#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৪৯
গত রাতের ট্রেনে ওয়াহাব ঢাকায় ফিরে এসেছে, সাথে মানহাও। ওয়াহাব কমলাপুর থেকে উবারের গাড়ি ভাড়া করে মানহার সাথে ক্ষানিকটা আগেই রওনা দিয়েছে।
তানিয়া এবং শাহেদ পরবর্তী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। লং জার্নিতে মানহার শরির খুব একটা ভালো নেই। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে মানহা চোখ বুজে গাড়িতে হেলান দিয়ে আছে, এসির বাতাসে খুচ খুচে কাঁশি হচ্ছে৷ ওয়াহাব এসি বন্ধ করতে বলে, নিজের ব্লেজার টা খুলে মানহার গায়ে জরিয়ে দিলো।
মানহা ওয়াহাবের দিকে তাকিয়ে, চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে রইলো। ওয়াহাব মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ” আপনার শরিরের তাপ টা মাপা দরকার। ”
মানহা কেঁশে বললো, ” কিছু হয় নি আমার। একটু শর্দি লেগেছে আর কি! ”
” কতবার বললাম, ট্রেনের জানালা বন্ধ করতে, কে শোনে কার কথা। সারা রাত বাতাস পেয়ে আপনার ঠান্ডা লেগে গেছে। ”
” থামুন তো। কড়া করে এক কাপ চা খেলে ঠিক হয়ে যাবে। এখন একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিন তো। ”
ওয়াহাব স্মিথ হেসে মানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মানহা ওয়াহাবের বাহুডোরে গুটি সুটি মেয়ে পড়ে রইলো।
শিহাব গাড়িতে ওঠার পর পরই ঘুমিয়ে পড়েছে। তানিয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। হঠাৎ শাহেদের দিকে তাকাতেই তানিয়া দেখলো, শাহেদ আনমনে কিছু একটা ভেবেই চলেছে৷ তানিয়া শাহেদে কে পর্যবেক্ষণ করলো, শাহেদ সত্যি সিরিয়াস কিছু নিয়েই ভাবছে। তানিয়া জিজ্ঞেস করবে কি না বুঝতে পারছে না। তানিয়া আমনে কিছু একটা ভেবে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো।
হঠাৎ শিহাব নড়ে চড়ে উঠতেই তানিয়া বললো,
” শিহাব উঠে পড়ো বাবা। ”
” আম্মু আরেকটু ঘুমাই। ”
” উহু৷ আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি। ওঠো এবার। ”
তানিয়া অবাক হয়ে শাহেদের দিকে তাকালো, দু জন মানুষের কথপোকথন শুনেও শাহেদের ভাবনায় ছেদ পড়ছে না, কি এমন ভাবছে শাহেদ।
তানিয়া এবার শাহেদ কে ডেকে বললো, ” শাহেদ, শাহেদ। ”
” হুঁ।”
” শিহাব কে বসাও। ”
শাহেদ শিহাবের মুখ পানে তাকিয়ে বললো,” ঘুমাক না৷ শিহাব ঘুমালে মুখটা কি মায়াবী লাগে। ”
তানিয়া কিছু বললো না, শ্বাস ফেলে আবার শাহেদ বললো, ” আবার কবে না কবে ছেলেটাকে দেখতে পাবো৷ ”
তানিয়া অবাক হয়ে বললো, ” মানে?”
” কিছু না। আমরা চলে এসেছি।”
হঠাৎ গাড়িটা থামতেই তানিয়ার ধ্যান ফিরলো। শিহাব কে জাগিয়ে তুললো, শিহাব বাবার হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। তানিয়া ও নামলো। দারোয়ান চাচা ভেতরে সব ব্যাগ গিয়ে সব ব্যাগ পত্র এগিয়ে দিলো। শাহেদের ছন্ন ছাড়া কথা বার্তা তানিয়ার মটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। শিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় আনমনে তানিয়া বললো,
” শাহেদ! ”
শাহেদ পেছনে তাকিয়ে বললো, ” হুঁ? কিছু বলবে?”
” কিছু না। ওপরে চলো। “। বাসার ভেতরে ঢুকে তানিয়ে শিহাব কে ফ্রেশ হতে বললো৷ শিহাব রুম থেকে যেতেই তানিয়া শাহেদ কে প্রশ্ন করলো,
” কি হয়েছে তোমার? এতো অন্য রকম লাগছে কেনো?”
শাহেদ আমতা আমতা করে বললো, ” কোথায় কিছু হয় নি তো?”
তানিয়া আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছো না তো?”
শাহেদ বিস্ময় নিয়ে বললো, ” তেমন কিছু না। ”
তানিয়া থম থমে মুখ নিয়ে বললো, ” আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি নতুন করে ভাবতে শুরু করেছি। আমাকে না জানিয়ে এমন কিছু করো না যাতে দ্বিতীয় বারের মতো আমার স্বপ্ন ভেংগে যায়। ”
বলেই তানিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, শাহেদ দৈর্ঘ্য শ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে রইলো।
———————————————————-
তানহার এইচ.এস.সি পরিক্ষার আর মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকি। পরিক্ষার পড়ার চাপে তানহা, খাওয়া দাওয়া দিকেও ধ্যান দিচ্ছি না। শেহতাজ বেগমের বকুনি খেয়ে তানহা খাবার চিবুচ্ছে এবং বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। শেহতাজ বেগম মৃদু ধমক দিয়ে বললো,
” সারা বছর পড়ার নাম নেই এখন বই ছেড়ে উঠতে পারিস না। ”
” উফফ দাদী পরিক্ষা কি আর সারা বছর হয় বলো? যখন হয় তখন তো মনোযোগ দিতে হবে নাকি । ”
” দে মনোযোগ না করলো কে৷ কিছু দিন আগে এই জ্বরের থেকে উঠলি। আর এখন ঠিক মতো না খেলে, শরির তো আবার দূর্বল হয়ে যাবে। ”
তানহা মুখ টিপে হেসে বললো, ” তুমি থাকতে আমার হাত দিয়ে খেতে হবে কেনো?”
শেহতাজ বেগম বিরক্ত হয়ে বললো, ” শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি। তখন তো আর এই বুড়িটাও থাকবে না। ”
” শ্বশুর বাড়ি যাবোই না। ”
শেহতাজ বেগম তানহার মুখে ভাতের লোকমা এগিয়ে দিয়ে বললো, ” এভাবে বলে না তানহা। স্বামীর বাড়িতে একদিন না একদিন সবারই যেতে হবে। সেই পুরুষ মানুষ টার হাত ধরে আজীবন আকঁড়ে ধরে বাঁচতে হবে। ”
দাদীর কথার তালে তালে তানহা অন্যমনস্ক হয়ে গেলো, হঠাৎ করেই ইলহামের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ইলহামের সাথে ঝগড়া, ইলহামের সাথে সব কথপোকথন তানহার চোখের সামনে যেনো সব পূর্নরায় ঘটে। আচ্ছা সে কি ইলহাম কে ভালোবাসে?
তানহার হঠাৎ মুচকি হাসি দিলো, তানহার মন বলছে সে ইলহামের প্রেমে পড়েছে।
ইলহাম কে সে ভালোবাসে। কিন্তু ইলহাম তাকে ভালোবাসে না, ইলহামের ভালোবাসে অনামিকা কে? ইলহাম কি তানহা কে একবারটি সুযোগ দেবে। হয়তো দিবে না। প্রথম ভালোবাসা পূর্নতা না পেলে-ও মানুষ এক জীবনে প্রথম ভালোবাসা টাকে নিয়ে আকঁড়ে বাঁচতে চায়। ইলহাম যেমন অনামিকা কে ভালোবাসে, তানহাও ঠিক তেমন ইলহাম কে ভালোবাসে। হোকনা ভালোবাসা টা ট্রায়ংগেল কিন্তু ভালোবাসা টা তো সত্য। অনুভূতির গুলো তো সত্য।
” চুপ করে গেলি যে?”
হঠাৎ শেহতাজ বেগমের কথায় তানহার ধ্যান ভাংলো তানহা কোনমতে খাবার গিলে বললো, ” আর খাবো না দাদী পেট ভরে গেছে।”
” প্লেটে এখনো খাবার রয়ে গেছে। ”
” প্লিজ দাদী৷ ” শেহতাজ বেগম আর জোর করলেন না। খাবারের প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলেন।
তানহা হাতে থাকা কলম টা দিয়ে বইয়ে মার্ক করলো। সে দিন ইলহাম ব্লাক কোবরার পরিচয় দেয় নি। সেদিনের পর তিন দিন কেটে গেলো, ইলহাম কি ব্লাক কোবরার পরিচয় জানতে পেরেছে? মনে মনে এক গাদা প্রশ্ন নিয়ে তানহা পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। হঠাৎ ফোনটা ভু ভু শব্দ করতেই তানহা টেবিল ছেড়ে ফোনটা হাতে নিলো, রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,
” বোন কে তো ভুলেই গিয়েছিস। কোন খোঁজ খবর নিতে ইচ্ছে করে না। ”
তানহা জ্বিভ কেটে বললো, ” সরি আপু। আমি তো ভেবেছি তুমি এখনো খুলনা। তাই তোমাকে ডিস্টার্ব করি নি। ”
” তিন দিন হলো ঢাকায় এসেছি। তোর পড়া শোনার কি খবর? ”
তানহা একটু ভেবে বললো,” ভালো। এক সপ্তাহ পর এক্সাম শুরু। ”
” মাত্র এক সপ্তাহ? কালকে তুই কলেজে আসবি? ”
” ক্লাস তো শেষ। কেনো বলো তো। ”
” কত দিন তোকে দেখি না। আমারো ক্লাস রেগুলার হচ্ছে, যদি আসতি। ভালো হতো। ”
” ঠিক আছে আসবো। আগামীকাল বিকেলে। এবার খুশি? ”
” হু। এবার মনোযোগ দিয়ে পড়।”
“আচ্ছা রাখছি। ” বলেই তানহা ফোনটা কেটে দিলো। অন্য সময় হলে তানহা রাজি হতো না, তবে ইদানীং তার ইলহাম কে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে। ভালোবাসা বোধহয় এমনিই —পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে এই লোকটার গলার আওয়াজ শুনতে ইচ্ছে করে, এই লোকটাকে দু চোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে হয়। এই লোকটাকে শুধু ভালো লাগে, আর কারো কথা ভাবতে ইচ্ছে করে না।কি অদ্ভুত তাই না?—
————————————————–
দশ টা কি সারে দশটা বাজে, সবার খাওয়া শেষে তানিয়া সহকারী মহিলা কে গোছানো দ্বায়িত্ব দিয়ে, মাত্র রুমে ঢুকলো। ফ্যান অন করে বসতে, হঠাৎ শাহেদ রুমে এলো। তানিয়া এক পলক তাকিয়ে দেখলো, শাহেদ নার্ভাসনেসের চোটে ঘামছে, মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে খুব চিন্তায় আছে। হঠাৎ শাহেদ বলতে শুরু করলো,
” তানিয়া আমি কিছুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম। আমাকে এই সপ্তাহের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে। ”
তানিয়া অবাক হয়ে বললো…
।
।
চলবে
RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি আমার গ্রুপে জয়েন হবার অনুরোধ রইলো।
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই, গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি 🌹