লাভ রেইন পর্ব-৪০

0
1639

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৪০

৯৯.

গাড়ি কাছাকাছি আসতেই ঝট করে গাড়ির দরজা খুলে বের হলো সায়মন। সিলিভিয়া চোখ ছোট করে তাকিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। সায়মন সন্দিগ্ধ এবং শীতল দৃষ্টিপাত করলো সিলিভিয়ার উপর। সিলিভিয়া আন্দাজ করতে পারলো তার ভাইয়া নিশ্চয় একটু আগের দৃশ্যটা দেখেছে। নাহলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এভাবে চেয়ে থাকার কোন কারণ নেই। দৃঢ়পায়ে এগিয়ে সায়মনের সামনে দাঁড়িয়ে ছোট করে হাসলো সিলিভিয়া। সায়মন মিনিট দুয়েক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আচমকা সিলিভিয়ার মাথায় আলতো একটা চড় দিয়ে বলল,

—- পড়তে গিয়ে এই কিচ্ছা-কাহিনী করে
এসেছিস তাই না? কি জানি বলছিলি তখন ব..ন্ধু?

সিলিভিয়া নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— পড়াশোনা করতে গিয়ে নয় ভাইয়া,এই দেশ থেকেই কিচ্ছা শুরু হয়েছিলো। তুমি টের পাওনি।

— কাজটা ঠিক করিস নি। আমাকে আগে বললে কি’হতো? এতদিন পর বিষয়টা জেনে খুশী হবো নাকি রাগ করবো বুঝতে পারছি না।

— আপাততে খুশী হও,কারণ রাগ করে লাভ নেই।

—- হুম খুশী তো হবোই, প্রেম তো আমিও করেছি।কিন্তু তোর মতো বুকে সাহস ছিলো না। আচ্ছা যাক, কাহিনীর সূত্রপাত কিন্তু আমাকে বলবি।

ভাইয়ের কথা শুনে সিলিভিয়া না হেসে পারলো না।

সদর দরজার কাছে রুজিনা দাঁড়িয়ে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।গাড়ি এসে থামলেই উনি ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে। বহুদিন পর মমতাময়ী মায়ের স্নেহশীল স্পর্শ পেয়ে সিলিভিয়া মনটা অদ্ভুত ভাবে ভালো হয়ে যায়। এতদিন মায়ের মুখখানা ফোনের স্ক্রিনে দেখতে দেখতে চোখ পঁচে যাওয়ার উপক্রম। আজ সরাসরি মায়ের মুখটা দেখে মনপ্রাণ প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়।পর মুহূর্তে আকবর হাসানও ছুটে এলেন মেয়ের সান্নিধ্যে।সিলিভিয়া সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরতেই, আকবর হাসানের চোখে পানি ছলে আসে। একমাত্র মেয়েকে তিনি ছেলের চাইতেও বেশি ভালোবাসেন৷ সিলিভিয়া জুহান কোলে তুলে আদর করতে করতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।

জুলিয়া তখন সবেমাত্র রান্নার কাজ ঘুছিয়ে কিচেন থেকে বের হচ্ছিলো।হঠাৎ জুহানকে কোলে নিয়ে সিলিভিয়াকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে সে ভীষণভাবে চমকে উঠলো। সাদাকালোর সংমিশ্রণে একটা লম্বা কামিজের সাথে প্লাজু,ওরনা সাদাকালো ফুলের মিশ্রণে খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। আগের সিলিভিয়া আর আজকের সিলিভিয়ার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পেলো না সে।অত্যন্ত সুন্দরী, মোহনীয় লাগছে সিলিভিয়াকে। জুলিয়া ভেবেছে সিলিভিয়া তার সাথে কথা বলবে না। তার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে সিলিভিয়া এগিয়ে এসে মিষ্টি হেসে সালাম দিয়ে বলল,

— কেমন আছো ভাবি?

জুলিয়ার ঘোর কাটলো সিলিভিয়া কন্ঠস্বরে,হা করা মুখ তৎক্ষনাৎ বন্ধ করলো দ্রুত৷ এগিয়ে এসে সিলিভিয়ার সামনে গিয়ে হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরলো জুলিয়া। সিলিভিয়া আকস্মিক ভাবে হকচকিয়ে গেলো তার ভাবির আচরণে। কথার প্রত্যুত্তর না পাওয়ার বিষয়টা তখন আর খেয়ালে এলো না। সেও জুলিয়াকে জড়িয়ে ধরলো আলতো করে। একটু পর ছেড়ে দিয়ে সরল কন্ঠে সিলিভিয়া জিজ্ঞেস করলো,

— মই’মা, জিনিয়া তারা কেমন আছে ভাবি?

জুলিয়ার মুখ চুপসে গেলো। তারপর দরজার দিকে চোখ পড়তেই রুজিনা দেখলো।তাই বলে উঠলো,

— ভালো আছে। তুমি যাও ফ্রেস হয়ে নাও।
আমি তোমার রুম সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছি। দেখো ভালো লাগে কি-না।

— লাগবে,

সিলিভিয়া নিজের রুমে চলে গেলো। রুজিনা এগিয়ে এসে বললো,

— রান্নাবান্না শেষ হয়েছে?

— জ্বী মা শেষ হয়েছে সে অনেকক্ষণ আগে,কেন?

— পায়েসটা রান্না করবো সিলির জন্য।
ভাতের পর পায়েস খেতে পছন্দ করে সিলি।

— ঠিক আছে,আমি তাহলে রান্না করে নিই।

— না না তুই গিয়ে বিশ্রাম নে,অনেক
রেঁধছিস,যা এবার।

জুলিয়া ঝটপট গোসল করতে চলে গেলো।গরমে শরীর ভিজে কাহিল হয়ে গিয়েছে। গোসল করলে শান্তি লাগবে।

সিলিভিয়া রুমে এসে তেহভীনের ফোনে ম্যাসেজ করলো। জানিয়ে দিলো তার বাড়িতে পৌছানোর খবর। তেহভীন তখন নিজের লাগেজটা হাতে নিয়ে লিফট থেকে বের হচ্ছিলো।ম্যাসেজ টিউন শুনে ফোনের স্ক্রিনটা চোখের সামনে রাখলো। সিলিভিয়ার পাঠানো ম্যাসেজটাতে চোখ বুলানো শেষে দেখলো, আরো দু’,টো আন’সিন ম্যাসেজ শো করছে। ম্যাসেজ দু’টো দেখে নিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কামরার সামনে এসে দাঁড়ালো।চাবির সাহায্যে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। গায়ের শার্টটা খুলে একপাশে রেখে, ফোনটা হাতে নিয়ে বসলো। বাতানুকূল কামরায় মৃদু অন্ধকারের উপস্থিতি। তারপর অদ্ভুত এক সম্মোহন সৃষ্টি করে। সিলিভিয়ার ম্যাসেজের উত্তরটা দিয়েই কিছু সময় চুপ মেরে থাকলো। সিলিভিয়ার সাথে এসেও কাছাকাছি থাকা যাচ্ছে না। মেজাজটা সেজন্য ভালো নেই তেহভীনের। কিন্তু উপায়হীন পরিস্থিতিকে দোষটা দিলো না সে।চুপচাপ ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে।

১০০.

সিলিভিয়া দেশে আসার সময় আজ পাঁচদিন। হুট করে সিলিভিয়ার বাবা বাড়িতে এসে জানালেন তার ভাই মুনতাসীর শেখ তাদের সবাইকে বেড়াতে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানালেন। আকবর হাসান সরল মনের মানুষ,ভাইয়ের কথা ফেলতে পারেননি।তৎক্ষনাৎ জানিয়ে দেন তিনি,সিলিভিয়া সহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। রুজিনাকে জানালে,উনি সর্বপ্রথম বললেন সিলিভিয়ার থেকে মতামত নিতে। কারণ সিলিভিয়া তার দাদার বাড়ির মানুষজনকে তেমন একটা পছন্দ করেন না। আকবর অনেকটা ভয়ে ভয়ে সিলিভিয়াকে বললো, তাদের গ্রামের বাড়িতে যেতে। আকবরকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ দিয়ে যেতে রাজি হয়ে যায়। ব্যস,এতে মুনতাসীর আর মুমিন খবরটা পেয়ে ধুমসে বিয়ের আয়োজন শুরু করে দেন। যা একদম সিলিভিয়ার অজানা থেকে যায়।রুজিনা সায়মনকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলো।কিন্তু সায়মন যেতে রাজি হয়নি। আজ সকলে তৈরি হয়ে যাওয়ার সময় হুট করে সায়মন এসে জানালো, সে ও তাদের সাথে যাচ্ছে। সায়মনের কথায় রুজিনা অবাক হলেও,সায়মন সেটা কে পাত্তা না দিয়ে আঁড়চোখে একবার সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে নিজে ঘরে চলে গেলো।সিলিভিয়া তখন ফোনের দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছিলো। সায়মনের আঁড়নজরে তাকানো দৃষ্টির মানে সে বুঝতে পেরেছে।

সিলিভিয়াদের দাদার বাড়িতে যেতে হলে ট্রেনে করে যেতে হয়। যদিওবা বাস যান, অন্যান্য যানবাহনের সুযোগ আছে যাওয়ার। কিন্তু সিলিভিয়া ট্রেনে করে যেতে পছন্দ করে। সেজন্যে সায়মন ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ এ করে টিকেট কেটেছে সবার জন্য।মূলত তাদের গন্তব্য স্থল হচ্ছে পঞ্চগড়। কেবিনে সবাই বসে যে যার মতো গল্পগুজব করছে। তারমাঝে সায়মন অনুপস্থিত। সিলিভিয়া উঠে দাঁড়িয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা ‘এসি বার্থ’ কেবিনে গিয়ে সায়মনকে দেখা গেলো। তার পাশে জানার কাছে বসে আছে তেহভীন। বাইরে জানালার দিকে অদ্ভুত চোখে চেয়ে দেখছে যাত্রীদের ভিড়ভাট্টা। সিলিভিয়ার হাসি পেলো তেহভীনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। সায়মনের যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তেহভীন। সায়মন সঙ্গে গেলে,তেহভীনও যেতে পারবে।নয়তো তার মা-বাবা সন্দেহ করতে পারে। যদিও ব্যাপারটাকে চেপে রাখতো না, তেহভীন পড়াশোনাটা শেষ করে বিয়ের কথাটা বলেছিলো।সেজন্য ততদিন চুপ থাকবে ভাবলো সিলিভিয়া।
এখন রাত সাড়ে দশটা।আর কিছু সময়ের পর ট্রেন ছেড়ে দিবে। অর্থাৎ দশটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনে পৌছাতে সকাল নয়টা বেজে যাবে। হঠাৎ সায়মন ঘাঁড় ঘুরাতেই সিলিভিয়াকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে মৃদু হাসলো। দরজাটা সে ইচ্ছে করেই দরজাটা লকড করেনি।সিলিভিয়াকে দেখে উঠো দাঁড়াতেই তেহভীন তাদের দিকে ফিরে তাকালো। হঠাৎ সিলিভিয়াকে দেখে হাসলো। হাসিটা আপনা-আপনি চলে এসেছে। এতক্ষণের বিরক্তি ভাবটা হুট করে গায়েব হয়ে গেলো সিলিভিয়াকে দেখে।সিলিভিয়াও প্রত্যুত্তরে হাসলো মৃদুভাবে। সায়মন নিঃশব্দে বেরিয়ে যেতে গেলে সিলিভিয়া বলে উঠলো,

—- ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে এসো এখানে। জুহান মা-বাবার কাছে থাকুক তোমরা চলে এসো।

— আমরা এখানে কি করবো? তোরা থাক।

সিলিভিয়া ভারী অবাক হয়ে বলল,

—- ভাইয়া, তুমি এমন ব্যবহার করছো যেনো আমরা স্বামী-স্ত্রী,আমরা স্পেস চাইছি। তেহভীন শুরুতেই আমার বন্ধু ছিলো,আর এখনো। আমাদের মধ্যাকার পরিবর্তন হওয়া সম্পর্কটা কী সেটা আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।প্লিজ চলে এসো তোমরা।

সিলিভিয়ার কথায় সায়মন তেহভীনের দিকে তাকালো,তেহভীন বলে উঠলো,

— সি ইজ এবসুলোটলি রাইট। প্লিজ বোউথ
ওফ ইউ কাম।

সায়মন তেহভীনের দিকে চেয়ে মৃদুভাবে হাসলো। একটা জিনিস তার ভালো লাগলো তেহভীনের। সে বাংলা বুঝে,তবে বলতে পারে না। আবার কিছু কিছু প্যাঁচানো কথা হয়তো বুঝবে না।কিন্তু অধিকাংশই বুঝে। এটার রহস্য কি সে এখনো জানতে পারেনি।একজন ফরেনার হয়ে বাংলা বুঝা অসম্ভব। ভাবতে ভাবতে সায়মন চলে গেলো।

তেহভীন হুট করে উঠে এগিয়ে এসে সিলিভিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। সিলিভিয়ার চুলে গিয়ে নাক ঠেকলো তার। মিষ্টি একটা স্মেল এসে নাকে ঠেকে তেহভীনের।সে প্রলুদ্ধ হয়ে ছোট করে চুলে একটা চুমু বসলো। এরপর জিজ্ঞেস করলো,

— তোমার হেয়ার পারফিউম এর
নাম ‘ফ্লাউয়ার’বোম্ব?

সিলিভিয়া চট করে সরে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি কিভাবে জানো? এটা তো
আজই ইউস করেছি।

তেহভীন হাসলো,এবং বলল,

— এটা তামান্না সিস এর প্রিয় হেয়ার পারফিউম।

— হ্যাঁ,সিস আমাকে এটা কিনতে সাজেস্ট করেছিলো সুপারশপ থেকে।

— বাই দ্যা ওয়ে,তোমাকে আজ বেশি
প্রিটি লাগছে। হোয়াই?

— কারণ তোমার দেখার দৃষ্টি বেশি সুন্দর!

তেহভীন সিলিভিয়াকে সামনে সিটে বসিয়ে নিজের সিটে ফিরে এসে বসলো।দু’জনে মুখোমুখি বসে আছে।মাঝখানে উইন্ডোজ এবং তার নিচে একটা টেবিল।শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন বেশ আরামদায়ক লাগছে সিলিভিয়ার৷ তেহভীন বলে উঠলো,

—- সিলভার,তোমার গ্রেন্ডফা’স হাউজ এড়িয়া আমাকে ঘুরে দেখাবে। আচ্ছা কোন ভালো রিসোর্ট পাওয়া যাবে?

— রিসোর্ট কেন? তুমি আমাদের সাথেই চলো।
সবাই কে বলবো তুমি ভাইয়ার ফ্রেন্ড।যদিও আমার ফ্রেন্ড বললে তাতে আমার সমস্যা নেই।কিন্তু আমার বাবা-মা আশেপাশের মানুষ জনকে বুঝাতে পারবে না বিষয়টা। এর চাইতে এটা ব্যাটার অপশন।

তেহভীন মোহনীয় হাসি হেসে বলল,

— সিলভার এরচেয়ে ব্যাটার অপশন আমার ‘না যাওয়া। আমি কোন মিথ্যে পরিচিয়ে তোমার ফ্যামিলির মানুষের সাথে পরিচিত হতে চাই না।

সিলিভিয়া চমকে গেলো তেহভীনের কথায়। এতেটা পিউর চিন্তাভাবনা তার মনে কোণাতেও ছিলো না।যেট এক নিমিষেই তেহভীন বলে ফেললো।একদম যুক্তিসম্মত একটা কথা। সিলিভিয়া মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো,এরপর বলল,

— তোমাকে আমার গ্র্যান্ডফা’স এর হাউজ এড়িয়া সহ তোমাকে আরো একটা চমকপ্রদ জায়গা দেখাবো। আমি সিউর তুমি দেখলে বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে।

— অকে আ’ম ওয়েটিং মাই ডিয়ার।

সায়মন আর জুলিয়া সশরীরে এসে দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করলো।বাইরে যা গরম শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার। কিন্তু জুলিয়ার বিস্মিতরূপ গগন ছুলো যখন তেহভীনকে দেখলো। সায়মনের মতো সেও জিনিয়ার ফোনে দেখেছিলো তেহভীনকে। জুলিয়ার স্তব্দতা দেখে সায়মন বিরক্ত হলো। সুন্দর ছেলেমানুষ দেখলে এভাবে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস আছে জুলিয়ার।যেটা সে কোনকালে পরিবর্তন করবে না।কিন্তু আজ তার বিমূঢ়তা একদম তার মুখশ্রীতে ছড়িয়ে পড়েছে। তেহভীন সিলিভিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে জুলিয়ার দিকে চেয়ে শুধু একটা সালাম দিলো।এরপর পূনরায় সিলিভিয়ার দিকে দৃষ্টি ফেরালো। জুলিয়া সিলিভিয়ার পাশে এসে বসলো,আর সায়মন বসলো তেহভীনের পাশে। সিলিভিয়া জুলিয়ার পরিচয় তেহভীনের কাছে পেশ করলো, তেহভীন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললো,

— হ্যালো মিসেস জুলিয়া।

জুলিয়া উত্তর দিলো কিছু একটা। কিন্তু সেটা তার আর মনে থাকলো না। সিলিভিয়ার দিকে চেপে বসে নিভু স্বরে বলল,

— সিলি এই লোকটাকে আমি চিনি।

সিলিভিয়া হালকা হেসে বলল,

— আমিও চিনি ভাবি।আমার ফিউচার লাইফ পার্টনার ‘সে। দেখো পছন্দ হয়েছে কি-না।

জুলিয়া চোখ বড় বড় করে বললো,

— আরে অপছন্দের তো কিছুই নেই।
তোর জন্য তো একদম পারফেক্ট। আমার ভীষণ ভালো লাগছে শুনে।

— দোয়া রাখো শুধু।

স্টেশনে এসে পৌছালো সকাল আটটা পঞ্চাশে। নামতে নামতে নয়টা পেরিয়ে গেলো। সায়মন মাঝখানে তেহভীনকে নিয়ে কোথাও যেনো উধাও হয়ে যায়। ছেলের মতিগতি তে বেশ বিরক্ত হলে আকবর হাসান।দীর্ঘ রাতের ট্রেন জার্নি শেষে ক্যাচাল করতে ভালো লাগছেনা বিধায় চুপ মারলেন। এ ছেলে ফিরুক একা একা,এই উদ্দেশ্য সবাইকে জানিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলেন সবাইকে নিয়ে। বাড়ির কাছাকাছি এসে আকবার হাসার বাদে বাকি তিনজনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।রুজিনা,সিলিভিয়া, এবং জুলিয়াও। এখানে যে বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো আয়োজন হচ্ছে সেটা তারা জানতো না। ঝাঁক ঝমক লাইট এখন নেভানো।হয়তো রাতের দিকে আবারও জ্বালানো হবে। এদিকে ডেকোরেশনের লোক পেন্ডেল টাঙিয়ে এলাহি কাণ্ডকারখানা করে ফেললেন।কি অদ্ভুত!
তারপর মোটা শরীরের ধবধবে ফর্সা একজন মহিলাকে এগিয়ে আসতে দেখে সিলিভিয়া গিয়ে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।মহিলা মুমিনের মা।সিলিভিয়ার বড় মা। ভীষণ ভালো একজন মানুষ। সবাইকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে উনি হৈ হৈ শুরু করে দিলেন।আপায়ন,মিষ্টিমুখ সব। রুজিনা ইতিমধ্যে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে ফেললেন এখানের আয়োজনের ব্যাপারে। মহিলা মুখে কুলুপ এঁটে রেখে শুধু তাদের যত্নআত্তি করতেন লাগলেন।

(চলবে)

এই গল্পের সর্বোচ্চ শব্দসংখ্যা আজকের পর্ব। সবাই ক্ষমা করবেন দেরী হওয়ার জন্য।আসলে রমজান মাসের ব্যস্ততা সম্পর্কে সবাই অবগত তাই আমার বিষয়টা বুঝবেন।

[ রি-চ্যাক করা সম্ভব হয়নি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here