রুপ_আহরণ💚পর্ব_৮

রুপ_আহরণ💚পর্ব_৮
#লেখক:হৃদয় আহমেদ

সবটা শুনে রুপায়ন ধপ করে বসে পড়লো পাতানো সোফায়। তার স্নেহের মা যে তার খালামনি সেটা ভেবেই গলাটা শুকিয়ে আসছে রুপায়নের। আরোহী ধির পায়ে রুপায়নের ঘারে হাত রাখলো। সকলে আজ সব সত্যি জেনে গেলো। রইলো শুধু শাস্তি। সানির শাস্তি! কিন্তু এমন অবস্থায় রুপায়ন কথাই বলতে পারছে না। নিজের মা নামক খালামনি কেঁদে কেঁদে চোখের পানি ফেলছেন। জিবনের এই মোড় তার কাছে একটা সকেড ব্যাপার ছিলো। মৃদুল শেখ একটু পরপর চোখের চশমা সরিয়ে পানি মুছছেন। রুপায়নের চোখেও পানি। অভি শেখ চাপা কষ্টে ভুগছেন। মিনা শেখ এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আসফিয়া আনমের দিকে। কতটা ঘৃন্য মন নিয়ে উনি তাদের পাশে চলাচল করছিলেন। এটা ভাবতেই উনি একটু ভয় পাচ্ছেন।

সাহায্যের কোন গুরুত্ব রইলো না আজ। উপকারের ফল যে বিষ তির হয়ে ফেরত আসবে বোঝেননি মৃদুল শেখ। কৃতজ্ঞতা স্বীকার হয়ে গেছে হয়তো। নিজের মানুষই কেমন ঠকায় নিজেকে। তা আসফিয়া আনমকে না দেখলে বুঝতেই পারতেন না মৃদুল শেখ। নিরবতা কাটিয়ে দরজায় বেল পড়লো। থুতনি তুলে তাকালো সবাই দরজার দিকে। মনিরা কোথা থেকে দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে। সবাই চোখের পানি আড়াল করে নিলো। মনিরা দরজা খুলতেই একজন লোক বলে উঠলো,

— রুপায়ন শেখ আছেন?

— আপনি কেডা? কইত্তা আইছেন?

রুপায়ন উঠে গেলো লোকটার কাছে। ডাকপিয়ন এসেছেন। উনি একটা চিঠি বের করে রুপায়নের হাতে দিয়ে বললেন,

— এটা আপনার। এখানে একটা সই করুন প্লিজ।

লোকটা খাতাটা এগিয়ে দিতেই রুপায়ন সই করে দেয়। ‘ থ্যাংক ইউ ‘ বলে চলে যান লোকটি। রুপায়ন ভেতরে আসে। হাতের চিঠিটা হাতে রেখেই ও বাবার সামনে যায়। মাথা তুলে তাকিয়ে বলেন মৃদুল শেখ,

— কিসের চিঠি?

রুপায়ন এবারে চিঠিটা খুলে পড়তে আরম্ভ করে। মনেমনে পড়ে মুখ ফ্যাকাশে করে তাকায় সবার দিকে। শ্যামলা সাদা মুখটায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আসফিয়া বলে ওঠেন,

— কিসের চিঠি ওটা রুপায়ন?

তাসফিয়া শেখ বলেন,

— কার চিঠি ওটা? তোমায় চিন্তিত কেন দেখাচ্ছে?

— ভিডিও কনফারেন্সের চিঠি। তারা মেইলও করেছে। দেখিনি তাই চিঠি দিয়েে ছেন।

— কবে কনফারেন্স তোমার?

— কাল বিকেলে। আরোহী রেডি থেকো।

বলে চলে যেতে যায় রুপায়ন। পেছন থেকে আসফিয়া আনম বলে ওঠেন,

— সোহরা থাকবে সেই ভিডিও কলে। আরোহী নয়।

থামে রুপায়ন। আবারো এসে আরোহীর হাত টেনে নিয়ে উপরে চলে যায়। বাকি সবাই চলে যায়। আসফিয়া আনম আজ নিজেকে বড্ড একা মনে করছেন। হ্যা সত্যিই তিনি নিজেকে খুব একা মনে করছেন। রুপায়ন তাকে যে আগের চোখে দেখতো তার মনে হচ্ছে সে আর সেই চোখে দেখে না। কান্না আসছে ওনার। মনে হচ্ছে সব হাড়িয়ে গেলো। আজ তার উপায়ন থাকলে কি এমন হতো? ভালো ফিউচারের জন্য উপায়নকে ১৫ বছর পরই বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মৃদুল শেখ সব ব্যাবস্হা করে দিয়েছিলেন। হঠাৎ গলায় দলা পাকাচ্ছে। অনুসচনা হচ্ছে তার। সে খুব খারাপ কাজ করে বসেছে। পুলিশকেও ইনফর্ম করেছেন মৃদুল শেখ। যদি আসফিয়াকেও নিয়ে যায়? এখানে তো তাসফিয়া কিংবা রুপায়নের কোন দোষই নেই। তাহলে এসব বলে কি হলো? রুপায়ন আরও দূরে চলে গেলো। তারথেকে তো এটাই ভালো ছিলো রুপায়নকে আব্বা বলে কাছে টেনে নেওয়া!

ধির পায়ে চলে গেলেন আসফিয়া সেখান থেকে। মাঝে কেটে গেছে আরও একদিন। এরমধ্যে সানিকে পুলিশ ধরে ফেলেছে। আসফিয়া সবটা শিকার করেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন স্টেপ নেয়নি শেখ পরিবার। প্রথমে শিকার না করলেও এরপরে পুলিশের মার খেয়ে সবটা নিজমুখে বলে সানি। সে এখন জেলে। সকাল পেড়িয়ে বিকেল হতে চললো। একটু পর কনফারেন্স আরোহী আর রুপায়নের। এটা হলে তারাও চলে যাবে বিদেশে। তখন কোন সন্তানকে আগলে রাখবে আসফিয়া? তাসফিয়া নিসন্তান হলেও সে এতটা স্ট্রং। সেখানে আসফিয়া পারবে না? মানিয়ে নিয়েছেন উনিও।

আজ আরোহী সস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বসে আছে। তার মাথা উঁচু করে বাঁচছে সে। বুকে নেই কোন কষ্ট নেই কোন পাথর। সে মুক্ত বায়ু সেবনে বেলকনিতে দাড়িয়ে। একেরপর এক বিল্ডিং এর ছাদ দেখা যাচ্ছে সেখান থেকে। ছাঁদে মনোরম সেই গাছগুলো মন কেঁড়ে নিচ্ছে তার।

আরোহী অনুভব করলো কেউ পেছন থেকে তার কমোর জড়িয়ে ধরেছে। রুপায়ন এক টানে তাকে বুকে মিশিয়ে নিলো। আরোহী মাথা নিচু করে শুধু অনুভব করছে সেই হার্টবিটের উরুধুরুয়ের শব্দ। ভেতরে খুব ভালো লাগা কাজ করছে ওর। আলতো মাথা তুলে তাকায় আরোহী। মিষ্টি একটা চুম্বনে আরোহীর কপাল ছেয়ে যায়। ভালোনাসা যে কতটা সুমধুর তা আরোহী বুঝতে পেরেছে। রুপায়ন তাকে আবারো মিশিয়ে নিলো বুকে। বলিষ্ঠ বুকে আরোহীর মাথা যে কোথায় তলিয়েছে বিলাসের জন্য তা বুঝে উঠতে পারেনি এখনো। রুপায়ন ওভাবেই বললো,

— চলো, এক্ষনি কল আসবে।

দুজনে একসাথে বলকনি থেকে চলে গেলো। কল এলো। নিজের জানা মতে আরোহী ও রুপায়ন সবটা দিয়ে সেটাকে এটেন্ড করলো। বললো রাত আটটার মধ্যে জানানো হবে। আরোহী ও রুপায়ন আবারো বেলকনির দিকে হাটা লাগালো। দুপুর সাড়ে তিনটে। আকাশে জমেছে মেঘের ভির। কালো মেঘের ভির যার নাম। বৃষ্টির দু ফোটা এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে আরোহী আর রুপায়নের মুখে। বৃষ্টির সময় গান কিংবা স্যাড সং শোনার জন্য নয়। সদ্য পড়া বৃষ্টির পানি গায়ে মাখিয়ে দোয়া করলেই তা পূরণ হয়। সেটা করলো আরোহী। রুপায়নও তাই করলো। দু জনে এক সাথে বললো,

” আমার রুপ…
” আমার আহরণ..
” ফোটা ফোটা বৃষ্টির পানিতে..
” সুখময় হয় যেনো এই জিবন..

~সমাপ্ত~

নতুন গল্পের জন্য কেউ অপেক্ষা করবেন না জানি। উপরের চারটে লাইন যে কি লিখেছি আমি নিজেও জানি না। আজকের পর্বটা খুব ছোট হয়েছে। বলতে পারেন হওয়ারই ছিলো। কারো অস্তিত্ব হাতড়াতে গিয়ে মনটা খুব খারাপ। তাই গুছিয়েও লিখতে পারিনি। সকলে ভালো থাকবেন। হ্যাপি রিডিং💚

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here