শঙ্খচিল পর্বঃ-৪৬

0
1317

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪৬

ইলহাম তানহার রুমে প্রবেশ করলো, তানহা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। ইলহাম ক্ষানিক ক্ষন তাকিয়ে রইলো, তানহার মলিন মুখটা দেখে হঠাৎ তার মায়া অনুভব হচ্ছে। গোলাপি ফর্সা মুখটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে, হালকা গোলাপি ঠোঁট দুটো ধুসর রঙ ধারন করেছে।
ইচ্ছে করছে তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। ইলহাম তার ইচ্ছে টাকে সংবারণ করতে পারলো না, তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই তানহা চোখ মেলে তাকালো।
অস্ফুট কন্ঠে বললো, ” ইলহাম।”

” হুম।”

” আপনি সত্যি এসেছেন নাকি আমি জ্বরের ঘোরে স্বপ্ন দেখছি।” বলেই ইলহামের হাতের ওপর হাত রাখলো।

ইলহাম কিছু বললো না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ইলহামের অতীতের কথা, বার বার মনে নাড়া দিচ্ছে, তানহা যখন জানবে, ছদ্দবেশে সে নিজেই ভয় দেখানোর জন্য কিডন্যাপ করেছে, তানহাকে মানুষীক কষ্ট দিয়েছে, সে দিন সন্ধ্যায় খুনী ছেলেটা আর কেউ নয় ইলহাম। সে দিন কি এই ভালোবাসাটা থাকবে?
ইলহাম হাতটা সরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তানহা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

তানহা খুব কষ্টে উঠে বসলো, গুটি গুটি পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ইলহাম শিঁড়ি বেয়ে নেমে, নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মাথার চুল গুলো ঠিক করলো। হঠাৎ একটা একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ইলহাম ধূমপান করা শুরু করলো। এবং চারিদিকে তাকিয়ে, আনমনেই কিছু একটা ভেবেই চলেছে৷
সিগারেট টা শেষ হতেই ইলহাম, সিগারেটের আধ পোড়া শেষ অংশটা মাটিতে ফেলে পায়ে পিষে ফেললো। এজ ইউজুয়াল ইলহামের যেমন টা অভ্যাস।

ইলহাম হাঁটা শুরু করলো, তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বার বার তাকে টের পাইয়ে দিচ্ছে, ইলহামের মনে হচ্ছে তাকে কেউ দেখছে। ইলহাম মনের খচ খচানি টা দূর করার জন্য পেছনে তাকালো,আনমনে ওপরে তাকাতেই দেখলো তানহা জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টি তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট দুটো অনবরত কাঁপছে তার।
ইলহাম আবারো তার মতো করে হাটতে শুরু করলো।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে নন্দু ভাইয়ের লোকেশন দেখলো৷ নন্দু ভাই ধানমন্ডি দিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে।
রাতের বেলা যখন ইলহাম যখন তানহার সাথে কথা বলছিলো, ঠিক তখনি ল্যাপটপে তখনি জিপিএসের লোকেশনটা আটকে যায়, পলাশি বাজারে আটকে যায়। এবং সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, নন্দু ভাই তানহাদের বাসার আশে পাশেই সারা রাত ছিলো।
ভোর হতেই ইলহাম তাই খুব বেশি দেরি করে নি। নিজের মতো প্রস্তুতি নিয়ে চলে এসেছিলো।

নন্দু ভাইয়ের খুব কাছাকাছি থাকা শর্তেও ইলহাম কিছু করে নি, আড়ি পেতে ছিলো শুধু মাত্র ব্লাক কোবরার জন্যই। হঠাৎ মানহা ভাবীর বাবা এসেই সব টা ঘেটে দিলো।
ভাগ্যিস উনি বুঝতে পারেন নি ইলহাম এখানে মাফিয়া ধরতে এসেছে, তানহা অসুস্থ তাকে দেখতে আসার ছুঁতো দিয়ে সে কাটিয়ে চলে আসতে পেরেছে। লোকেশন দেখছে এবং হাটছে। হাটতে হাটতে এক সময় ইলহাম থানায় এসে পৌঁছালো।

————————————————-

” এই যে মিসেস আপনার ঘুম হলে এবার উঠুন। ”

মানহা আড়মোড়া হয়ে বললো, ” উমহহ! আরেকটু ঘুমাই। ”

ওয়াহাব স্মিথ হেসে ফিস ফিস করে বললো, ” দুপুর দুটা বাজে এখন। সে খেয়াল কি আছে…”

বলতে বলতেই মানহা ঘুমের থেকে উঠে ধপাস করে বসে পড়লো। বিস্ময় নিয়ে বললো, ” দুটো বাজে এখন। ”

ওয়াহাব বিছানায় শুয়ে বললো। ” হুম। ”

” আপনি আমাকে আগে ডাক দেন নি কেনো বলুন তো। ধ্যাত সবাই কি মনে করবে। নতুন বউ পড়ে পড়ে ঘুমায় শুধু। ”

” কত বার ডাক দিয়েছি জানেন, আপনি তো ওঠেন-ই না। আর কে কি মনে করলো, এটা নিয়ে বসে থাকলে তো অন্যের কথা, নিজের জীবন পরিচালনা করা হবে।”

” আমি এখন ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে যাই। যদি মা আবার রাগ করে..” বলেই দ্রুত মানহা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
ফ্রেশ টেবিলে যেতেই দেখলো খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।
তানহা কে দেখা মাত্রই কুসুম বেগম বললেন, ” মানহা খুব জার্নি করেছো। এসো খেতে বসো?”

” জ্বি মা। ” বলেই তানিয়ার পাশে বসলো।
কুসুম বেগম মানহার প্লেটে ভাত বেরে দিচ্ছেন। অপর দিকে ওয়াহাব মানহার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার সামনে মানহা ওয়াহাব কে কিছু বলতেও পারছে না।
হঠাৎ মানহার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসলো। মানহা পা বাড়িয়ে ওয়াহাবের পায়ে সুরসুরি দিতেই ওয়াহাব ভরকে গেলো।
মানহা একবার ওয়াহাবের এক্সপ্রেশন দেখে মাথা নিচু করে হাসলো, যাতে কেউ টের না পায়।

ওয়াহাব মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছে ঠিক তখনি মানহা আবারো পা দিয়ে সুর সুরি দেয়ার চেষ্টা করলো, ঠিক তখনি ওয়াহাব মানহার পা তার পা দিয়ে চেপে ধরলো। ভয়ে মানহা হেচকি দিতে শুরু করলো। ওয়াহাবের দিকে তাকাতেই ওয়াহাব পৈশাচিক হাসি দিলো, মানহা ছল ছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উঠে দাঁড়াতেও পারছে না মানহা।
তানিয়া দ্রুত এক গ্লাস পানি মানিহা কে পান করতে দিলো৷ পানি খাওয়ার পর মানহার হেঁচকি থামলো না।

কুসুম বেগম মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। হঠাৎ ওয়াহাবে তার পায়ের বন্ধনী থেকে মানহার পা মুক্ত করলো। মানহা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এই অসভ্য লোকটা আসলেই খারাপ, নিজে দুষ্টুমি করবে তাতে সমস্যা নেই। মানহা দুষ্টুমি করলেই দোষ। হুহ!
কুসুম বেগম মানহার প্লেট টা হাতে নিয়ে ভাত মাখে মানহা কে খাইয়ে দিলো। মানহার মুখ দিয়ে কোন শব্দ হচ্ছে না সে খেয়েই যাচ্ছে। কুসুম বেগম প্লেটে সব টুকু ভাত মানহা কে খাইয়ে দিলো।

” আরেক টু খাইয়ে দিবো?”

মানহা জরানো কন্ঠে বললো, ” না মা। ”

“তুমি কান্না করছো কেনো? কি হলো?”

মানহা মুখে হাসি টেনে বললো, ” শেষ কবে মায়ের হাতে খেয়েছিলাম মনে নেই, মায়ের পরে কেউ এভাবে খাইয়ে দেয় নি। তাই আরকি… ”

মতি সাহেব বললেন, ” তোমার শ্বাশুড়ি মা তোমার মায়ের মতোনই, কিন্তু ওপরটা একটু শক্ত হলেও মন টা খুব নরম। ”
মতি সাহেবের কথা,শুনে টেবিলে বসা সবাই হো হো করে হেসে দিলো। কুসুম বেগম কড়া দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকালেন। মতি সাহেব, এক গাল হেসে উঠে চলে গেলেন।
” আর খাবো না মা। ”

” আচ্ছা। তুমি ভেসিনে গিয়ে হাতটা ধুয়ে নাও। ”

মানহা উঠে হাত ধুতে চলে গেলো, পিছু পিছু ওয়াহাব ও উঠলো। ওয়াহাম মানহার কানে ফিস ফিস করে বললো, ” কেমন লাগলো এন্টোবায়েটিক? ”

মানহা চমকে গিয়ে বললো, ” আপনি? আপনি জানেন আমি কতো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ”
ওয়াহাব হাসলো, মানহা রেগে গিয়ে বললো, ” কথা বলবেন না আমার সাথে। ”
বলেই মানহা রুমে চলে এলো, শোকেস থেকে সমরেশ মজুমদারের সাতকহন বইটা নিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।
ওয়াহাব নিঃশব্দে বিছানায় শুয়ে পড়লো, হঠাৎ মানহার ওয়াহাব কে দেখে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো, ” আপনি কখন এলেন?”

” কিছুক্ষণ আগে।”

” এখানে কেনো শুয়েছেন? ”

ওয়াহাব অবাক হয়ে বললো, ” তাহলে কোথায় শুবো?”

মানহা আমতা আমতা করে বললো, “তা আমি কি জানি? ”

ওয়াহাব মানহাকে টেনে কাছে নিয়ে, মানহার কানে ফিস ফিস করে বললো, ” আমি এখানেই শুবো। আপনার পাশে৷ দেখি আপনি কি করতে পারেন। ” মানহা অবাক হয়ে ওয়াহাবের দিকে তাকিয়ে রইলো।
” আপনি এতো ছ্যাচড়া কেনো? ছারুন বলছি।”

ওয়াহাব হেসে বললো, ” আমি যে ছ্যাচড়া তা আপনি জানেন আর কেউ জানে না৷ ”

” হুহ!”

———- দুই দিন পর —————-

তানহার জ্বর সারলো দু দিন পর। অবশ্য জ্বর পুরো পুরি সারে নি তবে আজকে তানহার শরীর টা একটু ভালো৷ দুপুরের পরে জ্বরটা ছাড়তেই, তানহা বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হলো। সে দিন ইলহাম কে দেখে প্রথম বার, জেনেছে ইলহাম ধূমপান করে। তার চেয়েও বড় কথা হলো ইলহামের সিগারেট খাওয়ার ধরণটা তার খুব চেনা, তবে তানহা চিনতে পারছে না।
দু দিন ধরে সে ভেবেই চলেছে। হঠাৎ তানহার খুনি লোকটার কথা মনে পড়লো। ইলহামের সিগারেট খাওয়ার ধরণ একে বারেই খুনি লোকটার মতো।

তবে ইলহামের মতো সুদর্শন যুবক কি ভাবে খুনি হতে পারে, আর ওই খুনি লোকটা তো কুচ কুচে কালো। তার চেয়েও বড় কথা ইলহাম একজন পুলিশ।
তানহার মনে এখন অনেক সন্দেহ, অনেক প্রশ্ন অনেক কৌতুহল। এর উত্তর শুধু ইলহাম দিতে পারবে…


চলবে
কেমন লাগছে জানাবেন সবাই 🌹

যারা গল্পটা পড়েন সবাই কমেন্ট করে যাবেন আশা করি☺️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here