রিস্টার্ট পার্ট-১১

0
3701

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_১১

আজকে ওরা একসাথে বিরিয়ানি রান্না করছে। মাংস কাটা আছে। আলু কেটে ভাজার জন্য রাখা আছে। চাল টা ধুতে হবে। চালটা ধুবে কে? নাদিয়া জাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক স্বপ্নের মতো। কী সব! ওর হৃদস্পন্দন বাড়ছে। কী হবে এখন? চাল কী জাহিদ ধুবে? জাহিদ চাল ঢালতেই নাদিয়া চালের ঝুড়ি টা নিয়ে সিংকের কাছে গেল। জাহিদ ভাবছে হলো টা কী? নাদিয়া ভীষণ জোর দিয়ে চাল ধুচ্ছে।

– আস্তে আস্তে, ভেঙে যাবে তো!
– ও হ্যাঁ।
– আমাকে দিন।
– নাআআ!
– কী হলো?
– কিছু না! ওকে। আপনিই নিন।

নাদিয়া ঝুড়ি টা ওকে দিয়ে রেডিও ছেড়ে দিল। ওর যখন কোনো কিছু ভালো লাগে না ও তখন রেডিও শোনে। রেডিও শুনলে চিন্তা ভাবনা একটু শান্ত হয়। রেডিও তে আরজে ঐশী আছে। ওর শো চলছে এখন। নাদিয়া ভাবছে কী কথা বলবে জাহিদের সাথে। অনেকক্ষণ ই তো চুপ করে আছে।

– আচ্ছা জাহিদ, আপনার হবি কী?
– হবি?
– শখ। অবসরে কী করেন?
– বই পড়ি।
– ও।

নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। আর কিছু বলবে না? এতটুকু সৌজন্য বোধ নেই? জাহিদের ও হঠাৎ মনে হলো কিছু বলা দরকার। কী বলা যায়?

– আপনার হবি কী?
– অনেক কিছু। আপাতত রেডিও শোনা।
– আরজে ঐশী?
– হ্যাঁ। ওর টাই বেশি শুনি। মনে হয় যেন ও আমাকে শুনতে পায়। একদম সব সিচুয়েশন অনুযায়ী গান বাজায়। মুড চেঞ্জ করে দেয়।
– সত্যি?
– হ্যাঁ।

জাহিদ ভাবছে, সেদিন ও তো উল্টো পাল্টা গান চালিয়ে রাগিয়ে দিলো। এই বুঝি সিচুয়েশন অনুযায়ী গান বাজিয়ে মুড চেঞ্জ করা। এখন ওরা মাংস ম্যারিনেট করবে। এরপর একে একে লেয়ারিং হবে। মাংস, আলু আর চাল পাশাপাশি রাখা। মশলাপাতি বাদবাকি পাশে রাখা। জাহিদ বিরিয়ানি রান্না করতে জানে। ঐ দেখাচ্ছে কী কী ঢালবে। রেডিও তে গান বাঁজছে।

“এত কাছে দু’জনে
প্রেম ভরা যৌবনে
এত কাছে দু’জনে
প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়
এত কাছে দু’জনে
প্রেম ভরা যৌবনে
এত কাছে দু’জনে,”

এ মা! আরজে ঐশী এসব কী গান চালাচ্ছে। এটা কোনো কথা! আরজে ঐশী কী চায় নাদিয়া এখন সিক্রেট টাস্ক টা সেরে ফেলুক? গানটা তো সেই নির্দেশ ই করে। আর জাহিদ বেচারা পারছে না কান বন্ধ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে। ও তো নাদিয়া কে দেখছে ও না। মাংসে শেষবার মশলা দিয়ে নেড়ে চেড়ে আস্তে আস্তে ফ্রিজের কাছে গিয়ে ফ্রিজ খুলে পানি খেতে লাগল। নাদিয়া তাই মাংসের কাছে গেল। জাহিদ একটু আগে কী দিয়ে গেল?

– আপনি কী লবণ দিয়েছেন?
– হ্যাঁ।
– জাহিইইইইদ!!!
– জ্বী?
– আমরা দিয়ে ছিলাম তো! সব মশলা ছিল, লবণ ও! আপনি খেয়াল করেননি! প্রথমেই দিয়েছি।

জাহিদ নিষ্পাপের মতো তাকিয়ে আছে। “হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়।” ওর তো মনেই ছিল না। নার্ভাসনেসে ও আরেকবার লবণ দিয়ে দিয়েছে। এখন কী হবে?

– এখন কী করব?
– চালের প্যাকেট টা দিন। বড় পাতিল টা কোথায়?
– আরো চাল বাড়াবেন?
– আলুও কাটুন। আর দই আছে তো? ফ্রিজ থেকে মাংস দিন।
– কী করবেন?
– লবণ ব্যালেন্স করব।

এত বিরিয়ানি খাবে কে? যাক, বেশি লবণের বন্দোবস্ত হলো। এখন কিছু লোক ডাকা যাক। বিরিয়ানি হাজির। জাহিদ একটু চেখে দেখল। ভালোই হয়েছে। লবণ যে এত ছিল বোঝাই যাচ্ছে না। নাদিয়া রাঁধেও ভালো আর উপস্থিত বুদ্ধি ও আছে। ও তো ভেবেছিল নাদিয়া বিরিয়ানি রান্না করতে জানে না। ওভার কন্ফিডেন্সে বোকা তো হলো জাহিদ।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং !!!

বেল বাজালো কে? এখন কে আসলো? জাহিদ দরজা খুলে অবাক।

– রাহু!!!
– সারপ্রাইজ দুলাভাই! আপনি জানতেন না?
– না মানে।
– ওয়াও! বিরিয়ানিইইই!!!! কী সুগন্ধ!!!

এই রাহু কী করছে এখানে! রাহু জাহিদ কে ঠেলে ঢুকে পড়ছে। নাদিয়া ডেকেছে ওর ভাইকে। বোন তো, ভাইয়ের কথা মনে পড়েছে। ওরা দুজন অনেক ক্লোজ, প্রিয়ম বলেছিল।

– তুই বিরিয়ানি রান্না কবে শিখলি?
– শিখেছি। খেয়ে বল তো কেমন হয়েছে?

রাহু বিরিয়ানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
– উমমমম! দারুণ হয়েছে তোর কাচ্চি।
– আমি জানতাম।
– তবে যাই বল, মিষ্টি ভাবির কাচ্চির মতো হবে না। মিষ্টি ভাবির টা বেস্ট!!!

নাদিয়ার চেহারা হাসি খুশী থেকে পাল্টে গেল। জাহিদ বুঝতে পেরেছে, অরনীর শনি চেপেছে। অরনী = শনি। এই রাহু ও না।

– তোকে এখানে কেন ডেকেছি জানিস?
– অপিনিয়ন জানতে। তুই ভালোই রান্না করিস, আরেকটু প্র্যাকটিসের প্রয়োজন।
– না। আমি তোকে হেল্প চাই বলতে এই হেল্প চাইনি। জাহিদ মাংসে লবণ বেশি দিয়ে ফেলেছিল। সেই লবণ ব্যালেন্স করতে বাড়তি জিনিস দিতে হয়েছে। এই কারণে বিরিয়ানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আমরা আগে থেকেই দাঁড়োয়ান আর রাহেলা খালার জন্য বিরিয়ানি করছিলাম। তাই বাকি বাড়তি টা কী করতাম। বাড়তি গুলো যাতে নষ্ট না হয় তাই তোকে ডেকেছি। খাবার নষ্ট করা তো ভালো না।

রাহুর মুখে হাড্ডি আর ওর মুখটাও চোষা হাড্ডি হয়ে আছে। জাহিদ মাথা নিচু করে খাচ্ছে। এই দুই ভাইবোন শুধু মানুষের সাথেই না, নিজেদের সাথে ও এভাবে কথা বলে।

– তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি?
– তোকে আমি খাবার খেতে ডেকেছি, তুলনা করতে নয়। বাড়তি কাজ টা তুই করেছিস। ভুক্তভোগী ও তুই। আরেকটা আলু দেব? এত আলু কেউ খাবে না এগুলো এক্সট্রা।

কী একটা পরিস্থিতি। খেতে বসিয়ে কাউকে অপমান করে নাকি? এই অরনীর ব্যাপারে তো জানতো না?

– আরেকটা মাংস নাও রাহু।
– লাগবে না দুলাভাই। বাই দ্য ওয়ে, আপনি লবণ বেশি কেন দিলেন?
– হঠাৎ ভুলে, মানে ভুল করে।

কী যা তা গানটা মাথায় ঘুরছে। ‘হঠাৎ ভুলে ভুল না হয়ে যায়। ‘ রাহু জাহিদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়।

– আপনি রান্না করেননি তো?
– হ্যাঁ!

নাদিয়া রাহুর দিকে রুদ্রমুর্তি হয়ে বলল,
– আমরা রান্না করেছি, একসাথে।
– ওয়াও। সব ঠিকঠাক?
– তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে বাড়ি যা।
– কী ভাগ্য আমার, ভাবির হাতের রান্না খেয়েছি, দুলাভাইয়ের হাতের রান্না ও খেয়েছি।

খাবার টেবিলে হঠাৎ সাড়াশব্দ কমে গেল। রাহু খেয়াল করলো নাদিয়া কথা বলছে না। জাহিদ ও বলছে না।

– আপনি জানেন দুলাভাই, মিষ্টি ভাবির বিয়ে কী করে হয়েছে?
– না।
– লাভ ম্যারেজ। নরমাল না, লাইলী মজনু। মানে বিয়ে একবার ভেঙে গিয়েছিল আবার,,

নাদিয়া টেবিলের নিচ দিয়ে রাহুর পায়ে জোরে একটা লাথি মারলো। রাহু উফফফফ করতেই নাদিয়া জাহিদ কে আরেকটু বিরিয়ানি আনতে বলল,

– এই, এত কথা বলিস কেন?
– কী হয়েছে? উনি তো বাড়িরই লোক।
– কে বলেছে? এরপর মিশান ভাইয়ার কথাও বলবি?
– তুই বলিসনি?
– পাগল তো আমি! আর কী দুলাভাই দুলাভাই! আগে তো জাহিদ ভাই বলতি।
– দুলাভাই লাগে আমার। বলব না কেন?
– পা ধরে সালাম করবি তাহলে। ক্ষ্যাত কোথাকার!

জাহিদ আসতেই ওরা চুপ হয়ে গেল। এর পর খাওয়া শেষে ওরা রাহুর আনা আইসক্রিম খাবে। নাদিয়া আইসক্রিমের বাটি জাহিদের হাতে দিতেই অজান্তেই ওর আঙুলে জাহিদের আঙুল লাগলো। সেই সামান্য ছোঁয়াতেই যেন ওর শরীরে বিদ্যুৎ চলে গেল। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে জাহিদ ওর আঙুল গুলো গুটিয়ে নিল। রাহু তো নানান কথা বলছে। কিন্তু নাদিয়া এখানে কোথায়? ওর তো কেমন যেন লাগছে। ওর কানে কোনো আওয়াজ যাচ্ছে না। ও জাহিদের দিকেই তাকিয়ে আছে। গাল আবার লাল হয়ে যায়নি তো? আজব তো! ও কী টিনেজার নাকি? বুকটা “ধুক ধুক” “ধুক ধুক” করছে। এই রাহু এখানে না থাকলে আজ তো টাস্ক কম্প্লিটই হয়ে যেত। তবে নাদিয়া কী যেন খেয়াল করলো। জাহিদ আর রাহুর অদ্ভুত চোখাচোখি। ওরা কী বলছে? ওরা বোধহয় চোখে চোখেও কথা বলছে। এমন আজব চোখ নাড়ানো কেন?

– তোরা কী বলছিস?
– এ মা! তুই শুনছিস না? আইসক্রিম ও গলে গেছে। আমি বলছিলাম মামা বাড়ির কথা।
– কোন কথা?
– ঐ যে কীভাবে তোকে কাঁদানোর জন্য মামা শালার ছেলেকে মেরেছিলাম।
– কবে?
– আরে ওয়ানে থাকতে।

নাদিয়া ভাবছে কখন? হ্যাঁ, মেরেছিল উল্টো খেয়েছিল আরো পাঁচটা। পরে নাদিয়ারই ওখানে গিয়ে ওদের আরো দশটা দিয়ে রাহুকে ফেরত আনতে হয়েছিল। আর ও তো কাঁদেনি। কেঁদেছিল রাহুর মামাবাড়ির বান্ধবী। বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে সব। এই রাহুকে থাক আর অপমান না করাই ভালো। নাদিয়া ওর আইসক্রিমের বাটি রেখে আসতে ভেতরে গেল। এদিকে রাহু আর জাহিদ,

– কী বুঝলেন?
– জ্বী??
– ও যদি আর একবার কষ্ট পায় তো বুঝবেন।
– জ্বী, আমি?
– আমি রাহু, আপনার উপর এমন ভাবে চেপে যাব না। ছাড়াতে পারবেন না।

রাহু গিয়ে জাহিদের কাঁধে সজোরে হাত রেখে চেপে দিল। জাহিদ ভয়ে হকচকিয়ে উঠল। কী করবে আবার? আবার কোনো অপবাদ দেবে?

নাদিয়া রান্না ঘর থেকে সব খেয়াল করছে। “জাহিদ রাহু ওকে ছুঁতেই চমকে উঠল কেন? না! না! এ হতে পারে না! আর যেই হোক, আমার ভাইকে না জাহিদ! আমার ভাইয়ের ফিয়ন্সে আছে।”

– ছাড়!!
– কী হলো?
– ওওওওনাকে ছাড়।
– মায়া হচ্ছে? আমি তো এমনি রাখলাম হাত। দুলাভাই ভয় পাননি তো?

নাদিয়া নিজ হাতে রাহুর হাত সরিয়ে দিল। জাহিদ জোর করে নিজের মুখে হাসি আনলো,

– না, ভয় কেন পাব? ভয় পাওয়ার কী।
– দেখলি?

“উনি হাসছেন কেন? ওনার কী ভালো লাগছে? আমি কালই পিপিকে বলবো।” নাদিয়ার মনে এ ধরণের চিন্তা আজকাল নতুন। ও রাহুকে বিরিয়ানির বাটি দিয়ে গভীর রাতেই বের করে দিল। এসব স্ট্রেসে ওর রাতে ঘুম হয় না। আজ রাতেও ঘুমায়নি। সকালে ঘুম চোখে ক্লাস নিয়েছে। সবাই কেমন ইশারা করছে ওকে নিয়ে। ওর এসব কিছু তে মন নেই। বাসায় এসেও ভাবছে সেসব কথা। এত উল্টা পাল্টা ভাবনা। দুই তিনদিন এভাবে যেতেই ও আর পারল না। সোজা পিপির কাছে চলে গেল। কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও নেয়নি। যাই হোক, আজ কথা বলবেই। কেবিনে ঢুকেই নাদিয়া কথা বলতে লাগলো,

– স্যার, আমি এই সিক্রেট টাস্ক করতে পারব না।
– কেন?
– আমার দ্বারা হবে না এই হ্যারাসমেন্ট!
– হ্যারাসমেন্ট কেন বলছ? অ্যাসাইনমেন্ট।
– আমার আজকাল দুঃস্বপ্ন আসে। আমি জাহিদকে হ্যারাস করে জেল খাটছি।

পিপি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছেন। কী বলে নাদিয়া এ সব! ওর মতো মেয়ের মাথায় এসব কী চিন্তা।

– আমার চোখের নীচের কালি দেখুন। আমি ঘুমাতে পারছি না।
– আগে বলো রান্না করেছ?
– করেছি, বিরিয়ানি রান্না করেছি। আর ভালোও হয়েছে। আমার ভাইকেও ডেকেছি। আর,
– আর কী?
– আমার ভাই ওকে ধরতেই ও চমকে উঠলো।
– তো?
– তো!

পিপি বুঝতে পারল নাদিয়া কী বলতে চাইছে। ওর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দৃষ্টি কী চিন্তা করছে। পিপি বলার কোনো ভাষা খুঁজে পেল না। কী বলবে?

– কিছু তো বলুন।
– সিরিয়াসলি নাদিয়া!
– জ্বী।
– তুমি ছুঁয়ে দেখেছ?
– না। এটা হ্যারাসমেন্ট। আমার ওনার সাথে এখন একটা মিনিট ও একটা বছর লাগছে। আমার মনে হয় ওনাকে ওনার মতো থাকতে দেওয়া উচিত। আমি চলে আসি।
– তুমি টাস্ক কম্প্লিট না করে যাবে না।
– এটা সম্ভব না!
– তুমি ওভারথিংকিং করছ নাদিয়া! এরকম কিছুই না। আমি একজন ছেলে। আর ছেলেদের দুলাভাই আর শালার মধ্যে সম্পর্কটা যত মধুর দেখায় তত মধুর না। শ্যালকেরা দুলাভাইদের প্রায় যন্ত্রণা দেয়। আর তাই শালা একটি গালি।
– কেন ও তো হাসলো।
– দুলাভাইয়েরা শালাদের পছন্দ করে না। ইচ্ছে করেই একটা ভেটকি মারা হাসি দেয়। বাস্তবে লুকিয়ে থাকে হাজারো অব্যক্ত যন্ত্রণা। আর আজকাল জাহিদকে তুমিও যা যন্ত্রণা দিচ্ছ।

নাদিয়া চুপ করে থাকে। পিপি এসির তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। নাদিয়া সামনে রাখা পানি এক নিঃশ্বাসে শেষ করে বলল,

– আপনি কী করে জানেন?
– ও আমাকে বলেছে। তোমার ওকে সন্দেহ করা ও পছন্দ করে না। এর আগেও নাকি কলগার্ল হাবিজাবি বলেছ। বেচারা ভালো মানুষকে তুমি এতকিছু ভাবো। ভালো হওয়াও দেখছি আজকাল অপরাধ। তুমি এটা নয় ওটা ভাবতেই থাকো।
– তো কী করব?
– তোমার ডাউট ক্লিয়ার করো। এভাবে যদি ওকে ছেড়ে ও যাও সারাজীবন শান্তি পাবে না। গো, টাচ হিম উইথ লাভ। টাচ হিস হার্ট। ওর প্রতি তোমার আকর্ষণ কাজ করে, তোমার প্রতি ওর ও। দুজনেই দুটো দেওয়াল গড়ে রেখেছ। ভেঙে দাও সেই দেওয়াল। তবেই শান্তি পাবে।
– আমি তো ভাঙবো, কিন্তু ও যদি না ভাঙে?
– নাদিয়া, মনে রেখ, তুমি চলে যাচ্ছিলে এখান থেকে। হাত টা ধরে জাহিদই তোমাকে আটকেছে। উত্তর টা তোমার সামনেই আছে।

পিপির কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নাদিয়া ওর বাসায় চলে এসেছে। কী করবে? আজ একটা রফা দফা করতেই হবে। দেওয়াল টা ভাঙতে হবে। রাতের খাবার খাওয়ার পর জাহিদ ওর প্লেট ধুয়ে রাখছে। সিংকের সামনে জাহিদ আর ওর পাশে নাদিয়া দাঁড়িয়ে। ওর শ্বাস প্রশ্বাসের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। আজ করেই ফেলবে, প্রেম নিবেদন। এই জীবনে কখনো কোনো পুরুষ কে ভালোবাসি বলেনি নাদিয়া। তাই না ও শোনেনি কখনো।

নাদিয়ার এই অদ্ভুত দৃষ্টি জাহিদ কে অস্বস্তি তে ফেলছে। কী চায় নাদিয়া? প্লেট টা শেল্ফে রাখার পর জাহিদ আবার আগের জায়গায় এসে জিজ্ঞেস করেই ফেলে, “কী চাই?”

নাদিয়ার শিরায় বয়ে যাওয়া প্রতিটা রক্ত বিন্দু জানে সেই উত্তর, নাদিয়া কি চায়। নাদিয়া ওর ডান হাত বাড়িয়ে জাহিদের বাম বাহু ছুঁয়ে আস্তে আস্তে বলে, “তোমাকে।” আজ হয়তো নাদিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় লজ্জা টা পাবে নয়তো এই রাতটা হবে সবচেয়ে স্মরণীয় রাত।

নাদিয়ার জাহিদ কে ছুঁতেই ওর শরীরে যেন এক তড়িৎ ক্রিয়া খেলে গেল। কী হচ্ছে এসব? স্বপ্ন? এই স্বপ্ন টাই তো দেখা মানা। তবুও স্বপ্ন যখন, দেখাই যায়। জাহিদ ওর ভেজা দু হাত বাড়িয়ে নাদিয়া কে সজোরে কাছে টেনে নেয়। নাদিয়া ও সকল কিছু ভুলে শুধু ভালোবাসা নিয়ে জাহিদ কে দু বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে। জাহিদের দু হাতের পরশ নাদিয়ার পিঠে স্পষ্ট। সেভাবেই ও নাদিয়াকে শূন্যে তুলে নিল। নাদিয়াও জাহিদের উপর আস্তে আস্তে সমস্ত ভার দিয়ে দিতেই জাহিদ ওর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ভারসাম্য সামলাতে না পেরে জাহিদ একদম পিছনে চলে যেতে থাকে আর শেল্ফে গিয়ে ধাক্কা খায়। আর সেই ধাক্কায় কিছু বাসন পেয়ালা শেল্ফ থেকে পড়ে যায় আর খুব জোরে শব্দ হয়। ভারসাম্য সামলাতে জাহিদ ওর এক হাত নাদিয়ার পিঠে থেকে সরিয়ে পাশের দেওয়ালে রাখে আর আরেক হাতে নাদিয়া কে ধরে রাখে। জাহিদ ওর পিঠে খুব ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু সেই ব্যথা দেখার সময় নেই। নাদিয়া বুঝতে পেরেছে জাহিদ ব্যথা পেয়েছে, তাই ওকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। আস্তে আস্তে বাসন পেয়ালার আওয়াজ থেমে যায়। এখন ওরা ওদের শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পারছে আর অনুভব করতে পারছে একে অপরের উষ্ণতা। এই নীরবতা আর আগের নীরবতায় আছে অনেক পার্থক্য। এই নীরবতা এতটাও খারাপ না। এই নীরতায় আছে মাদকতা, এই মাদকতায় নাদিয়ার মাথা ঘুরে আসছে। তাই নাদিয়া ওর চোখ বন্ধ করে জাহিদ কে অনুভব করছে। ওর প্রতিটি নিঃশ্বাস, ওর প্রতিটি ছোঁয়া। ওর যেন নিজের প্রতি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নাদিয়া ওর মুখ জাহিদের মুখের কাছে নিয়ে আসে। ও চায় ওর প্রথম চুম্বন ওর ভালোবাসার মানুষকে দিতে। হ্যাঁ, আজকের রাতটা ওদের জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় রাত।

কিন্তু জাহিদ নাদিয়াকে বাঁধা দেয়। নাদিয়া বুঝতে পারছিল না। নাদিয়া কে ছাড়াতে জাহিদের কষ্ট হচ্ছিল। নাদিয়া ওকে ছাড়তে চাইছিল না। নাদিয়া আজকের এই প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু জাহিদ ওকে একটা ধাক্কা সেখান থেকে চলে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগে নাদিয়া দেখতে পেল জাহিদ নেই। এতক্ষণ ওর শরীরে জাহিদ লেগে ছিল। এখন একটা ঝাঁকুনি লেগে আছে। জাহিদ ওকে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে চলে গেছে। আজকে নাদিয়ার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ও লজ্জাজনক রাত। নিজেকে সামলে তে তাই পাশের দেওয়াল টাকে ধরেই নাদিয়া বসে পড়লো। ওর উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে, আর মাটিটাও সরে গেছে। আস্তে আস্তে নাদিয়া নিজের ভাজ করা পা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। কেন জাহিদ? কেন?

(চলবে)

(আপনারা আপনাদের পছন্দের অংশটি কমেন্টে জানাতে পারেন 🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here