শঙ্খচিল পর্বঃ-৩৪

0
1501

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৩৪

কুসুমতি ভিলা —–

আজ ওয়াহাবের বিয়ে, সকাল থেকেই বাসায় মেহমানের আনা গোনা। কেউ হলুদ স্নান কারানোর জন্য হলুদ বাটছে তো কেউ বিয়ে বাড়ির খোশ গল্পে মেতে উঠেছে।
সকাল দশটা বাজে এখনো তানিয়া রুম থেকে বের হয়নি, বলে কুসুম বেগম ভিষণ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। মেহমানদের সামনে রাগ প্রকাশ করতেও পারছেন না। দু বার কাজের সহকারী মহিলাকে পাঠানোর পর ও তানিয়া রুম থেকে বের হয় নি।
তবে এক দিক থেকে কুসুম বেগম কিছুটা খুশি হয়েছে, কারন শাহেদ এসেছে। আত্নীয় স্বজন কারো কাছে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না, শাহেদের ব্যাপারে। তারা নিজ চোখে দেখবে তানিয়া স্বামি পুত্র নিয়ে আছে।

মতি সাহেব, ওয়াহাব এবং শাহেদ টেবিলে বসে ছিলো, এমন সময় চাঁ দর গায়ে জরিয়ে রুম থেকে বের হলো তানিয়া, নাক, মুখ ফুলে গেছে অনেক টাই। কুসুম বেগম বললেন,
” আজকে তোর ভাইয়ের বিয়ে আর তুই এত দেরিতে উঠলি? ”

” জ্বর জ্বর লাগছে মা৷ অসুস্থতা কি আর বিয়ে -শাদি দেখে হয়?”

” তুই বোসে নাস্তা কর আমি। আদা চা পাঠাচ্ছি খেলে ভালো লাগবে তোর৷ ”

তানিয়া সাহেদের সাথে এক টেবিলে বসবে না তাই সোফার এক কোনেই বসে রইলো। সাহেদ নাস্তা শেষে হাত ধুতে যাবে ঠিক তখনি কাজে সহকারী মহিলার কাছ থেকে চা টা নিয়ে নিলো, তানিয়া সামনে এসে হালকা কেঁশে চা টা এগিয়ে দিলো।
তানিয়া অবাক হয়ে তাকালো, এতো বছর দূরে অবহেলা করে এখন আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে, ভাবতেই তানিয়া কিছু বলতে প্রস্তুত হচ্ছিলো ঠিক তখনি, তানিয়া দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে, ভদ্রতার ক্ষাতিরে তানিয়া শাহেদের হাত থেকে চায়ের কাপ টা নিলো৷
শাহেদ মুচকি হাসলো, ওয়াহাব ইশারা করে বললো, ‘ বেস্ট অফ লাক’।

জল চৌকির ওপর ওয়াহাব দাঁড়িয়ে আছে, একে একে সবাই তাকে হলুদ দিচ্ছে৷ এই কাঠ ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকে হলুদ মাখার কোন লজিক পাচ্ছে না সে। নিজেকে কেমন হ্যাল্পলেস লাগছে। মায়ের কড়া নির্দেশনা তার ছেলেকে হলুদে রাঙ্গাবে। ইলহাম হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে ভাইয়ের কাছে এলো, ইলহাম দাঁত বের করে হেসে বললো,
” শাদি মুবারাক হো মেরে ভাইয়া৷” বলেই এক গাদা গলুদ সারা গায়ে মেখে , লেপে দিলো।
ওয়াহাব বললো,

” তোর যখন বিয়ে হবে না, হলুদের ট্যাংকে চুবিয়ে রাখবো। বুঝলি। ”

ইলহাম হেসে বললো, ” ওটি হচ্ছেনা। আমি কখনো বিয়েই করবো না। ”

” আচ্ছা দেখা যাবে। ”

” দেখে নিও। ” বলেই হাসতে হাসতে ইলহাম চলে গেলো।

————————————————

বউ সেজে বসে আছে মানহা। চেহারায় ভারী মেক-আপের আস্তরন। গায়ে লাল বেনারসি, হাত ভর্তি চুড়ি গহনা পড়ে আছে সে। কাজল রাঙ্গানো চোখ দুটো টল টল করছে, আনমনে কিছু একটা ভেবেই চলেছে। আর ক্ষানিকটা সময় বাদেই সে অন্যের স্ত্রী হয়ে, যাবে৷ হয়ে যাবে ইলহামের ঘড়োনি। মনের মানুষ টার সামনেই আজীবন অন্য কারো সাথে সংসার করতে হবে তাকে। মানহার ভীষণ ইচ্ছে করছে ওয়াহাব কে জিজ্ঞেস করতে, ‘ খুব কি ক্ষতি হতো মানহা কে আপন করে নিলে?মানহা যে তাকে ভীষণ ভালোবাসে..
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, মেহমানদের ও আনা গোনা বেড়ছে ধীরে। কেউ কেউ মানহার ঘরে আসছে, বধূ বেশে মানহাকে এক নজর দেখার জন্য।

মানহার পরে তানহা পার্লারের মহিলার কাছে, সাজতে বসেছে। মাত্রই তার সাজ সম্পূর্ণ হলো। তানহা মিষ্টি গোলাপি রঙের একটা লেহাঙ্গা পড়েছে৷ সাথে হালকা গহনা এবং হালকা গর্জিয়াস সাজ। তানহা নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলো, তানহা খুব একটা সাজে না। এই প্রথম বার সে এতো সেজেছে। নিজেকে আয়নায় দেখে, ভাবলো নাহ। তাকে মন্দ লাগছে না। ভালোই দেখাচ্ছে৷
তানহা ছাদে চলে গেলো, বিয়ের ডেকরেশন দেখতে।
মানহার পাশে বসে তার কয়েক জন বান্ধবি ঠাট্টা করছে, মানহা চুপ করে শুনছে। তার উত্তর দিতেও এই মূহুর্তে ভালো লাগছে না। মানহার এক বান্ধবি ঠাট্টা করতে করতে বললো,
” মানহা তুই কি লাকি রে.. এতো হ্যান্সাম ডাক্তার বর পাচ্ছিস৷ ”

মানহা অবাক হয়ে তাকালো, ফট করে উত্তর দিলো, ” যাকে চাই তাকে তো পাচ্ছি না৷ ”

ঘরময় সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ অন্য এক বান্ধবী বললো, ” মানে তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস? কে সে?”

মানহার এতক্ষণে হুশ ফিরলো, এক ঘর মানুষের সামনে ঠোঁট কাটা নির্লজ্জের মতো কথা বলে ফেলেছে, আর যাই হোক আজ তার বিয়ে অন্য পুরুষের কথা বলা তার উচিত হয় নি।

” কি হলো বলছিস না যে?”

মানহা আমতা আমতা করে বললো, ” আরে আমি মজা করলাম। তোরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে মজা বুঝিস না। ”

” ওহ। তাই বল। ”

হঠাৎ রহিমা খালা রুমে আসলেন, কিছু বলতে গিয়ে চোখ চরক করে মানহার দিকে তাকিয়ে রইলেন, হাসিতে গদ গদ হয়ে বললেন, ” মানহা মামনী তোমাকে কি সুন্দর লাগছে৷ এক্কে বারে পরীটা। ” বলেই মানহার থুতনিতে আংগুল ছুঁয়ে চুমু খেলেন। মানহা স্মিথ হাসলো।
হঠাৎ গাড়ির শব্দ শুনে সবাই দৌড়ে মানহার বেলকনির দিকে গেলো৷ মানহার বান্ধবী চেঁচিয়ে বললো,
” মানহার বর এসেছে। বর এসেছে। সবাই চল। ”

বলেই একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, রহিমা খালা প্লেটে খাবার এনে মানহার মুখে খাবার তুলে দিলেন,
মানহা অরুচি নিয়ে বললো, ” খেতে ইচ্ছা করছে না খালা। ”

” একটু খাইয়া লও মানহা৷ বর যাত্রী আশে পাশে থাকলে শরমে খাইতে পারবা না৷ ”
মানহা ক্ষানিকটা বাধ্য হয়ে কয়েক লোকমা খেয়ে নিলো। রহিমা খালা থালা নিয়ে চলে গেলেন। এতোক্ষন তার আশে পাশে মানুষ থাকলেও এখন মানহা একা বসে আছে। আর সবাই বর দেখতে চলে গেছে…

হঠাৎ মানহার মনের ছটফটানি আরো কয়েক গুন বেরে গেলো। ভেতর থেকে শুধু কয়েকটা শব্দ বের হচ্ছে, আর কয়েকটা মুহূর্ত আর কয়েকটা মূহুর্ত। মানহা কি করবে বুঝতে পারছে না, আর নিজের অন্তরদহন সয্য করতে পারছে না। কয়েক মূহুর্তে জন্য মনে হচ্ছে সে মারা গেলেই ভালো হতো৷
প্রিয় মানুষের প্রত্যাখ্যান পাওয়া হৃদয়টা প্রতিনিয়ত গুলির মতো ঝাঝরা হয়ে যাচ্ছে।

———————————-

মানহার কয়েকজন বান্ধবী এবং সমবয়সী মেয়েরা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম ওয়াহাবের কানে ফিস ফিস করে বললো,
” দেখ ভাইয়া। ডাকাত মহিলারা গেট আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ”

ওয়াহাব স্মিথ হেসে বললো, ” তাহলে ডাকাতনি দের সামলানোর দায়িত্ব পুলিশ কে দিলাম। ”

শাহেদ হেসে বললো, ” গুড আইডিয়া ওয়াহাব। উপযুক্ত মানুষ কে দায়িত্ব দিয়েছো।
গেইটের কাছে আসতেই ইলহাম তানহা কে দেখে থমকে দাঁড়ালো, মিষ্টি গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা আর ভাড়ি সাজে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তানহা ইলহামের চাহুনি দেখে লজ্জা পেলো।

” দাঁড়ান দাঁড়ান। আমাদের গেইটের টাকা না দিয়ে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না…”

ইলহাম বললো, ” কিসের গেইটের টাকা? আমাদের ভাবি কে আমরা নিবো টাকা কেনো দিবো?”

তানহা ভেংচি কেটে বললো, ” আমাদের দুলাভাইয়ের কাছ থেকে আমরা টাকা নিবো আপনাকে কেনো জবাব দিবো। আপনি বর? সরুন। ”

ইলহাম কলার ঠিক করে বললো, ” এক্সাস কিউজ মি। আমি বরের ছোট ভাই এট মিনস অর্ধেক বর।”

” তাই বলে বরের মতোই শেরওয়ানী পড়েছেন। ” বলেই সবাই হো হো করে হেসে দিলো।

ইলহাম বাঁকা হেসে বললো, ” এতো বুদ্ধি আপনার যদি সাপের লেজে পা না দিয়ে অন্য কাজে লাগাতেন। তাহলে আরো ভালো করতে পারতেন। ”

এত্তো বড় ইন্সাল্ট। তানহা কটমট করে তাকালো। ইলহাম ফিক করে হেসে, একটা খাম দিলো। তানহা খামটা চেক করে দেখলো, খামের ভেতর টাকা আছে কি না। অতঃপর সবাই কে শরবতে গ্লাস দিলো, ইলহাম আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” শরবতে আবার কিছু মেশানি তো?”

” নাহ। আমরা এতো খারাপ না, টাকা ঠিক মতো পেয়েছি তাতেই আমরা খুশি..”


চলবে
অনেকটা লিখে ফেলার পর পোস্টা কেটে গেছিলো। তাই ছোট পর্ব দিয়েছি। ছোট পর্বের জন্য দুঃখীত 🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here