রিস্টার্ট পার্ট-১০

0
4503

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_১০

জাহিদ কে স*মকামী বলে দেওয়ার পর জাহিদ এমন রাগ করেছে যে আবার দেরি করে ঘরে ফিরছে। এখন তো জ্বী হুম বলেও কথা বলছে না। অসহ্য, অস্বস্তিকর! আবার সেই নীরবতা, আবার সেই নিস্তব্ধতা। ধারণা, সে তো কবেই গেছে। পিপির মেইল পেয়ে নাদিয়া সেখানে গেল। পিপির সামনে চুপচাপ নাদিয়া। পিপি ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেক বিষণ্ণ নাদিয়া।

– কী হয়েছে?
– কিছু না।
– আমার ধারণা, তুমি মিথ্যা বলছ।
– আচ্ছা, আপনার পিপি নামের অর্থ কী? মানে পি ফর হোয়াট?
– কেন?
– জানতে ইচ্ছে করছে?
– ধারণা করো।
– পিটার পার্কার?
– স্পাইডারম্যান ফ্যান?
– খুব।
– পিটার পার্কার না।
– তা তো জানি। আসল টা কী?
– এত তাড়াতাড়ি বলছি না। এখনো অনেক দেরি তোমাদের টাস্কের।

নাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পিপি বুঝেছে কিছু হয়েছে। সে অপেক্ষা করছে নাদিয়ার কিছু বলার।
– স্যার জানেন, আমি না বুঝে গেছি।
– কী?
– আপনি এই টাস্কগুলো কেন দিচ্ছেন।
– কী মনে হয়?
– এই যে অ্যাজাম্পশন। মানুষ তাদের প্রতি বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে, যাদের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে।
– ঠিক।
– ওনার আমার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।
– কেন মনে হলো?
– কারণ উনি আমার প্রতি কোনো ধারণাই করেননি। যা বলেছেন, আমিই বলেছিলাম করতে। আসলে স্যার, উনি যখন আসবেন তখন এসব ব্যাপার গুটিয়ে নেবেন। আর কোনো টাস্কের দরকার নেই। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি। সময় নষ্ট করার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো।
– কী হয়েছে? খুলে বলো। পরবর্তীতে জীবনে যখন আফসোস হবে,
– হলে নিজেকে বলব সে কখনোই আমার ছিল না। আমার হবে না। হতে পারে না।
– এত কনফিডেন্স!
– জ্বী।
– কী হয়েছে ? শুরু থেকে বলো। আশা করি তুমি জাহিদের মতো না। মন খুলে বলো।
– বলছি, আজকে সব বলেই যাব। প্রথমে এখান থেকে যাওয়ার সময় আমি অনেক ধারণাই করলাম। আমি অনেক এক্সাইটেড ছিলাম এই টাস্ক নিয়ে। পরদিন উনি আসার পর আবার বসলাম।
– এবার কী হলো ?
– আমি বললাম আমার ব্যাপারে ধারণা করুন। যেমন এক্স নিয়ে। কিছুই বললেন না। আমি বললাম, সব। অন্য কেউ হলে একটু জেলাস হতো, বা একটু আগ্রহ থাকতো। ওনার কোনো পরিবর্তনই নেই। যেন উনি ইন্টারেস্টেডই না।
– এরপর কী হলো?
– যেটা হওয়ার ছিল। আমি আমার ধারণা উপস্থাপন করলাম। বলে দিলাম উনি স*মকামী। আপনি তো বললেন, ইভেন ওয়াইল্ড গেস। আমার মনে হয়েছিল, তাই বলেছিলাম।

পিপি তার কলম থামিয়ে দিলেন। তো এই ব্যাপার।

– তোমার কেন মনে হলো ও স*মকামী?
– কেন না? ওনার নাকি কোনো গার্লফ্রেন্ড ও ছিল না। প্রত্যেকবার ” গার্লফ্রেন্ড কেন গার্লফ্রেন্ড কেন ” করে। তার কোনো গার্লফ্রেন্ড ও ছিল না আর বউয়ের প্রতিও কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি কী বুঝতে পারি?

পিপি মুচকি হাসলেন।

– এখন যদি ওকে ছেড়ে চলে যাও পরে আফসোস হবেনা তার কী গ্যারান্টি?
– হবে না। হলেই নিজেকে বলব উনি সমস্ত নারী জাতির জন্যই ছিলেন না। আমার উপস্থিতি ওনাকে অস্বস্তিতে ফেলত।
– আচ্ছা, ও যদি পরে আবার কাউকে বিয়ে করে, তখন কী করবে?

নাদিয়ার চেহারায় পরিবর্তন এলো। পিপি সেটাও খাতায় নোট করলেন।

– শোনো নাদিয়া, জাহিদ কে আমার স*মকামী মনে হয় না।
– তবে কী নো কামী?
– হাহাহাহ! ইউ মিন অ্যাসেক্সুয়াল? তাও না। ডেমি হলে হতে পারে। তবে আমার ওকে স*মকামী মনে হয় না। আচ্ছা, একটা টেস্ট করতে পারো। তোমাকে একটা টাস্ক দেব।
– হাতজোড় করছি, আর কোনো টাস্ক চাই না।
– আরে না না , এটা করে দেখো। এই টাস্কের নাম , কোনো নাম নেই। সাধারণ দম্পতির মতো একসাথে ঘরের কাজ করবে।
– তো?
– এটা তোমাদের টাস্ক। কিন্তু শুধু তোমার টাস্কটা হবে সিক্রেট টাস্ক। যেকোনো একটা কাজ করার সময় তুমি ঘপ করে ওর হাত টা ধরে ফেলবে।
– কী!!!
– হ্যাঁ। স্বামী তোমার।
– কারো কনসেন্ট ছাড়া কাউকে টাচ করা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট।
– তোমার স্বামী ও !
– তবুও। আমি একজন নারী, আমি জানি। জিনিস গুলো কতটা অস্বস্তিকর। জেন্ডার সুইচ করে দিন, আমি আপনি দুজনেই জেলে যাব।
– আচ্ছা হাত ধরবে না। কিছুর বাহানায় আলতো করে ছুঁয়ে দেবে।
– সেটাই ক্লাসিক হ্যারাসমেন্ট। এমন ভাবে ছুঁয়ে দেয় যে মুখ ও খোলা যায় না। কিছু বললেই এমনি লেগে গেছে।
– কিন্তু এটাই করতে হবে।
– অসম্ভব। আমি যাচ্ছি।
– শোনো নাদিয়া, তুমি ওকে ছুঁয়ে দেবে আর ওর প্রতিক্রিয়া খেয়াল করবে। যদি ও চমকে উঠে তবে ওর বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ আছে। আর স্বাভাবিক থাকলে মানে প্রতিক্রিয়া না থাকলে ওর কোনো আকর্ষণ নেই।
– এটা আপনাকে কে বলল?
– এটাই। এই যে তুমি হ্যারাসমেন্টের কথা বললে, তা কী তুমি কোনো মহিলা থেকে পেয়েছ বা আশা করো?
– কী ধরনের কথা বলছেন!
– এই যে আচমকা ছোঁয়া কোনো মহিলা করলে তোমার অস্বস্তি লাগবে?
– না। আমি স্ট্রেইট। আর কোনো মহিলাও আমাকে হ্যারাস করেনি।
– তেমনি। ওর যদি তোমার প্রতি কোনো আকর্ষণ না থাকে ওর কাছেও তুমি একই।
– স্যার, এইটা কিন্তু অন্যায়। খুবই রাবিশ একটা জিনিস। হ্যারাসমেন্ট যেকোনো লোক থেকে আসতে পারে। হ্যারাসমেন্ট ইন্টেনশনে থাকে। ওর আকর্ষণে না।
– তোমার কী বাজে ইন্টেনশন আছে?
– আপনার সাথে কথায় পারা যাবে না। আমি পারভার্ট না। এর সাথে ওনার আকর্ষণের কিছুও নেই। কিন্তু উনি যদি অস্বস্তি বোধ করেন আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।
– তুমি ভালোবাসা দিয়ে ছুঁয়ে দেখবে। দেখবে তোমার ভালোবাসা ওর হৃদয় ছুঁতে পারে কি না। আমিও হ্যারাসমেন্টের বিরুদ্ধে। কিন্তু এটা তোমাকে করতে হবে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে এই সাধারণ টাচ গুলো স্বাভাবিক। ইন্টেনশন টা এখানে ভালোবাসার। এভাবেই ভালোবাসার আদান প্রদান হয়। এইটা তোমার সিক্রেট টাস্ক। কারণ এরপরই আমরা আমাদের এই কাজ শেষ ও করে দিতে পারি।
– যদি ওনার খারাপ লাগে?
– স্যরি বলে দিও। এত সিরিয়াস হওয়ার ও কিছু নেই। তোমরা দুজন এডাল্ট, স্বামী স্ত্রী। তোমার আকর্ষণ কাজ করতেই পারে। তুমি হ্যারাসমেন্ট ভাবছো কেন? তবে আমার মনে হয় জাহিদ তা নয় যা তুমি ভাবছো। আমার অভিজ্ঞতা বলছে।

সেদিন জাহিদ ও এলো পিপির কাছে। পিপি মুচকি হাসছে। তিনি জাহিদকে বললেন,

– এত মন খারাপ কেন?
– আমি এমনই।
– শুনেছি ও তোমাকে,
– স*মকামী বলেছে।
– রাগ হচ্ছে?
– না।
– তো?
– প্রশ্ন জাগছে।
– কেমন?
– আচ্ছা, আমি আজ এমন চুপচাপ বলে উনি আমাকে স*মকামী বললেন। কাল যখন আগ্রহ দেখাব উনিই আমাকে ল*ম্পট বলবেন। কেন?
– জানি না।
– স্ত্রী কে ভালোবাসা দেখালে মানুষ স্ত্রৈন বলে, না দেখালে অ*ত্যাচারী। কোনটা করলে মানুষ খুশি থাকবে?
– তোমার যা ভালো লাগে তাই ম্যাটার করে।
– আমি তো ভালোই ছিলাম। কেন আমাকে বিয়ে করতেই হলো?
– তো তুমি বিয়ে করতে চাওনি?
– না।
– তো নাদিয়াকে তোমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে?
– এটাই হয় মানুষ যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলে। নিজের শব্দের জালে পেঁচিয়ে যায়। তাই আমি কথা বলতে চাই নি।
– রাগ করছ কেন? আমি নাদিয়া কে কিছুই বলব না।
– যেন নাদিয়ার কথা গুলো আমাকে বলছেন না।
– হাহাহাহ! জাহিদ, তুমি কথা বলো না তাই কথা বের করতে বলেছি।
– আমি কষ্ট পেয়েছি।
– কষ্ট পাওয়ার কী আছে। ও তোমাকে পর্যবেক্ষণ করে তোমার সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে।
– আমার কোনো এক্স নেই তাই আমি পুরুষ পছন্দ করি? আগে একবার বলেছিল সিক্রেট গার্লফ্রেন্ড আছে। নেই জেনে বলছিল আমি বাসায় কলগার্ল ডাকি। সেটাও সত্যি না জেনে বলল আমি প্র*স্টিটিউটের কাছে যাই! এখন আবার স*মকামী বলছে। বারবার এসব কেন!
– ওর কী দোষ। ওর কাছে মনে হয়েছে। তোমার জীবনে কোনো নারীর ছায়া নেই তা তো সত্য।
– কোনো পুরুষের ছায়াও নেই।
– আছে, তোমার কলিগেরা তো পুরুষ।
– আমার নারী কলিগ ও আছে।
– আচ্ছা, তবে ওকে বলে দেব যাতে নারী কলিগ নিয়ে সন্দেহ করতে।

জাহিদ খুব বিরক্তি নিয়ে তাকালো পিপির দিকে।

– তুমি জানো তুমি কী করেছ? আজ নাদিয়া বলে গেছে টাস্ক শেষ করতে। ও চলে যাবে।
– …..
– কথা বলো জাহিদ। আমি জানি সংসারটা তুমি ও করতে চাও। আর তাই তুমি সেদিন হ্যাঁ বলেছিলে। যদি তুমি নাই চাও তবে কেন ওর সময় নষ্ট করলে? আমার সময় নষ্ট করলে! এই সপ্তাহ টা কত ইম্পরটেন্ট ছিল জানো? পুরো একটা সপ্তাহ নষ্ট করলে।
– স্যরি।
– স্যরি শোনার জন্য আমি এখানে বসে নেই! তুমি খুবই পঁচা ছেলে। এবার ও মাইনাসে পাবে। আমাকে স্যরি না বলে বাড়ি গিয়ে নিজের বউকে স্যরি বলো।
– আমিই স্যরি বলব?
– তুমি ওর সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেছ! তুমি ওকে খুব মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছ। বাড়ি যাওয়ার সময় ওর জন্য উপহার নিয়ে যাবে!!!
– পারব না।
– দেন লেটস ফিনিশ দিস!

জাহিদ বাড়ি ফেরার সময় ভাবছে কী উপহার নিয়ে যাবে? নাদিয়ার কী পছন্দ ও তা জানে না। ওর তো কেক বা মিষ্টি কিছু পছন্দ না। প্রিয়ম কী জানি বলত? “অরনী খুশি হয়ে যায় ফুচকা পেলে। ওর মুড ভালো করার একটাই যন্ত্র, ফুচকা। ”

টেবিলে ফুচকা দেখে নাদিয়া কিছু জিজ্ঞেস করল না। তবে খুব ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে। জাহিদ ফ্রেশ হয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে। নাদিয়া অন্য দিকে ফিরে বলল,
– কী?
– অ্যাপলজি।
– কেন?
– এই সপ্তাহ টা নষ্ট করার জন্য।
– আর ফুচকা?
– অ্যাপলজি গিফ্ট।
– পিপি স্যার বলেছে?
– জ্বী।

আশ্চর্য, পিপি স্যার কী করে জানলো ফুচকার কথা। অনেক মেয়েই তো পছন্দ করে। তাই হয়তো। এখন তো রাতের খাবারের সময়। এখন ফুচকা কী করে খাবে? পরে খাবে রাতের খাবার। ফুচকাকে কেউ মানা করেনা। জাহিদ ওর ঘর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। একদম একই রকম করছে যেমন প্রিয়ম বলত। চকলেট কেকে যেমন ওর মনে আনন্দ জাগে, ঠিক তেমনি। আগে কী হয়েছে সব ডিলিটেড। পরদিন একসাথে পিপির কেবিনে। এবার ও নাদিয়া পেয়েছে ফুল মার্কস। আর জাহিদ মাইনাস পঞ্চাশ। ওকে আবার টাকা ট্রান্সফার করতে হবে। জাহিদ ভাবছে ওর তো এভাবে ইএমআই দিতে সমস্যা হবে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে যদি শুধু শুধু পাঁচ হাজার করে কাঁটে তো থাকবে কী?

– জাহিদ, তোমার কাছে কী সোনার ডিম পাড়া হাস আছে?
– কেন?
– টাকা পয়সার কোনো মায়া নেই। একটু সিরিয়াস হও।
– ওকে স্যার।

নাদিয়া ওর চেহারায় চিন্তা খেয়াল করলো।

” নেক্সট টাস্ক। ঘরের কাজ। তোমরা বাইরে বাইরে থাকো। সময় কাটানোর সময় পাও না। তাই আমি চাই তোমরা দিনে অন্তত একটা আইটেম নিজেরা রান্না করো। আসবাবপত্র মোছা বা, পানি ভরা। বাসন মাজা বা কাপড় ধোয়া, সাধারণ কাজ গুলো একসাথে করো। যতটা সম্ভব আরকি। যে ভালো কাজ করবে সে জিতবে। কোনো গন্ডগোল করবে না। এই টাস্কের মাধ্যমে আশা করি তোমাদের সহ্য শক্তি তৈরী হবে। কাল শুক্রবার আছে। কাল রান্না টা একসাথে করো। আজ বাজার করো যাও।”

সুপার শপ এ ঢুকে ওরা কার্ট নিয়ে এদিক ওদিক করছে। কার্টটা জাহিদ ঠেলছে, নাদিয়া ও ঠেলছে। ওর হঠাৎ সিক্রেট টাস্ক এর কথা মনে হলো এখনই কী ছুঁয়ে দেবে হাত? সুযোগ আছে। তবে এটা কী তখন পাবলিক হ্যারাসমেন্ট হবে? থাক, এত মানুষের সামনে। পরে দেখা যাবে। কী কিনবে? চিকেন? চিকেন বিরিয়ানি না চিকেন কারি।

– জাহিদ, আপনার কী পছন্দ? চিকেন বিরিয়ানি না কারি?
– বিরিয়ানি।
– আমার ও। হায়দ্রাবাদি না কাচ্চি?
– চিকেন এ কাচ্চি?
– হয় না?
– খাসিই বেটার। চিকেন বিরিয়ানিও আলাদা মজা।
– আচ্ছা তো খাসি নেই।

জাহিদ ভাবছে ওর এমনিতেই শুধু শুধু দশ হাজারের লস। নাদিয়া এখানে ইচ্ছা মতো কেনা কাটা করছে। ওর তো কখনো কোনো ফাইনান্সিয়াল সমস্যা ছিল না। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। জাহিদের মতো কখনো চিন্তাই করতে হয়নি অন্য কোনো কিছু।

খাসির মাংস কেনার সময় জাহিদ মাংসের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কোনো খেয়াল নেই নাদিয়ার দিকে। ও দেখছে টাকা দিয়ে কেনা জিনিস, খারাপ দিচ্ছে না তো। আর এদিকে মানুষ ও কম। নাদিয়া ভাবছে টাস্ক এখনই শেষ করা ভালো। পাবলিক না কী দেখার দরকার নেই। ও যদি হল্লা করে তো বলে দিবে হাসবেন্ড। মিয়া বিবির ঝামেলায় কেউ পড়েনা। বাংলাদেশের মানুষ ভাবে স্বামী স্ত্রী তে সবই রোমান্স। অ্যাসল্ট, অ্যাবিউস, হ্যারাসমেন্টের কোনো জায়গা নেই। নাদিয়া দেখছে জাহিদের কার্টের হ্যান্ডেলে হাত আছে। আস্তে আস্তে হাত আগানো যাক। ছোঁয়ার পর আবার প্রতিক্রিয়া দেখতে হবে।

এক আঙুল,

দুই আঙুল,

আর একটু ,

” নাদিয়াআআআআআআ!!!”

সেখানে আফরা হাজির। আফরা আর সাব্বির ও এসেছে। নাদিয়া সাথে সাথে হাত সরিয়ে মুখে জোর করে হাসি এনেছে। কী করতে যাচ্ছিল ও? বাসের পার্ভাট গুলোর মতো হ্যারাস! তাও আবার সবার সামনে। সেই সাহস তো ওর!!!
বৃহস্পতিবার তাই অনেকেই কেনাকাটা করছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। দুই বান্ধবী ইচ্ছেমতো এটা সেটা কিনছে। আসলে আফরা সাব্বির প্রায়ই বের হয় তবে নাদিয়া আর জাহিদের তো প্রথমবার। দুই স্বামী এখন শুধু কার্ট ঠেলছে। এত কেনাকাটার পর শপের বেকারি সেকশনে ওরা। সাব্বির সেখান থেকে দুটো পেস্ট্রি নিল।

– দুটো কেন? উই কেন শেয়ার সাব্বির। অনেক হাবিজাবি কিনেছি।
– দুটো আলাদা ফ্লেভার। আর এটা কোনো হাবিজাবি না। তোমার পছন্দের জিনিস। জাহিদ ভাই, আপনি মিষ্টি খান না? নাদিয়া তো এমনিতেই খায় না।
– ওর তো ডায়েট আর ডায়েট।

জাহিদ চকলেট পেস্ট্রি টার দিকে তাকালো। নেওয়া যায়। নাদিয়া কার্ট ঠেলে নিয়ে গেল।

– উনিও আমার মতো কেক পছন্দ করেন না। ঐদিন কিনেছিলাম , খায়নি। তাই তো পরদিন সবাইকেই খাইয়ে দিলাম।
– কী মানুষ আপনারা! দুজনের কেউই মিষ্টি খায় না।

জাহিদ বলতে চাইছে ও মিষ্টি খায়। ওর চকলেট কেক পছন্দ। সেদিন তবে সেটা স্কুলে গিয়েছিল। বিল পে করার সময় জাহিদ চেক করছিল কত আসে। ওর মোবাইলে এত টাকা থাকবে কিনা। মাত্র নাদিয়া কে পাঁচ হাজার পে করল। আবার যদি লজ্জা পায় ওদের সামনে। ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা আনতে হবে মোবাইল ওয়ালেটে। অপেক্ষা করতে করতে নাদিয়া ওকে দুটো ব্যাগ ধরতে বলল। কী ভারি।

– নাদিয়া, বিল?
– সে করে দিয়েছি।
– আমি করতাম।
– ব্যাগ গুলো গাড়িতে তুলুন।
– ওকে।

গাড়িতে উঠে জাহিদ সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে আবার বলল,

– আপনি কেন দিয়েছেন?
– ইচ্ছে হয়েছে। আপনার কী খারাপ লাগছে? আমার মনে হয় আপনি এমন লোক না। একটা দিন বউয়ের টাকায় খেলে খারাপ লাগার কথা না।
– সেটা না। বলা উচিত ছিল। আর আমার দায়িত্ব পে করা।
– এটা কোত্থেকে আসলো? কে বলল আপনাকে এইটা আপনারই দায়িত্ব? উল্টো সমান সমান হওয়ার কথা। এখন থেকে এটা বাদ দিন। হাফ হাফ পে হবে। সেটা পরে দেখব। যদিও আগেই করা উচিত ছিল।

জাহিদের ফোনে মেসেজ আসলো। ও মেসেজ দেখে নাদিয়ার দিকে তাকালো।

– কী করলেন!!!
– ফেরত দিলাম।
– কেন? টাস্ক তো আপনি জিতলেন। দশ হাজার ই পাঠানোর কী মানে।
– কীসের টাস্ক? প্রতিপক্ষ মাঠেই নামেনি। এই ম্যাচ জিতে কী লাভ?
– আমি মাঠে ছিলাম।
– কোনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নেই। এই টাকা হারাম লাগছে আমার। জিম্বাবুয়ের সাথে কয় ম্যাচ জেতা যায়?
– আমি জিম্বাবুয়ে!
– আরো খারাপ। কেনিয়া। এখন বাসায় চলুন।

রাতের বেলা শুয়ে নাদিয়া চিন্তা করছে কাল কীভাবে ওর সিক্রেট টাস্ক শেষ করবে? বিরিয়ানির চাল ধোঁয়ার সময় ওর হাত ধরে ফেলবে না মাংস ম্যারিনেট করার সময়?

জাহিদ আর নাদিয়া রান্নাঘরে। জাহিদ বিরিয়ানির জন্য চাল ধুচ্ছে, নাদিয়া সেই চাল ধোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে ওর হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। নাদিয়া ভাবছে, এখনই কী সেই সুযোগ? কেউ নেই আশেপাশে। তাই সুযোগ বুঝে নাদিয়া, “হচ্ছে না, হচ্ছে না।” বলে ও চালের ঝুড়িতে ডান হাত ডুবিয়ে দিল। কল থেকে পানি পড়ছে। পানির নীচে জাহিদের হাত ধরে আছে নাদিয়া। জাহিদের আঙুলের ভেতরে ওর আঙুল। খুব কাছাকাছি ওরা দুজন। জাহিদ মাথা নিচু করে লজ্জা পেয়ে চোখ উঠিয়ে ওর দিকে তাকালো। আর দীর্ঘ দেহী জাহিদের দিকে মাথা উঁচু করে তাকালো নাদিয়া। জাহিদ আস্তে করে ওর বাম হাতটা দিয়ে নাদিয়ার কোমর জড়িয়ে ওকে কাছে টেনে নেয়। সিক্ত চাল থেকে ওর ডান হাতটা বের করে সেই হাত দিয়ে নাদিয়ার গাল স্পর্শ করে জাহিদ। জাহিদের সেই ঠান্ডা স্পর্শে নাদিয়া শিহরিত হয়ে ওঠে। ও সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। জাহিদ আস্তে আস্তে ওর হাতটা সরাতে থাকে। নাদিয়ার গাল থেকে হাতটা নাকের কাছে আনে এরপর জাহিদ ওর তর্জনী দিয়ে নাদিয়ার ওষ্ঠ স্পর্শ করে। চোখ বন্ধ অবস্থায় নাদিয়া জাহিদের তর্জনী কে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে। জাহিদ আস্তে আস্তে ওর আঙুল ছাড়িয়ে ওর হাত নাদিয়ার কন্ঠ থেকে বক্ষ হয়ে নামাতে থাকে। সেই স্পর্শে নাদিয়ার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে। ও ভাবতে থাকে, এটা কী স্বপ্ন না বাস্তব? চোখ খুলেই নাদিয়া জাহিদের কাছে মুখ নিতেই জাহিদ ওর দুই হাতের কব্জি শক্ত ধরে ফেলে।

” ইন্সপেক্টর, অ্যারেস্ট হার! উনিই আমাকে হ্যারাস করছিলেন।”

নাদিয়া অবাক হয়ে তাকালো। কী বলছে ও! হ্যারাস! ও নিজেও তো সায় দিল! পুলিশ সাথে সাথে এসে ওর হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দিল। পলকেই ও নিজেকে কারাগারে দেখতে পেল। সবাই ছিছি করছে। বাবা, মা, অংশু ভাইয়া, মিষ্টি ভাবি, রাহু, আফরা , সাব্বির ভাই ওর কলিগেরা সবাই।
রাহু বলছে, ” তোর ওনাকে হ্যারাস করার আগে ভাবা উচিত ছিল তোর একটা অবিবাহিত ভাই আছে। এখন আমাকে কে বিয়ে করবে? ছি! ছি! লজ্জা হচ্ছে তুই আমার বোন !”

মিষ্টি ভাবি বলছে,” আমরা গরীব ঘরের মেয়ে, তবে আমাদের শিক্ষা ছিল। বড়লোকের মেয়েদের মতো ছেলেদের টিজ করি না।”

অংশু কিছুই বলছে না মুখ লুকাচ্ছে। ওর কলিগেরা আফরাকে ইঙ্গিত করে বলছে, ওর বন্ধু নিশ্চয়ই ওর মতোই বখাটে। আর সাব্বির ভাই ও আফরাকে ছি ছি করছে আফরা চিৎকার করে বলছে, ” তোর জন্য আজ আমিও হ্যারাসার উপাধি পাচ্ছি কারণ তুই আমার বন্ধুউউউ!”

নাদিয়ার বাবা মাথায় দিয়ে বলছে, “এই শিক্ষা দিয়েছি? বখাটে মেয়ের বাবা উপাধি পেয়েছি! আমার তো মরে যাওয়া উচিত!”
ওর মা বলছে, “কী দরকার ছিল, অবলা জাহিদ কে হয়রানি করার?”

অবলা জাহিদ!!!!

শুধু জাহিদই চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সে মুচকি হাসছে। নাদিয়া চিৎকার করে বলল, ” আমি আপনাকে হ্যারাস করছিলাম না। ছুঁয়ে দেখছিলাম। আমাকে বাঁচান। কিছু বলুন!” কিছুক্ষণ পর জাহিদের পাশে এসে এক মুখোশ পরিহিত লোক দাঁড়ালো। এই লোকটা কে? ওর বয়ফ্রেন্ড!!! তারমানে ও এসব ষড়যন্ত্র করেছে!

” আমি তোমাকে দেখে নেব!!!” বলতেই নাদিয়া খাট থেকে পড়ে গেল। খাট থেকে পড়েই ও “আহ! ” করে চিৎকার করতে লাগলো। শব্দ শুনে জাহিদ ও জেগে গিয়ে বলল,
– কী হয়েছে?
– কয়টা বাজে?
– সাড়ে চারটা?
– মানে ভোর?
– হ্যাঁ!

এটা কী সত্যি হবে? না না, সত্যি হতে পারে না! ও হ্যারাসার হিসেবে জেলে যেতে পারে না। আর জাহিদের বয়ফ্রেন্ড্! এই সব কিছুই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফল। এসব নিয়ে বেশি চিন্তা করা যাবে না। কী আজে বাজে স্বপ্ন দেখে এসব!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here