রৌদ্রদেশে মেঘের বেশে পর্ব-১৪

0
520

#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা

[১৪]

মাঝিমাল্লা হৈচৈ করে উঠে ডুবুডুবু জায়িদকে দেখে। আনহার গায়ের ওড়না জায়িদের হাতে। আনহার দৃষ্টি নিবদ্ধ তাদের দিকে এগিয়ে আসা ট্রলারটির দিকে। জিনিয়ার কান্না ভেসে আসছেনা ট্রলারের আওয়াজের কারণে। নাহিল আর সোরার নৌকা অন্যদিকে যাওয়ায় তারা কিছুই জানতে পারল না।
তরিনা খাতুন আর সাদিদ একেকটা চিৎকার ভেসে আসছে।

এদিকে জিনিয়াকে ধরে রাখতে পারছেনা সাহিল৷ মাঝি তীরে ফেরার তাড়া লাগাল। আনহাকে চেঁচিয়ে ডাকল সাহিল,
‘ আনহা জায়িদকে তোলো। ও সাঁতার জানেনা। আনহা শুনতে পাচ্ছ?
আনহার সম্ভিৎ ফিরে। হাত পা কাঁপে তরতর করে। জায়িদ হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে তার দিকে। মাঝি চেঁচিয়ে ডেকে বলল,
‘ আপা তোলেন ভাইজানকে। হাত বাড়ায় দিন। কোনোমতে টেনে ধরে রাখুন। ভাইজান তো সাঁতার জানেনা। আপা শুনতে পাইতাছেন?
আনহা তাকিয়ে থাকে জলের দিকে। আর জায়িদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে। সামনের তাদের দিকে এগিয়ে আসা ট্রলারটির দিকে একবার তাকিয়ে আনহা ভয়ে ভয়ে হাত বাড়ায়। আবার হাত গুটিয়ে ফেলে। আবার বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ অফিসার?
জায়িদ বাড়িয়ে দেওয়া হাত তড়পাতে থাকে পানিতে। আনহার ওড়নাটা জায়িদের হাতের মুঠোয় বন্দী। সাহিলের ডাক আবার ভেসে উঠে। আনহা চমকে তাকায়।
‘ জায়িদের হাত ধরে রাখো আনহা। শুনতে পাচ্ছ?
আনহা চট করে হাত বাড়ায়। তার অর্ধেক শরীর নৌকার বাইরে চলে গিয়েছে। জায়িদের হাত হাতড়ে শক্ত করে ধরে আনহা। জায়িদ খুঁটি পেয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। মাথা তুলে। দুহাত দিয়ে আনহার হাত শক্ত করে ধরে রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
‘ ছেড়োনা ছেড়োনা।
আনহা আচমকা হেসে দেয়। আবার হাসি চেপে রাখে। মাঝি বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
‘ এই মেয়ে এমন সময় হাসছে?
জায়িদ চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নেয়। আনহার হাতের কব্জি ধরে অন্য হাতে। শিউরে উঠে আনহা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘ আমি ও পড়ে যাচ্ছি অফিসার। ছাড়ুন। এভাবে ধরেছেন কেন? আশ্চর্য!
জায়িদ চোখ বন্ধ অবস্থায় আনহার হাত ধরে শক্ত করে। বহুকষ্টে নৌকা ছুঁই। আনহার উপর ভর করে নৌকা ধরে ফেলে। ঝুলে থাকে। অন্য হাত দিয়ে আনহাকে টান দিতেই ধপ করে নদীতে পড়ে যায় আনহা। চিৎকার করে উঠে। তাদের দিকে এগিয়ে আসা ট্রলারটি আবার ফিরতি পথে চলতে শুরু করে। জায়িদকে উঠতে দেখে মাঝি হাঁফছাড়ে। কিন্তু আবার আনহা পড়ে যাওয়ায় মাথায় হাত দেয়। ডুবুডুবু আনহা হাত তড়পাতে থাকে পানির ভেতর। পানি খেতে থাকে। জায়িদ ততক্ষণে উঠে এসেছে। ঘনঘন শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হওয়ার আগেই আনহার দিকে চোখ যায় তার। দূরের নৌকা থেকে জিনিয়ার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সাহিলের ডাক ভেসে এল,
‘ জায়িদ আনহাকে তোলার চেষ্টা কর। কি করছিস তোরা?
জায়িদ মুখ থেকে পানি মুছে হাতে পেঁচিয়ে থাকা আনহার ওড়না ছুঁড়ে মারে। একপাশ তার হাতে, অন্য পাশ আনহার কাছে। দুর্বলকন্ঠে জায়িদ বলল,
‘ এই মেয়ে ওড়নাটা ধরো। তাড়াতাড়ি।
জায়িদ ঢলে ঢলে পড়তে থাকে। মাঝিকে বলে,
‘ ভাই আপনি ও ধরেন একটু। এই মেয়েকে আমি একা তুলতে পারব না।
মাঝি বলল,
‘ নৌকা ডুবি যেবু ভাইজান।

ওড়না ধরে আনহা। জায়িদ সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রাখে। নৌকা ভাসে, তারসাথে সাথে আনহা ও। জায়িদকে বলে,
‘ আমার হাত ধরুন অফিসার। আমার ভয় লাগছে।
জায়িদ বুকে হাত চেপে ঢোক গিলে । তারপর হাত বাড়িয়ে দেয়। নরম কন্ঠে বলে,
‘ আমার হাত শক্ত করে ধরো। বেশি ভার দেবেনা। আমি পারব না। খারাপ লাগছে আমার।
আনহা এক হাত দিয়ে নৌকা ধরে। অন্য হাত দিয়ে জায়িদের হাত। ভর দিয়ে নৌকার উপর উঠে ঝুঁকতেই ঢলে পড়ে জায়িদের গায়ের উপর। শক্ত পাটাতনের উপর পড়তেই জায়িদ মাথায় ব্যাথা পায়। মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকে। মাথায় ঝিম ঝিম করা শুরু করে। অচেতন হয়ে পড়ে।

ভারী মাথা তুলতেই আনহা নিজেকে আবিষ্কার করে জায়িদের বুকের উপর। মুখ তুলে তাকাতেই দেখে চোখবুঁজে পড়ে রয়েছে জায়িদ।
আনহা ক্ষীণস্বরে ডাকল,
‘ অফিসার?
জায়িদের সাড়াশব্দ না পেয়ে আনহা জায়িদের মুখ ধরে ডাকে,
‘ অফিসার? কি হয়েছে আপনার? উঠুন। আরেহ?
আনহা নিজের ভেজা ওড়না চেপে পানি দেয় জায়িদের মুখে। ফুঁ দেয়।
বেশকিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফেরে জায়িদের। দুই তিনবার কেশে উঠে চোখ মেলতেই নিজের এত কাছে ঝুঁকে থাকা মেয়েটিকে দেখে সে অবাক হয়। ঢোক গিলে সে বলল,
‘ কি হচ্ছেটা কি? সুযোগ পেয়ে একেবারে গায়ের উপর উঠে এসেছ! ছাড়ো।
আনহা হাসে। বলে,
‘ তখন তো খুব বলেছিলেন, ছেড়োনা ছেড়োনা। এখন ছাড়তে বলছেন কেন?
জায়িদ বিরক্তি নিয়ে তাকায়। আবার ধপ করে মাথা ফেলে বলল,
‘ আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ছাড়ো। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।
আনহাকে হাত দিয়ে ঠেলে সরায় জায়িদ। বহুকষ্টে উঠে বসতে বসতে বলে,
‘ তুমি আমাকে মেরে ফেলতে এসেছ হ্যা?

এই ছোট্ট বেখেয়ালে বলা কথাটা শুনে বুক ধড়ফড় করে উঠে আনহার। তোতলাতে তোতলাতে আনহা জবাব দেয়
‘ এসব কেমন কথা অফিসার? আপনাকে আমি মারব কেন? শুধু শুধু,
জায়িদ উঠে সোজা হয়ে বসে বলল,
‘ ইয়ার্কির একটা লিমিট আছে। পানিতে কি ধরণের ইয়ার্কি?
আনহা ভেজা ওড়না গায়ে জড়াতে জড়াতে বলে,
‘ আপনি ও তো আমাকে ফেলে দিয়েছেন। কত পানি খেয়েছি আমি।
আনহার কথা বলা শেষ হতে না হতেই গড়গড় করে বমি করে দেয় জায়িদ। নদীর পানির দিকে ঝুঁকে বমি করতে থাকে। আনহা দাঁড়িয়ে পড়ে জায়িদের পেছনে। এদিকওদিক তাকায়। সাহিল আর জিনিয়ার নৌকা তীরের কাছে পৌছে গেছে। জায়িদকে ছুঁতে যেতেই মাঝি ডাক দেয়,
‘ আপা আর মশকরা কইরেন না।
জায়িদকে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে সাথেসাথে পিছু ফেরে। আনহার বাহু ধরে শক্ত করে। সামান্য করে আর্তনাদ করে উঠে আনহা। দাঁতে দাতঁ চেপে জায়িদ তাকে দূরে ছিটকে মারে। বলে,
‘ কি সমস্যা তোমার মেয়ে? তুমি কি জানোয়ার? খারাপ লাগছে আমার। সত্যি খারাপ লাগছে। এই তোমাকে আমি মাঝরাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দিয়েছি? এতটা পাষাণ কি করে হয় মানুষ? সবসময় ইয়ার্কি বিপদ ডেকে আনে। জানো না?
জায়িদ আর পারল কথা বলতে। হেলান দিয়ে বসে পড়ে। চোখ ফেটে জল বের হয় আনহার। বলে,
‘ আমি আপনাকে ধরতে গিয়েছিলাম অফিসার। মা বলে কেউ বমি করলে পিঠ আর বুক চেপে ধরে রাখতে হয়। আমার ইরিটেট লাগছিল তাই ধরতে গিয়ে আটকাচ্ছিলাম। আপনি কতগুলো কথা শোনালেন আমায়। মানছি একবার মজা করেছি, তাই বলে কি বারবার করব?

জায়িদ বন্ধ চোখ খুলে তাকায় সামনে। দেখতে পায় ভেজা নারীমূর্তির ভেজা মুখে আবার নোনা জল। আবার চোখ বন্ধ করে সে। দ্বিতীয় বার চোখ খুলতেই ধমকে উঠে।
‘ এই মেয়ে ওইপাশে গিয়ে বসো। যাও তাড়াতাড়ি। কথা বারবার বলতে না হয় মতো। আমার চোখের সামনে থেকে সরো।
আনহা সরে বসে। জায়িদ চোখ বন্ধ করে।

তীরে এসে মাঝি ডাক দেয় জায়িদকে। ধড়ফড়িয়ে উঠে সে আর আনহা। ধীরেসুস্থে নৌকা থেকে নামতেই দূর থেকে ভাইয়া ডাক ভেসে আসে। জায়িদ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়৷ হাত বাড়িয়ে দেয়। বুকের উপর হামলে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় জিনিয়া। জায়িদ হাসতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে জিনিয়ার হিঁচকি উঠে যায়। সাহিল ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে নদীর পাড়ে। মাথায় হাত দিয়ে জায়িদকে বলে,
‘ এটা কোনো কথা? তোর বোন আমাকে আচঁড় দিয়ে ছিড়ে ফেলছে। যেখানেই যাস ভাই, তোর বোনটাকে তুই নিয়ে যাস। হায়রে আজ আমার একটা বোন নাই বলে।
আনহা গিয়ে সাহিলের পাশে বসে। মুখে হাত দিয়ে বলে,
‘ হায়রে আজ আমার একটা ভাই নাই বলে।
সাহিল হাসে। বলে, নাই?
আনহা মাথা নাড়ায়।
‘ নাই।
জায়িদ হাসে জিনিয়ার কান্না দেখে। ডাকে,
‘ জুননু তুই ভিজে যাচ্ছিস। কাঁদছিস কেন পাগলী? এই জুননু? ছাড় এবার।
জিনিয়া অনেকক্ষণ পরে ছাড়ে। জায়িদের ঠোঁটে হাসি দেখে রাগ হয় ভীষণ। হাত ছুঁড়ে বুকে দুমদাম মারে। আনহা বিড়বিড় করে বলল,
‘ আরো মারো আরো মারো।
তরিনা খাতুন তীরে ফিরেই তওবা কাটেন। আর জীবনে ও নাকি নদীতে ঘুরতে যাবেনা। কত বড় বিপদ ঘটে গেল! আল্লাহ!

নাহিল আর সোরা কৌতুহল নিয়ে দৌড়ে আসে।
‘ জায়িদ ভাই কি হয়েছে এখানে?
নাহিল জিজ্ঞেস করল।
জায়িদ হেসে বলল,
‘ কিছুই হয়নি। তোর ভাবিজান পাগল হয়ে গেছে তাই কাঁদছে।
সোরা আনহাকে দেখে বলে,
‘ আপা তোমরা কি নদীতে সাঁতার কেটেছ?
জায়িদের রাগ বাড়ে আনহাকে দেখে। জিনিয়া চট করে জায়িদকে ছেড়ে দাঁড়ায়। আনহাকে বলে,
‘ নদীর মাঝখানে গিয়ে তোমার ইয়ার্কি করতে ইচ্ছে হলো আনহা? আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেত।
বলতে না বলতেই আবার জায়িদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে জিনিয়া। জায়িদ হাসতে থাকে। বোনের মাথায় থুতনি রেখে বলে,
‘ জুননু কিছু হয়নি। এসব মাথা থেকে ফেলে দে তো। ওই মেয়েকে ও নাকানিচুবানি খাইয়েছি আমি।
আনহার মন খারাপ হয়। সাহিল চাটি মারে আনহার মাথায়।
‘ আজ কি ভাতটাত খেতে হবে। নাকি নদীর পানি খেয়ে পেট ভরিয়েছ?
আনহা মৃদু হাসল। কিন্তু কিছুই বলল না। মাথা নিচু করে বসে থাকে। জিনিয়ার কথা খারাপ লাগল ভীষণ।

সবাই ” আহমেদ মঞ্জিলে ” আসতেই বৃদ্ধা জাহানারার কর্কশ কন্ঠস্বর ভেসে আসে। তরিনা খাতুনকে বলেন,
‘ ছোড বইন তোমার ও কি রংয়ে ধরেছে? সবাইরে নিয়া গেছ, আসার নামগন্ধ নাই?
তরিনা খাতুন কিছু বললেন না। চলে গেলেন।
জিনিয়াকে আঁড়চোখে দেখেন জাহানারা। বলে,
‘ কাঁদছ নাকি নাতবৌ। চোখ মুখ ফুলছে ক্যান?
জিনিয়া বলার আগেই সাহিল বলল,
‘ চোখে ধুলো পড়েছিল তো, তাই চোখ কচলানোর কারণে এমন হয়েছে।
জাহানারা সন্দিগ্ধ চোখে তাকায় জায়িদ আর আনহার দিকে। জায়িদের প্রচন্ড বিরক্ত লাগে এই খুঁতখুঁতে মহিলাকে। সে চলে যায়। জাহানারা আনহাকে লাঠি দিয়ে গুঁতো মেরে বলে,
‘ তুমি ভিইজা গেছ ক্যান? পুলিশ আর তুমি কি একসাথে সাঁতার কাটছ?
আনহা হেসে উঠে। বলে,
‘ হ্যা দাদু সাঁতার কেটেছি। ভীষণ ভালো লেগেছে।
জিনিয়া তাকিয়ে থাকে আনহার দিকে। কিভাবে কথা ঘুরিয়ে দিল মেয়েটা! জিনিয়াকে তাকাতে দেখে আনহা ও তাকায়। মাথা নামিয়ে ফেলে। জিনিয়া ছোট্ট করে আওয়াজ করে বলে,
‘ সরি আনহা।
আনহা চলে গেল। দাঁড়াল না।

________________

শহুরেরা আসায় পড়া জমে গিয়েছে সোরার। পড়া হয়নি। আনহার পাশে বই নিয়ে বসলে ও আর পড়া হলোনা সোরার। গল্পে মজে যেতে হলো। কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ল আনহা। সোরা গায়ের উপর কাঁথা টেনে দিল। পড়ার টেবিলে বই নিয়ে জানালাটা খুলে দিল। আওয়াজ করে পড়া ছাড়া পড়া মুখস্থ হয়না সোরার। আর্টসের ছাত্রী সে। কানের ভেতর দুই আঙুল দিয়ে ঢুলেঢুলে পড়া মুখস্থ করার এক পর্যায়ে মনে হলো জানালার পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সোরার পড়ার আওয়াজ ছোট হতে থাকে। কারো নড়াচড়া না দেখে সোরা আবার ও পড়তে থাকে।
আবার কারো নড়াচড়া আর নিঃশ্বাসের আওয়াজ ভেসে আসতেই সোরা দাড়িয়ে পড়ে বলে,
‘ কে আছেন? জানালার পাশে কে?
ওপাশের ছেলেটি যেন এবার ধরা খেল। সোরা আন্দাজে ডাকল,
‘ ছোটদাভাই আপনি এখানে কি করছেন?
নাহিল এবার গলা খাঁকাড়ি দিয়ে সামনে চলে এল। এদিকওদিক তাকিয়ে বলল,
‘ পড়ছ ঠিকাছে কিন্তু ওভাবে চিল্লিয়ে পড়ছ কেন? ঘরে থাকতে পারছিনা।
সোরা দ্বিগুণ অবাক। এক ঘর পার হয়ে তার ঘরে পড়ার আওয়াজ চলে গেল? ডাহা মিথ্যে কথা। সোরার রাগ লাগল ভীষণ। বলল,
‘ মিথ্যে বলবেন না। আমি অত জোরে পড়িনা যে আপনি ঘরে থাকতে পারছেন না। শুধু শুধু ঝামেলা করতে আসেন।
নাহিল বলল,
‘ আমি শুধু শুধু ঝামেলা করতে আসি? আমি? কি ঝামেলা করেছি হ্যা? বলো কি ঝামেলা করেছি? ঘর থেকে বের হয়ে এসো। তাড়াতাড়ি এসো।
সোরা রাগ আর ও দ্বিগুণ বাড়ল। কালকেই তো এত কথা শোনাল আর আজ সব ভুলে আবার কথা বলতে এল নির্লজ্জ লোকটা।
সোরা ক্ষীণস্বরে চাপা গলায় বলল,
‘ দাদি শুনতে পারলে কেয়ামত ঘটে যাবে। আপনি আপনার ঘরে যান। আমার ক্ষতি করবেন না।
নাহিল বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে। সে গর্জন করল।
‘ তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসো ঘর থেকে। নইলো আমি চিৎকার করব।
সোরা দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এল। নাহিলের সামনে এসে বলল,
‘ ছোটদাভাই আপনি এবার বাড়াবাড়ি করছেন। ভীষণ রকম জ্বালাচ্ছেন আমাকে। যান৷
সোরা চলে যেতেই নাহিল সোরার হাত ধরল। বলল,
‘ আজ আকাশে কত বড় চাঁদ দেখেছ? চলো এই জ্যোৎস্না রাতে নদীর পাড়ে যায়৷ খুব ইচ্ছে আমার৷ প্লিজ চলো। তোমার কোনো অসুবিধা হবেনা। আমরা যাব, ঘুরে আবার চলে আসব। প্লিজ। এটা বলার জন্য এসেছি।
সোরা হা করে থাকে।
‘ পাগল আপনি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আপনি পাগল? নাকি আসলে পাগলামি আমার সামনে করেন? আপনি বুঝতে পারছেন আপনি কি বলছেন? এই রাতের বেলা আপনার সাথে আমাকে দেখলে গ্রামের লোকেরা কি বলবে? বুঝতে পারছেন কি বলবেন? পারছেন না। আপনারা পারবেন ও না। দোহাই লাগে আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন। যান।
বৃদ্ধা জাহানারার গলার আওয়াজ শোনা যায়। নাহিল কিছু বলার আগেই টর্চের আলো চোখে পড়ে নাহিলের চোখে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নাহিল হাঁক ছাড়ে।
‘ কে চোখে লাইট মারছে?
সোরা দৌড়ে ঘরে ডুকে যায়। দরজা বন্ধ করে বিছানায় আনহার পাশে শুয়ে পড়ে।
নাহিলকে দেখে জাহানারা হেসে দেয়। বলে,
‘ ছোড মিয়া তুমি এখানে কি করো?
নাহিল বলল,
‘ কিছু করিনি। সোরার সাথে দেখা করতে এসেছি বাট সোরা আমার কথাই শুনছেনা।
জাহানারার হাসি-হাসি মুখ নিভু নিভু হয়। সন্দিগ্ধ কন্ঠে জাহানারা জিজ্ঞেস করে,
‘ সোরাকে কেন?
নাহিল রেগে বলল,
‘ ওকে বলেছি একটু নদীর পাড়ে যেতে। যাচ্ছেনা। বিরক্তিকর৷ সব রাগ শুধু আমার বেলায়। সরি বলেছি তারপরে ও হচ্ছেনা।
নাহিল চলে গেল পায়ের আওয়াজ তুলে। সোরা গুটিয়ে পড়ল আনহার পাশে।
খট করে দরজা খোলার শব্দে গলা শুকিয়ে গেল।
‘ এই হারামজাদি! তুই কি ঘুমাইছস?
সোরা লাফ দিয়ে উঠে বসে।
‘ জ্বি দাদি। একটু চোখ লেগে আসছিল।
আনহা ও উঠে পড়ে জাহানারার চেঁচানিতে।
‘ ছোট মিয়ার সাথে কি তোর? হ্যা? শেষমেশ বাপের মানসম্মান ধুলোয় মিশানোর লগে বইসা আছস?
সোরার মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। ঘাড়ে জোরে বাড়ি পড়ে লাঠির। ঝরঝর করে কেঁদে দেয় সোরা।
‘ ছোটদাভাই নিজ থেকে এসেছে দাদি। আমি কিছু করিনি।
আনহার ভীষণ রাগ হয়।
‘ এই বুড়ি এত অসভ্য কেন? সারাক্ষণ খ্যাঁক খ্যাঁক করতে থাকে।
জাহানারার চেঁচামেচি শুনে সালমা আর সামাদ মিয়া চলে আসে। সাহিল ফোনে কথা বলা শেষ করে উঁকি দিয়ে দেখে এত চেঁচামেচি কিসের।
সাহিলকে দেখে চুপ হয়ে যায় জাহানারা। শুধু কানে আসে ” সোরার বিয়ে “।
সাহিল খুশি হয়। দরজার বাইরে দাড়িয়ে বলে,
‘ আমরা থাকতে সোরার বিয়ে নিয়ে টেনশন করতে হবেনা। ভালো পাত্র দেখে আমিই বিয়ে দেব সোরাকে। এসব নিয়ে তোমরা ভেবোনা তো চাচা। সোরা এসব শুনে কেঁদোনা। এখন বিয়ে দেবনা।
সামাদ মিয়া হেসে ফেলে। বলে,
‘ হ বাপজান তোমরা আছ বলে।
সালমা বেগম খেয়াল করে সোরা কাঁধ ধরে কাঁদছে। এতটা সহ্যশক্তি মেয়েটার। আওয়াজ করে কাঁদেনা যতই ব্যাথা পাক। খারাপ লাগে সালমার। নিজের মেয়ের গায়ে হাত তোলার কারণ ও জানতে চাইতে পারেনা। কেমন দাদি ওনি?
সবাই চলে যেতেই সোরা আনহাকে জড়িয়ে ধরে। আনহা সান্ত্বনা দেয়। কেঁদোনা সোরা। কিচ্ছু হবেনা।
সোরা আনহাকে ছেড়ে পড়ার টেবিল গুছাতে গুছাতে বলে,
‘ তোমরা শহরে কখন ফিরে যাবে আপা? আমার আর ভালো লাগছেনা। সবাই চলে যাও। আমরা আগের মতো থাকি।
দরজায় আবার খটখট আওয়াজ হয়। আনহা বলে,
‘ কে? আসতে পারেন।
জায়িদ ঘরের ভেতর ডুকেনা। বাইরে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আনহা বাইরে এসো। কথা আছে।
আনহা কৌতূহলী হয়। কৌতূহলের সাথে মেশানো কিছুটা ভয় ও। জায়িদের সামনে যেতেই হেসে দেয় আনহা।
জায়িদ কব্জিতে পড়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ উঠানে চলো এখানে বলা যাবেনা।
আনহার হাসি চোখে পড়ে তখনই।
‘ হাসছ কেন বেয়াদব মেয়ে?
আনহা আবার ও হাসে। ওড়নার কোণা জায়িদের মুখে ঝেড়ে দিয়ে বলে,
‘ ওই যে নাম ধরে ডাকলেন। ভালোই লেগেছিল। আপনার মুখে নামটা বেশ বেশ মানিয়েছে।
জায়িদের ভ্রু কুঞ্চন হয়। বলে,
‘ ফালতু কথা ছাড়ো। ওখানে এসো।
আনহা পিছু পিছু যায় জায়িদের। উঠানবাড়ি চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে। সেই চাঁদের আলো পড়া উঠানের খানিকটা অংশজুড়ে দুজন যুবক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে।
জায়িদ বলল,
‘ তুমি চলে যাবে কাল। আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবে তুমি নিজ থেকেই চলে যেতে চাইছ। বুঝেছ?
আনহাকে চুপ দেখে জায়িদ আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ এই মেয়ে?
আনহা আওয়াজ করে,
‘ জি, শুনতে পেয়েছি৷
জায়িদ বলল,
‘ কাল সকালে রেডি থাকবে। বুঝেছ?
আনহা ঘনঘন মাথা নাড়ায়।
‘ জ্বি বুঝেছি। আশ্রয় পাওয়ার বদলে আপনার এটুকু উপকার করতেই পারি।

___________

সকাল হতে না হতেই আনহাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সোরা।
‘ আপা পুলিশ বাবু ডেকে পাঠিয়েছে তোমাকে।
অজানা কারণে ঘুমের মাঝে দুচোখ জলে ভরে উঠে আনহার। সোরাকে না দেখিয়ে মুখ ধুতে চলে যায় সে। জায়িদের সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ চলে যাব। আর একটু সবুর করুন।
জায়িদ মাথা নাড়ায়। কাপড় চোপড় গুছিয়ে স্যুটকেস নিয়ে বের হয়ে আসে আনহা। সালমা বেগম দৌড়াদৌড়ি করে আনহা আর জায়িদকে কিছু খাওয়ানোর জন্য। বাকিরা হতভম্ব।
জিনিয়া সোরাকে স্যুটকেস হাতে দেখে দৌড়ে যায়।
‘ আনহা আমার উপর কি রাগ করেছ? হঠাৎ চলে যেতে চাইছ ?
জাহেদা আর বাকিরা ও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সাগর সাহেব এগিয়ে এসে বলে,
‘ তুমি কেন চলে যাচ্ছ আনহা? আর কিছুদিন থাকো।
জাহেদা চুপ থেকে সব দেখতে লাগল। শফিক সাহেব জায়িদের সাথে কথা বলল।
জিনিয়া সাহিলের কাছে দৌড়ে গেল। সাহিলের হাত ধরে বলল,
‘ আনহা আমার উপর রেগে চলে যাচ্ছে মনে হয়। প্লিজ থামান না। আমি তো রেগে বলেছি তাই না?
সাহিল জিনিয়াকে শান্ত হতে বলে আনহার দিকে এগিয়ে যায়। বলে,
‘ কি হয়েছে বুনডি? কোনো সমস্যা কি? হঠাৎ, আর যাচ্ছ এত সকাল সকাল কেন?
আনহার চোখ ভর্তি জল নিয়ে তাকায়। বলে,
‘ আমাকে তো যেতেই হবে ভাইডি। আজ না হোক কাল। তোমাদের সাথে তো আর সারাজীবন রেখে দেবেনা। আমার জীবনটা আমার একার। মা ছাড়া আমার পৃথিবীতে কেউ নেই। পথটা ও আমাকে মাকে নিয়ে চলতে হবে। মাই আমার শেষ আশা ভরসা। কোনো একদিন যদি হুট করে তোমাদের কথা মনে পড়ে চলে আসব দেখতে। তোমাদের শহরের ঠিকানা তো জানিনা। এই নাম্বারটা রাখো, মনে পড়লে কেমন আছি জেনে নিও।
সাহিল জায়িদকে কিছু বলতে গেলে জায়িদ বলে দেয়,
‘ বড় স্যারের আদেশ। আমার হাতে কিছু নেই।
সাহিল আর কিছু বলতে পারল না। আনহা চলে গেল। সোরা অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখল আনহাকে। বলল,
‘ আপা এত মায়া কাটিয়ে যখন চলে যাবে, তবে আসলে কেন?
আনহা সোরার মুখ ছুঁই। ফিসফিস করে বলে,
‘ আমি আবার আসব পাগলি।
সোরা বলল,
‘ কচু আসবে।
আনহা হাসে।

পুরো রাস্তা চুপচাপ থাকে আনহা। কোনো কথা বলেনা। জায়িদ একটু অবাক হলেও তা দেখায় না। দিনের বেলা তাই রিকশা পাওয়া গেছে। রিকশায় উঠে বসে জায়িদ। আনহাকে টেনে তুলে। তারপরে ও নিস্তব্ধতা কাটেনা। রিকশা থেকে নামল দুজন মেইনরোডে এসে। সিএনজিতে উঠে বসে কিছুদূর এগোতেই জায়িদ ড্রাইভারকে বলে,
‘ সোজা বাস স্টেশন যান ভাই। কোনদিকে যাচ্ছেন?
ড্রাইভার নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
‘ আমি সবসময়, সবসময় এই রাস্তা দিয়েই যাই। ইচ্ছা হলে যান নাহলে নামেন।
জায়িদ ক্ষুব্ধ কন্ঠে চেঁচায়।
‘ এই তুই গাড়ি থামা। তোরমতো মদখোরের গাড়িতে কি করে উঠলাম আমি? এই থামা। গাড়ি থামা।
আনহা অবাক।
‘ কি করছেন অফিসার? এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করবেন না প্লিজ। ভালো লাগছেনা।
ড্রাইভার এলোমেলো গাড়ি চালায়। ভুল রাস্তায় গিয়ে গাড়ি থামায়। নির্জন রাস্তা। চিকন সরু রাস্তার ধরণ। দুইপাশে ঘন জঙ্গল। জায়িদ গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারের কলার চেপে ধরে। ঘুষি বসাতেই পিঠে আক্রমণ হয়। মুখোশ পড়া দুইজন লোক হামলে পড়ে তার উপর। চেঁচিয়ে উঠে আনহা। চিৎকার করতে থাকে। জায়িদের পিঠে ছুরিকাঘাতে রক্ত তড়বড় হয়। পড়নের সাদা শার্ট রক্তে ভেসে যায়। দূরে দাঁড়িয়ে আনহা দেখতে থাকে ।
জায়িদ ছুরি কেড়ে নেয় একজনের হাত থেকে। ছুরির দুইটান দিতেই কাত হয়ে পড়ে যায় একজন। জায়িদ তার পায়ের নিচে লোকটিকে ফেলতেই হাতের বাহুতে অন্যজন এসে ছুরিকাঘাত করে। হাত চেপে দূরে সরে পড়ে জায়িদ। আনহা চেঁচিয়ে জায়িদের দিকে এগিয়ে আসতেই বাঁধা পায় যেন। অসুস্থ মস্তিষ্ক বলে, যাস না। কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্ক বারবার জানান দেয়,মনে করিয়ে দেয়, চোখের দৃশ্যপটে ভাসিয়ে দেয়,
‘ শক্ত করে ধরা হাতের বাঁধন। ভ্যানগাড়িতে বসে চন্দ্রবিলাস। নৌকার পাটাতনে চোখবুজে থাকা মানবটির মুখমণ্ডল। বিরক্তি নিয়ে তাকানো। সবকিছু।
আনহা কিছু না ভেবেই এগিয়ে যায়। মুখোশ পড়া লোকটি দৌড়ে গাড়ির দিকে ছুটতেই আনহার সাথে ধাক্কা লাগে । দূরে ছিটকে পড়ে আনহা। ইটের সাথে লেগে যায় কপাল। ইটের কোণা গেঁথে যায় কপালে। রক্ত বের হয় গড়গড় করে। আনহা উঠে জায়িদের কাছে যায়। জায়িদ বহুকষ্টে চোখ মেলে আনহাকে দেখে বলে,
‘ আনহা এই গাড়ির নাম্বার প্লেট মুখস্থ করো। প্লিজ। জলদি। করেছ?
লোক দুটো গাড়িতে উঠে বসে তাড়াতাড়ি। সিএনজিটা চলে যায়। আনহা জায়িদের মাথা নিজের কোলে তুলে নেয়। ডাকাডাকি করে বলে,
‘ অফিসার আপনাকে উঠে বসতে হবে। অফিসার আমি কি করব এখন? কোথায় নিয়ে যাব আপনাকে? আল্লাহ!
জায়িদ আনহার হাত আঁকড়ে ধরে শক্ত করে। উঠে বসে বহুকষ্টে। আবার ঢলে পড়ে আনহার উপর। আনহার কাঁধে মাথা রাখতেই চোখবুঁজে ফেলে।
আনহা জায়িদের পকেট হাতড়ে ফোন খুঁজে নেয়। চোখমুখ চকচক করে উঠে। মনে হলো কি যেন পেয়ে গেল। সাহিলের ফোনে কল দিয়ে সাহিলকে জায়গার নাম বলে আসতে বলে দেয়। ফোনটা নিজের কাছে রেখে দেয়।

পাশের বাড়ি থেকে কান্নার গুঞ্জন আসতেই জিনিয়া আর বাকিরা ছুটে যায় সেই বাড়িতে। আহমেদ বাড়ির সবাইকে ছুটে আসতে দেখে লোকজন সাইড হয়ে দাঁড়ায়। শফিক সাহেব এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হয়েছে এখানে?
একজন বৃদ্ধ লোক বলে উঠল,
‘ তিনদিনের জ্বরে এ বাড়ির কর্তী মারা গিয়েছেন সাহেব।
শফিক সাহেব অবাক। জিনিয়া বলল,
‘ আব্বা তিনদিনের জ্বরে কিভাবে একজন মানুষ মারা যেতে পারে? এ কি কোনো ভয়ানক জ্বর?
শফিক তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাার সাহায্যে বলেন
‘ জ্বর ছাড়া ও অন্যরোগ থাকলে সম্ভব।
বৃদ্ধ বলেন,
‘ ওই মহিলাকে সকালে পুকুরঘাটে দেখেছিলাম আমি। কাপড় কাঁচছিল। এই কয়েকঘন্টার ব্যবধানমাত্র। কত শান্তশিষ্ট বউ মহিলা ছিল। আহারে?
শফিক সাহেবের মাথায় ঢুকল না।
‘ এ কেমন রোগ?
জিনিয়ার উত্তেজনা বাড়ল। সে শফিক সাহেবকে ডেকে নিল একপাশে। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আব্বা এই মহিলার কিডনি কি নিয়ে ফেলা হয়েছে? তুমি মিলিয়ে দেখো তোমাদের হসপিটালে ঘটা কেসগুলোর সাথে। আমার ভয় লাগছে আব্বা।
শফিক সাহেব সাথেসাথেই ঘেমে উঠে। বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে। জিনিয়া বহুকষ্টে সাগর সাহেবের সাহায্যে শফিক সাহেবকে ঘরে নিয়ে আসে। শফিক সাহেব জায়িদকে ফোন দিতে বলে তাড়াতাড়ি। ফোনে পাওয়া যায় না জায়িদকে। জিনিয়া সাহিলের ফোনে কল দেয়। সাহিলকে ও ফোনে পাওয়া যায় না।
নাহিল দৌড়ে আসে কোথাথেকে। সাগর সাহেব জিজ্ঞেস করেন,
‘ কি হয়েছে রে?
নাহিল এদিকওদিক তাকিয়ে ঢোক গিলে। বলে,
‘ জায়িদ ভাই আর আনহার উপর নাকি হামলা হয়েছে। দুজনই এখানে গ্রামের হসপিটালে।
জিনিয়া মুখে হাত দিয়ে ডুকরে উঠে।
শফিক সাহেব উঠে দাঁড়ায়। জিনিয়াকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
‘ শক্ত হ আম্মা। এত নরম হলে চলবেনা। তোর আম্মাকে কিছু বলিস না এখন। তোর আম্মাকে সামলে রাখ। আমরা খোঁজখবর পাঠাব। জিনিয়া ঠোঁট চেপে কাঁদে। ভাইয়ার সাথে কেন এত অন্যায় হচ্ছে আব্বা? আমার ভাইয়া তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। এসব কি হচ্ছে আব্বা?

চলবে,
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here