লাভ রেইন পর্ব-৪৪

0
1967

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৪৪

১০৯.

বাতানুকূল তাপমাত্রায় আচ্ছন্ন কামরায় ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকলো সিলিভিয়া।একে তো তেহভীনের অদ্ভুত আচরণ,তার উপর হাড় হীম করা স্পর্শ। এমন গভীরভাবে কখনো তেহভীন তাকে স্পর্শ করেনি।যারজন্য,আজ ভয়ে তটস্থ হতে হচ্ছে তাকে। সিলিভিয়ার ভয়,সংকোচ, জড়তা দেখে তেহভীন হাসতে হাসতে সিলিভিয়ার উপর থেকে সরে পাশে শুয়ে পড়লো। হাস্যরত অবস্থায় বলল,

— ওহ গড! সিলভার তোমার ট্রেম্বলিং দেখে আমি নিজেই ট্রেম্বলেড হয়ে পড়ছি। প্লিজ বি ইজি।

তেহভীন সরতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো সিলিভিয়া। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে চুল দু’হাতে মুঠোয় চেপে পেঁচাতে লাগলো। কপাল কুঁচকে ক্ষণিকের জন্য অন্যত্রে মিঁইয়ে যাওয়া মনকে সরল করে আলতো হেসে বাঁচার আকুতি জানালো। সিলিভিয়া দৃশ্যপটে তখনো তেহভীন অবাধ প্রেমময় স্পর্শের মোহে বদ্ধ। সিলিভিয়ার হাসিতে তাল মিলিয়ে প্রাণনাশক হাসির ফিরিয়ে দিলো তেহভীন।এই হাসির তোড়ে ডুবে গিয়ে তেহভীনকে ভুলাতে চাইলো সিলিভিয়া,বিচক্ষণ তেহভীন তৎক্ষনাৎ সিলিভিয়ার শার্টের কলারটা ধরে সজোরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। সিলিভিয়া ধপাস করে তেহভীনের বুকের উপর পড়লো। মিনিট পাঁচেক তারা মৌন থাকলো। অতঃপর একটা সময় সিলিভিয়া নিজেই আর বাঁধা দিলো না। সিলিভিয়ার আত্মসমর্পণ তেহভীনকে ভীষণ আনন্দিত করলো। এইভাবে তাদের এক হওয়াটা অসময়ের মনে হলেও,এ ছাড়া কোন উপায় নেই তেহভীনের। তার একটা সূক্ষ্ম কারণের ব্যাখ্যা এখন দিতে চায় না সে। মধ্যরাত্রির প্রহরেও সিলিভিয়ার তুলতুলে দেহখানা নিজের বাহুডোরে আঁটকে রাখলো তেহভীন। সুন্দর মুখটি থেকে চোখ সরানো দুষ্কর হয়ে পড়ে তেহভীনের কাছে।

চোখ মেলতেই হালকা কুসুম গরম পানির বাথটবে নিজেকে আবিষ্কার করলো সিলিভিয়া। ক্ষণিকটা চমকালো সে।এখানে অবধি নিজের পায়ে হেঁটে আসেনি তাতে কোন সন্দেহ নেই তার। কিন্তু এই সকালবেলা এমনটা না করলেও পারতো তেহভীন।রাতভরের যন্ত্রণা, জ্বালা কি কম পড়েছিলো,যারজন্য এখন পানিতে চুবিয়ে রেখেছে। সিলিভিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সমেত মাথা তুলে তাকালো। তার ঠিক ডানদিকে তেহভীন উদাম গায়ে দাঁড়ানো।পানিতে শাওয়ার জেল ঢালছে।
অসহ্য!অসভ্য!
সিলিভিয়াকে তাকাতে দেখে তেহভীন মৃদু হাসলো,ইনডেক্স ফিঙ্গার তুলে তার উদাম গায়ের দিকে তাক করে কিছু ছোট ছোট লালচে দাগ দেখালো। সিলিভিয়া প্রথমে বুঝতে পারে নি,যখন বুঝলো তখন করে পানির মধ্যে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। অত্যন্ত অপরাধী কন্ঠে বলল,

— আ’ই গেভ দ্যিজ স্টেইন?

তেহভীন মুখ করুণ করে মাথা নাড়ালো। তেহভীনের মাথা নাড়ানোর ভঙ্গি দেখে সিলিভিয়ার ধম ফেটে হাসি আসতে চাইলো, একটুর জন্য স্কটল্যান্ডের ব্রিটিশ স্কটিশ টিনএজার বয়দের মতো দেখালো তেহভীনের মুখটা। কিউট!” আনমনে বলল সিলিভিয়া।
একটু পর সিলিভিয়া মুখে হাসি টেনে এনে বলল,

—- ট্যিট ফর ট্যাট!

তেহভীন ওষ্ঠকোণে হাসির চটা বজায় রেখে বাথটবে নেমে আসলো। লম্বাটে পেশিবহুল হাতটা বাড়িয়ে পাশের সেন্ট্রাল টেবিল থেকে একটা মাঝারি সাইজের মিরর হাতে নিলো। সিলিভিয়া তখন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।তেহভীন মিররটা সিলিভিয়ার দিকে বাড়ি দিতেই সিলিভিয়া হাতে নিয়ে নিলো। তেহভীনের চোখের দৃষ্টি একদম শীতল,আর চোয়ালে দূরন্ত হাসি। সিলিভিয়ার হাতে মিররটা দিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে রেখে বলল,

— চ্যাক’স ফর স্কার্স অন ইউর বডি!

এ পর্যায়ে সিলিভিয়ার হাসি উধাও হয়ে গেলো। তেহভীনের সাথে মজা করতে গিয়ে যে কথাটা বলে ফেলেছিলো,সেটা এখন নিজের দিকে ফিরে এলো।ব্যাপারটা এমন যে, অপর ব্যাক্তির উপর তীর ছুঁড়তে গিয়ে দেখলো তীরটা তার দিকেই ফিরে এসেছে।সিলিভিয়া ভাবলো তেহভীনের কথার প্রত্যুত্তর করবে না।কিন্তু তেহভীনের ঠোঁটের কোণে ল্যাপ্টে থাকা বিজয়ী হাসিটা তা হতে দিলো না। মুহূর্তে জ্বলে উঠলো মনটা। মুখ ফসকে বলে ফেললো,

— তুমিই চ্যাক করো,দাগ তো তুমি দিয়েছো।

তেহভীন সশব্দে হেসে উঠলো সিলিভিয়ার কথায়। সিলিভিয়ার হাত ধরে কাছ টেনে এনে জড়িয়ে ধরে বলল,

— আমি চ্যাক করলে তুমি আর আমার সামনে আসবে?োবাই দ্যা ওয়ে এতোটাও স্যাভেজ নয় সিলভার।

— জানি!

— সত্যিই জানো?

— অফকোর্স! সেজন্যই তো বলেছি।

— হাহ! শুনে খুশী হলাম।

সিলিভিয়া কিছু বলতে যাবে,তার আগেই তেহভীনের ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা পাশেই ছিলো,হাতে নিয়ে দেখলো তামান্না ফোন দিয়েছে। ভ্রুঁ কুঁচকে ফোনটা রিসিভ করলো তেহভীন। দু’ভাই বোনের মধ্যে কথোপকথন চলছে।আর সিলিভিয়ার মনে অন্য একটা ভাবনা এসে হানা দিলো হঠাৎ। তানজিদ আর তেহভীনের চেহারা মিল রয়েছে। তাদের বাবার সাথে,কিন্তু তামান্না? সে কার মতো? নিঃসন্দেহে সে অনেক সুন্দরী,গায়ের রঙ একদম তেহভীনের মতো। কিন্তু চেহারাটা কারো সাথে মিলেনি।তায়্যিবার সাথেও নয়। যাকগে, এমনও হতে পারে তামান্না বংশের অন্য কোন ব্যাক্তির চেনারা পেয়েছে। এমনটা মনে আসতেই সিলিভিয়া নিজের মস্তিষ্কে আসা পূর্বের ভাবনায় ইতি টানলো।

১১০.

হাতে ছুটি মাত্র একদিন।আজ মধ্যরাতের ফ্লাইটে লাস ভেগাস শহর ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবে তেহভীন-সিলিভিয়া। সিলিভিয়াকে তার ফ্ল্যাটে রেখে,তারপর তেহভীন ছুটবে এডিনবার্গে।সেখান থেকে নিজের কাজে ফিরবে। তার আগে আজকের দিনটা এখান ঘুরাফেরা করবে।
উপত্যকা মহানগর অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত এবং মোজাভে মরুভূমির অঞ্চলের একটি বৃহত্তর শহর ‘লাস ভেগাস।’ খ্যাতিযুক্ত প্রধান অবসর বিনোদনের শহর।জুয়া,কেনাকাটা, চমৎকার ভোজন,বিনোদন এবং নৈশ্যপ্রমোদের জন্য পরিচিত লাস ভেগাস শহর। এককথায় পাপের শহর বলা হয় এই শহরটিকে। সবরকমের পাপ এখানে বিনোদনের খোরাক।
শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে সিলিভিয়াকে কথাগুলো বলল তেহভীন।সিলিভিয়ার থেকে উত্তর না পেয়ে মিররের দিকে থেকে ফিরে পেছনে তাকালো। সিলিভিয়া তখন অন্যমনস্ক হয়ে তেহভীনের কথাগুলো নিয়ে ভাবছিলো।অবচেতন মস্তিষ্ক একটা প্রশ্ন করলো সিলিভিয়াকে,তেহভীন তাকালেই চোখাচোখি হয়।তৎক্ষনাৎ সিলিভিয়া বলল,

—- কি ধরনের পাপ হয় এখানে?

তেহভীন এগিয়ে এসে সিলিভিয়ার পাশে বসে বলল,

—- এভ্রিথিং!

—- তাহলে আমরা এখানে এসেছি কেন?
আমরা তো এভিল নয়,আমাদের শুরুটা ভালো জায়গায় অথবা নিজেদের ফ্ল্যাটেই কেন হয়নি।এখানেই কেন?

— গুড কুয়েশ্চন!

— আনসার মি!

তেহভীন সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল,

— বিশেষ কোন কারণ নেই সিলভার।তবে বিশেষ মানুষের জন্যই বিশেষ জায়গায় শুরুটা করা।আমি বেঁচে থাকলে পৃথিবীর আরো অনেক সুন্দরতম জায়গায় তোমাকে নিয়ে যাবো। সময় কম হওয়াতে আমি এই স্যুইটে উঠেছি।আর কোন সন্দেহ?

সিলিভিয়া চট করে চমকে উঠলো। অসহায় মুখ তুলে তেহভীনের দিকে তাকালো।আশ্চর্য কিসিমের মানুষ।
“পাপের নগরীতে আসার কথাটা শুনেই হঠাৎ সিলিভিয়ার মনে হয়েছিলো তারা তো কোন পাপ করেনি, তাহলে এখানেই কেন আসতে হলো?
তেহভীনের শেষ কথাটা শুনে নিজের গাধামিটা পরিমাণ করতে পারলো সিলিভিয়া।শৌখিন মানুষদের একটা মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে,যেমনটা তেহভীনেরও আছে।স্মিত হেসে তেহভীনকে বলল,

—- সন্দেহ নয়।এমনিই জিজ্ঞেস করেছি।

— বুঝেছি।

— কি বুঝেছো?

— কিছু না।চলো শপিং এ যেতে হবে।
বাট কোন বার,ক্যাসিনোতে প্রবেশ করবো না।
রিমেম্বার!

—- এটা এভাবে বলার কি আছে।আমি এমনিতেই ইন ফরবিডেন প্লেসে প্রবেশ করবো না।

তেহভীন বলল,

— এখানকার মানুষের আচরণ এমন যে,দেখে মনে তাদের থেকে সুখী মানুষ কেউ নেই।তাদের তৃপ্তিদায়ক হাসি অন্যদেরও ফ্যাসিনেটস করে।সো,বি খেয়ারফুল৷

সিলিভিয়ার তেহভীনের কথার প্রত্যুত্তর না করে মাথা নাড়ালো।সে এসব বিনোদন মূলক জায়গা থেকে দূরে থাকবে। এড়িয়ে যাবে,প্রবেশের আগ্রহ করবে না। কিন্তু…

‘ডাউনটাউন সামারলিন’ মলে এসে সিলিভিয়া চোখ ধাধানো সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হয়। মলের একপাশে একদম কর্ণারে রাউন্ড শেইপে একধরণের একটা শপ।এটাকে ছোটখাটো বারও বলা যায়,মূলত একজন বার-টেন্ডার বিভিন্ন ধরণের পানীয় নেশাদ্রব্যের মিশ্রণে একটি জুস তৈরি করে। দেখতে যেমন লোভনীয়,আকর্ষণীয়।খেতেও তেমন প্রশংসনীয় জুসটি। জুসটির নাম ‘রেইনবো জুস’। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে এসেছে সিলিভিয়ার, তেহভীন ঠাণ্ডা পানির বোতল কিনে দিয়েছে সিলিভিয়াকে,তাতেও সিলিভিয়ার গলার ভিজলো না।দূর থেকে লোভনীয় রেইবো জুস দেখে পান করার লোভটা দমাতে পারছিলো না। অতঃপর কিছু পার্সনাল জিনিস কেনার নাম করে সিলিভিয়া ছুট লাগালো রেইনবো জুস পান করার উদ্দেশ্যে। চোখের পলকেই সিলিভিয়ার উধাও হয়ে যাওয়াতে ভড়কে যায় তেহভীন। আশপাশ তাকিয়েও সিলিভিয়ার হদিস মিললো না। এদিক ওদিকে চোখ বুলিয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে সিলিভিয়াকে রেইনবো জুস পান করতে দেখে তেহভীন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বারণ করার পরও সিলিভিয়া তার কথা শুনেনি দেখে প্রচুর রাগ উঠলো তেহভীনের। দ্রুতপায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সে।তেহভীনকে এগিয়ে আসতে দেখে হন্তদন্ত করে গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে সর্বশেষ পানীয় টুকু গিলে ফেললো।খেতেই স্বাদযুক্ত হলেও একটা ঝাঁঝাঁলো ভাব আছে জুসটিতে। সাথে সাথে মনে হতে লাগলো মাথার উপর কেউ পাথর তুলে দিয়েছে। পাশের বারটেন্ডারের লোকটি উদ্ভটভাবে শব্দ করতে লাগলো সিলিভিয়ার উদ্দেশ্যে।যা সিলিভিয়ার কর্ণভেদ করলো না। তেহভীন এসে দেখলো একজন লোক এবং বারটেন্ডার লোকটি দুজনে মিলে কেমন রাগান্বিত ভাবে শাসাচ্ছে সিলিভিয়াকে।তেহভীন প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে হাত উঁচিয়ে রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। তেহভীনকে ভয়ানক দৃষ্টি দেখে লোক দুটি থেমে গেলো। তেহভীন সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো তাদের,

— হোয়াট এ প্রবলেম?

বারটেন্ডার লোকটি সিলিভিয়ার পাশে দাঁড়ানো লোকটির দিকে ইশারায় দেখিয়ে বলে উঠলো,

— মেয়েটি এই লোকটির জন্য বানানো স্পেশাল জুসটি পান করে ফেলেছে।আমি উনাকে ওয়েট করতে বলেছিলাম নতুন জুস তৈরি করার জন্য,শুনেনি। এটা উনার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।হি নিড প্রপার ট্রিটমেন্ট।

তেহভীন তীক্ষ্ণ চোখে সিলিভিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে চেয়ে কার্ড বের করে জুসটির বিল পে করতে করতে অত্যন্ত রুষ্ট, গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

— কি কি ছিলো ড্রিংকসে?

লোকটি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

— থ্রী ইউনিট জিন,থ্রী ইউনিট স্প্রিটি এন্ড থ্রী ইউনিট ভোদকা এন্ড হুইস্কি।ইট’স ভেরী হার্মফুল ফর দ্যিজ গার্ল।

তেহভীন কার্ডটা হাতে নিয়ে, অন্যহাতে সিলিভিয়ার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বেরিয়ে পড়লো মল থেকে।এখানে ঝামেলা করার চেয়ে সিলিভিয়াকে সুস্থ করাটা বেশি জরুরি,কারণ লোকটিকে খুঁজে নিতে একটুও সময় লাগবে না তার।সিলিভিয়া অস্পষ্ট স্বরে কিছু বলছিলো। আসার সময় মাঝপথে সিলিভিয়া দাঁড়িয়ে যায় কয়েকবার,শেষে সজোরে ধমক দিয়ে সিলিভিয়াকে নিয়ে পূনরায় হাঁটতে লাগলো তেহভীন।রাগের সীমা মাত্রাতিরিক্ত হলেও,অত্যন্ত স্বাভাবিক রূপে শান্ত থাকলো তেহভীন।রাগটা কাকে দেখাবে সে? অচেতন সিলিভিয়াকে?নাকি ওই অজ্ঞাত লোকটিকে। তার-ই মিস্টেক।আগেই সিলিভিয়াকে জানানো উচিত ছিলো,জুসটি নেশাদ্রব্যহীন বানানো অসম্ভব, আর অতিরিক্ত নেশাদায়ক পানীয় তে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।প্রথমবারে মাত্রাটা বেশি হওয়াতে সিলিভিয়ার উপরেই ঝুঁকিটা বেশি। উফ!
লোকটি বিশেষ জুসটি যে কারো ক্ষতি করার জন্য বানিয়ে নিয়েছিলো সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না তেহভীনে। প্রচণ্ড ক্রোধে-চিন্তায় মাথা ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম। আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জুসের আসল কাজটা শুরু হয়ে যায়। সিলিভিয়া মাঝপথে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়,নিজের হাতটা একটানে ছাড়িয়ে নিয়ে তেহভীনের দিকে চেয়ে বলল,

— হু আর ইউ?

তেহভীন আশেপাশে ব্যস্ত মানুষদের দিকে চেয়ে বলল,

— আ’ম তেহভীন।ইউর লাভ!

কথাটা শুনে কপাল কুঁচকালো সিলিভিয়া। চলমান সন্ধ্যায়,অভিজাত্য দেশের লোকালয়ের মাঝে কথাটি
যেনো মস্তিষ্কে প্রভাব পড়লো না।নির্বিকার চেহারায় তাকিয়ে থেকে আবারও বলল,

—- কে তুমি। বার বার আমার হাত ধরছো কেন?

তেহভীন আশেপাশে পূনরায় চেয়ে হুট করে সিলিভিয়ার কাছে এগিয়ে এসে,গলার পাশ থেকে চুল সরিয়ে অত্যন্ত রূঢ়ভাবে কামড় বসিয়ে দিলো। তৎক্ষনাৎ ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো সিলিভিয়া। অস্পষ্ট চোখে একজোড়া রক্তিম দৃষ্টি দেখেও মুখ দিয়ে কথা উচ্চারণ করতে পারলো না।ব্যাথায় কেমন যেনো শরীর নেতিয়ে এলো তার। তেহভীন সময় নষ্ট না করে তখনি সিলিভিয়াকে কোলে তুলে নিলো। মধ্যরাতে ফ্ল্যাইট তাদের।আর সিলিভিয়া এমন একটা দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে সেটা কল্পনাও করে নি তেহভীন।এখন তেহভীনের মূল লক্ষ্য সিলিভিয়াকে সুস্থ করা।নাহলে ধীরে ধীরে সে সব ভুলে যাবে। এতোটা ক্ষতি কেউ কারো করতে পারে জানা ছিলো না তেহভীনের।না জানি কার উপরে হেনে আসা বিপদ তার সিলিভিয়ার উপর এসে পড়লো। সিলিভিয়ার ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে রাখা চেহারা দেখে হঠাৎ করে তেহভীনের গম্ভীর পুরুষালী দৃষ্টি ফেঁটে দুইফোঁটা অস্রু বেরিয়ে এলো।

(চলবে)

দুঃখীত দেরী হওয়ার জন্য।সবাই রেসপন্স করবেন আশা করি।৩০০+ রিয়েক্ট চাই। 🥺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here