতে পারো?

–ওর তো এখানেই থাকার কথা ছিল।আমি জানিনা,আমায় তো কিছু বলে নি।
মিলি মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে দেখে রুশা মনে মনে হাসল,
–”একটুও পাল্টাস নি তুই রিদ!!”
তারপর ওকে খুশি করতে বললো,
–আমার মনে হয় স্কুলে গেলেই সে ঠিক চলে আসবে।তুমি দুশ্চিন্তা করিও না।
মিলিও একটা হাসি দিলো ওর দিকে তাকিয়ে।দুজন মিলে কিছুক্ষন গল্প করার পর খাবার খেয়ে স্কুলের জন্য চলে গেলো।মিলির আশা স্কুলে গিয়েই ইহানকে দেখতে পাবে তাই জোরে জোরে পা চালাচ্ছে!কিন্তু স্কুলে এসেও পেলো না তাকে।ক্লাস আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে।মিলি, রুশা আর আরেকটা মেয়ে একসাথে বসে আছে সামনের বেঞ্চে। স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন সাথে একটা ছেলে। স্যার সবার সাথে ছেলেটাকে পরিচয় করিয়ে দিতে বললেন,
–মাই ডিয়ার স্টুডেন্টস,তোমাদের জন্য একটা নতুন বন্ধু নিয়ে এসেছি।দেখো পছন্দ হয় কিনা?
সবাই দেখলো ছেলেটিকে।একটা ৬ বছরের মতো বয়সি বাচ্চা ছেলে,খুবই কিউট প্রকৃতির বাচ্চা কিন্তু মুখে অদ্ভুদ সুন্দর একটা হাসি লেগেই আছে।মিলি এতক্ষণে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অবাক!
–ইহান!!!
ইহান মিলির দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি করে হাসি দিয়ে নিজের পরিচয় দিলো,
–হাই,আমি ইহান কিফায়েত।তোমাদের সবার নতুন বন্ধু।আমি মিরপুর ১ এর বাসিন্ধা।
ইহান মিলির আর রুশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একটা ছেলের পাশে গিয়ে বসলো।
–রুশা, ইহান আমাদের ক্লাসে কি করে??ও কি আমাদের সাথে পড়বে নাকি??আর ওকে সবাই দেখতে পাচ্ছে যে!!

–হুম হয়ত পড়বে,তাই তো মনে হচ্ছে।
ছুটির পর ইহান মিলির জন্য গেটের সামনে অপেক্ষা করছিলো তখন সেইদিনর ছেলেটাকে দেখতে পায় যে কিনা মিলির সাথে কথা বলছিল আর মিলি তার প্রশংসা করেছিল।
–”আমার থেকেও বেশি ফর্সা তাইনা??দাড়াও তোমার ব্যাবস্থা আমি করছি কালো গরু।”
ইহান হাতে একটা তুড়ি বাজতেই ছেলেটা নিচে পড়ে গেলো আর তার মুখে লেপ্টে গেলো কলমের কালি।আসলে পাশেই নিচে একটা নষ্ট কালি বের হওয়া কলম কেউ ফেলে রেখেছিল। ইহান ছেলেটার থেকে বেশ দূরে আছে আর সেখান থেকেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মিলি রুম থেকে বেরিয়ে ছেলেটার এমন অবস্থা দেখে ওকে উঠতে সাহায্য করলো। ইহান খুব রেগে গেলো মিলির কাজে।তাড়াতাড়ি করে তার সামনে গিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে গেটের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
–তোমার এতো দরদ উথলে উঠে কেনো ওই পোলার জন্য??দেখলে তো ওর মুখের কি সুন্দর রং হয়েছে।তুমি ওইদিন বলছিলা না আমার চেয়েও ফর্সা??হাহাহা।

–তার মানে তুমি এমনটা করছো ওর সাথে??

–হুম

–তুমি নিজের ম্যাজিক দিয়ে অন্যের অপকার করো।আমি তোমার সাথে কথাই বলবো না।যাও
মিলি গাল ফুলিয়ে আগে আগে চলে যেতে লাগলো। ইহানকে কতো কি জিজ্ঞেস করবে ভাবছিল, কতো খুঁজার পর ক্লাসে এসে পেলো আর এখন কিনা কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলো না। ইহান ম্যাজিক দিয়ে আরেকজনের ক্ষতি করবে সেটা মেনে নিবে না মিলি।ম্যাজিক ভালো জিনিষ,ভালো কাজে লাগবে,,,,,,সেটায় ক্ষতি কেনো করবে??
–আরে রিদ শুনো তো।এমন করিও না।আমি আর এমন করবো না সত্যি বলছি।

–পাক্কা তো??

–হুম যাও পাক্কা।

–তাহলে এইবার বলো তুমি আমাদের সাথে একই ক্লাশে কি করো??তুমিও কি পড়াশুনো করবা নাকি??

–হুম করবো।তুমি ওইদিন বলছিলা তোমার সাথে বসতে দিবা না তাই আমি ঠিক করেছি আমিও পড়বো তাহলেই আমারও একটা সিট থাকবে,অন্তত তোমার চাটাং চাটাং কথা শুনতে হবে না, হুহ
••••••••••••••♦•••••••••••••••
–আর কতদিন সময় লাগবে??

–সবে তো অপেক্ষা শুরু। রিদকে পাওয়া এতো সহজ হবে না তোমার পক্ষে।

–আমি আর পারছিনা।আমার চোখের সামনে আছে আমার রিদ অথচ, অথচ আমি কিচ্ছু করতে পারছি না।কেনো করলেন আপনি এমনটা??অন্যায় করেছেন আপনি আমাদের সাথে!

–শান্ত হও ইহান!আমি জানি আমি অন্যায় করেছি কিন্তু আমার কাছে এখন এর কোনো সমাধান নেই।তোমায় অপেক্ষা করতেই হবে।
তোমার চোখের সামনে ও আছে এটাই কি অনেক নয়??
ইহান নিজেকে শান্ত করলো চোখ বন্ধ করে তারপর আস্তে করে বললো,
–হুম এটাই অনেক আমার কাছে। বেয়াদবি মার্জনা করবেন।আমি আমার রিদকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো,আশা ছাড়বো না আমি।আল্লাহ নিশ্চয়ই আমার প্রার্থনা শুনবেন।

–তাই যেনো হয়।

–আপনি সেই বিজটাকে সংরক্ষিত জায়গায় রাখবেন দয়া করে।আমি ওকে আবারো হারাতে চাই না।

–সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।তোমার মতো আমিও ওকে ফিরে চাই।আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে এটা।
ইহান আর দেরি না করে জ্বীনরাজকে সালাম দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
••••••••••••••••♦•••••••••••••••••
–তুই গিয়েছিলি জ্বীনরাজ্যে??

–হুম।

–কি বললো জ্বীনরাজ??

–অপেক্ষা!

–রোজা আমায় বললো তুই নাকি রিদের সাথে একই ক্লাশে ভর্তি হয়েছিস??

–হুম রোজা ঠিকই বলেছে।ওর একার পক্ষে রিদের উপর নজর রাখা সম্ভব হবে না,আমি না থাকলে আর তাছাড়া আমি আমার রিদকে চোখের সামনে হাসি খুশি দেখতে চাই।ওর ওইদিন মন খারাপ হয়েছিল তাই আমি রোজাকে ওর খেয়াল রাখার জন্য পাঠাই।নিজেও ওকে চোখের সামনে দেখতে চাই,আশপাশে থাকতে চাই তাই ক্লাসে ভর্তি হওয়াই উপযোগী মনে হলো।

–তুই আমার চেয়ে অনেক ভালো বুঝিস।আমার বিশ্বাস তুই সব বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।

হঠাৎ কি মনে হতেই চাপা কষ্ট নিয়ে ইহান রিমাদকে বললো,
–আচ্ছা সেদিন যুদ্ধের সময় কেনো রিদ ভালোবাসাকে বাদ দিয়ে নিজের রক্তের জন্য যুদ্ধ করলো বলতো??সেদিনের ঘটনাটার জন্যই আজ এমন ভুগতে হচ্ছে আমায়!

–শুধু তোকে না, তাকেও ভুগতে হচ্ছে।আর আমাদের সবাইকেও।নিজের দায়িত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে দুটানায় পড়ে গিয়েছিল ও।দায়িত্বকে আগে স্থান দিয়েছিল। হয়ত ওর জায়গায় তুই থাকলেও একই কাজ করতি।
ইহান আর কিচ্ছু না বলে অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি সামলালো।নাহ্,ও আর ভাবতে পারছে না।চিন্তা করতে চায় না অভিশপ্ত সেই অতীতকে নিয়ে!এখন একটাই লক্ষ্য ওর, একটাই। রিদ,সেটা হলো ওর রিদ।

•••••••••••••♦•••••••••••••••
–চলো রিদ আজ তোমায় একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবো।

–কোথায়??

–আরে চলোই না,গেলেই দেখতে পাবে।তোমার খুব পছন্দ হবে দেখিও।

–মা তো এখন ঘুমাতে বললো!

–তুমি দরজাটা বন্ধ করে চলো।আমরা গেলে তোমার মা টেরও পাবে না।
মিলি এখন আলাদা রুমে ঘুমায়।একটা বিছানায় মালিহা বেগম,জারিফ সাহেব,মিলি আর মিতু ৪ জন খুব সমস্যা হয় বলেই মিলি আলাদা ঘুমানোর কথা বলেছে ওর মাকে।যদিও প্রথমে রাজি হয় নি কিন্তু এখন অনেকদিন হবার পর আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কতক্ষন ওকে শুইয়ে রেখে ঘুম পাড়িয়ে চলে যান তিনি।যদিও মিলি ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকে,মিলি ইহানকে ছাড়া ঘুমায় না,যতক্ষণ পর্যন্ত না ইহান মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তাই এখন ওরা ঘুরতে গেলে ওর মা জানতেও পারবে না ও বাসায় আছে কিনা।মিলি চুপিচুপি উঠে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
–এইবার চলো।
ইহান মিলির হাত ধরে ওকে চোখ বন্ধ করতে বললো।মিলি চোখ খুলে দেখলো একটা গছের উপর বসে দোল খাচ্ছে।
–বাহ্,এটা কি গাছ ইহান??

–কৃষ্ণচূড়া!
ইহান গাছ থেকে এক থোকা ফুল নিয়ে মিলির হাতে দিলো।মিলি ফুলগুলো হতে নিয়ে খুব খুশি হয়ে দেখতে লাগলো।
–পছন্দ হয়েছে??

–হুম,খুউউব।কতো সুন্দর লাল টুকটুকে ফুলগুলো।আমার খুব খুব খুব ভালো লাগছে ইহান।
লাল টুকটুকে রক্ত কৃষ্ণচূডার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আর ইহান ওর হাসি মাখা মুখটা দেখতে লাগলো।

চলবে””””

(কিছুটা রহস্য উন্মোচন করেছি।আপনাদের কি মনে হয়??কি হতে পারে অতীত??গঠনমূলক কমেন্ট করবেন আপনাদের মতামত জানিয়ে।nice,next,ভালো লাগছে এসব কমেন্ট করার চেয়ে না করাই উত্তম।আমি গল্পে কমতি রাখিনি আশা করি,তাই কমেন্টেও কমতি চাই না।
হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here