লাভ রেইন পর্ব-২৫

0
1867

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ২৫

৬৪.
টকটকে লাল চোখজোড়া মুছতে মুছতে ফোনের মধ্যে দৃষ্টি তাক করলো তেহভীন।অপরিপূর্ণ ঘুমের কারণে চোখ মেলে রাখা দায়। জ্বালা যন্ত্রণা সব এই মুহূর্তে ভর করছে শুভ্র চক্ষুপল্লবে। তেহভীন বহু কষ্টে চোখের কপাল টান টান রেখে দেখলো তার ড্যাডের ফোন। তখনি কপালে তীক্ষ্ণ ভাঁজ দৃশ্যমান হলো কপালের। কাল বিলম্ব না করে ফোনটা রিসিভ করলো। মি.মেথেউ এ্যাসপোর্ড গম্ভীর স্বরে মোদ্দা কথায় এসে বললেন,

—” দ্যেয়ার ইজ আনা’দার অপশন ফর ইউ টু
এস্কেপ দ্যা পানিশমেন্ট।

— হুয়াট ইজ দ্যাট?

মি.মেথেউ চমৎকার ভাঙ্গিতে স্ত্রী এবং বোনের দিকে চেয়ে হাসলেন। সম্মুখে বসা ক্যাথরিনের মুখপানে চেয়ে পূনরায় গম্ভীরস্বরে বললেন,

—ইউ হ্যাভ টু ম্যারি ক্যাথরিন,দ্যিজ মান্থ!

তেহভীনের দৃষ্টির বন্দিজালে তখন সিলভার’ নামক নারীর বিচরণ। রমণীর কালো ব্রেইড করা চুলের গুচ্ছ ভীষণ টানে তাকে। সিলিভিয়ার স্থানে ক্যাথরিনকে বসাবে সেটা ভাবাও দুষ্কর তেহভীনের জন্য। ঠোঁট জোড়া চেপে ভেতরে আঁটকে কিছুসময় নীরব থাকলো তেহভীন। ভাবনার মধ্যে নতুন কোন অভিনব কৌশলের আগমন ঘটলোনা।ভারাক্রান্ত মন নিয়ে স্মিত হেসে মি.মেথেউ এর কথার পিঠে তেহভীন জবাব দিলো,

— ওকে ড্যাড! আমি রাজি। কিন্তু তোমাকে
একটা প্রমিস করতে হবে?

প্রথম উত্তর শুনে প্রসন্ন হাসলেও শেষের কথায় ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললেন মি.মেথেউ।হালকা কেশে সকলের মধ্যে নিজের অবস্থান অবগত রেখে তিনি বললেন,

— কি প্রমিস?

— ওল্ড টাউনের ‘ব্যাংলো হাউজটা’ আমার নামে
লিখে দিতে হবে। আর ‘ভুগাত্তি লা ভইতুর নোরে’ মডেলের একটা গাড়ি চাই আমার।অবশ্যই গাড়ির কালার ব্ল্যাক হতে হবে। প্রমিস করুন আপনি আমাকে এসব গিফট করবেন।

তেহভীনের কথায় চোখ কপালের তুলে ফেলার উপক্রম হয় মি.মেথেউ এর। উনি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে ফোন কান থেকে নামিয়ে স্ক্রিনে চোখ বুলালেন। কিন্তু স্ক্রিনে ফ্রড কারো নাম নেই। নিজের ছোট সন্তান-ই এই কথা বলছে।ব্যাপারটা স্বার্থের দিকে চলে যাচ্ছে না? মি.মেথেউ কাউচ থেকে উঠে খানিকটা দূরে এসে বললেন,

— এটা নিশ্চয় বেংলাডেশের ভিডিও দেখে শিখেছো? ওখানে কি একটা কালচার আছে। আ..আব ওহ ইয়েস ‘যৌটুক’। তুমি আমার কাছে যৌটুক চাইছো?

তেহভীন নিঃশব্দে শরীর দুলিয়ে হেসে উঠলো।তবে অন্য কানে হাসির শব্দ পৌঁছুতে দিলো না। ঠোঁট চেপে হাসি আঁটকালো। বিষয়টা অবশ্যই সে একটা প্রচলিত রীতি যৌতুক’ নামের ভিডিও তে দেখেছিলো।রিচ বিজন্যাস ম্যান ফাদার তাদের ডটারের খুশীর জন্য মেয়ের হাসবেন্ড কে দামী গিফট করছে।আর যাদের ফাদার অত্যন্ত পো’আর সেখানে তাদের পরিবারে সমস্যার শেষ নেই।
তেহভীন চাপা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

— ড্যাড! যৌটুক মেয়ের বাবার কাছ থেকে
নেওয়া হয়।ছেলের বাবার কাছ থেকে নয়। আমি যৌটুক চাইছিনা তোমার বাধ্যগত ছেলে হিসেবে এই সামান্য গিফট চাইছি।

— টেহভীন? এটা সামান্য গিফট? তুমি যানো এই গাড়ির কতো মূল্য।

— বেশি নয় ড্যাড, ফোর্টি এইট লাখ ডলার। এর
থেকে অল্প বেশিও হতে পারে।

মি.মেথেউ কথা বলার জন্য আর বাক্য খুঁজে পেচ্ছিলেন না।পেশাগত গম্ভীর্যভাব চোয়াল থেকে যায়।রক্তশূন্য চেহারা নিয়ে,আবচা স্বরে বললেন,

— আই কান’ট, মাই সন।

— বাট আই নিড ইট! তা নাহলে
আমি বিয়ে করতে পারবো না এখন।

তেহভীনের বাবা এ পর্যায়ে এসে কন্ঠস্বর
নরম করে বললেন,
— ঠিক আছে,তোমার পানিশমেন্ট ক্যান্সেল।
তুমি তোমার আগেকার নিয়মে এক্টিভেট হতে পারো।কিন্তু আমার পারমিশন ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না।

তেহভীন মৃদু কঠিন্যকন্ঠে বলল,
— দ্যান,ওল্ড টাউনের বাড়িটা আমার চাই।
আমি মানে শুধু আমি,অন্য কোন ভাগ হবে না। পেপার্স রেডি আছে আমার কাছে।

তেহভীন কথাটা বলে কল কাট করে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো। ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত ক্রুর হাসি। বুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস। এই কাজটা অনেক আগে করা উচিত ছিলো তার। নিজের বোনের মেয়ের জন্য দামী দামী উপহার ক্রয় করাটা পাত্তা না দিলেও,ওল্ড টাউনের বাড়িটার পার্টনারশীফ ক্যাথরিন ও পাবে জানার পর থেকে তেহভীন বেশ চটে আছে।দিনরাত অপেক্ষা করে এই ফোনটা আশায় ছিলো সে এতদিন।

৬৫.

বিরাট উইন্ডোতে বসার সুযোগ্য স্থানটা এতদিন বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে সিলিভিয়ার। আজ জানালার কোল পা তুলে আরাম করে বসলো সিলিভিয়া।পেছনে একটা পিলো ঠেকিয়ে রাখতে ভুললো না।এতে দ্বিগুন আরাম পাওয়া যায়। কফির মগে চুমুক দিয়ে স্ট্রিটভিউ প্রদর্শনে মত্ত সে। তৎক্ষনাৎ, ফোনটা আলতো করে বেজে উঠলো। ওয়াট’সএ্যাপে কল দেখে বুঝতে পারলো সায়মন ফোন দিয়েছে। গত সপ্তাহে কথা হয়েছিলো। আজ আবার সায়মন ফোন দিয়েছে। সিলিভিয়া রিসিভ করলো।

— কেমন আছিস সিলি?

— আমি ভালো,তুমি জুহান, তোমরা
সবাই কেমন আছো?

— আমরা ভালো। তারপর বল কি করছিস?

— বসে আছি। তুমি?

— আমি দোকানে। তোকে যেটা বলতে ফোন দিয়েছি।বাবা বাড়িতে রীতিমতো মায়ের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলেছে তোর বিয়ের জন্য।

— আমার বিয়ে?

— হ্যাঁ, ওই যে বড় আব্বুর ছেলে তারসাথে।

— ওহ, তারপর?

— তারপর আর কী রোজ খাবার সময় কাহিনী।
তোকে ফোন করে আমরা জানাচ্ছি না কেন?
উনার তো স্মার্টফোন নেই, তাই উনি আমাদের জ্বালাচ্ছেন।থাকলে এতদিনে জানিয়ে দিতো।

সিলিভিয়া মৃদু হেসে বলল,
— বাবাকে নিশ্চয় বড় আব্বু ব্রেইনওয়াশ
করিয়েছে।এমন কিছু বলেছে যার জন্য বাবা
এমন করছে।

— হতে পারে তাই।আচ্ছা শোন,টেনশন নিবিনা
একদম।বাবা যদিও বা তোর সাথে যোগাযোগ করে তাহলে না ঘাবড়ে সোজাসুজি সব বলে দিবি। উনার আক্কেল…

— থাক ভাইয়া কিছু বলো না। ছোটবেলা থেকে
ভাইয়ের ছায়াতলে মানুষ হয়েছেন বাবা।এজন্য বড়ভাই যা বলেন তা নির্বিকার ভঙ্গিতে শ্রবণ করেন।

— হয়তো তাই।

তাদের মধ্যে টুকটাক কথোপকথন চলল আরো বেশ কিছুক্ষণ। কথা বার্তা শেষ হলে ফোন রেখে দেয় সিলিভিয়া। পাশে বার্কলে মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো। সিলিভিয়া উঠে নিজের অলস্যতা ছাড়িয়ে মাথায় কাপড় টেনে উঠে দাঁড়ালো।ওজু করে নামাযে দাঁড়ালো।

৬৬.
জাইমার জোড়াজুড়ির কাছে হার অগত্যা ‘রিভেরিয়া এপার্টমেন্ট’ থেকে বের হলো সিলিভিয়া।গেইটের সামনের অনেক গাড়ি পার্কিং করা। শুধু সিলিভিয়া গাড়ি বিহীন হেঁটে যাবে। জাইমা ‘রোজ ওয়ালড্রফ’ স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জানালো। সিলিভিয়া সেখানে পৌছুতেই জাইমাকে দেখতে পেলো।
সিলিভিয়া এগিয়ে এসে বলল,

— শুধু শুধু ‘রুমি এপার্টমেন্ট থেকে এখানে এসেছো।আমাকে লোকেশন বললে চলে যেতাম।

জাইমা মুচকি হেসে বলল,

— কোথায় যাবো সেটাই তো জানিনা এখনো।
তাছাড়া আমার একা ঘুরতে ভালো লাগে না।

— এতদিন কার সাথে ঘুরেছিলে তবে?

জাইমা চোখমুখ আঁধার করে বলল,
—- আমার বয়ফ্রেন্ড এ্যাথেন্সের সাথে।
কিন্তু আমাদের ব্রেক-আপ হয়ে গিয়েছে।

কথাটা শুনপ আচমকা সিলিভিয়ার বুকের ভেতর কিছু একটা খামচে ধরলো যেনো। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রেখে খামচে ধরা অংশ শিথিল করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ যেনো। ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে উঠছে। সিলিভিয়া বলল,

— এখন কোথায় যাবো আমরা?

— জানিনা,তবে হাঁটতে থাকি।

সিলিভিয়া মাথা নেড়ে সায় জানালো। দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে বার্কলে প্লেহাউজ অতিক্রম করে অনেকটা পথ চলে আসলো। কিন্তু পথিমধ্যে ঘটলো একটা ঘটনা।একজন প্রেগন্যান্ট ব্রিটিশ মহিলা রাস্তা ধারে হাত পা ছাড়িয়ে বসে আছেন। শরীর অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে নড়াচড়া করে নিজের আর্তনাদ প্রকাশ করছেন।সিলিভিয়া আর জাইমা বিচলিত হয়ে দৌড়ে মহিলাটির নিকটে যায়। আশেপাশে গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। তা দেখে জাইমা বলল,

— আন্টি আপনি ঠিক আছেন?আপনার
সাহায্য লাগবে?

মহিলা কাতর গলায় বললেন,
— আমাকে একটু মেডিকেল সেন্টারে
নিয়ে চলুন। সাহায্য করুন আমাকে।
আমার কষ্ট হচ্ছে।

সিলিভিয়া আশেপাশে চেয়ে জাইমাকে বললো,
— এখানে মেডিকেল সেন্টার কোথায়?

— আছে,বেটমেন পার্কের পাশে, আমার এপার্টমেন্ট থেকে খানিকটা হেঁটে যেতে হয়।

— তাহলে চলো তাড়াতাড়ি।

সিলিভিয়া মহিলাটিকে ধরে তুললেন। যাওয়ার পথে উনি ফোন বের করে নিজের বোনকে মেডিকেল সেন্টারে আসার জন্য মেসেজ দিলেন।

সন্ধ্যার সময়টায় পার্কিং লনের সামনে এসে দাঁড়ালো সিলিভিয়া।জাইমা পাশেই কারসাথে কথা বলছিলো। সিলিভিয়া মাথা তুলে উপর-নীচ দেখতে লাগলো। হঠাৎ ভাবনার মধ্যে কি হলো কে জানে,হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে এসে সিলিভিয়ার মুখ চেপে ধরে টেনে চট করে গাড়িতে তুলে ফেললো।ব্যাক্তিটি ঠিক তার পেছনে। আকস্মিক ঘটনায় সিলিভিয়ার মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়। তার উপস্থিত বুদ্ধিও তৎক্ষনাৎ লুপ পেলো। হাত পেছনের দিকে এনে অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে ছোঁয়ার চেষ্টা চালালো,কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা। চোখমুখে নেমে এলো অবাধ ক্লান্তি।কিন্তু অজ্ঞাত ব্যাক্তির শরীর হতে ভেসে আসা সুগন্ধি নাকের সংস্পর্শে এলে দ্বিগুণ চমকে উঠলো মনে মনে।

(চলবে)
সবাই একটু রেসপন্স করুন।পেজের রিচ কমে গিয়েছ।
গল্প কেমন হচ্ছে সেটাও জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here