রুপ_আহরোণ💚পর্ব_৫
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
শেখ বাড়ির ড্রইংরুম নিরব, নিস্তব্ধ! তাসফিয়া শেখ সহ মৃদুল শেখ এমনকি আরোহী ও রুপায়নও চুপ হয়ে রয়েছে। চুপ থাক্কার কারন হলো আরোহীর বাবার বলা কথাগুলো। আরোহীর বাবা কিছুক্ষণ আগের বলা কথাগুলো অনেকটা এরকম ছিলো,
— আমাদের একজন লোক বলেছিলো কথাটা। একজন ডক্টরও ওনাদের সাথে ছিলো। ওরা একটা কাগজ দেখিয়ে বলে দিয়েছিলো এটা নাকি আমাদেরই মেয়ে। কবর তারাই দেয়। করোনা কালীন সময়ে কাউকে দেখতে দেননি তারা। আমরা তো সত্যিই মনে করেছিলাম ও মরে গেছে।
এরপর তাসফিয়া কিংবা মৃদুল শেখ কিছু বলেনি। নিস্তব্ধতা ভেঙে আরোহীর বাবা বলে উঠলো,
— আমরা এখন আসি বেয়ান মশাই। আসি এখন।
— আপনার বলা কথাগুলোর সত্যতা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এ ঠকানোর মাফ পাবে না কেউ।
বলে জোর পায়ে হেটে চলে গেলেন মৃদুল বাবু। আরোহী এগিয়ে গেলো তার বাবা মার সামনে। তাকে বুকে জাপটে ধরলেন আরোহীর বাবা। নিচু স্বরে কাঁদে চোখের পানি আড়াল করে মেয়েকে বললেন,
— ভালো থাকবি। সবার মাঝে সাথে থাকবি। এক ঝড়ের ঝটকায় জিবন আজ তোকে কোথায় এনে ফেলেছে আরোহী। সতর্ক থাকবি। এরকম আরেকটা ভুল আশা করবো না।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো আরোহীর বাবা। আরোহী তার মায়ের সামনে গেলো। তখন মেয়েকে মেরেছে বলে নিজে বেশ অনুতপ্ত! কেঁদেই চলেছেন উনি। আরোহী সামনে যেতেই মেয়ের মুখে চুমু একে দিলেন আরোহীর মা। আরোহী চোখ বন্ধ করে মাতৃস্নেহের সুধার ধারাটি গভির ভাবে অনুভব করলো। মেয়ের মুখে হাত রেখে বললেন,
— বাবার বলা কথাগুলোর সবটা মানবি। বলার মতো কিছুই নেই। আসি। ভালো থাকিস আরোহী। আসি রে, আসি!
চলে গেলো আরোহীর মা। আরোহী নিঃশব্দে দু ফোটা পানি ফেললো। তাসফিয়া আনম শেখ রুপায়নকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— কোথায় থাকবে সেখানে যেতে বল। ওর খাবার রুমে পৌছে যাবে।
আরোহীর চোখ আরও কয়েকফোটা চোখের পানি ফেললো। তাসফিয়া শেখ চলে গেলেন। রুপায়ন আরোহীর আলতো করে হাতটা ধরে নিলো। বললো,
— রুমে চলো আরু। প্লিজ।
হাত ছাড়িয়ে আরোহী রুপায়নের রুমের দিকে হাটতে লাগলো। রুপায়ন রান্না ঘরে গেলো আরোহীর জন্য খাবার আনতে। নিচে নামলো সবাই। আজ অনেক ধকল গেছে সবার উপর। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। আসফিয়া আনম টেবিলের সামনে রুপায়নকে পেছন থেকে দেখলো। আসফিয়া বোঝেননি রুপায়ন খাবার নিচ্ছে। সে মনে করেছে বেরে খাওয়ার জন্য হয়তো দাড়িয়ে আছে। উনি ভেতরে ডুকতে ডুকতে বললেন,
— আব্বাহ্! তোর খালুর সাথে কথা হলো। বেশিদিন লাগবে না এই মেয়েটার ঘানি টানতে। তুই বরং কালকের আসা পেপারটায় সাইন করে দিস।
বলতে বলতে এগোচ্ছিলেন আসফিয়া। টেবিলের সামনে গিয়ে রুপায়নকে ধাক্কা দিয়ে বললেন,
— কি রে…?
দাক্কা দিয়ে সামনে তাকিয়ে আসফিয়া আনম দেখলেন রুপায়ন খাবার সাজাচ্ছে। আসফিয়া আনম বললেন,
— তুই ঘরে গিয়ে খাবি? এই খানে খা!
রুপায়ন শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো তার খালামনির দিকে। বললো,
— এটা আরুর মনি।
— আরু..?
— ওহ্! আরোহী।
বলেই চলে যাচ্ছিলো রুপায়ন। পেছন থেকে আসফিয়া আনম রুপায়নকে থামিয়ে বললেন,
— দাড়া রুপ।
আসফিয়া আনম রুপায়নের সামনে গেলেন। হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে বললেন,
— এর জন্য মনিরা সবসময় নিজক্ত আছে রুপ। তোমায় দিতে কে বলেছে। নিজে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে।
— মনি, তুমি ভুলে যাচ্চো কেন আরু এখন আমার বউ। ও আমার রুমেই আছে, থাকবে। আর সেখানে নিশ্চয়ই মনিরা আন্টিকে এলাউ করবো না আমি। বাই দা ওয়ে, প্লেটটা হাতে দাও।
— এ্ এসব কি বলছিস আব্বা? তোর ডিভোর্স নিয়ে আমি তোর খালুর সাথে কথা বলছি আর তুই কিনা নিজে নিয়ে খাওয়াতে চাইছিস? আমি এটা কিছুতেই হতে দিবোনা।
— আমি আগেও বলেছি ডিভোর্স হবে না মনি। তাহলে তুমি কথা এগোতে পারছো কিভাবে মনি? প্লেটটা দাও। আরোহী আমার স্ত্রী মনি। ওকে আমি মেনে নিয়েছি। আমার প্রবলেম না থাকলে নিশ্চয়ই তোমার ইভেন কারোরই থাকার কথা নয়।
রুপায়ন প্লেটটা নিয়ে এগোতে গেলেই আবারো সামনে আসে আসফিয়া আনম। বলেন,
— একটা বাইরের মেয়ের জন্য নিজের…. ম্ মনিকে তুই এভাবে বলতে পারলি? বলেছিলাম আমি, সয়তান মেয়ে একটা। কিছু ঘন্টার ব্যবধানে কেমন হাত করেছে আমার আব্বাডাকে। তুই প্লেটটা হাতে দে। দে বলছি।
তখনি ওখানে উপস্থিত হয় তাসফিয়া শেখ। উনি আসফিয়ার কাছে গিয়ে বলেন,
— ওকে যেতে দে আসফি।
— বোন!! (চেঁচিয়ে)
— চেঁচানোর মতো কিছু বলিনি। তুমি যাও রুপায়ন।
— ক্ কিন্তু..
— আহ্ আসফি..! তুমি যাও রুপায়ন।
রুপায়ন চলে গেলো। রুমে যেতেই আরোহীকে বিছানার এক কোনে বসে থাকতে দেখলো। সে আরোহীর সামনে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
— খেয়ে নাও আরু। আমি জানি তুমি খুদার্থ। খেয়ে নাও। কাল আমরা বেরোবো।
আরোহী মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,
— ক্ কোথায়?
— কালই বলবো। এখন খেয়ে নাও তো। ওয়েট। আমার আরুকে আমি নিজে হাতে খাওয়াবো এখন।
রুপায়নও বসে বিচানায় আরোহীর পাশে। ভাত মেখে আরোহীর সামনে তুলতেই আরোহী মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে খেয়ে নিলো। যাদি এতোদিন না খেয়ে এই তৃপ্তিকর খাবার সে এক রাতে পায়। তাহলে সে রাজি প্রয়ই এরকম করতে।
___________________🍁
ফোনের টুংটাং আওয়াজ আসতেই কোমরে শাড়ি গুজে এসে ফোনটা হাতে নিলো মহিলাটি। ফোনে চেনা নাম্বর পেতেই দরজার বাইরে একবার উঁকি দিলো সে। কেউ নেই! আবার ভেতরে এসে ফোন রিসিভ করলো। ওপাড়ের লোকটা বলে ওঠে,
— কি, কাজটা হয়েছে তো?
মহিলাটি ফিসফিসিয়ে বলে,
— হয়েছে হয়েছে! শুধু সকালের অপেক্ষা মাত্র। তাহলেই চুরির দায়ে অভিযুক্ত আরোহী।
— গুড! ভালো কাজ করেন দেখছি আপনি।
— এই কাজের ফলটাই তো আমার বিশেষ পাওনা সানি বাবু। আমার ছেলেকে চাই! নিজের ছেলের মতোই চাই।
— পেয়ে যাবেন। পেয়ে যাবে। শুধু কাজটা সু সম্পর্ন হোক। মিসেস বাধ্য হবেন অপরের ছেলেকে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে।
— তাহলে রাখছি সানি বাবু। কাজের ফলস্বরূপ মায়ের কোলে তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে ভুলে যাইয়েন না।
— ওকে ওকে! তাহলে রাখছি ম্যাম। বেস্ট অফ লাক।
— রাখছি তাহলে সানি বাবু।
ফোন কেটে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মহিলাটি!!
#চলবে….