শঙ্খচিল পর্ব-২১

0
1755

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-২১

” মনে পড়েছে, তুমি তখন কি যেনো বলতে চাচ্ছিলে? আমি ভুলে গিয়েছিলাম। ”

বলেই দম ফেললো তানিয়া৷ মানহা মাথা নিচু করে মিন মিনিয়ে বললো,
” আমি কালকে থেকে আর পড়াতে আসবো না। ”

তানিয়া হতবম্ব হয়ে বললো, ” কেনো? শিহাব কি দুষ্টুমি করেছে? বলো? ”

” না আপু। শিহাব যথেষ্ট ভদ্র বাচ্চা। আসলে আমি কেনো আসবো না তা বলতে পারবো না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না আপু.. ”
বলেই মানহা রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। তানিয়া আগের মতোই অবাক হয়ে বসে রইলো, পিছু ডাক দিতে গিয়েও দিলো। মানহার হঠাৎ টিউশনি ছাড়াটা তানিয়াকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। অনেকক্ষন ভাবার পরও তানিয়া কোন কারন খুঁজে পেলো না। তাই বাধ্য হয়ে-ই ওয়াহাবের ফোনে কল দিলো৷ টানা তিন বার কল দেওয়ার পর -ও ওয়াহাব কলটা রিসিভ করলো না।
ওয়াহাব কল বেক করলো দু ঘন্টা পরে। ভাইয়ের কল পেয়ে তানিয়া দ্রুত ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওয়াহাব বললো,
” আমি ওটি তে ছিলাম আপু। এখন বলো, কল দিয়েছিলে কেনো?”

” মানহা আর আসবে না৷ ও টিউশনি টা ছেড়ে দিয়েছে। ”
” কিহহ! কিন্তু কেনো? ”

” কারন কিছুই বলে নি। তবে ওকে দেখতে খুব ডিপ্রেশড লাগছিলো।”

ওয়াহাব মুচকি হেসে বললো, ” ও আচ্ছা।”

তানিয়া পূর্নরায় অবাক হয়ে বললো, ” তুই ও বলছিস আচ্ছা। মেয়েটা কেনো চলে গেলো তোর মনে কোন প্রশ্ন নেই ভাই?”

“সপ্তাহ খানেক আগে মানহা শুনে ছিলো আমার বিয়ে জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। ব্যাপারটা ও নিতে পারে নি। তার পর থেকেই ওর মধ্য পরিবর্তন দেখছি। ”

তানিয়া ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, ” ও ও ও তাহলে এই ব্যাপার। আজ কাল এতো কিছু হচ্ছে….”

—————————————————

সকাল বেলার ব্যাপার টা তানহা কে ভীষণ ভাবাচ্ছে৷ হঠাৎ করে এস.আই ইলহাম কোথায় গায়েব হয়ে গেলো। চোর – ডাকাত ধরতে হলে তার এলাকায় কেনো আসতে হবে, যদিও ডাকাতের পেছনে গিয়ে থাকে তাহলে এখন সে কেমন আছে? সেইফ আছে তো?
প্রশ্ন গুলো বার বার তানহার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।
তানহা ফোনটা বের করলো ইলহাম কে কল দেওয়ার জন্য কিন্তু পরক্ষনেই তার মনে পড়লো ইলহামের ফোন নম্বর তার কাছে নেই। তানহ বিরক্ত হয়ে খানিক হাটা হাটি করে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠিক তখনি বাইরে থেকে বাবার গলার আওয়াজ শুনতে পেলো। আজ বুধবার বাবার তো বিকাল বেলা অফিস থেকে ফেরার কথা না। তাহলে হঠাৎ, কোন বিপদ হলো না তো? তানহা বাবার গলার স্বর অনুসরণ করে দ্রুত বসার রুমের দিকে গেলো।

মুকুল সাহেব হাসি হাসি মুখে সোফায় বসে আছেন। তানহার মতো মানহাও বাবার ডাক পেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। মুকুল সাহেব হাসি মুখে দুই মেয়ের দিকে তাকালেন, মানহা তানহা দুবোন অবাক হয়ে বাবার দিকে জ্ঞিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানহা ঠিক মনে করতে পারছে না, কত বছর পর যে বাবা কে হাসি মুখে দেখছে। নিশ্চই এর পেছনে কোন কারন আছে…
মুকুল সাহেব জুতো জোরা খুলতে খুলতে বললেন, ” একটা সু খবর আছে। ”

” তোমার প্রমোশন হয়েছে? বাবা।” তানহা বললো।

” নারে মা। ”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” তাহলে?”

” তোর জন্য যোগ্যবান পাত্র পেয়েছি। ছেলে ডাক্তার, তুই ও তো বছর দু – তিনেক পরে ডাক্তার হয়ে যাবি৷ দুজন এক সাথে সুখে দুঃখে পাশাপাশি থাকবি। অনেক সুখী হবি তুই। ” কথা বলা শেষ করতে না করতেই মুকুল সাহেবের চোখের চিক চিক করে উঠলো। চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরলো।
মানহা এক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে, কি বলবে বুঝতে পারছে না। কান দুটো সো সো করছে৷ মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। চোখের পলক ফেলতেই মানহার চোকগ দুটো ঘোলা হয়ে এলো। মুকুল সাহেব আবারো বললেন,
” কবে যে তুই এতো বড় হয়ে গেলি? আমার ছোট্ট মানহার বিয়ে হবে। শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে… ”
বলেই শিশুদের মতো কান্না কাটি শুরু করে দিলেন৷ মানহা আগের মতোই মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। তানহা কি করবে বুঝতে পারছে না। বাবা কে সে কখনো এভাবে কান্না করতে দেখে নি, তানহা গিয়ে বাবার পাশে বসলো। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো, ” কান্না করো না বাবা। ”
তানহার কথা শুনে মুকুল সাহেব আগের চেয়ে আরো বেশি গতিতে কান্না করতে লাগলেন। বাবা মা মেয়ের বিয়ের কথা শুনে যতো না খুশি হয়, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পায়। বাবা কে না দেখলে বুঝতো না তানহা৷

শেহতাজ বেগম আঁচল মুখে গুজে দরজার দাঁড়িয়ে আছে। ছেলের কান্না দেখলে কি আর মায়ের মন সয়, সে নিজেই আঁচল দিয়ে মুখে চেপে কান্না করছেন। চোখের সামনে সেই লাল রঙের ফ্রক পড়া ছোট মানহাকে দেখতে পারছেন।
মানহার হাত পা জমে আসছে, সে খুব কষ্টে রুমের ভেতরে গিয়ে দরজা ভেজিয়ে দিলো। বাবার কথা গুলো বার বার তার কানে বাড়ি খাচ্ছে। কি ভাবে সে তার পরিবাকে ছেড়ে ওয়াহাব কে ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে। ওয়াহাব কে ছাড়া তো সে আর কাউকেই ভাবতে পারে না। মানহা ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরলো, যন্ত্রণা গুলো ক্রমশ তার মনে হাতুড়ি পেটাচ্ছে।
.
.
.
রাত নয়টা কি সারে নয়টা বাজে। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও মানহা এখনো তার রুমের দরজা খুলে নি। মুকুল সাহেব খাবার টেবিলে বসে আছেন এবং তার পাশেই মানহার দাদী শেহতাজ বেগম। তানহা তার বোন মানহার রুমের বাইরে পায়চারি করছে এক ঘন্টা যাবৎ। রহিমা খালা মানহার রুমের দরজায় কান ঠেসে দাঁড়িয়ে আছেন ভেতরের পরিস্থিতি বুঝার জন্য, কিন্তু কোন টু শব্দ শুনতে পারছেন না।
ক্ষানিকটা ভীত হয়ে, রহিমা খালা তানহা কে ফিস ফিস করে বললো,
” মানহা মামনী কি উলটা পালটা কিছু করলো নাকি? ”

” আহহ তুমি যে কি বলো না খালা, কি করবে আপু? আর কেনো করবে? ”

” আজ কাল কার মাইয়ারা প্রমিক থাকে তারপরে…”

” তুমি কি ভাবে জানলে আপুর প্রেম আছে? ”

” আজ কার মাইয়া গো থাকে না বয়পেন্ড..”

তানহা বিরক্ত হয়ে বললো, ” বয়পেন্ড না খালা বয়ফ্রেন্ড। আর এখন চুপ করো খালা। না যেনে কিছু বলো না তো। আমি ডাক দিচ্ছি। ” বলেই তানহা মানহার দরজায় কড়া নাড়ে বললো,
” আপু বাবা তোর সাথে কথা বলবে। বাইরে বসে আছে৷ ”

ভেতর থেকে কোন জবাব এলো না৷ রহিমা খালা বললেন, ” কইছিলাম না।”
তানহা রহিমা খালার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। মিনিট পাঁচেক পর মানহা নিজেই দরজা খুলে দিলো। সবাই অবাক দৃষ্টিতে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে। মানহাকে দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে এতোক্ষণ কান্না করছিলো। শ্যাম বর্ন মুখ টা ক্ষানিক ফুলে আছে। কান টা লাল বর্ন ধারণ করেছে, চোখ দুটো রক্তিম প্রায়। মানহা গুটি গুটি পায়ে বাবার কাছে গিয়ে বললো, ” আমাকে ডেকে ছিলে বাবা?”

” হ্যাঁ। ” বলেই মানহা কে বসতে বললো।
মানহা চেয়ারে বসতেই মুকুল সাহেব বললেন, ” তুই কাউকে পছন্দ করিস কি না তা না জেনেই আমি নিজের মতামত জানিয়ে দিয়ে ছিলাম। এটা করা মোটেও আমার উচিত হয় নি। আমার তোর সিধান্ত টাও জানার দরকার ছিলো। যদি তুই চাস আমি পাত্র পক্ষ কে না করে দিবো…”

” আমার মনে কেউ নেই বাবা।” বলেই মানহা থেমে গেলো মনে মনে ভাবলো, যে ছিলো সে ও তো বিয়ে করে নিবে৷ সে যদি বিয়ে করে সংসার করতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবো না। একদিন না একদিন তো বিয়ে করতেই হবে, কারো না কারো সাথে ঘর বাধতেই হবে৷ কারণ পৃথিবীর কারো জন্য থেমে থাকে না। প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলতেই থাকে…

” তুই এই বিয়েতে রাজি? ”

” হ্যাঁ বাবা। ”

মুকুল সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ” তুই অনেক সুখি হবি মা দেখিস। যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি ও অনেক ভালো মানুষ, ভালো ডাক্তার। ”
ডাক্তার শব্দ শুনতেই মানহার মনে পূর্নরায় ছেদ করে উঠলো।

” শুক্রবার বিয়ে পাকা পাকি করতে আসবে ওরা। ”
মানহা মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো, ” আমি রুমে যাই বাবা। ”
বলেই মানহা দ্রুত উঠে চলে গেলো।
শেহতাজ বেগম স্মিথ হেসে বললো, ” লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা৷ আমি জানি ওয়াহাব মানহাকে অনেক ভালো রাখবে, দুজন কে দেখলেই চোখ দুটো জুরিয়ে যায়। ”

মুকুল সাহেব শ্বাস ফেলে বললো, ” ঠিক বলেছো মা। তাই যেনো হয়। মা মরা মেয়েটাকে আল্লাহ পাক সব সময় ভালো রাখুক৷ ”

তানহা ফিস ফিস করে রহিমা খালাকে বললো, ” তুমি শুধুই অযথা চিন্তা করো, দেখলে তো খালা। আপাইয়ের কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে নেই। ”

” তাহইলে মানহা কানতাছিলো কেন?”


চলবে
কেমন হয়েছে কমেন্ট করবেন সবাই। গল্প পড়ে কমেন্ট করেন না কেনো? 😔
গঠন মূলক মন্তব্য গুলো দেখলে কতো ভালো লাগে জানেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here