লীলাবালি🌺 পর্ব-৪৪

0
1234

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৪
আফনান লারা
.
কুসুম মুখে হাসি ফুটিয়ে ব্যাগ গোছাতে মন দিয়েছে।অর্ণব এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়েছিল।এরকম কনকনে শীতের মাঝে ফ্যান চালিয়ে বসে আছে সে।কুসুম গোছানোর সময় কালীন বারবার দুহাত ঢাকছে শাড়ীর আঁচল দিয়ে।অর্ণব ওকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে কোনো রিয়েক্ট করেনি।
কুসুম তার একটা ওড়না বের করেছিল সেটা গুছিয়ে রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে থাকলো সেখানে।

-‘শীত করে?’

কুসুম মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।অর্ণব আবার বললো,’ফ্যানটা বন্ধ করার অনুমতি দিতে পারি তবে তুমি আমায় একটা কথার জবাব দেবে।সেটা হলো, তুমি শেষে যে প্রশ্নটা আমায় করেছিলে সেটা দ্বারা বুঝিয়েছো আমি তোমায় পছন্দ করি বলে তোমার মুখে বিরহের গান শুনে তোমাকে হারানোর ভয় জেগেছে আমার মনে?এটা বোঝাতে চাইছো তাইতো?’

কুসুম জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁটটা ভিজিয়ে ঢোক গিললো।জবাবে কিছুই বলছেনা শুধু ফ্যালফ্যাল করে অর্ণবকে দেখছে।অর্ণব বিছানায় আবারও শুয়ে পড়ে শোয়া অবস্থায় ওর দিকে ফিরে বললো,’জবাবটা আমি জানি।হ্যাঁ বা না শুনতে চেয়েছিলাম।না বলোনি তার মানে উত্তরটা হ্যাঁ হবে।তবে জেনে রাখো, আমি তোমায় পছন্দ করিনা।ছোট মাথায় বিশাল অনুভূতি ঢোকানোর চেষ্টা করবেনা মিছেমিছি।তুমি কেবল আমার দায়িত্ব। জানিনা কখনও তোমায় মেনে নিতে পারবো কিনা।তবে তোমার দায়িত্বে আমি কিপাটমো করবোনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকো’

কুসুম কিছুই বললোনা শুধু চেয়ে রইলো।অর্ণব মাথা তুলে আবার বললো,’কাল দুপুর বারোটার পর এই হোটেলের রুমটা নিয়েছিলাম।আজ বারোটা অবধি টাইম আছে।আরেকটু ঘুমিয়ে নাও।টাকা উঠাতে হবে মাশুলে। ‘

কুসুম এবার কাছে এসে বললো,’এখন যদি না ঘুমোই আমাদের লস হবে?’

-‘লস বলতে মনে হবে টাকা অর্ধেক পানিতে গিয়েছিল।তাই টাকার উশুল ওঠা অবধি শুয়ে থাকবো’

অর্ণব চোখ বুজে ঘুমাবার চেষ্টা করলো।
কুসুম হালকা করে দরজা খুলে করিডোরে পা রেখেছে।শূন্য করিডোর।এক পা, এক পা করে শেষ প্রান্তে এসে হাজির সে।
মোটা থাই গ্লাসের দরজা।ওপারে কেউ নেই।অথচ এখানে ম্যানেজার থাকার কথা।কাঁচ দিয়ে ঘুরঘুর করে কুসুম দেখছিল ওপারে কি কি আছে।হঠাৎ সেখানে নিচে বসে থাকা ওয়াচম্যান পেছনে ফিরে তাকাতেই কুসুম ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলো।লোকটা কত কি বললো কিন্তু কোনো আওয়াজ আসলোনা কানে।এদিকে কুসুম ভয়ে এক দৌড় মেরেছে।রুমে এসে দরজা লাগিয়ে অর্ণবের দিকে তাকালো সে।অর্ণব ঘুমে মনে হয়।
-‘এই লোকটা এত ঘুমাতে পারে!অথচ আমার কোনো ঘুম নেই, রাত ছাড়া ঘুমই আসেনা।উফ! এই মাথার যন্ত্রনায় একদিন হয়ত মরে যাবো!
একটা কথা বলবো!না থাক।
না থাক একবার বলেই দেখি।আচ্ছা শুনুন।বেলা বারোটা বাজতে কি খুব দেরি?আসলে আমার খিধে পেয়েছে।’

অর্ণব ঘুমায়নি।এমনিতে চোখ বুজে ছিল।কুুসুমের কথা শুনে উঠে বসে বললো ‘তোমার কি হয়েছে বলোতো?আগে তো কিছু খেতে পারতেনা।আর এখন তোমার শুধু খিধে পায়?এখন বমি পায়না?’

-‘পায় তবে আপনার মা বললো বেশি বেশি খেতে, তাহলে রুপ ধরে রাখা যাবে’

অর্ণব ফিক করে হেসে দিলো।হাসিটা একটু খানি থামিয়ে বললো,’তোমার রুপ এখন আছে বলে তোমার মনে হয়?’

-“জানিনা’

-“আমার কাছে মনে হয় বাঁশ গোড়া থেকে কেটে বারো মাস রোদে দিলে সাদা হয়ে যায় সেই রঙের একটা বাঁশ তার মধ্যে সিদ্ধ করা নুডলস এক প্যাকেট বসিয়ে দেওয়া।নুডুলসে আবার রামেনের সস ঢালা।লাল লাল কালো কালো’

কুসুম মুচকি হেসে বললো,’আমাকে দেখে আপনার খাবারের দ্রব্য মনে হয় বুঝি?এত ভালো লাগে?’

অর্ণব এবার বিরক্ত দেখিয়ে বললো,’মোটেও না।আচ্ছা ওসব ভুলে যাও।ঠিক আছে তুমি রুপবতী।এই রুপ ধরে রাখতে ঠিকমত খওয়া দাওয়া করো।মায়ের কথাই উপরে থাকুক।
ভাল কথা মনে পড়লো এতক্ষণে।তোমার রিপোর্ট আনোনি তাইনা?’

কুসুম এক ছুটে ব্যাগের কাছে গিয়ে হাতিয়ে হাতিয়ে ভেতর থেকে একটা রিপোর্ট খুঁজে বের করে এনে অর্ণবের হাতে দিলো।অর্ণব নড়েচড়ে রিপোর্টটা মেলে ধরেছে।বেশ অনেকক্ষণ দেখে বললো,’ঐ ডাক্তারকে বলেছিলাম প্রেগন্যান্সি টেস্ট যেন না দেয়।তাও দিছে।যাই হোক নেগেটিভ আসছে।আর বাকিগুলোর আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।আমি হলাম মানবিকের ছাত্র।সাইন্সকে ভয় পেতাম এখন আমি এসব কি করে বুঝি?তাও দেখে মনে হয় আল্ট্রাসনোগ্রাফি।তো ডাক্তারকে এই রিপোর্ট দেখাতে হবে।প্রেসক্রিপশনের শেষে যে টেস্ট দিয়েছিল সেটা তো করায়নি,খুঁজে পেলাম না।কেন করায়নি বুঝলাম না।ডাক্তারকে ফোন করতে হবে’

কুসুম আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়েছিল।ওটাতে হাত রেখে বললো,’এটা আমি আরও আগে একবার কোথায় যেন দেখেছিলাম।ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।আমাদের পাশের বাড়ির রজিনা গর্ভবতী হবার পর ওকে ডাক্তার এই পরীক্ষা দিয়েছিল।তখন এমনটা দেখেছি।কিন্তু আমি তো!!’

-“থাক।তোমাকে আর গবেষণা করতে হবেনা।সব গুছিয়ে নিলে চলো আমরা যাই।আমার আর টাকা উঠিয়ে কাজ নেই’

দুজনে এবার সকালের নাস্তা সারতে হোটেলের নিচ তলায় চলে আসলো।ততক্ষণে শহরে মানুষের ভীড় বেড়ে আসছে ধীরে ধীরে।বাচ্চাদের স্কুল ড্রেস পরিয়ে,পিঠে ব্যাগের বোঝা চাপিয়ে সঙ্গে তাদের বাবা অথবা মা ‘রা ছুটে চলেছেন গন্তব্যের দিকে।
অর্ণব সেই দৃশ্য দেখে বললো,’জানো সকালবেলায় স্কুলে যেতে হয় কেন?কারণ হলো বাচ্চাদের সকালে ওঠার অভ্যাস তৈরি করার জন্য’

কুসুম কথার বিরোধীতা করে বললো,’আমি যখন ভারতে ছিলাম সেসময়ে দেখতাম দুপুরের দিকে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়তে যায়।তাহলে তাদের কি সকালে ওঠা শেখানো হয়না?

-“ওটাকে বলে ডে শিফট।অর্থাৎ দিবা।মানে স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি হয়ে গেলে শ্রেণী দুভাগ হয়ে যায়।এক শ্রেণী ভোরে আর এক শ্রেণী বেলায়।যদি এত বেশি না হতো তাহলে সকাল থেকেই ক্লাস শুরু হতো’

কুসুম দুহাত গালে রেখে একটু ঝুঁকে আস্তে করে বললো,’আচ্ছা আমাকে লেখাপড়া শেখাবেন?মানে ধরুন লিখতে পারবো সেরকম’

-“আমার আর কাজ নেই?তোমাকে সামান্য কথা বুঝাতে আমার দিন শেষ হয় এখন আবার পড়ালেখা শেখাবো?পারবোনা।’

ধমকমাখা জবাব শুনে কুসুম মুখ কালো করে বসে রইলো।
—-
জুথি সকাল সকাল ছাদে এসে আকাশ দেখছিল।

-‘মৃদুল ভাইয়ার মাথা প্রচণ্ড রকম ভাবে ঘুরে গেছে।একটা ছেলেকে রুপ আর মন কিছু দিয়ে ধরে রাখতে পারলাম না আর এই ছেলেটা আমার কোনোকিছুকেই তোয়াক্কা না করে আমার জন্য পাগল হয়ে বসে আছে।
সে কি বোঝেনা আমি এসবে ইন্টারেস্টটেড না?
কতটা পাগল হলে ইলিশ মাছের কাঁটা বেছে দেয় একটা মেয়েকে।এই কথা আমি যাকে বলবো সে বলবে ছেলেটা তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।অথচ একই প্রশ্ন আমি যখন তাকে করলাম।তিনি জবাব দিলেন,’প্রেম ভালো জিনিস।হাবুডুবু খাওয়া আরও ভাল জিনিস।না ডুবলেই হইলো।তাছাড়া মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্নীয়স্বজন ও তো কাঁটা বেছে দেয়।তাদের প্রেমেও পড়া যায় এই আর এমন কি”

আমি বলেছি এই প্রেম সেই প্রেম না।জবাবে তিনি আবার বললেন,’আমাকে প্রেম শেখাচ্ছেন ম্যাডাম?আমি প্রেমে এমবিবিএস করেছি’

আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম মানুষ প্রেমে পিএইচডি করে শুনে ছিলাম।এমবিবিএস করে সেটা এই প্রথম শুনলাম।এরপর তিনি যেতে যেতে শুধু বলে দিলেন,’মৃদুলের সাথে থাকলে আরও কত কি শুনতেন।আফসোস জ্ঞানের বোঝা ভারী হবার আগেই সাদা চামড়ার দেশে পাড়ি দিবেন।আপনাকে আর কিছু বলছিনা’

আমি চলে যাব বলে যে উনার খুব জ্বলছে তা বেশ বুঝতে পেরেছি।এবার হয়ত সামনা সামনি বলতে হবে যেন উনি আমার থেকে দূরে থাকেন।এমনটা করলে আমার থেকে ওনাকে সরাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।আমি চাইনা কাউকে মিথ্যা মায়ায় জড়াতে।আজই সময় করে একবার কল করে বলে দিব যেন আমাকে আর কল না করে,দেখা না করে,মেসেজ না করে।এত কেয়ার করতে হবেনা।আমি ঠিক আছি।আমি শক্ত মজবুত।
বোকাটার মুখের দিকে তাকালে কড়া কথা মুখ দিয়ে বের হয় না, সেটাই যত নষ্টের গোড়া।এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন কে.জি তে পড়া শিশু।এটাও মানা করে দেব।বলবো আমার দিকে তাকালো ম্যাচিউর ভাব নিয়ে তাকাবেন।যেমন আপনার বয়স তেমন বিহেভ করবেন।’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here