লীলাবালি🌺 পর্ব-৪৬

0
1310

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৬
আফনান লারা
.
কুসুম সরাসরি ভেতরে চলে গেলেও অর্ণব এখনও বাহিরে রয়ে গেছে।চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে যাবার সাহস পাচ্ছেনা।সুলতান শাহ চলে গেছেন সেই তখনই।
কুসুম ঘুরে ঘুরে দেখছিল সব।অর্ণব যে ভেতরে আসেনি তা খেয়াল করলোনা সে।
স্বপ্নে অর্ণব যে বাসা দেখছিল ঠিক সেটা এখন ওর চোখের সামনে।ভেতরে বেশ বড়সড় একটা রুম।সেটা হয়ত সোফার রুম।তবে ওখানে সোফা নেই,নিচে তোষক বিছানো,তাতে রঙিন বিছানার চাদর আর রঙিন কভারের কিছু কুশান।পাশেই একটা সবুজ গাছ টব সমেত।সেই রুমটার ডান পাশে গেলে ফ্লোর থেকে ছাদ ছুঁই ছুঁই গ্রিলের দরজা।সেটা খুললে ছোট আকারের মোটামুটি চলার মতন একটা বারান্দা।ঐ রুমটার পরে আরও তিনটে রুম দেখা গেলো।বাম পাশেরটা রান্নাঘর,দুই তাকের সংমিলিত ছোটখাটো বটে।বাকি দুটো রুম বেডের।
ঐ দুটোর মাঝে সুন্দর একটা বেডরুম দেখা গেলো।

হঠাৎ কুসুম কাছে এসে বললো,’পছন্দ হয়নি আপনার?আমার কিন্তু অনেক পছন্দ হয়েছে’

কথাটা বলে কুুসুম ছুটে রান্নাঘরের দিকে গেলো।চুলার সুইচ টিপে দেখে বললো,’রান্না সব পারি আমি।বলুন আজ কি খাবেন?’

অর্ণব উত্তর দিচ্ছেনা।চুপ করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল সে।
সেসময়ে মাথায় হাত দিয়ে ভেতরের একটা রুম বেছে নিয়ে গিয়ে বসলো খাটের উপর।
খুব বেশি যে ফার্নিচার তাও না।তবে মোটামুটি চলার মতন খাট,ওয়ারড্রব সবই আছে।মৃদুলের জন্য সাজানো বাড়ি তারা ব্যবহার করছে।
কুসুম হঠাৎ অর্ণবকে খুঁজতে খুঁজতে রুমে এসে বললো,’রাঁধবো কিসে?পাতিল তো নাই,তরকারি ও নাই’

অর্ণব মূর্তির মতন বসে আছে।কুসুম ওর কোনো জবাব না পেয়ে আরও একবার সব রুম দেখতে চলে গেলো।মা বলতো বিয়ে হলে তোর নিজের সংসার হবে।তুই হবি রাণী।তোর স্বামী হবে রাজা।
রাজারাণীর সংসারে কটাদিন পর রাজপুত্র রাজকন্যা এসে ছোটাছুটি করে সংসারটাকে আলোকিত করে তুলবে।
কুসুম মুচকি হেসে চোখের সামনে ছোট ছোট বাচ্চা কতগুলোকে দেখতে পেলো।মুখে হাত দিয়ে বাচ্চাগুলোর পিছনে যেতে যেতে বারান্দায় এসে থামলো সে।বারান্দা ঘেঁষে বিশাল জবা ফুল গাছ।তবে গাছটা মাটিতেই।ঢাল পালা গুলো দোতলা চলে এসেছে।কুসুম পা উঁচু করে ঝুলে নিচ থেকে একটা জবা ফুল হাতে নিয়ে কানে গুজে নিলো।খুশি আর ধরেনা তার।
কোথায় যেন বিশাল আয়নার ঝলক দেখেছিল।এত এত রুম যে ভুলে গেছে কোন রুমে আয়না দেখছিল।পরে মনে পড়লো অর্ণব যে রুমে সেই রুমে আয়না দেখেছে।
নেচে নেচে আয়নার সামনে এসে কানে হাত দিয়ে ফুলটা দেখছিল সে।অর্ণব ভূত দেখার মতন করে তাকিয়ে ওয়ারড্রবটা দেখছিল।কুুসুমের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে এমন দৃশ্য দেখে লাফিয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে।কুসুম আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকালো।অর্ণবের সারা শরীর ঘেমে গেছে।কপাল মুছতে মুছতে শুধু কুুসুমকে দেখছে।কুুসুম এগিয়ে এসে বললো,’কি হলো আপনার?’

-“জবা ফুল কই পেলে?’

-“বারান্দায়।কেন?ভাল লাগেনা দেখতে?’

-“সরাও ওটা’

কুসুম মন খারাপ করে ফুলটা কান থেকে নিয়ে রান্নাঘরে ভেসিনের কাছে এসে রেখে দিলো।অর্ণব বেরিয়ে যাওয়া ধরতেই ও আবার ছুটে এসে বললো,’শুধু যে তরকারি আনতে হবে তা তো না।মশলাও তো লাগবে’

অর্ণব এবার ধমক মেরে বললো,’এত কিছু কিনবে কে?পরে দেখা যাবে।আজ হোটেলের খাবার খাব আমরা’

কুুসুম মন খারাপ করে ফেললো।অর্ণব গেছে চলে।ও যাবার পর সে ছুটে গিয়ে জবাটা আবার নিয়ে কানে দিয়ে ফেললো।বুঝতে পারলোনা অর্ণব কি কারণে রাগ দেখালো।তার তো জবাটা বেশ লাগছে।

-‘কি কড়া রঙ।এগুলোকে বলে রক্তজবা।ভারতে যে জায়গায় আমি থাকতাম ওখানে তো কালীপূজা হতো।বিশাল কালী মন্দির ছিল।
কত কত জবা গাছ ছিল সেখানে।ফুলগুলো বেশ লাগতো।সবসময় কানে গুজে ঘুরতাম আমি।
বাড়িতে ফেরার পর জবা পেয়েছি তবে লাল পাইনি গোলাপি আর সাদা রঙের সব।
এখন লাল পেলাম।রোজ একটা করে নিয়ে কানে গুজে রাখার ইচ্ছা হলো কিন্তু উনি তো রেগে আগুন।কেন আগুন তার কারণ জানলে হয়তবা জবা ফুল দেওয়ার আগ্রহটা একটু কমতো আমার’

হোটেলে খাবারের অর্ডার দেবার সময় দেখা হয়ে গেলো সুলতান শাহের সঙ্গে।
তিনি তেল ছাড়া পরোটা কিনতে এসেছিলেন সাথে মিষ্টি।অনেকদিন ধরে ইচ্ছে হচ্ছিল মিষ্টি দিয়ে পরোটা খাওয়ার।আজ পূরণ হবে।
অর্ণবকে দেখে তিনি বললেন,”একি?তুমি এসময়ে হোটেলে কি করো?’

-“দুপুরের খাবার কিনতে এলাম’

-“তোমাকে জাহান কিছু বলেনি?’

-“কি বলবে?’

-“ওহ হো!এই মেয়েটা এত ভুলোমনের।আসলে আমি ওরে বলছিলাম তোমাদের গিয়ে বলে আসতে,আজ তোমরা আমাদের কাছে খাবে’

-“আঙ্কেল এসবের কি দরকার ছিল?’

-“পরে তোমরা দাওয়াত দিবে একদিন।আচ্ছা একটা কথা বলো,ওমন ছোট মেয়ে বিয়ে করলে কেন?’

-‘পরিবার ওকে পছন্দ করেছে তাই’

-‘আহা কি ভাল ছেলে।পরিবারের কথায় গুরুত্ব দেয়।এখনকার ছেলেরা তো নিজের পছন্দে ক্লাসমেটকেও বিয়ে করে নেয়।আর তুমি কিনা নিজের বাবা মায়ের পছন্দে পিচ্চি একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলে।
যদি আমার মৃদুলটাও এমন হতো।আচ্ছা ওর খবর কেমন?এখন প্রেম করে টরে নাকি?কাল কল দিয়ে বেশ ভালো ভাবেই কথা বললো।অথচ ও এমন করে কথা বলার ছেলেই না।জীবনে গ্রহ ঘুরে গেলে,প্রেম আসলে মানুষ অদ্ভুত আচরণ করে।মৃদুলের ও কি তা হলো?’

-‘না ওসব কিছুনা।ও তো এমনিতেও হাসিখুশি স্বভাবের।আচ্ছা আঙ্কেল আমি আসি।বাসায় কাজ আছে।কুুসুম একা তো’

অর্ণব কোনো মতে চলে আসলো।কুসুম কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে কান থেকে জবা খুলে ছুঁড়ে ফেেলে দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো।অর্ণব ওর দিকে কিছুক্ষণ ব্রু কুঁচকে চেয়ে ওর কান থেকে সবুজ পাতা নিয়ে নিচে ফেলে বললো,’আজ উনাদের বাসায় দাওয়াত শুনলাম’

-“ওহ’

অর্ণব নিচে তোষকে বসে বললো,’আমার ব্যাগ তো মেসে।গিয়ে আনতে হবে।তুমি উনাদের কাছে থেকো আমি গিয়ে নিয়ে আসবো’

-“আচ্ছা।’
—–
-‘আজ অর্ণব নেই বলে আমি ক্লাস করাতে এসেছি তোমাদের।অর্ণব কোন অধ্যায় পড়িয়েছিল বলো কেউ।’

মৃদুলের কথা শুনে জুথি জবাব দিলোনা।মাথা নিচু করে টেবিলের উপরের কলমটা দেখছে।মৃদুল ওর উত্তরের আশায় তাকিয়ে ছিল।
পরে একটা মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’তৃতীয় অধ্যায়’

ক্লাস টা শেষ হবার পর মৃদুল চলে যাচ্ছিল।তখন জুথি ব্যাগ রেখে ওর পিছু পিছু এসে বললো,’একটু দাঁড়ান’

-“কিছু বলবে?আমি তো ভাবলাম বলবেইনা’

-“দেখুন আমি চাইনা আপনি….’

-“এখানে এসব বলার সঠিক সময় না।ক্লাস শেষে দীঘির ঐ দিকটায় থেকো, আমি আসবো।এখন আমি ব্যস্ত অনেক।স্যার ডেকেছে’

মৃদুল চলে গেলো।জুথি হাত মুঠো করছে তো আবার খুলছে।চিন্তা লাগছে অনেক।মৃদুলকে মুখের উপর সব মানা করে দিতে প্রচুর সাহসের প্রয়োজন।এত সাহস কই পাওয়া যাবে।ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একটা আইসক্রিম নিয়ে খেতে খেতে দীঘির ঐ প্রান্তের দিকে চলেছে সে।গায়ের ওড়নাটা বাতাসে খুব করে উড়ছে।এক হাতে আইস্ক্রিম ধরে রাখার কষ্ট আর আরেক হাতে এই বিশাল ওড়না।শেষে আইস্ক্রিমটা নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঠিক করলো আগে খেয়ে নেবে।
পুরোটা খেয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো মৃদুল এসে দাঁড়িয়েছে।

-“আমি জানি তুমি কি বলবে।তুমি বলবে”””দেখুন আপনি আর আমায় মেসেজ করবেন না,কল করবেন না,দেখা করবেন না””” তাই তো?’

জুথি মাথা নাড়ালো।
মৃদুল হাত ভাঁজ করে বললো,’ঐ পথটা দেখছো?এটা থেকে একটু সামনে গেলো এক মামার ঝালমুড়ির দোকান পাবে।ভ্রাম্যমাণ অবশ্য।বেশ বানায়।খাবে?’

-“আপনি কি কখনও সিরিয়াস হবেননা?’

-“আমি তো সিরিয়াস হয়েছিলাম অনেক বছর আগে।সিরিয়াস হওয়ায় একটা মেয়ে ভালোমতন ধুয়ে দিয়েছিল।একেবারে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে।
তারপর থেকে সিরিয়াস হওয়া ছেড়ে দিয়েছি।মরা অবধি সিরিয়াস হবোনা।’

-“আমি যাই।ভালো থাকবেন’

-“আর তো দেখা করবেনা জানি,হয়ত এখন গিয়ে ব্লক ও করে দেবে।ঝালমুড়ি খেয়ে যেতে ক্ষতি কি?’
চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের নতুন গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/676436250036874/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here