#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৪৫
শাড়ি শাড়ি গাছ পেছনে রেখে গাড়ি সামনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির শব্দে মানহার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। হঠাৎ গাড়ি থামতেই মানহার ঘুমের রেশ কেটে গেলো। শিহাব বললো,
” নানু বাড়ি এসে গেছি,এসে গেছি। ”
সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেলো৷ মানহা তানিয়ার সাথে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। ওয়াহাব লাগেজ বের করছে। পাশেই শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে।
” নিজেরা কি সুন্দর চলে গেলো, আমাদের হাতে ব্যাগ দিয়ে। ”
ওয়াহাব লাগেজ বের করে, স্মিথ হেসে বললো, ” আপনার তো এক্সপেরিয়ান্স আছে। আর আমি তো এ লাইনে নতুন৷ ”
শাহেদ হাটতে হাটতে বললো, ” শালা বাবু তোমারও এক্সপেরিয়াস হয়ে যাবে। এখন বউয়ের টা নিচ্ছো কিছু দিন বাদে, বাচ্চার টাও যোগ হবে। ”
ওয়াহাব দুলাভাইয়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।
আশে পাশে বাড়ি থেকে প্রতিবেশিরা এসেছে নতুন বউকে দেখতে। কুসুম বেগম সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, মানহা সালাম দিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করছে। ওয়াহাব বাসার ভেতরে ঢুকে লাগেজ নিয়ে রুমে চলে গেলো।
অনেক বছর বাদে শাহেদ এসেছে, শাহেদ কে দেখে অনেকেই অবাক হয়ে আছে। মন জুরে কৌতুহল থাকলেও কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না।
তানিয়া সবার এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝতে পারছে, তাদের মনে অনেক প্রশ্ন। ছয়-সাত বছর পর, তানিয়ার স্বামী হঠাৎ কি মনে করে এসেছে।
মনের মধ্য কৌতুহল রেখেই ক্ষানিক বাদে সবাই একে একে চলে যেতে শুরু করলো। কুসুম বেগম সহকারী মহিলা কে রান্না বসাতে বললো। তানিয়া এক পাশে বসে আছে, অন্য সোফায় মানহা কুসুম বেগম মানহার উদ্দেশ্য বললেন,
” মানহা ফ্রেশ হও গিয়ে। ” অতঃপর তানিয়ার উদ্দেশ্য বললো, ” তানিয়া তুই ও যা শাহেদ কে ওয়াশ রুম দেখিয়ে দে। ”
তানিয়া উঠে শাহেদ কে দেখতে পেলো না, তাই শিহাবে পাঠালো, তার বাবার খোঁজ করতে।
ওয়াহাবের যাওয়া রুমটায় মানহা যেতেই দেখলো ওয়াহাব ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে৷ মানহা ক্লান্ত শরির নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হলুদ রংয়ের রুম টায় একটা চেয়ার এবং একটা টেবিল, যেখানে ওয়াহাব বসে আছে।
একটু দূরেই একটা খাট। পাশে আলনা রাখা। পুরোনো একটা শোকেস ভর্তি বই৷ বেশির ভাগই নব্বই দশকের লেখদের৷ বই পাড়ার সুবাদে সবাইকে মানহা চেনে।
এই বাড়িতে তার বোরিং সময় যাবে না। অন্তত বই ঘেটে সময় পার করা যাবে ভাবতেই মানহা ওয়াহাবের দিকে তাকালো। সে আগের মতোই মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপের কাজ করছে।
মানহা কাপড় না বদলিয়েই শুয়ে রইলো। সারা রাত জার্নি, এবং ট্রেনেরর শব্দের নির্ঘুম রাত কাটানোর ফলে খুব সহজেই মানহা ঘুমের রাজ্য পাড়ি দিলো।
।
।
হঠাৎ ফোনে কল আসতেই শাহেদ বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো। ঘর ময় মানুষের সামনে কথা বলতে সে একদম অনিচ্ছুক। তার ভীষণ অসস্থি লাগে।
বাইরে এসে ফোন রিসিভ করতেই শুরু হলো নেটওয়ার্ক প্রবলেম। শাহেদ ফোনটা নিয়ে রাস্তার কাছে চলে এলো। দ্বিতীয় বার কল আসতেই শাহেদ দ্রুত কলটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করলো।
শিহাব বাবাকে খুঁজে না পেয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললো, ” মা বাবা কে বাইরে খুঁজে পাচ্ছি না।”
তানিয়া একটু অবাক হয়ে বললো, ” কোথায় গেছে তোমার বাবা। ”
” উমম তা তো জানি না। ”
” তুমি ফ্রেশ হও। আমি যাচ্ছি৷ ” বলেই তানিয়া বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো। হাটতে হাটতে মেইন রাস্তা কাছে এসে তানিয়া দাঁড়িয়ে রইলো।
কয়েক মূহুর্তের জন্য সে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। তানিয়া শ্বাস ফেলে শাহেদের কথা শেষ হতেই কাছে গিয়ে বললো,
” কার সাথে কথা বলছো? ”
শাহেদ হঠাৎ তানিয়া কে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বললো, ” তুমি কখন এলে?”
” এখন। কেনো?”
” কিছু না। বাসার ভেতরে নেটওয়ার্ক প্রবলেম ছিলো তাও এখানে কল পিক করতে এসেছিলাম। কলিগ ফোন দিয়েছিলো। ”
” ও আচ্ছা।”
শাহেদ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ” হ্যাঁ। তুমি আমাকে খুঁজেতে এসেছিলে? ”
“হ্যাঁ। শিহাব তোমাকে বাসায় খুঁজে পায় নি, তাই আমাকে বললো…”
” আর তুমি হন্ত দন্ত হয়ে খুঁজতে চলে এলে?” বলেই মুচকি হাসলো।
” হ্যাঁ। ” পরক্ষনেই তানিয়া আমতা আমতা করে বললো, “না মানে, এতো বছর পড় এসেছো, অসুবিধা হলে, তাই আর কি।”
শাহেদ মিটি মিটি হেসে বললো, ” অনেক বছর বাদে এসেছি বলে রাস্তা ভুলে যাই নি। ”
বলেই শাহেদ বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলো। তানিয়া শাহেদের পিছু পিছু সমান তালে হাটার চেষ্টা করছে। তানিয়া শাহেদ কে থামিয়ে দিয়ে বললো,
” তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমাকে খুঁজ তে এসেছি তাহলে তুমি ভুল একে ভারেই ভুল। বুঝলে।”
শাহেদ আগের মতোই মিটি মিটি হেসে বললো, ” হু। ”
” কি। হু? আমাকে বোঝাও। ”
” বুঝতে চাও?” বলেই তানিয়ার হাত স্পর্শ করলো। তানিয়া ভ্যাবলা হয়ে তাকিয়ে রইলো…
—————————————————-
১০৪° জ্বর নিয়ে তানহা বিছানায় শুয়ে আছে। ঘুমের মাঝেই বিড় বিড় করে বলছে, কেন এমন করছেন, পাশান লোক একটা, এতো নিষ্ঠুর কেন, আমাকে কেনো ভালোবাসেন না…বলতে বলতে তানহা হঠাৎ চোখ খুলে বসে পড়লো।
শেহতাজ বেগম তার পাশেই বসে আছেন । হঠাৎ ঘুম ভাংতে তানহা এদিকে সেদিক তাকিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করছে। দাদী তানহা কে থামিয়ে দিয়ে বললো,
” তুই শুয়ে থাক উঠছিস কেনো?”
” পানি খাবো। ” শেহতাজ বেগম পানির গ্লাসটা তানহার কাছে এগিয়ে দিলো। তানহা ভীষণ তেতো লাগছে তাই সে পানি খেতে পারলো না।
ব্যার্থ চেষ্টা করে বমি করে ফেললো।
শেহতাজ বেগম দ্রুত রহিমাকে ডাক দিয়ে রুম পরিষ্কার করতে বললেন। রুমে পটকা গন্ধের কারনে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিলেন৷
শেহতাজ বেগম বার বার তানহা কে খাইয়ে দেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু তানহা দুই লোকমা খেয়ে তানহা আর খেতে পারলো না।
।
।
” ইলহাম না তুমি?”
ইলহাম চমকে পেছনে তাকাতেই দেখলো, মুকুল সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম জোর পূর্বক হেসে বললো,
” জ্বি আংকেল আমি। ”
” তুমি এতো সকালে?”
ইলহাম কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো, ” ভাবি ফোন কলে বললো, তানহা অসুস্থ। ডিউটি শুরু হবার আগেই ভাবলাম দেখা করে যাই। ”
” তা ভালো করেছো। আমি অফিসে যাচ্ছি, তুমি তাহলে বাসায় যাও। ”
” জ্বি আচ্ছা আংকেল। ” বলেই ইলহাম তানহাদের বাসার গলির দিকে হাটা শুরু করলো। মনে
মনে নিজের ওপরেই তার ভীষণ রাগ লাগছে। হঠাৎ এই বুড়োটার সাথে দেখা হয়ে, গেলো। কি এক জ্বলা। এখন আবার বাসায় ঢুকতে হবে। ডিজগাস্টিং।
ইলহাম বিড় বিড় করতে করতে পাঁচ তলায় উঠে গেলো। কলিং বেল বাজাতেই, রহিমা খালা এসে দরজা খুলে দিলেন, হঠাৎ ইলহাম কে দেখে, রহিমা খালা চোখ চরক করে তাকিয়ে বললো,
” আরে। আপনে মানহার দেওরা না?”
” জ্বি। তানহা আছে?”
” তানহা আছে, তানহার দাদী আছে, তানহার রহিমা খালা আছে সবাই আছে। আপনে কি খাইবেন আগে কওন? ”
” কিছু না। তানহার রুম টা কোন দিকে?”
শেহতাজ বেগম হাতে প্লেট নিয়ে রুম থেকে বের হলো। ইলহাম সালাম দিয়ে বললো, ” তানহার সাথে দেখা করা যাবে?”
দাদী ক্ষানিকটা অবাক হয়ে,বললো, ” হ্যাঁ যাবে। কিন্তু ওর খুব জ্বর। কথা বলতে পারবে বলে মনে হয় না। ”
” সমস্যা নেই। ”
” ঠিক আছে। ” বলতেই ইলহাম তানহার রুমে দিকে চলে গেলো।
ইলহাম তানহার রুমে প্রবেশ করলো, তানহা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। ইলহাম ক্ষানিক ক্ষন তাকিয়ে রইলো, তানহার মলিন মুখটা দেখে হঠাৎ তার মায়া অনুভব হচ্ছে।
ইচ্ছে করছে তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। ইলহাম তার ইচ্ছে টাকে সংবারণ করতে পারলো না, তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই তানহা চোখ মেলে তাকালো।
অস্ফুট কন্ঠে বললো, ” ইলহাম।”
” হুম।”
” আপনি সত্যি এসেছেন নাকি আমি জ্বরের ঘোরে স্বপ্ন দেখছি।” বলেই ইলহামের হাতের ওপর হাত রাখলো।
ইলহাম কিছু বললো না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ইলহামের অতীতের কথা, বার বার নাড়া দিচ্ছে, তানহা যখন জানবে, ছদ্দবেশে সে নিজেই তানহাকে মানুষীক কষ্ট দিয়েছে, সে দিন সন্ধ্যায় খুনী ছেলেটা আর কেউ নয় ইলহাম। সে দিন কি এই ভালোবাসাটা থাকবে?
ইলহাম হাতটা সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো…
।
।
চলবে
আমার পেইজে লাইক দিয়ে রাখার অনুরোধ রইলো Story by Ruhi jahan
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করি🌹