#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৩৫
একা বসে থাকতে থাকতে মানহার হঠাৎ ঘুমে চোখ লেগে আসেছিলো। ঠিক তখনি কারো কথায় সে চোখ মেলে তাকালো, তানিয়া আপু আর কয়েক জন আত্নীয় তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মানহা অবশ্য তাদের চিনে না, তবে এরা তার শ্বশুর বাড়ির আত্নীয় হবে। তানিয়া মানহার পাশে বসে বললো,
” মানহা তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আমার ভাই টা চোখ সরাতে পারবে না তোমার কাছ থেকে।” মানহা লজ্জা মুখ করে বসে রইলো।
ঠিক তখনি শাহেদ আর শিহাব রুমে এলো, শাহেদ কে দেখে তানিয়া মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। শিহাব মানহার পাশে বসে বললো, ” মিস তোমাকে কি কিউট লাগছে। ”
মানহা স্মিথ হেসে বললো, ” থ্যাংক ইউ শিহাব। ”
শাহেদ বললো, ” শিহাব, মিস নয় মামি বলো। ”
” আচ্ছা বাবা। ”
মানহা অবাক হয়ে শাহেদের দিকে তাকালো। শিহাবের মুখে বাবা ডাক শুনে। মানহা শাহেদ কে, সালাম দিলো। শাহেদ সালামের উত্তর দিয়ে বললো, ” আমি শিহাবের বাবা। ওয়াহাব ইলহামের দুলাভাই। নাইস টু মিট ইউ ব্রাইড। ”
মানহা স্মিথ হেসে বললো, ” নাইস টু মিট ইউ টু ভাইয়া। ”
হঠাৎ মুকুল সাহেব, মতি সাহেব এবং আরো কয়েক জন বয়জৈষ্ঠ রুমে এলেন৷ একজন মাঝ বয়সী লোক মানহার দিকে খাতা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ” সাইন করো মা। ”
মানহা মূর্তির ন্যায় বসে রইলো, তার শরীর হঠাৎ জমে আসছে। সবাই মনোযোগ দিয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে, তার কাবিন নামায় স্বাক্ষর দেখার জন্য। মানহা কলম হাতে নিয়ে আগের মতোই বসে রইলো, তার হাত যেনো অকেজো হয়ে গেছে ক্ষানিকের জন্য। হঠাৎ মুকুল সাহেব বললেন,
” সাইন কর মানহা। ”
মানহা এক নজর বাবার দিকে তাকালো। কি ভাবে বুঝাবে তার অনূভুতি, তার বুক ফেটে যে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। মুকুল সাহেব পূর্নরায় গম্ভীর কন্ঠে বললো,
” কি হলো? ”
মানহা কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দিলো, কাবিন নামার কাগজটায় হঠাৎ দু-তিন ফোটা নোনা জল টুপ করে পড়লো। এই জীবনে ওয়াহাব কে তার পাওয়া হলো না ভাবতেই মানহার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে৷ এক তরফা ভালোবাসা বোধহয় এমনই হয়।
ক্ষানিকের মধ্যেই রুমে থেকে সবাই চলে গেলো। এবার মনে হয় বরের সাইন নেয়ার পালা। তাই সবাই পিছু পিছু চলে গেলো বরের কাছে৷ মানহা আগের মতোই রুমে একা বসে রইলো।
————————————————
কিছুক্ষণ আগেই ওয়াহাব এবং মানহার বিয়ের সম্পন্ন হয়েছে। বর পক্ষের সবাই ডিনার করছেন, তানহা এক পাশে দাঁড়িয়ে সমবয়সীদের কাছে কথা বলছে৷ হঠাৎ ইলহাম কে দেখে তানহার গেইটের কথা মনে পড়ে গেলো, সবার সামনে ভাদ্র ভাবে ইনসাল্টের করার কথাটা মাথায় আসতেই তানহা মেজাজ টা বিগড়ে গেলো। হুট করেই তানহার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো। তানহা সয়তানি হাসি দিয়ে বললো,” এবার চাঁদু আমার পালা…”
বলেই তানহা তার বান্ধবীদের কানে ফিস ফিস করে, কিছু একটা বলে দিলো৷
তানহা ইলহামের পিছু পিছু হাটা শুরু করলো। দ্রুত হেটে ইলহামের কাছে পৌঁছে গেলো, ইলহামের পথ আটকে মুচকি হেসে বললো,
” কি ব্যপার মশাই। খাওয়া – দাওয়া শেষ? ”
ইলহাম অবাক হয়ে বললো, ” হ্যাঁ। কেনো? ”
” না এমনি বললাম। আপনি তো আমার আপুর ওয়ান এন্ড ওনলি দেবর তাই না!”
” হ্যাঁ। হঠাৎ এই প্রশ্ন। ”
” তাহলে আপনার সাথে তো একটা সেল্ফি তুলতেই পারি তাই না? ”
ইলহাম কি বলবে বুঝতে পারছে না। মুখের ওপর না ও করতে পারছে, তানহা পূর্নরায় বললো, ” তাহলে চালুন ওই দিকে যাই। ছাদের ওই পাশটায় ভীর কম। ” বলেই তানহা ইলহামেরর হাত ধরে নিয়ে গেলো৷ ইলহাম তব্দ খেয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো, আবারো এই মেয়েটার ছোঁয়া, ইলহাম আনমনে ভাবতে ভাবতে তানহা দু একটা ছবি তুলে নিলো ইলহাম টেরও পেলো না।
” এস আই ইলহাম..”
” হুঁ?”
” চলুন বসে ছবি তুলি।” বলতে বলতেই তানহা চেয়ারে বসলো। ইলহাম-ও তানহার পাশে বসলো। হঠাৎ কিছু একটা গলে যাওয়ার অনুভব হতেই ইলহাম হকচকিয়ে গেলো। মূহুর্তে ভেজা ভেজা অনুভব হতেই ইলহাম তানহার দিকে তাকালো।
তানহা ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে। হঠাৎ তানহার চোখ টিপুনি দেখে ইলহামের আর বুঝতে বাকি রইলো না তানহা কিছু একটা করেছে৷
তানহা ইলহামের দিকে একটু ঝুকে বললো, ” কেমন লাগছে ইলহাম সাহেব?”
ইলহাম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো, অতঃপর বললো, ” কি করেছেন আপনি?”
তানহা চোখ পিট পিট করে বললো,” আমি আবার কি করলাম? আসেন আরেক টা সেল্ফি তুলি..”
বলেই তানহা সেল্ফি তুলে নিলো, ইলহাম অসহায়ের মতো মুখ করে রেখেছে, ছবি গুলোর দিকে তাকাতেই তানহার হো হো করে হেসে দিলো।
ইলহাম দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” মিস তানহা, এটা কি করেছেন..”
” বেশি কিছু না আপনার চেয়ারে গোটা তিনেক নরম টমেটো রেখে দিয়েছি।”
ইলহাম বিস্ময়ে বললো, ” টমেটো? ”
তানহা বিড় বিড় করে বললো, আমাকে নিয়ে ইনসাল্ট করা তাই না? এবার মজা বুঝো চাঁদু। তানহা কেঁশে বললো,
” এই সেল্ফি গুলো ফেইসবুকে আপলোড করলে কেমন হবে?”
ইলহাম বললো, ” খুব খারাপ হবে। ”
” তাহলে আমি আপলোড দিবোই। ” বলেই তানহা হাসতে হাসতে চলে গেলো। ইলহাম আগের মতোই বসে রইলো। ভেজা শেরওয়ানি নিয়ে দাঁড়াতেও পারছেনা। সব সময় শিহাব কে নিয়ে দুষ্টু মি করতো আজ সে নিজেই মজার পাত্র হয়ে গেছে…
তানহা পুলিশ কে টেক্কা দিতে পেরেছে ভাবতেই মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে তার৷ এই রিভেঞ্জ টা ইলহাম পাওনা ছিলো, সুযোগ পেলেই শুধু তানহাকে হ্যানস্তা করা, হুহ!
—————————————————–
বেশ রাত হয়ে গেছে, মেহমানের সংখ্যা অনেকটা-ই কমে গেছে। কাছেই দুই এক ফ্লাটের প্রতিবেশি মানহার বিদায় দেখার অপেক্ষায় রয়ে গেছেন৷ শেহতাজ বেগম মানহার রুমের এক পাশে চেয়ারে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পড় পড় ফুঁপিয়ে উঠছেন, ঘোমটা দিয়ে বসে থাকার কারনে মানহা ঠিক মতো দাদীর মুখটা দেখতে পারছে না।
মানহা উঠে দাদীর কাছে গেলো, আর কেউ না জানুক মানহা ঠিকই জানে তার দাদী কেনো বার বার ফুপিয়ে উঠছে..
মানহা দাদীর কাধে হাত রাখতেই শেহতাজ বেগম মানহার হাত ধরে কেঁদে দিলেন। মানহা নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না, দাদী কে জরিয়ে ধরে সেও শব্দ করে কেঁদে উঠলো৷
কান্না করলে নাকি মন হালকা লাগে, মানহার মনে হচ্ছে, তার কষ্ট গুলো যেনো ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে…
বর পক্ষের কিছু আত্নীয় স্বজন আগে চলে গিয়েছে। মতি সাহেব, তানিয়া, ইলহাম, ওয়াহাব এবং শিহাব বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
মানহা তার বাবার বুকে মাথা রেখে কান্না করেই চলেছে৷ শেহতাজ বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে তানহা বোনের বিদায় দেখে চোখের পানি মুছছে৷ মুকুল সাহেব মেয়ের কাছ থেকে কান্না লুকানোর জন্য চোখ মুছে, মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
পুরো অনুষ্ঠানে জুড়ে ওয়াহাব কে মানহা দেখে নি, বিদায় মূহুর্তে ওয়াহাব কে দেখে মানহা থমকে গেলো। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ওয়াহাব দেখে না দেখার ভান করলো, ওয়াহাবের ইগনোরেন্স মানহার বুকে কাটা দিয়ে উঠলো, মনে মনে বললো, পাশান লোক একটা।
সবাই বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো। শিহাব এবং তার মা তানিয়া মানহার সাথে বসেছে৷ ওয়াহাব ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে, আয়নার লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে মানহাকে দেখার চেষ্টা করছে৷ মানহা জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে এবং চোখের পানি মুছছে।
।
।
কুসুম বেগম বড় ছেলের বউকে বরণ করে নিলেন। বিয়ের সব রিচুয়াল পূরণ করতে করতে অনেক টা সময় কেটে গেলো। তানিয়া মানহাকে একটা রুমে বসিয়ে দিয়ে গেলো, রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে কৃত্তিম কোন আলো নেই ঘরে, মোমের আলো আর গোলাপ এবং রজনীফুলের গন্ধে রুম টা ম ম করছে, মাথা ব্যাথা ক্লান্তি আর ক্ষুধায় মানহা চুপ করে বসে রইলো৷
ঘুমে চোখ লেগে আসছে ঠিক এমন সময় কারো হাটার শব্দ পেয়ে মানহার ঘুম ভাব কেটে গেলো৷ আবছা অন্ধকারে মানহা দেখতে পেলো না, রুমে ঢুকে কেউ দরজা আটকে দিলো, মানহা নির্বাক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময়…….
।
।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই ❤️