শঙ্খচিল পর্বঃ-৫১

0
1503

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫১

মানহা আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” তুই এই বাড়িতে এর আগে এসেছিলি তাই তো? ”

তানহা মাথা দুলিয়ে বললো, ” হ্যাঁ। ”

” আমি আগেই বুঝে ছিলাম। ইলহাম ভাইয়ের রুম টা বাসার শেষ প্রান্তে তাই খুব কম মানুষ ইলহাম ভাইয়ের রুম চেনে৷ তুই কবে এলি আর কিভাবে চিনলি এটা ইলহাম ভাইয়ের রুম। ”

তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” আসলে তুমি যেদিন খুলনা গিয়েছিলে সে দিন এসেছিলাম। তার পর জানলাম তোমরা সবাই খুলনা গিয়েছো।” তানহা মিথ্যা কথা বলে, মানহার সন্দেহ দূর করবার চেষ্টা করলো।

” তাহলে আগে বলিস নি কেনো! আর তুই মিথ্যা বললি কেনো গেইস করেছিস?”

” আমার বলতে মনে ছিলো না আপু। ”

” অহহ। চল। নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ”

” চলো। ”
বলেই তানহা মানহার পিছু পিছু হাটতে শুরু করলো। রুম থেকে বের হয়ে মানহা কিছু একটা ভেবে দাঁড়িয়ে গেলো, মানহা আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

” বাই এনি চান্স তুই ইলহাম ভাইয়ের প্রেমে পরিস নি তো?”

তানহা না চাইতে হেসে ফেললো, তানহা হাত দিয়ে মুখ চেপে রাখার চেষ্টা করছে, মানহা আগের মতোই আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” কি হলো? কিছু বলছিস না যে? ”

” তুমি যে কি বলো না আপু। ”

” আমাকে বোকা ভাবিস না তুই। তোর বড় বোন আমি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাস না৷ ”

তানহা মাথা দুলিয়ে বললো, ” হ্যাঁ আপু। আমি ইলহাম কে ভালোবাসি।

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” এতো বড় একটা কথা তুই আমাকে এখন বলছিস। আগে কেনো বলিস নি?”

” কোন মুখে বলবো আপু? ইলহাম তো আমায় ভালোবাসে না। ”

” তুই কিভাবে জানলি? ”

তানহা বিড় বিড় করে বললো, সব জানি আপু তোমার সাথে কি ভাবে শেয়ার করি বলোতো?কিছু ভালোবাসা প্রকাশ করা তো নিষেধ।
তানহাকে হঠাৎ চুপ হতে দেখে মানহা বললো, ” কিছু বলছিস না যে?”

” আমি জানি আপু। উনি আমায় ভালোবাসেন না। উনি নিজেই আমাকে বলে দিয়েছেন। ”

” ওহহ! আমি ভেবে ইলহামের সাথে কথা বলবো। তোর পরক্ষাটা শেষ হোক৷ ”

তানহা শ্বাস ফেলে বললো, ” বললেও মনে হয় না কোন লাভ হবে।”

বলতে বলতে, তানহা বসার রুমে সোফায় বসলো, ট্রে থেকে একটা বিস্কিট হাতে নিলো। হঠাৎ বেল বাজতেই সহকারী মহিলা দ্রুত গেলেন দরজা খুলতে, তানহা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে, কে এসেছে তা দেখার জন্য৷ হঠাৎ ইলহাম কে বাসায় ঢুকতে দেখে তানহার ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। কত গুলো দিন পর সে ইলহাম যে দেখছে৷ তানহার চোখের তৃষ্ণা মেটে না৷ তানহা এক দৃষ্টিতে ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে, ইলহাম রুমে দিকে যাচ্ছে, হঠাৎ তানহার চোখে চোখ পড়তেই তানহা চোখ নামিয়ে ফেললো। কাধে বড় ব্যাগটা নিয়ে ইলহাম রুমে চলে গেলো।

——————————————-

রাত আটটা কি সারে আটটা বাজে। তানহা বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওয়াহাব দুলাভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করার কারনেই ক্ষানিকটা দেরি হয়েছে তার। তানহা তার সাইড ব্যাগ টা খুলে, ফোনটা ভেতরে রাখলো। ওয়াহাব তানহার উদ্দেশ্য বললো,
” তানহা আজকের রাত টা না হয় থেকে যাও। তোমার ভালো লাগবে, মানহার ও ভালো লাগবে। ”

তানহা ক্ষানিক হেসে বললো, ” পরশু থেকে পরিক্ষা দুলাভাই, বুঝতেই তো পারছেন পড়ার অনেক প্রেশার। এক্সামের পর এসে না হয় থাকবো। ”

মানহা ওয়াহাবের উদ্দেশ্য বললো ” তুমি ওকে দিয়ে আসবে?”

তানহা সাইড ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বললো, ” আমি একাই যেতে পারবো দুলাভাই। ”

ইলহাম রেডি হয়ে, হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে বললো, ” আমার আজ পলাশি বাজারে ডিউটি আছে। আমি ড্রপ করে দিতে পারি৷ ”

ওয়াহাব বললো, ” ঠিক আছে৷ তুই তানহাকে বাসা অব্দি পৌঁছে দিস। ”

ইলহাম যেতে যেতে বললো, ” আচ্ছা ভাইয়া। ”

” আসছি। ” বলেই তানহা সবার কাছে বিদায় জানিয়ে ইলহামের পিছু পিছু হাটতে শুরু করলো।

বাসার নিচে আসতেই তানহা দেখতে পেলো। ইলহাম বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তানহা বাইক দেখে ক্ষানিকটা অবাক হয়ে বললো,
” বাইক দিয়ে যাবো?”

” জ্বি।সরকারি গাড়ি শুরু পুলিশ আর আসামি দের জন্য। পেছনে বসে পরুন৷ ”

তানহা বাইকের পেছনে কোন মতে বসে বললো, ” আমি কখনো বাইকে চড়িনি, আমার ভীষণ ভয় লাগে। যদি পড়ে যাই?”

ইলহাম একটু হেসে বললো, ” পড়বেন না। এক হাত আমার কাধে রাখুন। আরেক হাত বাইকের পেছনে। ”
ইলহামের কথা মতোই তানহা এক হাত ইলহামের কাধে রাখলো। ইলহাম বাইক স্টার্ট দিলো। বাতাসে তানহার চুল গুলো, উড়েই চলেছে, তানহা ঠিক মতো তাকাতেও পারছে না।
ধানমন্ডি তিনের আসতেই লেকের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ সে দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। ইলহাম মানুষ টা এতো নিখুঁত ভাবে অভিনয় করে, মাঝে মাঝে তানহার সাইকো মনে হয়। বুঝার উলায় নেই সে একজন পুলিশ।

হঠাৎ বাইকটা থামতেই, তানহার ধ্যান ভাংলো৷ তানহা হন্ত দন্ত হয়ে বললো , “বাইক থামালেন কেনো?”

” আমার বাইকে সারা রাত ঘুমোনোর ইচ্ছে আছে নাকি?”

” মানে?”

” আপনার বাসার কাছেই এসেছ বাইক থামিয়েছি। ”

তানহা চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো, সত্যি সে তাদের বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে, তানহা অস্ফুট কন্ঠে বললো, ” থ্যাংক ইউ। লিফট দেওয়ার জন্য। ”
ইলহাম কোন জবাব দিলো না। হঠাৎ ইলহাম দ্রুত কোন মতে হ্যালমেট পড়ে বাইক স্টার্ট দিলো। ইলহামের অন্য হাতে ফোনে কিছু একটা দেখেই চলেছে। তানহা ইলহামের যাবার পানে তাকিয়ে রইলো, এই লোকটস কি কখনোই তাকে বুঝবে না। তার জমানো খুচরো ভালোবাসা গুলো জানবে না…

————————————————–

এয়ারপোর্টের বাইরে শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শিহাব৷ ওয়াহাব ব্যাগ গুলো ঠিক ঠাক গুনে নিচ্ছে। ক্ষানিকটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া৷ অন্য দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি মুছছে। এছাড়া তার করার-ই বা কি আছে। ওয়াহাব ব্যাগ গুলো ঠিক করে বললো,
” দুলাভাই আপনার ব্যাগ কমপ্লিট। ”

ওয়াহাবের কথা শাহেদের কান অব্দি পৌঁছানো শর্তেও শাহেদ তানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ শিহাব হাতটা ধরে বললো, ” বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে না?”

” হুঁ। বলবো তো। ” শাহেদ ধীরে ধীরে তানিয়ার কাছে এগিয়ে গেলো। তানিয়া তার চোখ দুটো মুছার ব্যার্থ চেষ্টা চালিয়ে গেল্য। শাহেদ কাছে যেতেই তানিয়া শাহেদের দিকে তাকিয়ে বললো, ” তোমার এলার্জির ঔষধ নিয়েছো?”

” হুম। ”

” এবার গেলে আর কখনো প্লিজ ফিরে এসো না৷ একে বারের জন্যই চলে যে যেওএতো দিন তোমাকে ছাড়া যে ভাবে ছিলাম, সে ভাবেই বাকি জীবন টা থাকবো। ”
বলেই তানিয়া বাসায় ফেরার জন্য গাড়িয়ে উঠে বসলো। শাহেদ তানিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তানিয়ার বলা কথা গুলো গুলির মতো তার ভেতর টা ঝাঝড়া করে দিচ্ছে।
। তানিয়ার গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো শাহেদ, গাড়ির জানালায় টোকা দিতেই তানিয়া অবাক হয়ে তাকালো।
তানিয়া গাড়ি থেকে বেড়িয়ে বললো
” তুমি এখানে? তোমার ফ্লাইটের আর কয়েক মিনিট বাকি আছে।”

শাহেদ তানিয়ার পাশে বসতে বসতে বললো, ” এই মূহুর্তে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তানিয়া অবাক হয়ে বললো, ” কি সিদ্ধান্ত। ”

” আমি আস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি না। ”

তানিয়া বিস্ময় নিয়ে বললো, ” কিহহহ!”

” হুম। আমি জানি আমাকে ছাড়া তুমি আর শিহাব আগের মতোই ভালো থাকবে। কিন্তু তোমাকে আর শিহাব কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। আমার দ্বারা আর সম্ভব নয়। আর বিদেশে নয়, আমি ঢাকাতেই চাকরি করবো তোমার আর শিহাবের সাথেই থাকবো। আর কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাকে…”

তানিয়া উচ্চ স্বরে কেঁদে উঠলো, শাহেদ তানিয়াকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বললো, ” অনেক ভালোবাসি তানিয়া। ”
তানিয়া, আগের মতো কেঁদেই চলেছে। শাহেদ তানিয়ার মাথায় চুমু দিলো।

” মামু বাবা-মা কি করছে?”

ওয়াহাব হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে, শিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো, ” জমে থাকা অনুভূতির স্তুপ গুলো প্রকাশ পাচ্ছে। ”
শিহাব কিছু বুঝলো বলে মনে হলো না। ওয়াহাব শ্বাস ফেলে বললো, “ভাগ্যিস খালি লাগেজ, ব্যাগ গুলো নিয়ে এসেছিলাম। না হলে এগুলো আবার আমাকেই তুলতে হতো। ”


চলবে
গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here