#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৩৭
বাংলাদেশে আসার পর অনেক জায়গায় আমন্ত্রণ পেয়েছে সারা। তবে খুব একটা জায়গায় যাচ্ছে না। কিন্তু নিজের যে শোরুম টা আছে তা দেখতে এসেই নিজের এক বান্ধবীর শো রুমে যেতে হলো তাকে। তাদের লাক্সারি জুয়েলারি শো রুম। সৌজন্য রক্ষার্থে ঘুরে ঘুরে দেখছে সে। এমন ডায়মন্ড তার প্রচুর আছে। স্টিভ তাকে অনেক দেয়। তাও শুধু দেখা। তবে চোখ ঘোরাতেই দেখলো একটা যুগল। খুব ভালোবাসায় সিক্ত বোঝা যাচ্ছে। ছেলেটা কে তার চেনা মনে হচ্ছে।
“শুদ্ধ!!!”
শুদ্ধ তাকিয়ে দেখল সারাকে। প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও পরে নাদিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরল। নাদিয়ার মনে হলো একে কোথাও দেখেছে। ইনি তো,
– কেমন আছো শুদ্ধ?
– ভালো। তুমি?
– ভালো। ও?
– আমার স্ত্রী, অরনী।
অরনী!!! এই নামটা শুনে যেন সারা চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এটা কী সেই অরনী? কীভাবে সম্ভব! প্রিয়ম এভাবে মরে যাওয়ার পর ও ওর বন্ধু এই লুজার কে বিয়ে করেছে!
– অরনী!
– জ্বী, আমি অরনী। শুদ্ধের স্ত্রী। আপনি?
– সারা। শুদ্ধের বান্ধবী। নাইস টু মিট ইউ। তো শুদ্ধ, তুমি কী করছো এখন?
শুদ্ধ খুব কষ্টে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
– চাকরি করছি।
– কোথায়?
– সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল।
– ওহ! ভালো কোম্পানি। স্টিভের পরিচিত।
স্টিভ শুনেও নাদিয়া বা জাহিদ কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। তাই সারা নিজেই বলল, ” স্টিভ আমার ফিয়ন্সে।” জাহিদ তারপর ও কিছু বলছে না তাই নাদিয়া বলল, “কংগ্রাচুলেশন!”
সেখান থেকে পে করেই তারা চলে এলো। আর ঘোরাঘুরি করল না। নাদিয়া বুঝতে পারলো খুব খারাপ কিছু হয়েছে। গাড়ির ভেতর একটা থমথমে নীরবতা। সেই নীরবতা কে কাটাতে নাদিয়া রেডিওটা চালিয়ে দিলো। রেডিওতে আরজে ঐশী খুব বেশি কথা বলছে না। ক্লান্ত বোধহয়, কণ্ঠে বোঝা যায়। তার কথা শেষ না হতেই বেঁজে উঠলো এক গান,
” আমার সবটুকু বিশ্বাস
যে দিয়েছে ভেঙ্গে
তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই
সে দিয়েছে আমার
অন্ধ চোখে আলো
যার বিশালতার মাঝে
আমি একটুকু পাই নি ঠাঁই
তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই
সে যে দিয়েছে আমায়
মহাশূন্যে আশ্রয়
আমার সব অপূর্ণতাই যেন হয়
আমার শূন্য পথের প্রতি
শ্রেয়তম আশীর্বাদ”
জাহিদের কানে এই গান যেতেই ও বুঝতে পারলো আজ তো আরজে ঐশীর মন ভেঙেছে। সেজন্যই এই গান বাঁজালো। নাদিয়া যতক্ষণে বুঝলো এর অর্থ সে সাথে সাথেই বন্ধ করে দিলো।
– কী হলো?
– গান টা ভালো না।
– তুমি এখনো ভাবো ও আমার এক্স? না! গান চালাও।
“যখন স্বর্গদ্বারে একা
দাঁড়াবো তার অপেক্ষায়
যেন আমার অভ্যর্থনা তাকে করে, অনুতপ্ত
জানি, তখনও সে আমার
হবে না তবুও
এ অপ্রাপ্তিটাই যেন আমায় করে পরিতৃপ্ত। ”
আরজে ঐশী আজ স্টুডিওতে বসেই কান্না করছে। তার ইচ্ছে করছে মাইক অন করে ওয়াসিকে ইচ্ছামতো গালাগাল করতে, কিন্তু সেটা সম্ভব না। আর এখানে দোষটা তো তার। একটা ট্রিপে একজন কে ভালো লাগতেই পারে, বলতেই পারে সে ভালোবাসি। তাই বলে সে তো আর ভালোবাসবে না। সে এত বোকা কেন!
“আজ কোনো অনুভূতির
গভীরে যেতে চাই না আর কখনো
যেখানে
নিঃশব্দ কান্নায় স্বরচিত হয়
একান্ত শোক।
যা কিছু তার নির্দয় স্পর্শে দিয়েছে সৃষ্টি
নিভৃতে আমার প্রশান্ত কল্পনার ঘর, আর
যন্ত্রণার শিবিরে যে অবাদ্ধ কান্না দেয়
নির্ভুল সুরের জন্ম
তাকে আমার কাব্যে মেশাই
যেন হয় এক বিশুদ্ধ গান
আমার এই গানই আজ উৎসর্গ হোক
তার প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা।”
ওয়াসি ও রেডিও তে সেই গান শুনছে। ওর ডান হাতে ট্রিপে তোলা ঐশীর সেই হাস্যজ্জল ছবি। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সে ছবিটা বুলিয়ে দেখছে।
” ঘৃণা করো আমাকে, এটাই তোমার জন্য ভালো। তবে তোমার ঝাল এখনো কমেনি মিস ক্যারোলিনা রীপার। রেডিওতে এত মিষ্টি করে কথা বলতে তো ভেবেছিলাম মুখে মধু এসে গেছে। আমাকে ঘৃণা করে অ্যাটলিস্ট তোমার বকবকানির একটা বন্দোবস্ত তো হলো। আমি কখনো ভাবিনি তুমি আমার জন্য এতদিন অপেক্ষা করবে। কী দেখেছিলে আমার মধ্যে?” ওয়াসি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ” জ্বলবো তো আমি সারাজীবন। ওভাবেও এভাবেও। আমাকে বদদোয়া দিও না। আমার পুরো জীবন বাজি এই কাজে।”
নাদিয়া আর জাহিদ বাড়ি ফেরার পর নাদিয়া সেই পেন্ডেন্ট টা পরে দেখালো জাহিদ কে। জাহিদ ওর হাতটা নাদিয়ার ঘাড়ে নিয়ে আঙুল গুলো ওর কলার বোনে রাখে। এরপর নাদিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “মাশাআল্লাহ!” নাদিয়া মুচকি হেসে বলে,
– যাই পড়ি মাশাআল্লাহ!
– তুমি মানুষটাই মাশাআল্লাহ!
– সুবহানআল্লাহ!
“আস্তাগফিরুল্লাহ!” অর্ঘ্যদীপের মুখে এই শুনে খুবই বিরক্ত হয়ে তাকালো সারা।
– অবাক হচ্ছিস কেন? আসলে আমার পিএ বারবার বলে, তাই বেরিয়ে আসে।
– তাই তো বলি, তোর মতো এথিস্ট কি না এসব বলবে। ভাবলাম ভোটের লোভে আবার ধার্মিক হয়ে গেলি কি না? নামটাও তো বদলাতে হবে তখন। পলিটিশিয়ান!
– বাদ দে! আগে বল এই শুদ্ধ কে তুই কী করে পেলি?
– মলে।
সারা আর অর্ঘ্যদীপ অর্ঘ্যদীপের পার্সোনাল বারে বসে আছে। দুজনের হাতেই স্কচের গ্লাস। সারা ওর ড্রিংক টা একটানে শেষ করলো। অর্ঘ্যদীপ ওকে আরেকটা ড্রিংক বানিয়ে দিতে বলল।
– কী হয়ছে বল?
– শুদ্ধ বিয়ে করেছে।
এই কথা বলতেই সারার চোখে জল চলে আসলো। আশ্চর্য! সারা শুদ্ধের মতো ছেলের জন্য কাঁদছে!
– এতে কী হয়েছে?
– খুব বেশি কিছু না। ও সেই মেয়েটাকেই বিয়ে করেছে যার জন্য আমার দিকে তাকাতো না।
অর্ঘ্যদীপ তার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে,
– শুদ্ধ তোর দিকে তাকাতো না!
– ব্যাপার টা তেমন না,
– আরে শুদ্ধের তো এমনিতেই চোখ খারাপ। ও চশমা পরে। তোর থেকে কেউ চোখ সরাতে পারে না। কিন্তু তোর মাথা খারাপ কেন? শুদ্ধ না তাকানোর জন্য তুই কাঁদছিস!
– আমার দিকে সবাই তাকায়। ঐ লুজার টাও তাকাতো। কিন্তু হঠাৎ কী হলো জানি না। ঐ প্রিয়ম এলো আর ও বদলে গেল।
– স্টপ ইট! ডোন্ট ব্রিং দ্যা পাস্ট।
– না! দরকার আছে। ঐ প্রিয়মের বন্ধু ছিল অরনী, অরনী শুদ্ধের গার্লফ্রেন্ড ছিল। সে কারণে ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে ছুঁড়ে ফেলে চলে গেছে!
উত্তেজিত সারাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকে অর্ঘ্যদীপ। এ যেন সেই পুরনো সারা। ওদের কে অফার দেওয়ার দিন ও এমন ছিল। দুর্ভাগ্যবশত সেই চ্যালেঞ্জটা ও হেরে গিয়েছিল। ফাইয়াজ জিতেছিল। আজ আরেকটা অফার ও পেতে পারে। কাজে লাগাবে? সারা আজও তার তৃষ্ণা। এটাই শেষ সুযোগ সারা কে কাছে পাওয়ার। ও আস্তে আস্তে সারার কোমরে হাত দিতে থাকে। সান্ত্বনার আড়ালে অর্ঘ্যদীপের দুরভিসন্ধী টের পায় সারা। এরপর সজোরে ধাক্কা দিয়ে বসে অর্ঘ্যদীপ কে,
– আ’ম নট ড্রাংক ইউ মাদা*ফাকা!!!
– ওকে ওকে। বাট তুই কী শিওর এটা সেই অরনী?
– শুদ্ধের স্ত্রী পে করছিল। আমি তখন ওকে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, আর ও বলল,
” এটা সেই অরনী, যার জন্য … থাক। দেখতে ইচ্ছা হতো হয়তো। দেখলে তো! মানুষ টা আরো চমৎকার। মাকাল ফল নয়!”
সারা গ্লাসটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। অর্ঘ্যদীপ বলে, “দেখতে কেমন?” সারা অগ্নিমূর্তি হয়ে বলে, “এই সারার পায়ের ধুলোও হবে না! আমার সাথে তুলনা। আজ দেখলাম, সিংহীর সাথে কোথাকার কোন গাঁধী! আমার রূপ , আমার জ্ঞান, আমার প্রতিপত্তির কাছে কিচ্ছু না!!!” আজফার ওর ড্রিংক টা শেষ করে বলে,
– শুদ্ধের বউ হলে বুঝতাম। কিন্তু এ প্রিয়মের বন্ধু। তাই আইডিয়া করতে পারছি। এক মিনিট! সানি এখন জেলে জানিস?
– হ্যাঁ।
– ও বারবার বলছিল লুজারের বউ।
– তো?
– তোর এই শুদ্ধ আর প্রিয়মের বন্ধু অরনী কোনো রিভেঞ্জ প্ল্যান করছে না তো?
সারা আর অর্ঘ্যদীপ পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। অর্ঘ্যদীপ সেই জায়গা থেকে বাকিদের বের হয়ে যেতে বলল। এখানে এখন শুধু ওরা দুজন।
– তুই এখানে আসবি পোস্ট করেছিলি?
– না। সাডেন প্ল্যান।
– আই থিংক ওরা অনেক বড় টিম রেখেছে। লোকেশন ট্র্যাক করেছে।
– অনেক দামি একটা পেন্ডেন্ট কিনলো। শুদ্ধের পক্ষে দামি।
– অনেক বছর হয়েছে। মেইবি শুদ্ধ মালদার কারো সাথে হাত করেছে। জব ও তো করে। এখন ও কী ফকির মিসকিন নাকি!
– তাও ঠিক।
– উই নিড টু টেল দিস টু ফাইয়াজ।
– নো! হি ইজ আ বা*স্টার্ড!
– কী বলতে চাস? আরে খেয়াল কর। সানি জেলে, আজফার প্রায় ব্যাংক্রাপ্ট। এখন ওদের তোর সাথে দেখা। এর মানে নেক্সট টার্গেট তুই।
– কিন্তু আমি ফাইয়াজের সাথে দেখা করতে চাই না। ও সবার ভিডিও বানায়। ওর কাছে সবার ভিডিও আছে, জাস্ট ওর নেই। ও ব্ল্যাকমেল করে। সাপোজ শুদ্ধ কে আমরা ধরে ফেললাম, এরপর ও স্টিভ কে ভিডিও টা পাঠিয়ে দিল।
– তোর স্টিভ কী বাঙ্গু মেইল নাকি। এসব ছোট খাটো ভিডিও তে ওর কিছু আসবে যাবে না। আর ওটা অনেক আগের।
– ও আমাকে ছাড়বে না। কিন্তু আমি ওর সামনে ছোট হয়ে যাবো। আমার একটা ইমেজ আছে। ও আমাকে দেবী ভাবে, বাংলাদেশের রাজকুমারী। এক কথায় পারফেক্ট! আমার ব্যক্তিত্ব ওর কাছে অন্য রকম। আই কান্ট লুজ ইট। আর তুই কী সব কাজ ফাইয়াজের কথায় করিস?
– না।
– ইউ ফিউচার মিনিস্টার, এই ছোট খাটো কাজে যদি ফাইয়াজ কে লাগে তো,
– আমি করতে পারি। কী লাগবে বল?
অর্ঘ্যদীপ সারার চেহারাটা ধরে দেখে। এই জিনিসটা সে আজ ও পায়নি। ফাইয়াজ ধরতে দেয় নি। এখন যে প্রতিদিন ঐ ইংরেজ টার সাথে থাকে, তাতে তো কিছু করতে পারে না। শুধু তো ওকে টাচ করতে দিত না।
– আমার একটা প্ল্যান আছে অর্ঘ্য, শুধু তোর একটু হেল্প দরকার।
– জান হাজির!
পিপির কেবিনে জাহিদ। সারার প্রত্যাবর্তনের চাপ তার চেহারায় ফুঁটে উঠেছে।
– চিন্তা করো না। সারাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
– আমি সারাকে ভয় পাই না, অরনীকে পাই। ও ভাবে সারা আমার এক্স। আমার তো ওকে দেখে মন খারাপ হয়নি। আমার ভালোই লেগেছে। আমি অরনীকে দেখাতে পেরেছি।
– তুমি হঠাৎ অরনী অরনী করছো?
– সারা অরনী কে হিংসা করতো। কে সেই অরনী? এই তো আমার অরনী। (হাসতে হাসতে)
– বুঝতে পেরেছে?
– হ্যাঁ। আর আমি কাউকে না জানাতে চাইলেও একদিন সারাকে জানাতে চাইতাম আমি কাকে বিয়ে করেছি।
পিপি বুঝতে পারছে জাহিদ এখন অন্য জায়গায় আছে। ওর হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। সারাকে দেখে ওর মধ্যে এই প্রতিহিংসা দেখা যাচ্ছে। ওর এই জাহির করা টা কোনো খারাপ কিছু না নিয়ে আসে। এদিকে বেনজিরের কাছে নাদিয়া,
– জানেন, ও আমাকে অরনী বলে পরিচয় করালো।
– তো?
– অরনী নামটা শুধু আমার ঘনিষ্ঠ লোকেদের জন্য।
– হয়তো ও ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে।
– না, ও এখনো নাদিয়াই ডাকে। শুধু ঐ সময়টা অরনী অরনী করছিল।
– আর তুমি?
– শুদ্ধ। জানিনা কীসের সাথে তাল মেলাচ্ছিলাম। তবে একটা কথা, এটা সেই সারা যে সারা প্রিয়মের সাথে পড়তো।
বেনজির একটু হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণে মুচকি হেসে বলল,
– তো?
– ও মিথ্যে কথা বলে। প্রচুর মিথ্যে কথা।
– কে?
– জাহিদ। বড় ব্যাপার আমি বুঝতে পারি। ওর প্রত্যেকটা মিথ্যা আমি বুঝতে পারি। ও তবুও মিথ্যা বলে। আর আমি কিছু বলিনা।
– ও কী কী মিথ্যা বলেছে?
– অনেক। আবার অনেক কথা বলেই না। এই যে ও ম্যাগনেফিসেন্টে পড়তো, এখন তো এটা ওপেন সিক্রেট। আর প্রিয়মের ব্যাপার। আমাকে কিছুই বলে না।
– ও হয়তো চিনতো না।
– চিনতো, অবশ্যই! ওরা দুজনেই স্কলারশিপ। আর সব স্কলারশিপ একই শাখায় থাকে।
– এটা তোমাকে কে বলেছে?
– ওখানকার একজন স্টুডেন্ট। আমি ওখানেই পড়াই।
– দেখো নাদিয়া, তুমি নিজেও কী তোমার সেকশনের সবাইকে চিনতে?
– ভালো বন্ধু না থাকলেও চিনতাম। নাম শুনলে চিনবো।
– তুমি শুধু তোমার স্থান থেকে চিন্তা করো। ওর স্থান থেকে ভেবেছ? তুমি অনেক সন্দেহ প্রবণ।
– কিন্তু ও এর আগেও মিথ্যা বলেছে।
– তাই বলে প্রতিটা জায়গায় ওকে সন্দেহ করবে! ওর অবস্থা টা ভাবো। ও স্কুল জীবনে হীনমন্যতায় ভুগেছে। তুমি আজ পর্যন্ত ওর একটাও ভালো বন্ধু দেখেছ?
– না।
– বন্ধু দেখেছ?
– না।
– তারপর ও যা তা ভাবছো। তুমিই একমাত্র ওর আপনজন। তুমি ওকে অন্তত সন্দেহ করো না। ওর সাথে কথা বলে বুঝেছি, ও নিজেকে অনেক ছোট মনে করে। এসবের কারণ ওর সেই ক্লাসমেট গুলো। তুমিও ওদের মতো আচরণ করো না। ও মিথ্যে বলে না, সত্যটা লুকায়। তবে সত্যি গুলো কী খুব জঘন্য হয়? ওকে আরেকটু সময় দাও। ওর আরেকটু শক্তি দরকার। তুমি ওকে ম্যাগনেফিসেন্টের শুদ্ধ না ভেবে তোমার স্বামী জাহিদ ভাবো। কিন্তু তুমি অন্য কথা ভেবে তোমার ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট করছো।
সত্যিই তো, ও জাহিদ কে একটু বেশি সন্দেহ করছে। জাহিদের মধ্যেও একটা পরিবর্তন এসেছে। ও ইদানিং বেশি ভালোবাসে। ওর ভেতরে অনেক প্রেমভাব। সারাকে দেখেই কী এমন হচ্ছে? এখন রান্নাঘরে কাজ করতে গেলেই ছুঁয়ে দিয়ে যায়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে চুমু খাওয়া বা ফ্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরা, এসবই যেন অন্যরকম। পুরুষরা নাকি প্রাক্তন কে দেখলে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে। এর তো পুরো উল্টো। হয়তো ও বোঝাতে চাইছে ওর কষ্ট হচ্ছে। আর তাই অতিরিক্ত করছে। কিন্তু সারা তো আবার প্রাক্তন নয়। মিশান ভাইয়ার জায়গাটায় সারার মতো একটা মেয়েকে চিন্তা করতে পারছে না।
নাদিয়া স্কুলেও ওর ফোন বন্ধ রাখে। যখন তখন মেসেজ আসে, “কী করছো?” আগের গোমড়া টাই ভালো ছিল। কী জানি, মেয়েদের মন বোঝা দায়। তবে নাদিয়ার কাছে এখন ছেলেদের মন বোঝা দায়। তাই সে লাইব্রেরিতে সাইকোলজি নিয়ে একটা বই খুঁজছে। তখনই ও সেই মেয়েটাকে আবার দেখল। এই মেয়েটার সাথে ভালো সম্পর্ক করতে হবে। কিন্তু নিজে থেকে গিয়ে বলবে কী? মেয়েটাই নিজে থেকে এসে কথা বলল,
– আপনি সেদিন আমাকে আর ফারাজ কে দেখেছেন?
– ইয়ে মানে, হ্যাঁ।
– আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
– বলো।
– ফারাজ আমাকে বিরক্ত করে।
মেয়েটির মুখে নাদিয়া সব শুনে বলল,
– তুমি ভয় পেও না। ফারাজ থেকে দূরে থেকো। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমি তোমার রক্ষা করবো।
– থ্যাংক ইউ ম্যাম।
– তোমার নাম?
– প্রিয়া।
নামটা শুনে নাদিয়া কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। এরপর সে ওয়াসি কে সব বলল,
– আই থিংক তোমার ওর আরো ডিটেইলস নেওয়া উচিত ছিল।
– বেশি কথা বললে আবার ঘাবড়ে যেতে পারে।
– ঠিক বলেছ। তবে আমি খবর নিচ্ছি। এর আগেই ডোন্ট টেল হার এনিথিং।
– ফারাজ ওকে অ্যাবিউস করে।
– তাহলে তাড়াতাড়িই কাজ টা করবো। একটা প্রমাণ পেলেই উই উইল ফাইল আ কেইস।
– তাহলে এখানের বাকি কাজ গুলো?
– ফেস আমরা থাকবো না। ডোন্ট ওরি।
আজ বাদে কাল নাদিয়ার জন্মদিন। তাই ও জমিয়ে শপিং করলো। প্রত্যেক বছরের মতো এই বছর ও বাবার কাছ থেকে জন্মদিনের শপিং সালামি ওর অ্যাকাউন্টে। অনেক সুন্দর সাদা একটা কুর্তি তার পছন্দ হয়েছে। তার আবার সেদিনের শো রুমের কথা মনে পড়লো। সেখানে সে একটা দারুণ ঘড়ি দেখেছিল। সারা আসার জন্য ভালো করে দেখতে পারে নি। জাহিদের ও জন্মদিন ছিল, যে অবস্থা টা সে করেছে। এখনো লজ্জা লাগে। জন্মদিন তার উপহার ওনার। যদিও আগেই তার স্বামী তাকে একটা উপহার দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার কী মনে আছে? যাই হোক আজকে ভালো কিছু রান্না করবে। এইসব ভেবে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রান্নার কাজ জোগাড় করে তার নতুন জামা পরে তৈরী হলো। জাহিদ আজকে দেরী করছে। জাহিদকে কল করতেই যাবে ঠিক তখন ই কলিংবেল বেঁজে উঠলো। দরজা খুলে নাদিয়া অবাক হলো কারণ ওর সামনে ছিলো সাত আটজন পুলিশ। ভয়ে নাদিয়ার হাত পা কাঁপছে। জাহিদের কিছু হয়নি তো?
– আপনারা?
– আমরা পুলিশ।
– বুঝতে পারছি, কিন্তু কেন?
– আমাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে। আমাদের কো অপারেট করুন।
– মানে?
কিছু বুঝে উঠার আগেই পুলিশ ওদের ঘরে ঢুকে পড়ে। উপায় না দেখে নাদিয়া জাহিদ কে কল করতেই যাবে ঠিক তখনই মহিলা পুলিশ তার ফোন জব্দ করে ফেলে। আশেপাশে সব পুলিশ এটা সেটা খুঁজতে থাকে। এক কথায় পাগলের মতো সব লণ্ডভণ্ড করতে থাকে। নাদিয়াকে তারা কিছু বলতেই দিচ্ছে না। পরক্ষণে তারা একটা বাক্স এনে ধরলো নাদিয়ার সামনে।
– এটা কী?
– ঘড়ি।
– কার?
– আমার স্বামীর জন্য নতুন কিনেছি।
– কিনেছেন না চুরি করেছেন?
– চুরি! আমার কাছে বিল আছে।
– দেখান।
নাদিয়া প্যাকেট টা খুঁজতে লাগলো। তার ভেতরই বিল ছিল। কিন্তু এখন তা খুঁজে পাচ্ছে না। ” চুরি করা জিনিসের বিল থাকে নাকি!” পুলিশের এই কথায় নাদিয়ার খুব রাগ হলো। সে রেগে বলল,
– আমি মেসেজ দেখাচ্ছি আমার পেমেন্টের।
– এসব কিছু পুলিশ স্টেশনে হবে।
– আমাকে কেন যেতে হবে পুলিশ স্টেশন!
– চুরির দায়ে।
নাদিয়ার হাতে মহিলা কনেস্টবল এসে হাতকড়া পড়িয়ে দিলো। এরপর সবার সামনে ওকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেলো। নাদিয়া বুঝতে পারছে না বিল টা তো ঘড়ির সাথেই ছিলো। কিন্তু কেন পেল না? এদিকে জাহিদ বাড়ি এসে দেখে বাসার খুব খারাপ অবস্থা। দাড়োয়ান পিছনেই দাঁড়ানো। তার দিকে তাকাতেই সে কেঁদে উঠে।
(চলবে)
(বিঃ দ্রঃ কাল আরাফার দিন। তাই গল্প আসবে না। পরশু আসবে। 😁)