শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::০৫

শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::০৫
#ইফা_আমহৃদ

— “”মা দেখ তোমার ছেলে বিয়ের আগে বউকে প্রেগন্যান্ট করে ফেলেছে।।বউ নিজের পায়ে হেঁটে এখানে এসেছে।।ভালো চাইলে ডেডকে ফোন করে কাজি নিয়ে আসতে বলো””।।(চেঁচিয়ে বললো আদ্রিতা)

প্রেগন্যান্ট কথাটা কানে বাজতেই ,, আপনাআপনি আরেকটা হাত পেটে চলে গেল।। আদ্রিক আহম্মেদের বাড়িতে এসে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ,, ভাবতে পারে নি ইফা।।শরীরটা ক্লান্ত লাগছিলো তাই পেটে হাত দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলো ,, কিন্তু সেটাকে একটা মেয়ে এভাবে ভাবতে পারে ।।সেই ধারনা ইফার ছিল না।।
আদ্রিতার চিৎকার শুনে দ্রুত পা বাড়িয়ে নিচে নামলো তাহমিনা।।সদর দরজার সামনে একটা অচেনা মেয়েটকে পেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।।আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল…

— “”কি বলছিস তুই আদ্রু!! আমার রৌদু ,, আমাদের ছাড়া বিয়ে করে ফেলেছে?? হাই আল্লাহ”!!(কপালে হাত দিয়ে তাহমিনা)

— “মম প্লীজ চুপ করো ।।আমি সিউর জানি না,, কিন্তু এটুকু জানি এই মেয়েটার সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক আছে ।।কারন ,, মেয়েটার পিক আমি ভাইয়ার ওয়ালপেপারে দেখেছিলাম।।আর ভালোভাবে খেয়াল করে দেখো,, মেয়েটা পেটে হাত রেখেছে ।।তার মানে আমি সিউর ও প্রেগন্যান্ট””।।(তাহমিনার কানের কাছে বিরবির করে আদ্রিতা)

আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে দুকদম এগিয়ে গেল ইফার দিকে।। একটু ঝুঁকে ইফার পেটকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।।মা মেয়ের এমন জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ইফার।। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে এড্রেস টা জোগাড় করেছে।। তাহমিনার পাশ কাটিয়ে ভেতরে গিয়ে বলল…

— “ধ্যাত,, এটা বাড়ি নাকি চিড়িখানা বুঝতে পারছি না।।এসে ফেসে গেলাম নাকি!!( মনে মনে ইফা) আন্টি ,, আমি আদ্রিক আহম্মেদ এর সাথে দেখা করতে এসেছি ।।আপনি একটু ওনাকে ডেকে দিবেন”!!

ইফার মুখে এমন কথা শুনে চোখ চড়কগাছ দুজনের।। ইফাকে দেখে তাহমিনার বেশ পছন্দ হয়েছে।।পড়নে লেডিস জিন্স,,ব্ল্যাক শার্ট।।ফর্সা শরীরে রং বেশ ফুটে উঠেছে।। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,, গোলাপি রঙের ঠোঁট।।রাগে নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে।। একটু পরপর চোখের পলক ফেলছে ,, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো।। তাফমিনার দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল…

— “মম আমি ১০০% সিউর।। ভাইয়া বিয়ের আগে মেয়েটার সাথে লিভিং করেছে।।এখন অস্বীকার করেছে ,, তাই মেয়েটা বাচ্চা সহ এখানে এসে হাজির হয়েছে”??

— “মাশাআল্লাহ,,বেশ দেখতে তো তুমি।। আমি কথা দিচ্ছি আমার ছেলে তোমাকে অস্বীকার করলে ,, আমি তোমাকে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবো”।। (নজর ফোঁটা দিয়ে)

— “দেখুন আন্টি আপনার কোথাও সমস্যা হচ্ছে,, আমি আপনার ছেলের বউ না”!!

— “জানি তো ।।হতে কতোক্ষণ”।।

হাত ধরে টানতে টানতে ইফাকে কাউচে বসিয়ে দিল।। নিজের হাতে খাবারের ট্রে সাজিয়ে টেবিলের উপর রেখে ইফার পাশে বসে পড়লো।।ফলের টুকরো ইফার মুখে পুড়ে দিয়ে ,, আলতো হাতে ইফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।। হঠাৎ ফোনের রিং বাজতেই,, ইফাকে যত্ন করায় ব্যাঘাত ঘটলো তার।।আদ্রিক আহম্মেদ ফোন করেছে।।ফোনটা রিসিভ করে ব্যস্ত গলায় বললো…

— “যদি নিজের মান সম্মান কিছুটা বাঁচাতে চাও ,, তাহলে আসার সময় কাজি ডেকে নিয়ে এসো।।নাহলে তোমার পেস্টিসের ১৪ টা বেজে যাবে”।।

কথাগুলো বলেই ফোন কেটে দিল তাহমিনা।।আদ্রিক আহম্মেদ কে কিছু বলার সুযোগ দিল না।।

— “আন্টি আপনাদের ভুল হচ্ছে ।।আমি আপনাদের ছেলেকে চিনি না।।আমি ইফা ।।””ইফা-আমহৃদ”” ডটার ওফ ইমতিয়াজ আমহৃদ।। মানে আদ্রিক আহম্মেদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু ইমতিয়াজ আমহৃদ এর একমাত্র মেয়ে”।।

একদমে কথাগুলো বলে থামলো ইফা।। উপস্থিত দুজনে অবাক চোখে ইফার দিকে তাকিয়ে আছে।।

____________________
৪ ঘন্টা হয়েছে বাড়িতে এসে পৌঁছেছে।।সাথে আদ্রিক আহম্মেদ,, তাহমিনা,, আদ্রিতা তিনজনে এসেছে।। আদ্রিক আহম্মেদ আর ইমতিয়াজ আমহৃদ একসাথে কাউচে বসে আছে।।দুজনের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বন্দি।।একে অপরের কাঁধে মাথা রেখে আছে।।এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি বিশ্বাস হচ্ছেনা।। মনে হচ্ছে এই বুঝি স্বপ্ন টা ভেঙ্গে গেল আর তাদের বন্ধুত্ব টা আবার হারিয়ে গেল।। গত ২৫ বছর আগে ভাঙ্গা বন্ধুত্ব আজ আবার জোড়া লেগেছে।।ইফা দুজনকে একসাথে দাড় করিয়ে সারপ্রাইজ দিয়েছে।। ইতিমধ্যে রুমকির সাথে তাহমিনার অনেক ভাব হয়ে গেছে।। মিশুক মেয়ে হিসেবে আদ্রিতাকে খুব ভালো লেগেছে ইফার।।আদ্রিতা আর ইফার দু’জন ফোন নিয়ে ব্যস্ত।।আর ইভু করুন চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।। জরুরী ভিত্তিতে ফোন করে আনিয়েছে ইফা।এখন এক্সজেকলি এখানে বসে কি করা উচিত বুঝতে পারছে না।।
হাই তুলে উঠে দাঁড়ালো ইফা।।ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল।।– “মা আমি ডিনার করবো না!! খুব ঘুম পাচ্ছে,, এখন ঘুমাবো ।।(ইভুকে উদ্দেশ্য করে) তুইও যাবি না “।। বলেই চপল পা বাড়ালো ইফা।।আজ পর্যন্ত রাতে না খেয়ে থাকে নি সে।।কয়েক কদম ফেলতেই সামনে এসে দাড়ালো আদ্রিক আহম্মেদ আর ইমতিয়াজ আমহৃদ।।ইফার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বললেন..

— “তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ মামনী!! ইমুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।। তুই জানিস না ,, ইমু আমার কাছে কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট।।আজ থেকে তুই তার চেয়েও ইম্পর্ট্যান্ট।।কারণ আমি তোর জন্য ইমুকে পেয়েছি”।।

কথাটা বলেই আলতো ভাবে জরিয়ে ধরলো ইফাকে।।

____________________
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো রৌধিক।। রাত তখন ১টা ছাড়িয়েছে।।সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে।।প্রায় ঘন্টা দুয়েক আগে আমহৃদ বাড়িতে এসে পৌঁছেছে রৌধিক।।রৌধিকের পরিচয় জেনে সবাই একটু অবাক।। কিন্তু তার চোখ শুধু ইফাকেই খুঁজে ছিলো।।তাই রাত গভীর হওয়ায় পর ইফাকে দেখতে চলে এলো।। বেডের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে ইফা।। একহাত নিচে ঝুলে আছে।। অন্য হাত মুখের উপর।।একপা ঝুলন্ত অবস্থায় অন্যপা বাজ করা,,সেল ফোনটা বুকের উপর।।এখনও টম অ্যান্ড জেরি চলছে।। দেখে বোঝা যাচ্ছে ফোন টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে গেছে ।।প্ল্যাজু হাঁটুর উপর গুটিয়ে আছে।। ড্রিম লাইটের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।ইফার এমন উদ্ভর ভঙ্গিমা দেখে অধর চেপে হাসলো রৌধিক।। কাত হয়ে শুতে গেলেই ধপাস করে নিচে পড়ে গেল ইফা।। ইফা ঘুমের ঘোরে ফ্লোরে পড়ে গেছে।। চোখজোড়া বন্ধ করে বিরবির করে উচ্চারণ করলো সে..,,”” ওহ নো ””,!যেদিন এই মেয়েটার সাথে দেখা হয়,, সেদিনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটে।।প্রথম দিন বৃষ্টিতে ভেজা ,, দ্বিতীয় দিন লিফটের সাথে ধাক্কা খেতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া,, তৃতীয় দিন এক্সিডেন্ট করা ,, আর আজ বেড থেকে পড়ে যাওয়া।। একটু ঝুঁকে ইফাকে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিলো।।ঘুমের ঘোরে কাপড় তুলে কোমরে স্লাইড করছে সে ।।যাতে শরীরের আংশিক অংশ দৃশ্যমান।। চোখ ফিরিয়ে নিল ।।যখন তখন অঘটন ঘটে যেতে পারে।।

— “ভাইয়া কাবার্ড থেকে মলমটা এনে দে তো ।। খুব ব্যাথা করছে”।।(ঘুমিয়ে ঘোরে ইফা)

ফোনের টচ জ্বালিয়ে কাবার্ড থেকে মলমটা বের করে ইফার দিকে এগিয়ে দিলো।। কিন্তু ততক্ষণে ইফা ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে।। কয়েকবার ডাক দিয়েও লাভ হলো না।। অবশেষে উপায় না পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিজেই মলম লাগিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলো।।যতবারও হাত লাগানো চেষ্টা করছে ততবারই হাত ফিরে ফিরে আসছে।।আলকা হাতের স্পর্শ কোমরে অনুভব করতে ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলো ইফা।। ঘুমের ঘোরে শক্ত করে বেডশিট টা চেপে ধরলো।কোনোরকম মলমটা লাগিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইফার মুখের দিকে।।অনেকক্ষন ঘুমের কারণে মুখটা তৈলাক্ত হয়ে উঠেছে‌‌।।ইফাকে বেশ মোহনীয় লাগছে রৌধিকের কাছে ।। যদি পারতো তাহলে সারাজীবন এভাবে তাকিয়ে থাকতো।।

চলবে…🎀🎀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here