রিস্টার্ট পার্ট-৬

0
5144

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৬

” বিশ্বাসঘাতক মিথ্যেবাদী লোকেরা আমাদের পোড়ায়, মাঝ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয় ডুবে যাওয়ার জন্য। আমাদের কোনো অপরাধ থাকে না। তারা বিশ্বাস না ভেঙে স্বাভাবিক ভাবেও তো বলতে পারত। হয়তো পথ থেকে সরে যেতেন, কিন্তু তখন যে তারা মন ভাঙার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন। আরজে ঐশী তাদের ধিক্কার জানায়, জাহন্নামেও জা…”

জাহিদ রেডিওটা বন্ধ করে দিল। এই আরজে ঐশী কী ফালতু কথা বলে। সিচুয়েশন তো দেখা উচিত। শুধু বলেই যাচ্ছে।
– বন্ধ করলেন কেন?
– আমার কিছু বলার আছে।
– আগে বললেই পারতেন। এত সাধু সাজেন কেন?

জাহিদের খুব অপমান লাগছে। নাদিয়া ওকে এত বাজে লোক ভাবে! ছি!

– এগুলো আমার ভাইয়ারা দিয়েছে।
– কীহ! তারমানে আপনার ভাইয়ারাও জানে! তাহলে ঐদিন সবাই আপনার সাফাই গাইলো! ওয়াওওও!!! ইম্প্রেসিভ!
– ঐদিন আপনার জন্যই সব হয়েছে।
– এখন সব আমার দোষ! পারফেক্ট মেন! দোষ তো কখনোই আপনাদের ছিল না। আমাদের ই থাকে।
– আমাকে কী কথা বলতে দেবেন?
– মুখ থাকলে না বলবেন। তবুও বলছেন যখন, বলুন! নির্লজ্জ বেহায়াদের ওপর তো ওসব কাজ করে না।

এ তো চরম অপমান! এতো বাজে ব্যবহার! জাহিদ দাঁত চেপে সব সহ্য করল। কয়েকবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

– আপনি সেদিন বলছিলেন আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব। আমরা দুজন বিছানার দুই ধারে। আমার ভাইয়া ভেবেছিল আ’ম নট গুড অ্যাট বেড। তাই ওনারা এসব এনেছিল।
– আর আপনি এগুলো,
– ফেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আবার এগুলো কী করছে জানিনা। আর ক*ডম গুলো তো আমি তখনো দেখিনি। আপনি জানেন আপনি আমাকে কতটা বিব্রত করেছিলেন সেদিন দুই পরিবারের সামনে? ভাইয়াকে তো এসব আনার পর আমি বুঝিয়ে বলেছি। বাকিদের তো বলতেও পারব না!
– আমি ব্যাপার টা সেভাবে বলিনি। আপনি তো কমিউনিকেশন করেন না তাই বলছিলাম।
– কিন্তু আমার মান সম্মান তো শেষ। তারা আমাকে এসব দিয়েছে আরো এমন কথা বলেছে যা তারা কখনোই বলেননি। আর আজকে আপনি আমাকে নিয়ে এত বাজে ভাবনা। ছি! আপনি আমাকে এতো বাজে ভাবেন! আমি প্রস্টি* টিউট আনবো আমার বাসায়?
– তাহলে কী আপনি যান?
– আহ!!!

জাহিদ অপমানে সেখানেই নিজের সব চুল ছিড়ে ফেলে। ও কখনো এত অপমানিত হয়নি। এই কথাগুলো একদম ওর শরীরে বাঁধছে। এত নিম্নমানের লোক ও না। নাদিয়া আবার কী করে বলল “তাহলে কী আপনি যান? ”

– শুনুন, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। এতদিনে তা তো খেয়াল করেছেন। আমি যথেষ্ট ধার্মিক। আমি ভদ্র ঘরের ছেলে। এ ধরণের ইতরামি আমি জানিনা। আমার পরিবার চৌদ্দ গুষ্টিতেও কেউ এ ধরণের কাজ করেনি। প্রস্টি *টিউট! আর আমি যদি সত্যিই এমন ছোটলোক হতাম আপনি এতদিনে বুঝতেন না। আমি কখনো আপনাকে ইনঅ্যাপ্রোপিয়েট টাচ করেছি?
– না।
– আপনি কিন্তু আমার বিবাহিত স্ত্রী। এখন হয়তো আমরা অন্য ফেজ এ। তাই বলে!
– স্যরি। এগুলো দেখে একটু,
– থাক!

জাহিদ আজকে প্রথম এতগুলো কথা বলল। ওদের বিয়ের সাত মাসের মধ্যে ও এতগুলো কথা বলেনি যা আজ একসাথে বলল। ও খুব রেগে গেছে বোঝাই যাচ্ছে। চরিত্রের উপর আঙুল তুললে যেকোনো নারী পুরুষেরই আঘাত লাগে। বিশেষ করে সে যখন চরিত্রবান হয়। ওর মনে হচ্ছে শরীরে কোথাও কাঁদা লেগে আছে। সেই কাঁদা ওকে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ও বারান্দায় গিয়ে ওর বড় ভাইকে কল করল। অন্য প্যাকেট টা সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, আসলে সেটা সাহিদ ই এনেছে। ওর আইডিয়া ছিল। আর যাওয়ার সময় তারাই এসব রান্না ঘরে রেখে গেছেন। এত টাকা দিয়ে কেনা জিনিস শুধু শুধু ফেলে দেবে? নাদিয়া বারান্দার বাইরে থেকে কথা গুলো শুনছে। সত্যি সত্যি এসব ওর ভাইদের কাজ। আর ও এভাবে ওকে সন্দেহ করল। ওর এখন খুব আফসোস হচ্ছে। এমনটা করা উচিত হয়নি। জাহিদ ওকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইগনোর করে চলে গেল। নাদিয়া ওর পেছনে পেছনে আসছে।

– কী চাই? আরো সন্দেহ হচ্ছে? সন্দেহ থাকলে দরজার সামনের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করুন। আমার ভাইয়ারা যেদিন এসেছে সেদিনের। ওনাদের হাতে প্যাকেটটা থাকবে। আরো সন্দেহ হলে সব দিনের দেখুন কোনো মেয়ে এনেছি কিনা। আর বাকি সন্দেহ আমি মেটাতে পারব না। আমি খুবই সাধারণ মানুষ। অফিস বাড়ি অফিস, এই আমার রুটিন। তবে একটা কথাই বলতে চাই, বিশ্বাস করুন আর না করুন। আমি দুশ্চরিত্র নই।
– এত রাগ হচ্ছেন কেন?
– হবো না কেন? আমি যদি এখন এটা ক্লিয়ার না করি আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব আত্মীদের বলবেন এটাই ডিভোর্সের কারণ। আমি দুশ্চরিত্র! আমি আমার চরিত্রে কোনো দাগ চাই না।
– আই অ্যাম স্যরি। প্লিজ! প্লিজ ফরগিভ মি।

জাহিদ রাগ করে অন্য ঘরে চলে গেল। নাদিয়া ভাবছে ও এতদিন শুধু চেয়েছিল জাহিদ একটু কথা বলুক। এ তো ঝগড়া হয়ে গেল। যাই হোক। আর কোনো সম্পর্ক তো থাকছে না। চলেই তো যাবে। ও যদি এমন হতো তাতেও বা কী? জাহিদ ওর ইচ্ছামতো বাড়িতে যাকে ইচ্ছা আনতে পারে। ওর বাড়ি, ও প্রাপ্তবয়স্ক। শুধু শুধু ওভাররিয়েক্ট করলো।

কিছুক্ষণ পর নাদিয়া গেস্টরুমে গিয়ে ওর ল্যাপটপ টা নিল। জাহিদ সেখান থেকেও বের হয়ে গেল। এরপর ওর রেজিগনেশন লেটার লিখল। এখন প্রিন্ট করার পালা। জাহিদের প্রিন্টার টা দরকার।

– উহুম উহুম! জাহিদ, আপনার প্রিন্টার টা কী ব্যবহার করতে পারি?
– জ্বী।
– থ্যাংক ইউ!
– আচ্ছা, প্রিন্টার কেন?
– রেজিগনেশন লেটার।
– রেজিগনেশন?
– আমি ভেবেছিলাম মেইল করব। কিন্তু এখন ভাবছি সামনাসামনি দেওয়া ভালো হবে।
– কবে যাবেন সিলেট?
– চিন্তা করবেন না। খুব তাড়াতাড়িই যাচ্ছি আপনার বাসা থেকে।

জাহিদের মন আবার খারাপ হয়ে গেল। চলেই যখন যাবে আজকে এত প্রশ্ন কেন করল। সম্পর্ক ই যখন থাকবে না তখন আমি কার সাথে কী করি তা নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? কিন্তু উনি সিলেট গেলে এই রাহু আবার ঝামেলা করবে। জাহিদ রাহুকে রেজিগনেশনের ব্যাপার টা মেসেজ করল। রাহু মেসেজ দেখে ভাবছে ওকে কোনো না কোনো ভাবে থামাতেই হবে। ও পাল্টা মেসেজ করলো, ও যদি কাল রিজাইন করে তবে ও সবাইকে বলে দেবে জাহিদের অন্য কারো সাথে অ্যাফেয়ার চলছে। জাহিদ পড়লো আরেক বিপদে। ওর নাম নাদিয়া ঠিকই রেখেছে। রাহু!

পরদিন সকালে নাদিয়া তৈরী হয়ে নাস্তা করছে। জাহিদ ও আসলো। নাদিয়ার পাশে ওর রেজিগনেশন লেটার। জাহিদ এদিক ওদিক তাকালো। ও কী ওর রেজিগনেশন লেটারে চা ফেলে দেবে? আচ্ছা, এসব করে কী হবে? নাদিয়া কখনো ওর সাথে সুখী হবে না। নাদিয়া পাশে থাকলে ও শ্বাস নিতে পারে না। কিন্তু এই রাহু আবার ওকে অপবাদ দেবে। উভয় সংকট! তাই…

“জাহিদ!!!! এটা কী করলেন! আমার এতো সুন্দর শাড়ি আর লেটার! লেটার তো ঝামেলা না, কিন্তু শাড়ি!”

জাহিদ নাদিয়ার শাড়িতে আর লেটারে চা ফেলে দিয়েছে। শাড়ি নষ্ট করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ওকে আটকাতে হবে তো। নাদিয়া ভেতরে গিয়ে শাড়ি বদলাতে গেল। জাহিদ বাইরে বসে আছে। আবার ভাবছে, নাদিয়া আবার উল্টো সিগন্যাল নেবে না তো? ও চায়না সবার সামনে দুশ্চরিত্র অপবাদ নিতে, আবার নাদিয়ার সাথে সংসার করাও সম্ভব না। “আচ্ছা, পৃথিবীটা এতো ছোট কেন? আমার স্ত্রী অরনীই হতে হবে কেন?” নাদিয়া শাড়ি বদলে এলো।

– আপনি এখনো যাননি কেন?
– স্যরি বলতে। আপনার শাড়ি টা,
– ভিজিয়ে রেখেছি। স্কুল থেকে এসে ধুয়ে দেব। এখন সময় নেই।
– আপনার শরীর এখনো ভালো?
– হুম।
জাহিদ আর নাদিয়া একসাথে বের হলো। নাদিয়া ভাবছে,
” এই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো কথা গুলোই যদি এতদিন বলতো, তবে ও হয়তো থেকে যেত। এতদিন মুখে কী হয়েছিল?”

নাদিয়া স্কুলে যেতেই আফরা জড়িয়ে ধরল ওকে। নাদিয়া ওকে ছাড়িয়ে দিল।
– ফোন বন্ধ কেন?
– খোঁজ করছিলি? কী দরকার বল? কোনো কিছু লাগবে? কী করা লাগবে? করে দিচ্ছি।
– এভাবে বলছিস কেন? আমি কী সবসময় তোর কাছ থেকে উপকার ই নেই?
– না, আসলে আপনার শাশুড়ি এলো কিনা, যদি কিছু লাগে?
– বাদ দে। তোর ক্লাসের অনেক পড়া জমা। সামনে ফাইনাল। বাচ্চাদের কথা ভাব।
– ও!
– প্রিন্সিপাল স্যার তোর উপর রেগে আছেন।
– আগে প্রিন্ট করা যাবে? নাকি আবার লাইন ধরতে হবে?
– পরে নোট দিস। আগে ব্রিফ কর প্রিন্সিপাল কে।
– আফরা, আমি রিজাইন করতে এসেছি।
– কী!!!!

নাদিয়া প্রিন্সিপাল স্যারের কেবিনে। আফরা বাইরে। এই রাহু তো বলেছিল নাদিয়া পরে আসবে, আর রিজাইন ও পরে। ও তো প্রিন্সিপাল স্যার কে কিছুই বলেনি। আজকেই করতে হবে।

– আপনি কেন এখন রিজাইন করতে চান? হোয়াট ইজ দ্য রিজন?
– পার্সোনাল। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু শেয়ার।
– ডিড ইউ গেট ম্যারিড রিসেন্টলি?
– ইয়েস।
– দিস ইজ দ্য রিজন।
– দিস ইজ নট দ্য রিজন।
– লুক, আরো কয়েক মাস আছে। ফাইনাল পর্যন্ত থাকুন। বেবির খুব একটা সমস্যা হবে না। এত গুলো বাচ্চার ফাইনাল।
– বেবি?!
– ইওর বেবি! ইউ আর প্রেগনেন্ট!
– নো! আ’ম নট।
– সো হোয়টস দ্য রিজন?
– খুবই পার্সোনাল।
– আপনার হাসবেন্ড কী চাকরি নিয়ে সমস্যা করছে? হি ডাজন্ট লাইক ইউ ওয়ার্কিং আউটসাইড!

নাদিয়া এক ভ্রু উঁচু করে বিরক্তি প্রকাশ করল। ওর দুই হাত সামনে বেঁধে বলল,
– আই ডোন্ট কেয়ার আবাউট ইওর পার্সোনাল ম্যাটার। স্টপ গেসিং মাইন। আর আপনি উইজা বোর্ড বা জাদুর আয়ানাকেও জিজ্ঞেস করলেও জানবেন না। তাই জানার ইচ্ছা বন্ধ করুন।
– উইদাউট প্রপার রিজন আর্জেন্ট রেজিগনেশন ইম্পসিবল। হেল্থ ইস্যু হলে আলাদা। আর আবাউট হাসবেন্ড নট লাইকিং, লুক আই জাস্ট ওয়ান্টেড টু হেল্প। এর আগে একজন টিচার সুই *সাইড করেছিল একই কারণে। মেন্টাল হেল্থ ইজ নেসেসারি।

সুই *সাইডের কথা শুনে নাদিয়ার চেহারার রং বদলে গেল। সুই *সাইড শব্দ টা ও ঘৃণা করে। সুই *সাইড করে মানুষ বেঁচে যায়, কিন্তু সারাজীবন বেঁচে থাকার মধ্যেও মৃত্যু যন্ত্রণা দিয়ে যায় কাছের মানুষদের। একটা সুই *সাইডে একটা দেহের মৃত্যু হয়, সাথে আরো অগণিত আত্মার ও মৃত্যু হয়। সেই ট্রমা প্রতিটা মুহূর্ত থেকে যায়।

– মিসেস নাদিয়া, এরপর ও রিজাইন করতে চাইলে অন্তত একমাস সময় দিন। আপনার রিপ্লেসমেন্ট দরকার। আরেকটু ভেবে দেখুন।

নাদিয়া লেটার টা হাতে বেরিয়ে এলো। আফরা ওকে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে? ও বলল, আর কিছু দিন দেখবে। আফরা খুশিতে লাফাতে গিয়ে থেমে গেল। কোনো বাচ্চা যদি দেখে ফেলে।

নাদিয়া বারোটা পর্যন্ত ক্লাস নিল। এরপর টিচার্স রুমে এসে বসলো। স্কুলে এক শিফ্ট ছুটি, আরেক শিফ্ট শুরু। নাদিয়া ফোন চেক করে দেখল বাবার অনেক মিসড কল। হঠাৎ ওর ফোনে আরেকটা কল আসল। “বাবা ” নাম টা দেখে একটু ভয় হলো। এতদিন একটা কথাও বলেনি ওনাদের সাথে। বের করে দিয়েছিল কেন? ফোনটা কী তুলবে?

– হ্যালো।
– জ্বী এটাকে কোনো বয়স্ক লোকের মেয়ের নাম্বার? মানে এইটা যার নাম্বার আপনি কী তার মেয়ে?
– জ্বী। কী হয়েছে বলুন?
– আপনার বাবা মাথা ঘুরে রাস্তায় জ্ঞান হারিয়েছে। লাস্ট ডায়াল করা লেখা, ” আমার মেয়ে। ”
– কোথায়??? কোথায় বাবা?? বাবা!!!
– দাঁড়ান। আমতলী বাজার।

নাদিয়া তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল। সিএনজি তে উঠে রাহু আর অংশুকেও কল করল। সেখানে পৌঁছে বাবাকে দেখে সব অভিমান ভুলে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মেয়েরা বুঝি এমনই হয়, বাবার কষ্টের সামনে সব ভুলে যায়। ও যে কান্না করে না তা ও ভুলে গেল। সেই জায়গাটা থেকে নাদিয়ার বাসা কাছে তাই ও বাবাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। রাহু অংশুর সাথে জাহিদ ও বাসায় আসে। রাহু বাবার পাশে বসে বলে,

– বাবা, কেন বাজারে এসেছিলে? তুমি তো এই দুপুরের রোদে এখন আর বের হতে পার না।
– আমি নাদিয়াকে দেখতে এসেছিলাম। ওর নাকি জ্বর। একটু ফল কিনতে এসেছিলাম।

নাদিয়া বাবাকে বলতে থাকে,

– আমার জন্য এত চিন্তা হলে বের করে দিয়েছ কেন? তোমার কিছু হলে আমি কী করতাম! (কাঁদো কাঁদো গলায়)
– কাঁদছ কেন মা? এখন কী তুমি আমাকেও বের করে দেবে ?
– কী বলছ এসব!
– জাহিদ, নাদিয়া, আমি কী কিছুদিন তোমাদের বাড়িতে থাকতে পারি?

নাদিয়া চুপ করে জাহিদের দিকে তাকায়। ও নিজেই অতিথি হয়ে এসেছিল। এখন ওর বাবাও এসেছে। ওর ই তো চলে যাওয়ার কথা। জাহিদ শান্ত স্বরে বলে,

– জ্বী বাবা, এটা আমাদের সৌভাগ্য।
– নাহিয়ান, আমার কিছু জামা কাপড় দিয়ে যেও। আর আয়শাকে চিন্তা করতে বলো না। আমি আমার মেয়ের কাছে থাকবো। আমার মেয়ে আমার যত্ন তার থেকে ভালো জানে।

নাদিয়ার বাবার জন্য নাদিয়া জিনিসপত্র অনলাইন থেকে অর্ডার করলো। পেমেন্ট ওর নিজের। অংশু জামা কাপড় দিয়ে যেতেই নাদিয়া সব গুছিয়ে রাখলো। ওর বাবা খেয়াল করলো ওর জিনিসপত্র সব এই ঘরে ছিল। তারমানে এখনো দূরত্ব আছে। বাবা কে খাওয়ানোর পর তার পাশে নাদিয়া বসে আছে।

– তুমি ঘুমোতে যাবে না?
– আজকে তোমার পাশে থাকবো। যদি কিছু দরকার হয়।
– আমি নিয়ে নিব মা। তুমি যাও।
– না বাবা।
– নাদিয়া, তোমাকে চড় মারার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও।
– করলাম। এখন চুপ করো।

জাহিদ সেই ঘরে প্রবেশ করল।

– বাবা, আপনার কিছু লাগবে?
– তুমিও কী আজ বসে থাকবে?
– আপনি চাইলে,
– থাক থাক। নাদিয়া কে নিয়ে যাও। এটাই চাই। ও নিজেও অসুস্থ।

জাহিদ নাদিয়ার দিকে তাকায়। নাদিয়া ওদের ঘরে যায়। বিছানাটা জাহিদ গুছিয়ে রেখেছে। সেই পুরনো দুই ধারে দুই বালিশ, দুটো মানুষের জন্য। মাঝখানে একটা পাশ বালিশ সীমানা নির্ধারণী। নাদিয়া গিয়ে ওর জায়গায় শুয়ে পড়ল। ও পাশ বালিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে। জাহিদ ও অপর পাশে একইভাবে।

– আপনি কী বাবা আসায় বিরক্ত হয়েছেন?
– না। খুশি হয়েছি।
– দুঃখিত। আমারই চলে যাওয়ার কথা, আজকে আমার বাবাও।
– দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই।
– আমার রেজিগনেশন গ্রান্টেড হয়নি।

জাহিদের মনে একটু আনন্দ হলো। সাথে ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিত হাসি ও। তবে এই হাসিটা নাদিয়া দেখবে না। জাহিদের নিস্তব্ধতা বুঝতে পেরে নাদিয়া বলল,
– তবে আমি অন্য জায়গায় চলে যাব। আমি বাসা দেখা শুরু করবো। চিন্তা করবেন না। বাবা বাড়ি যাক।

জাহিদের মুখ আবার আগের মতো হয়ে গেল। জানালা দিয়ে খুব সুন্দর জোছনা আসছে। নাদিয়া চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু জাহিদ দেখতে পারছে না। তবে দুজনেই জোছনা অনুভব করতে পারছে।

“তুমি তোমার মত ..
আমি আমার মত ..
সরে গেছি দুজনে আজ বহুদূরে।

তুমি তোমার মতো,
আমি আমার মতো,
রাখোনি মনেতে আমায় কোন ভুলেও।

আমিতো ডাকবো না,
তোমারই নাম, কোন সুরে,
আমার এ গানে,

দূরে থেকেই, সুখে থাকো,
শুধু প্রতি রাত।

তুমি জোছনা হয়ে,
শুধু আলো ছড়াবে।
আমি সে আলো ছুঁয়ে,
ঘুমিয়ে যাবো রাতে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here