রুপ_আহরণ💚🎇সারপ্রাইজ পর্ব🎇

রুপ_আহরণ💚🎇সারপ্রাইজ পর্ব🎇
#লেখক:হৃদয় আহমেদ

পরপর দুটো থাপ্পড়ে দু পা পিছিয়ে গেলো আসফিয়া আনম। তাসফিয়া আনমের কল্পনা শক্তির বাইরে ছিলো নিজের বোন তার বাড়িতে এসে এরকম সয়তানি চালিয়ে যাবে। ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে। আরোহীর চোখে পানি টলটল করছে। বেচারি এক কোনে বসে শুধু ফোপাচ্ছে। বুক ফেটে কান্না আসছে ওর। নিজেকে কঠিন ভাবে আটকানোয় ফোঁপানোর আওয়াজ বারছে ক্রমশ। চেয়াল খিচে মুখচোখ কুঁচকে নিয়ে মাথা তুললেন আসফিয়া আনম। দু পা এগিয়ে গেলো তাসফিয়া। ধরে তুলে দু বাহু ঝাঁকিয়ে বললো,

— নিজের বোনের বাড়িতে এসে এসব করছিলি তুই? কি অন্যায় করেছিলো মেয়েটা তোর সাথে যে তুই এরকম মিথ্যে অপবাদ দিলি? আগেও তুই প্রয়োজনের বেশি গালিগালাজ করেছিস। কেউ কিচ্ছু বলেনি তোকে। কিন্তু আজ যা তুই করলি, এর শাস্তি তোকে পেতে হবে আসফি। পেতে হবে।

আসফিয়া আনম নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন দু হাত দিয়ে সরিয়ে। বললেন,

— নিচকই এরকম দৃষ্টিকটু মেয়েকে কে নিজের ছেলে হিসেবে মেনে নেবে রে? তোর সন্তান নয়তো তাই এরকম বলতে পারছিস। আমি কিছুতেই এ মেয়েকে রুপায়নের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো না।

তাসফিয়া আনম থমকে গেলেন। দু পা পিছিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলেন উনি। আজ পর্যন্ত রুপায়নকে সে কখনো নিজের সন্তানের থেকে কম স্নেহ করেননি। নিজের সমগ্র ভালোবাসা দিয়ে সেই আড়াই বছরের রুপায়নকে বড় করে তুলেছেন। নিজে হাতে খাইয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন। আর আজ তার মাতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে? এতটাই ঠুঙ্ক স্নেহ আর আদর দিয়েছিলো তাসফিয়া? ভাবতেই নিজের ভেতরটা শেষ হয়ে আসছিলো তাসফিয়া শেখ এর। উনি মিনমিনিয়ে বললেন,

— তাই বলে মেয়েটাকে চুরির অপবাদ না দিলেও পারতি।

— ছিলো প্রয়োজন। আমার ছেলের বউ হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই এই মেয়েটার।

— কিন্তু রুপায়ন তো আরোহীকে মেনে নিয়েছিলো। তুই কেন মেয়েটার জিবনে এমন দাগ দিলি আসফি?

— কেন রে? তোর জ্বলছে নাকি?নিজের কার্জ কলাপ পূরণ করতে পারলি না। শোন তাসফি, আমার ছেলেকে আমায় ফিরিয়ে দে। একজন তো বিদেশের জনগনের মাঝে হাড়িয়ে গিয়েছে। আমি আর পারছি না। রুপায়নকে চাই আমার। ফিরিয়ে দে।

বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো তাসফিয়া আনমের। আরোহীর সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তাসফিয়া আনম কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,

— তুই আমায়…. আমায় বলতে পারতি। আমি নাহয় খালামনি হতাম রুপায়নের। তুই সোহরার ভাইয়ের সাথে এমন নিকৃষ্ট কাজের সাথে না জড়ালেও পারতি।

…..

— আমি আজ নিজে সবটা বলবো রুপায়নকে। তোর সন্তানকে আমি ফিরিয়ে দেবো আসফি। খুব তারাতাড়িই বলবো। কিন্তু একটা কথা রাখিস,নিজের জন্য আরোহী মেয়েটার কোন ক্ষতি করিস না। কথাটা মনে থাকে যেন।

বলে চলে গেলেন তাসফিয়া আনম। আসপিয়া আনম আরোহীর সামনে গিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলেন রুম থেকে।

ফ্লাসব্যাক,

— কাজ কমপ্লিট। উপহার স্বরুপ আমার ছেলেকে দিন সানি বাবু। নিজে তো মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না আবার আসছে আমার ছেলের উপর অতি অধীকার দেখাতে। আমায়! যে কিনা নিজের ছেলেকে তাকে বিনা স্বার্থে দিয়ে দিয়েছিলো তাকে যে কিভাবে গালিগালাজ করছে আপনি ভাবতে পারবেন না।

সানি বললো,

— ডোন্ট ওয়ারি। সবাই কি বলছে আরোহীকে নিয়ে?

— এমন ফাসিয়েছি যে সবাই চোর বলছে আরোহীকে। বাড়ি থেকে বিদেয় হবেই ওই মেয়ে। আর সোনার টুকরো সোহরাকে নিয়ে আসবো বউ হিসেবে।

— ওকে। আপনি আমার উপর সবটা ছেড়ে দিন।

— আচ্ছা তাহলে রাখছি?

— হুম।

ফোন কেটে পাশে তাকাতেই নিজের বোনকে দেখে চমকে ওঠেন আসফিয়া আনম। আর তারপরই উনি থাপ্পড় মাড়েন।

___

সেখান থেকে দৌড়ে এসে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেন তাসফিয়া শেখ। লাগিয়েই মাটিতে বসে পড়ে কাঁদতে থাকেন উনি। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে ভাবতে থাকে ২৬ বছর আগের ঘটনাসমূহ।

___

— আপনি কোনদিনও মা হতে পারবেন না। আপনার গর্ভ ধারনের ক্ষমতা নেই মিস তাসফিয়া শেখ।

ডক্টরের কথায় তাসফিয়া চমকে উঠলেন। বিয়ের আজ ৩ বছর হলো তাদের কোন সন্তান নেই। পাশে থাকা মৃদুল শেখ চেয়ারে ধপাশ করে বসে পড়লেন। তাসফিয়া আটকালো গলায় বললো,

— কোন ভাবেই কি সম্ভব না ডক্টর?

— সম্ভব! সন্তান যদি আপনারা চান তাহলে এডপ্ট ছাড়া আর কোন উপায়ই নেই। এটাই লাস্ট এন্ড ফাইনাল ওয়ে।

বলে চলে যান ডক্টর। কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃদুল শেখ। তাসফিয়া সেদিন কাদেনি। নিজেকে এটা বলেই শান্তনা দিয়েছেন যে সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সবদিক দিয়ে পূর্নতা দেননা। তাসফিয়া রুপে,গুনে,কাজে সবদিক দিয়েই পার্ফেক্ট। সেখানে তার ক্ষুত হলো মা না হওয়া। জিবনের সবথেকে বড় দাগ এটা। উনি সেদিন মৃদুল বাবুকে সরাসরি বলে দেন,

— আপনি আরেকটা বিয়ে করুন। আমি আপনাকে সন্তান দিতে পারবো না। আরেকটা বিয়ে করে নিন আপনি।

মৃদুল বাবুও সরাসরি বলে দিয়েছিলো,

— জিবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমার তোমাকেই চাই তাস। যাদি সন্তান হীন কাটাতে হয় হোক। আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না।

আজ দুবোনে হসপিটালে রয়েছে। একদিকে বিয়ের এক বছর পেরোতেই মা হতে চলেছে আসফিয়া আর অন্য দিকে তিন বছরেও সন্তানের মুখ দেখেনি তাসফিয়া। একজন নার্স এসে বললেন,

— আপনার বোনের দুটো ছেলে সন্তান হয়েছে। ওনার স্বামী আপনাকে আর ওনাকে ডাকছেন।

তাসফিয়া আর মৃদুল শেখ চেয়ে রইলেন একে অপরের দিকে। নিজেদের ঠিক করে ওনারা মাদার ওয়ার্ডে গেলেন। দুটো ফুটফুটে ছেলে হয়েছে আসফিয়ার। মৃদুল শেখ ভেতরে যেতেই আসফিয়ার স্বামী এগিয়ে এসে বললেন,

— আজ এই বেকার ছেলেটর জন্য আপনারা যা করলেন তা আমি কিছুতেই ভুলতে পারবো না। কি করে যে আপনাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি বুঝতে পারছি না।

মৃদুল বাবু আগপাছ না ভেবেই বলে উঠলেন,

— তোমাদের একটি সন্তান আমাদের দিয়ে দাও।

হুট করে এমন কথায় আসফিয়া, তাসফিয়া সহ সবাই তাকান মৃদুল শেখ এর দিকে। তাসফিয়া আর মৃদুল শেখ এর বিয়ে হওয়ার দু বছর পর বিয়ে হয় আসফিয়ার।তখন তার স্বামীর একটা ব্যাঙ্কের চাকরি ছিলো। ল নিয়ে অর্ধেক পরাশোনা করেছিলেন তিনি। তারপর পরিবারের জন্য চাকরিতে নিযুক্ত হতে হয় তাকে। আজ আর নেই সেই চাকরি। তাই আজ এই হসপিটালের সকল খরচ মৃদুল বাবু দিয়েছেন। মৃদুল বাবু আবারো বললেন,

— হ্যা! তুমি একটা সন্তান আমাদের দাও। আমি তোমার পড়াশোনা করিয়ে একজন উকিল করে তোমার লাইফ সেট করার দায়িত্ব আমার। আমাদের বাড়িতেও তোমরা থাকতে পারো৷ কোন অসুবিধা হবে না। আর কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করা হবে।

নিজেদের কথা ভেবে সেদিন রাজি হন আসফিয়া। দেড় বছর পেরোতেই তাকে একটা ছেলে দিয়ে দিতে হয়। তার বদলে মৃদুল শেখ তার কথা রাখেন। আজ উকিল আসফিয়া আনমের স্বামী। এখনো সে তার পেশাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উনি এখন গুলশানে একটা ফ্লাট রুমে ভারা থাকেন। কাজের জন্য। তাদের একটা ছোট বাড়িও আছে। মাজেসাঝে আসফিয়া আর তার স্বামী যান সেখানে।আর আসফিয়া এখানে। তাদের আরেকটা সন্তানকে ছোট বেলায় বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশের হাওয়া লাগতেই পুরো পাল্টে যায় উপায়ন। এখন বছর পরেও আসেনা। দু বছর পরই দেখা মেলে তার।

💚

সিড়ি দিয়ে ধির পায়ে নিচে নেমে এলেন আসফিয়া। সবাই বসে আছে। আসফিয়া আনম সবার মাজে গিয়ে বললেন,

— আরোহী নির্দোষ। সবকিছু আমি করেছি। আমিই ওর শারীতে গহনার বাক্সটা রেখেছিলাম।

আসফিয়ার কথায় মিনা উঠে দাড়িয়ে বললো,

— আপু??

সবাই উঠে দাড়ালো। তাসফিয়াও নেমে এলো নিচে। অভি শেখ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,

— এসব কি বলছো তুমি?

— আমি ঠিকিই বলছি। আমিই চুরি করেছিলাম। কাল আরোহীর মা বাবা আসার পর আমি সবার আগে চলে যাই এখান থেকে। তখনি কাজটা করি। আর তারপর ওটা আরোহীর রুমে লুকিয়ে রাখি।

মিনা শেখ বললেন,

— কিন্তু কেন আপু? তুমি আরোহীকে কেন ফাঁসাতে চাইছিলে?

আসফিয়া শান্ত বাক্যে বললেন,

— রুপায়নের জিবন থেকে সরাতে।

মৃদুলবাবু উঠে দাড়ালেন। চিৎকার দিয়ে বললেন,

— তার মানেহ্?

— মানেটা স্পষ্ট দুলাভাই। আমি আমার ছেলের জিবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে পারি না। একজন ঠকবাজ মেয়ের হাতে রুপায়নকে তুলে দেয়া সম্ভব নয় আমার।

— ক্ কিন্তু…

— ফিরে চাই। আমার সন্তান রুপায়নকে আমি ফিরে চাই। হ্যা চাই ফিরিয়ে!

মৃদুল বাবু তাসফিয়ার সামনে গেলেন। বললেন,

— এসব কি বলছে কি তোমার বোন তাস?

তাসফিয়া আনমের চোখ দিয়ে নামছে অনবরত বৃষ্টি। দু হাতে পানি মুছলেন। আবারো গাল ভিজে এলো ওনার। বললেন,

— নিজের সন্তানকে ফিরিয়ে চাইছেন। দাও ফিরিয়ে।

— মায়য়হ্!

শেষের সিঁড়িতে দাড়িয়ে দু ফোটা পানি ফেলে বললো রুপায়ন!

#চলবে..?

প্রিয় রিডার্সবাসি। আজ বোনাস একারনেই দিলাম কারন আমার মনে হচ্ছে গল্পটা শুরু করা আমার উচিৎই হয়নি। যারা পাশে আছেন তাদের ধন্যবাদ। অবিলম্বে গল্পটি শেষ করা হবে। কাহিনি দ্রুত এগোবে এখন থেকে। বলতাম না। তবুও, হুটহাট করে শেষ করে দিলে কয়েকজন মনোক্ষুণ্ণ হতেন। তাই বললাম। হঠাৎ একদিন শেষ পর্ব দিয়ে আরও একবার সারপ্রাইজড করবো। ভালো থাকবেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here