শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::০৭

শঙ্খ_চিলের_জুটি 🦅🦅পর্ব::০৭
#ইফা_আমহৃদ

সকলের সামনে মাথা নিচু করে আছে ইফা।। চোখের অশ্রু টলমল করছে।।এই বুঝি চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো।। ওষ্ঠ চেপে নিজের কান্না আটকানোর শত চেষ্টা করছে।। একটু আগে ইভু অনেক কথা শুনিয়ে গেছে।। এখন বিরাজ করছে পিটপিটে নিরবতা।। একটু আগে ডাক্তার আদ্রিতাকে দেখে গেছে।।প্রচন্ড ভয়ে,, এখনও জ্ঞান ফিরেনি।।ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে ।। সকালের আগে জ্ঞান ফিরবে না।। ঘর কাঁপিয়ে ঠাস করে চড় পড়লো ইফার গালে। মনে হচ্ছে,, এই বুঝি গালের পর্দা ফেটে যাচ্ছে।। প্রচন্ড জ্বলছে ।। আজ প্রথমবার ইমতিয়াজ আমহৃদ ইফার গায়ে হাত তুলেছে।। যতোটা ব্যাথা পেয়েছে,,, তারচেয়ে বেশি মেন্টাল আঘাত পেয়েছে।। নিরবতা ভেঙ্গে গর্জে উঠলেন ইমতিয়াজ আমহৃদ…

— “১৮ পেরিয়ে গেছে তোমার ।।এখন তুমি সম্পূর্ন এডাফ্ট ।। সামান্য একটা নেলপলিশের জন্য তুমি একজনের মুখে এভাবে ভাঙা নেলপলিশ লাগিয়ে দেবে।। একবার তাকিয়ে দেখ ,,, ছেলে মেয়ে গুলোর অবস্থা কি করেছো।।কাল সকালে ওরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে,, তার আগে ওদের সামনে যেন তোমাকে না দেখি।।আউট…!!

— “ইমু কি করছিস তুই ।। এতো বড় একটা মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তোলা ঠিক নয়।। তাছাড়া ওর জন্যই আমি…!!!

আর বলতে পারলেন না আদ্রিক আহম্মেদ।। ইমতিয়াজ আমহৃদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন…

— “কি ওর জন্য তোকে ফিরে পেয়েছি তাই তো।। তাহলে দরকার নেই তোকে।। খুঁজে এনে মাথা কিনে নিয়েছিল নাকি।।ওর সাত গুন ভুল মাপ।। ওর সামান্য একটু রাগে কতোবড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো ,, ভাবতে পারছিস”।।

— “আঙ্কেল থাকনা ভুল করে ফেলেছে ইফা।।রাগের বশে অমন করে ফেলেছে।।হয়তো বুঝতে পারে নি”।।(রৌধিক)

রৌধিকের চোখজোড়া টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।।এটা রাগে নাকি নেলপলিশের ইফেক্টে ,, বাহিরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই।। চোখের কোণে জমা অশ্রুগুলো হাত বাড়িয়ে মুছে নিল ইফা।।আঢ় চোখে সবার দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় চোখ নামিয়ে নিলো।। ইমতিয়াজ আমহৃদ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে নেল কাঁটার টা তুলে রৌধিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে কর্কট গলায় বললেন…

— ”এই নখগুলোর জন্যই আজ এমন সিচুশ্যান ক্রেট হলো।।তাই আজকের পর থেকে তুমি নেলপলিশ কেনার জন্য এক টাকাও পাবে না।। না নখগুলো থাকবে আর না অন্যের ক্ষতি হবে।।(রৌধিক কে উদ্দেশ্য করে ইমতিয়াজ আমহৃদ) নিজের হাতে এর নখগুলো কেটে দাও”!!

এতোক্ষণ আটকে রাখা অশ্রু গুলো,,, আর চোখের মাঝে আটকে রইল না।। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।।এই নখগুলো রাখা শুরু করেছিল পাঁচ বছর আগে থেকে।। প্রতিদিন খুব যত্ন করতো ।। আজ সেই শখের জিনিসটাকে হারাতে হবে।। কিন্তু রৌধিক ইফার করুন চোখের দিকে তাকিয়ে দমে গেল।।এই নখের চিহ্নগুলো রৌধিকের পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।।এখনও হয়তো মৃদু দাগ দেখা যাবে।। বাধ্য হয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ ইফার হাতে নেল কাঁটারটা ধরিয়ে দিল।। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সব নখগুলো কেটে ফেললো।।নেল কাঁটারটা টেবিলের উপর রেখে দ্রুত পায়ে রুম প্রস্থান করলো ইফা।।

______________________
মাঝরাতে সবাই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।। ঘুম নেই ইফার চোখে ।।কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে ইফা।। অনেকক্ষন কান্না করার কারণে শরীরটা ক্রমশ কেঁপে উঠছে।।চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে।। চুলগুলো এলোমেলো ।। নিজের করা কাজের জন্য বড্ড অনুসূচনায় হচ্ছে।। কিন্তু কি করবে ,, তখন রৌধিককে উপর প্রচুর পরিমাণে রাগ উঠেছিল।। গুটিগুটি পায়ে বেড থেকে নেমে রৌধিকের রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলো।।রৌধিক বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।।ঘূমন্ত আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ।। হঠাৎ রৌধিকের কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো।।ইফা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।।ইফাকে দেখেই রাগ উঠে গেল রৌধিকের মাথায়।।সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো রৌধিক।।চোখ মুখ শক্ত করে বললো…

— “এতোরাতে কি চাই এখানে।।দেখ ,, আমার মন মেজাজ একদম ভালো নেই,, কি বলতে ,,কি বলে ফেলবো ।।পরে তুমি কষ্ট পাবে।।প্লীজ লিভ নাও”!!

— “আই এম এক্সটেমলি সরি।।আমি বুঝতে পারিনি ,,এমন কিছু হবে”।।

ইফার কথায় রৌধিকের প্রচুর রাগ হলো ।।দুকাধে হাত রেখে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো..

— “কি বুঝতে পারনি ,,একটু বলবে আমায়।। শুধু একটা নেলপলিশের জন্য এমন কেন করলে ।। আমার তোমাকে একটা নেলপলিশ কিনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না”।।

— “আমি কখন বললাম,, আপনার কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই।।আমি রাগের মাথায় এমনটা করে ফেলেছি”!!(রৌধিকের কথা কেড়ে নিয়ে ইফা)

— “এখনো কি তোমার রাগ দেখানো বাকি আছে ,, তাহলে তাড়াতাড়ি রাগটা দেখিয়ে বিদায় হয়”।।

রৌধিকের এমন ব্যবহারে কেঁপে কেঁপে উঠছে ইফা।।কোনো কথা বলার ক্ষমতা খুঁজতে পাচ্ছে না। আলতো হাতে কাঁধ থেকে রৌধিকের হাত নামিয়ে নিলো।।

— “এক্সজেকলি ,,তোমার ভাগ্যটা কি দিয়ে তৈরি বলতে পারো আমাকে।।যখনই দেখা হয় তখনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেল।। আচ্ছা তুমি কি সবসময় এমন করো।। এতো দিন নিজের ক্ষতি করেছো, আজ আমাদের।। বাই দা ওয়ে,,, তোমার কাছে আমার আকুল আবেদন ,, প্লীজ তুমি আমার সামনে এসো না।।তোমাকে আমার জাস্ট সহ্য হয়না।।আমি সিউর জানি না,, দুটো নেলপলিশের দাম কত?? যা লাগে এখান থেকে নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও”।।

চেঁচিয়ে কথাগুলো বলে ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিলো।।ইফা করুন চোখে রৌধিকের দিকে তাকিয়ে ব্যাগটার দিকে তাকালো।।আজ একটা ভুলের জন্য সবাই এতো গুলো কথা শুনিয়ে দেবে ,, ভাবতে পারে নি।।তবে ঠিকই বলেছে রৌধিক ।। সবকিছু তাঁর জন্যই হয়েছে।।

_______________________
রৌধিকরা তাদের বাড়িতে ফিরে গেছে তাও মাস পেরিয়ে গেছে।। ইমতিয়াজ আমহৃদ এর কথা রাখতে তাদের সামনে যায়নি ইফা।।নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে নিয়েছে ।।কারো জন্য সময় থেমে থাকে না।। সবকিছু এই এক মাসে বদলে গেছে ।।শুধু বদলে যায় নি ইফার অভিমান।।সে বাড়িতে ফিরল কি ফিরল না ,, খেল কি খেল না ।।সেদিকে কারো দৃষ্টি নেই ।।সবাই সবটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে।। গোধূলির বেলার সময়টা এখন আর ছাদে কাটানো হয়না।। মন ভরে সাজগোজ করা হয়ে ওঠে না তার।।ইভুর সাথে খুনসুটিগুলো ,,সেদিনের পর হারিয়ে গেছে।।অতীতগুলো জমে আছে কিছু স্মৃতির পাতায় ।।

— “শুনছি তুমি নাকি উশৃঙ্খল জীবন শুরু করে দিয়েছো।।কখন বাড়িতে ফিরছো,, খাওয়া দাওয়া করছো ,, তার হিসেব নেই।। আমার বাড়ির একটা রুলস আছে,,,যদি সেটা মানতে না পারো তাহলে এই বাড়িতে তোমার থাকা হয়ে উঠবে না”।।।(চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ইমতিয়াজ আমহৃদ)

— “সোজাসুজি বলে দিলেই তো হয় ,, আমাকে এই বাড়িতে রাখতে চাও না।। সমস্যা নেই,, বলে দাও ।।চলে যাই”।।(ইফা)

— “কোথায় যাবে জানতে পারি ।।বাড়িতে থাকো ,, তাই বাইরের পরিবেশটা কেমন জানতে পারো না।। একবার বের হও জানতে পারবে”।।

— “কোথায় যাবো সেটা হয়তো জানি না।।তবে মরে গিয়ে তোমাদের শান্তি তো দিয়ে পারবো” ।।

কথাটা বলে দাড়ালো না ইফা।। দ্রুত গতিতে রুমের দিকে ছুটে গেল।।ইফার কথা শুনে বুক চিরে বেরিয়ে এলে এক দীর্ঘশ্বাস ।। ড্রয়িং রুমে বিরাজ করছে পিনপিনে নিরবতা।। একজন মানুষ কতোটা কষ্টে থাকলে মৃত্যু কামনা করতে পারে।। ইমতিয়াজ আমহৃদ আর রুমকির মুখের দিকে তাকালো ইভু।। ছুটল ইফার রুমের দিকে।।ছোট বোন যে তার উপর বড্ড অভিমান করে আছে।।আজ সেই অভিমানের পরিসমাপ্তি ঘটাবে সে।।

চলবে….🎀🎀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here