লীলাবালি🌺 পর্ব-৪৫

0
1224

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৫
আফনান লারা
.
সকালের নাস্তা খাওয়ার পর্বটা শেষ করে শুরু হলো দুজনের পথচলা।সিএনজি নিতে হলে ওপাশে যেতে হবে রাস্তা পার করে।এতক্ষণ অর্ণব আগে আগে আর কুুসম পিছে পিছে আসছিল কিন্তু এখন তাদের হাত ধরা বড়ই জরুরি হয়ে দাঁড়ালো।
কুসুম একবার ডানে তাকায় আবার বামে।অর্ণব পাশেই দাঁড়িয়েছিল।রাস্তাটা ফাঁকা হতেই খপ করে কুুসুমের হাতটা সে ধরে নিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।এপাশে এসে হাত না ছেড়েই একটা সিএনজি আলা মামার সঙ্গে দাম নিয়ে দরকষাকষি শুরু করলো সে।কুসুম তার হাতটার দিকে তাকিয়ে আছে।অর্ণবের হাতের পশমগুলো ওর হাতে লেগে কেমন একটা অনুভূতি হয়।সুড়সুড়ি না তবে সেরকম।যেন তুলোর ছোঁয়া।কুসুমের মুখে হাসি ফুটলো।অর্ণব অন্য সিনএনজির কাছে গিয়ে দামাদামি করে শেষে ওটাতে উঠবে বলে ঠিক করে কুুসুমের দিকে চেয়ে বললো উঠতে।কুুসুম হাতটা উপরে তুলে বললো,’না ছাড়লে উঠবো কি করে?’

অর্ণব যেন খুব লজ্জা পেলো।সাথে সাথে হাত ছেড়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে।কুসুম ভেতরে গিয়ে বসলো তারপর সে নিজেও বসেছে।
কুসুম হঠাৎ অর্ণবের দিকে ফিরে বললো,’আচ্ছা আমরা যেখানে থাকতে যাব সেখানে রান্নাঘর থাকবে?হাঁড়ি পাতিল?’

অর্ণবের মুখটা গেলো কালো হয়ে।গালে হাত দিয়ে বললো,’আমিও তো ভেবে দেখলাম না।সব রুম তো থাকবে কিন্তু আসবাবপত্র কই পাবো?কি বিপদ!বাবা আমাকে সবসময় বিপদে ফেলে’

কুসুম নিচের ঠোঁটটা উল্টো করে বললো,’কলা পাতায় খেতে পারেন? ভাত?’

অর্ণব কপাল কুঁচকে বললো,’ঢাকায় কলাগাছ কই পাবে তুমি?অনেক খুঁজে তারপর পাওয়া যাবে’

কুসুম আর কিছুই বললোনা।সে খেয়াল করেছে, যাই বলছে তাতেই অর্ণব ভেংচি মারছে।ওর মনে হয় মাথা অনেক গরম।কি আর করার।চুপ থাকাই শ্রেয়।
মহাখালীতে এসে মৃদুলকে কয়েকবার কল করেও পেলোনা অর্ণব।এদিকে যে এড্রেসে তারা এসেছে সেখানে একসাথে তিনটা দোতলা দালান, একই রঙের।কোনটা মৃদুলদের সেটাই মাথায় ঢুকতেছেনা।বাড়িগুলোর নাম মালিকের নামে না।
একটার নাম “রঙিন তরী”,আরেকটার নাম”নির্মলতা ”
অন্যটির নাম “টারশিয়ারী”
প্রথম দুটো ভাল আর স্বাভাবিক নাম মনে হলেও শেষেরটা শুনে অর্ণবের মনে হলো সে খিস্টাব্দ পূর্বে চলে গেছে।
যে পথে তারা দাঁড়িয়ে ছিল ঐ পথ দিয়ে খুব বেশি মানুষের আনাগোনা তাও কিন্তু না।
তবে আছে কিঞ্চিত। সেসময়ে একজন বয়স্ক লোক হাতে লাঠি নিয়ে যাচ্ছিলেন ওদের সামনে দিয়ে।গায়ে কালো পাঞ্জাবি।গলা থেকে পা অবধি লম্বা।মাথায় কচ্ছপ টুপি।হাতের লাঠিটা ঈষৎ কালো তবে যেন ঝকঝক চকচক করে।
অর্ণব তাকেই থামলো।প্রথমে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো এখানে মৃদুলদের বাসা কোনটি?’

বুড়ো লোকটা ওদের দুজনকে ভালো করে একবার দেখে নিয়ে বললেন,’তোমরা দুজন বিবাহিত? নাকি একজন বড় ভাই আরেকজন ছোট বোন?বোনকে হাই স্কুলে ভর্তি করাতে এসেছো?’

অর্ণব হালকা কেশে বললো,’নাহ।ও আমার স্ত্রী। আপনি মৃদুলদের বাসা চিনেন?’

-“এখানে তো মৃদুল থাকেনা।সে তো ধানমন্ডি থাকে।এখানে থাকে ওর বাবা,ওর মায়ের সঙ্গে’

-“হুম সেটাই।আসলে মৃদুলের বাবার নাম ভুলে গেছি তো।আপনি চেনেন বাসাটা?দয়া করে একটু দেখিয়ে দেবেন?’

লোকটা চশমা ঠিক করে বললেন,’মৃদুলের বাবার নাম সুলতান শাহ’

অর্ণব ব্রু কুঁচকে বললো,’ওহ আচ্ছা তাহলে নিশ্চয় অদ্ভুত নামের বাসাটাই উনার’

-“এই ছেলে দাঁড়াও।অদ্ভুত কেন বললে?তোমার কাছে কোন দিক দিয়ে অদ্ভুত লাগে?
বলবা এক্সট্রা অর্ডিনারি।মানে হলো অসাধারণ’

কুসুম মাথা বাঁকিয়ে বললো,’বাসাটা আপনার বুঝি?’

-“ইয়েস মা।এই তো ধরে ফেলেছো।অথচ তোমার গাধা বুড়ো স্বামী ধরতে পারেনি।যাই হোক তোমরা যাও বাসার দিকে।আমি একটু দোকানে যাচ্ছি। ইশবগুলের ভুষি শেষ হয়ে গেলো কিনা’

অর্ণব হা করে লোকটার চলে যাওয়া দেখলো।কুসুম দাঁত কেলিয়ে বললো,’বুঝলেন কি করে যে এই মৃদুল ভাইয়ের বাসা ওটা?’

-“টারশিয়ারি কিনা! সাথে আবার সুলতান শাহ”
—-

দুজনে বাসার সামনে এসেছে এবার।অর্ণব দরজার পাশের কলিংবেলে কয়েকবার ক্লিক করার পর একটা যুবতী মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে বললো,’কাকে চাই?’

-“মৃদুলের ফ্রেন্ড আমি।’

-“ওহ আপনারা!আসেন বসেন’

মেয়েটা বসতে বলে চলে গেলো।অর্ণব কুুসুমকে নিয়ে সোফায় বসেছে।মেয়েটা কিছুক্ষন পর শরবত আর বিসকুটের ট্রে নিয়ে এসে ওদের সামনে রেখে আবার চলে গেলো।
সুলতান শাহের আসার নাম নেই।বেশ অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর তিনি আসলেন।অর্ণব কুুসুমের সামনে একটা চেয়ারে বসলেন তিনি।
তিনি আসার পরপরই মেয়েটা চায়ের কাপ দিয়ে গেলো।
এমন কি তিনি আসার পর তার স্ত্রী মিজুয়ানা ও এসে হাজির।মানে দেখে মনে হলো সবাই সুলতান শাহের আসার অপেক্ষা করছিল।
উনি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে অর্ণব আর কুসুমের দিকে একবার তাকিয়ে সেই মেয়েটার দিকে তাকালেন যে চা দিয়ে গেছিল তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কাপটা রেখে বললেন,’তোমরা এখন চা খেও না।জাহান??চিনি তো দাওনি মনে হয়’

জাহান নামের মেয়েটা জিভে কামড় দিয়ে রান্নাঘর থেকে চিনির বোয়ামটা নিয়ে ছুটে এসে সব কাপে চিনি দিতে লাগলো।অর্ণব চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করলো উনি জানলেন কি করে চিনি দেওয়া হয়নি।

-‘এই মেয়েটা আমাদের বাসায় কাজ করে দীর্ঘ সাত বছর ধরে।তার সব ঠিক আছে তবে কাজল দেওয়ার অনেক শখ তার।এই কাজল দিতে যায় সেসময়ে যখন তার চা বানানোর সময় থাকে।তো কাজল ঠিকঠাক দিয়ে ফেললেও জীবনেও সে চিনি দেয়না চায়ে।’

কুসুম ফিক করে হেসে ফেললো।অর্ণব ওর হাত খাঁমছে ধরে চুপ থাকতে বললো।
মিজুয়ানা রহিম চুপ করে কুসুমকে দেখছিলেন শুধু।
চায়ে চুমুক দিয়ে সুলতান বললেন,’উপরের তলাটাও আমাদেরই বাড়ি।মৃদুলের নামে সেটা।কত শখ করে সাজিয়েছি সব।কিন্তু একদিন সে আমার কথার অবাধ্য হয়ে চলে গেলো মেসে।ঢাকাতে।
তারপর ওর সাথে জেদ ধরে আমি বাসা ভাড়ার দেওয়া হবে লেখা সেই সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছিলাম বাড়ির সামনের মেহগনি গাছটায়।
কিমতু আফসোস, এখন পর্যন্ত আমার মনমত কোনো ভাঁড়া টিয়া পেলাম না।বুড়া বুড়ি পেয়ে জ্বালিয়ে খায় আমাদের।যাই হোক।তোমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।আমার সমস্যা নেই।
তবে আমার যেহেতু ব্যবসায় লাল বাতি সেহেতু আমি তোমাদের থেকে বাসা ভাড়াটা নেবো।:

-‘আঙ্কেল ওসব নিয়ে চিন্তা করিয়েননা।আমি দিয়ে দেবো’

-‘আচ্ছা উনি হলেন আমার স্ত্রী। মিজুয়ানা।আমাদের মেয়ে আছে মম।তাকে তো চেনোই হয়ত।সে হোস্টেলে থাকে, ছুটিতে আসে।আর মৃদুলের তো বছরেও খবর নাই।চলো তোমাদের বাসাটা দেখিয়ে আসি।’

—-
অর্ণব আর কুসুম সুলতান শাহের পিছু পিছু চললো এবার।

-“জানো অর্ণব মৃদুলকে আমি প্রচুর ভালোবাসি।তবে সে একটু জেদি।কি যেন নাম।হ্যাঁ মনে পড়েছে।অনামিকা।তার বাসা তো এইখানেই।ঐ মেয়েটা ওকে ধোকা দেবার পর থেকে কেমন যেন হয়ে গেছে।প্রথম প্রথম কথা তো ছোঁয়ানোই যেতোনা।ছ্যাঁত করে উঠতো।তার স্বভাবে পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লেগেছিল।তারপরও আমি যখন বললাম পড়াশুনা করতে ওর বিদেশে যাওয়া উচিত তখনই রেগে গেলো।জোরাজুরিতে একেবারে বাসাই ছাড়লো।আজকালকার ছেলেরা রাগ করলে এটাই জানে।আমিও রেগে আছি ওর উপর।তবে সে যদি সরি বলে তবে মাফ করে দেবো।’

অর্ণব মুচকি হেসে বললো,’বলবে সরি।আপনারই তো ছেলে।কতদিন আর রাগ করে থাকবে’

সুলতান শাহ দরজা খুলে বললেন,’যাও ঘুরে দেখো।আমার কাজ আছে।চালের আড়ৎ তো।সকাল সকাল একবার গিয়ে দেখে আসতে হয়’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here