শরতের বৃষ্টি পর্ব-১৫

0
2326

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৫

২১ফেব্রুয়ারী কথাটা শুনলেই আমাদের মনে পড়ে এক গৌরবময় ইতিহাসের কথা। ইতিহাস বইয়ে খুব সুন্দর ভাবে বর্নিত আছে আমাদের মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ৫ই আগষ্ট, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

“আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি!”

সকাল থেকেই চারপাশ থেকে ফেব্রুয়ারীর এই গান ভেসে আসছে। আঁখি দের কলেজেও হয়তো গান বাজানো হচ্ছে। আঁখি শেষ বাড়ের মতো ওর নাচটা প্রাক্টিজ করতে ছিলো। যেহেতু আজ প্রতিযোগিতা। হঠাৎ করে ঘড়ির দিকে তাকাতেই মনে পড়লো আজ তাড়াতাড়ি যেতে হবে। স্যারেরা বলেছে ওদের নিয়ে সকালে কলেজের দূরবর্তী এলাকায় হাটা হবে। আঁখি তাড়াহুড়ো করে তৈরি হতে গেলো। শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে যেতেই মনে হলো ও শাড়ি পড়তে পারেনা। পারেনা বলতে পড়তে পারবে তবে তা নিয়ে কারও সামনে যাওয়া যাবেনা। আঁখি কোনো মতে পেচিয়ে শাড়িটা পড়ে বের হলো। বের হতেই ওর মা খেতে ডাকলো। আজ আমিনুর রহমানও তাড়াতাড়ি যাবেন। আতিককেও যেতে হবে। আঁখি তাড়াতাড়ি করে ওই শাড়ি নিয়েই বের হলো। আঁখি ডাইনিং টেবিলে যেতেই সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমিনুর রহমান কেতে ছিলেন ওকে দেখে খাওয়া রেখে তাকিয়ে রইলেন। মিসেস রোকেয়া রহমান খাবার সার্ভ করছিলেন ওকে দেখে তা রেখে দাড়িয়ে রইলেন। আতিকেরও একেই অবস্হা। সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁখির অস্বস্তি অনুভব হলো। মনে মনে ভাবলো ওকে কি এতটাই বাজে দেখা যাচ্ছে? তাহলে তো শেষ! আতিক ওকে পচাতে পচাতে কাজির ভাত বানিয়ে ফেলবে। পরক্ষনেই আঁখি হালকা কেশে চেয়ারে বসে পড়লো। প্লেট নিতে নিতে সবার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বললো।

“তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”

আঁখির কথা শুনে সবাই স্বাভাবিক হলো। আতিক খেতে খেতে হেসে বললো।

“উগান্ডার পাবলিক দেখলে সবাই এমন ভাবেই তাকায়। তুই দেখছোছ কোনো দিন?”

“না তো!”

হা করে আতকির বলা কথাটা আঁখি বুঝতে পারলোনা। তাই না ক্ষেপেই উত্তর দিলো। আতিক ঠোঁট চেপে হেসে বললো।

“আয়নার সামনে গিয়ে দাড়া! দেখতে পাবি।”

আঁখি হা করে তাকালো। এতক্ষণে আঁখি আতিকের কথার মানে বুঝতে পারলো। ওকে মীন করে কথা বলছে? ওকে কি এতই খারাপ লাগছে? আঁখি রেগে আতিকের পিঠে কিল মেরে বললো।

“এই তুই আমাকে উগান্ডার পাবলিক কোন সাহসে বলছিস? আমায় দেখতে মোটেও খারাপ লাগছেনা শুধু শাড়িটা ঠিক ভাবে পড়িনি বুঝলি?”

আতিক ওর পিঠ ডলতে ডলতে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“আব্বু তুমি কিছু বলো? আমিকি ওর গায়ে হাত তুলেছি? ও আগে তুললো কেনো?”

মিসেস রোকেয়া রহমান দুজনকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। আঁখি ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“আব্বু আমায় কি দেখতে একেবারে খারাপ লাগছে?”

আমিনুর রহমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন।

“নাহ! তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। এতই সুন্দর লাগছে যে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। লাল সবুজ শাড়িতে সুন্দরেই লাগছে। ড্রেস ডিজাইনার টা কে শুনি?”

আঁখি ওর বাবার কথায় খুব খুশি হলো। আতিকের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওর বাবাকে বললো।

“ড্রসের ডিসাইনটা আনিকা বলেছে। অনেক মার্কেট খুঁজে বের করেছি একে। অনেক খাটিয়েছে শাড়িটা আমাকে। পুরো চারদিন মার্কেটে যেতে হয়েছে।”

আঁখির কথা শুনে আমিনুর রহমান মুচকি হসে খাওয়ায় মন দিলেন। আঁখিও আতিককে মুখ বাকিয়ে হাসলো। আতিক ওর দিকে চোক গরম করে তাকালো। আঁখি ওসবে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো।

—————————

কষ্টের ফল সব সময় মিষ্টি হয়। আঁখি অনেকক্ষন কষ্ট করে সেজেছে। ওর সাজগাজ একদম ভালো লাগেনা। সাজতেও বিরক্ত লাগে ওর। তবুও ধৌর্য নিয়ে সেজেছে। হালকা মেক আপ করেছে। ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক দিয়েছে। কপালে একটা লালটিপ, চোখে গাঢ় কাজল দিয়েছে। এতেই আখিকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারলোনা আঁখি। মুচকি হেসে মনে মনে বললো।”বাহ আঁখি তুইতো বাংলাদেশ মিস ওয়াইল্ড এর থেকেও সুন্দরী। এখন থেকে সেজেগুজে থাকবি। আজ দেখবি কেউ তোর থেকে চোখ ফিরাতে পারবেনা।” এটা ভেবেই আঁখি চুলগুলো বাঁধতে লাগলো। চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি করেছে। অগত্যা সামনের কিছু চুল ছেড়ে ফুলিয়ে খোপা করেছে। পাশের দুটো লাল গোলাপ হাতে নিতেই ওর মনে পরলো এই দুটি গোলাপ পেতে ওকে কত কষ্ট পেতে হয়েছে। ওগুলো কাল আতিককে দিয়ে আনিয়েছে। এজন্য আতিককে অনেক বুঝাতে হয়েছে। ওকে পিছনে টাকাও খরচ করতে হয়েছে। আঁখি এসব খেবেই গোলাপটা খোঁপায় গুঁজে নিলো। আঁখি সাজগোজ শেষ করে আয়নায় ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে। শাড়িটা পড়ানো সুন্দর হয়েছে। ও যখন অনেক চেষ্টা করেও সুন্দর করে শাড়ি পড়তে পারলোনা তখন ওর মা মিসেস রোকেয়া রহমান শাড়িটা পড়িয়ে দিয়েছে। আঁখি মুচকি হেসে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই মিসেস রোকেয়া রহমান রুমে প্রবেশ করলেন। আঁখিকে দেখেই তিনি অবাক হয়ে তাকালেন। আঁখির কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বললেন।

“দেখি দেখি! মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে তোকে। সাজলে এত সুন্দর লাগে তাহলে না সেজে বলদের মতো সারাদিন ঘুরে বেড়াছ কেনো?”

আঁখি ওর মায়ের কথায় লজ্জা পেলো। লজ্জায় মুখটা নামিয়ে ওর মাকে বললো।

“কি যে বলো আম্মু! ধুর যাই! দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

কথাটা বলেই আঁখি রুম থেকে বের হলো। মিসেস রোকেয়া রহমান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আঁখির দেরি হয়ে গেছে। আনিকা আগেই চলে গেছে। ওকে ডাক দিয়েছিলো তখন ওর শাড়ি পড়াই হয়নি। আঁখি তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হতেই আতিক কে দেখলো। আতিক ওকে দেখে অবাক হয়ে সামনে এসে দাড়ালো। গালে হাত দিয়ে আঁখি কে ভালো করে দেখতে লাগলো। আঁখি ওর তাকিয়ে থাকার কারন বুঝতে পারলো না। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। আতিক গালে হাত দিয়ে আঁখির চারপাশে একবার ঘুরলো। আঁখি বোকা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আতিক ওর সামনে এসে বললো।

“কি পরেছিস এগুলো? কিসব দিয়েছিস মুখে? একদম পেত্নির মতো লাগছে। উগান্ডা থেকে এসেছিস মনে হচ্ছে।”

আঁখি ওর দিকে রাগি চোখে তাকালো। জোরে আতিকের চুলগুলো টেনে ধরে বললো।

“একদম বাজে কথা বলবিনা। আম্মু বলেচে ানেক সুন্দর লাগছে। হুহ!”

কথাটা বলে আঁখি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলো। আতিক আঁখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। মিসেস রোকেয়া রহমান ওদের কাহিনী দেখে হেসে ফেললেন। দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পাড়েনা। কিন্তু একজন অরেকজনকে ক্ষেপাতে ভুলেনা। আতিক আঁখির সাজ দেখার জন্যই বসে ছিলো। কেমন লাগে শারিতে ওর বোনকে সেটাই দেখতে চাইছিলো। কিন্তু ওর সামনে ওকে পচিয়ে গেলো।

আঁখি দোতলায় নামতেই দেখলো আতিক ওর আগে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে চলে যাচ্ছে। আঁখি শাড়ির কারনো তাড়াতাড়ি নামতে পারছেনা। শাড়ির কুচিগুলো ধরে আস্তে আস্তে নামছে। আঁখি নিচতলায় গেটের কাছে নামতেই দেখলো সামনে রাস্তায় সাজ্জাদ বাইকের কি যেনো ঠিক করছে। সাজ্জাদ বিরক্তি নিয়ে কাজ করছে তা ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। সিল্কি চুলগুলো কপালের উপর পরে আছে। চুলগুলো বারবার হাত দিয়ে সরাচ্ছে। সাজ্জাদ সাদা গেঞ্জি পড়ে তার উপরে কালো জ্যাকেট পড়েছে। আঁখি বুঝেনা সাজ্জাদ বেশির ভাগ সময় এই সাদা গেঞ্জি আর কালো জ্যাকেট কেনো পড়ে। তবে ওকে এই ড্রেসেই বেশি মানায়। কথাটা ভেবেই অকারনে আঁখি মুচকি হাসলো। সাজ্জাদ বাইকের কাজ শেষ করে উঠে পড়লো। কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে সরাতেই হঠাৎ সামন বরাবর ওর চোখ গেলো। সামনে চোখ যেতেই ওর চোখ ধাধিয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কোনো এক রাজ্যের লাল পরী দেখছে ও। এমন সুন্দর লাগতে পারে কোনো মেয়েকে তা ওর ধারনা ছিলোনা। ওই মেয়েটা যে আখি, ওর শত্রু তাও ভুলে গেলো। ও যেনো অন্য কল্পনার রাজ্যে চলে গেলো। আঁখি ওকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জমে বরফ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো সাজ্জাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেনো? সাজ্জাদ আঁখি কে খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যাবেক্ষন করতে লাগলো। লাল শাড়িতে যেনো ওর চেহারাও লাল ফর্সা ধারন করেছে। ওর গাল দুটো থেকে লাল আভা ছড়াচ্ছে। ফর্সা চেহারায় লাল ঠোঁটটা সৌন্দর্যকে হাজারগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। কপালের মাঝে লাল টিপটা যেনো চাঁদের মতো উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। কাজল কালো চোখের দিকে তাকালেই মনেহয় বারবার হাড়িয়ে যেতে ওই চোখে। সাজ্জাদের মনে হচ্ছে ছোট্ট চুলগুলো আঁখির গালের মাঝে আনন্দে নাচছে। সাজ্জাদকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁখি অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো। আঁখি চুলগুলো কানের পিছে গুজে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। দেখলো যে, কেউ দেখছে কিনা।
আঁখি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হঠাৎ করেই কেউ ওর শরীরের সাথে ধাক্কা খেলো। ধাক্কা খেয়ে আঁখি পরে যেতে নিলে কেউ ওর কোমর জড়িয়ে ওকে ধরে ফেললো। আঁখিও ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে লোকটির হাত চেপে ধরলো।

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

(হাই গাইস্। গেস করোতো লোকটি কে? আমি নতুন লেখিকা ভালোভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারিনা। দিন দিন চেষ্টা করছি ভালোভাবে লিখার। দয়াকরে ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনারা পাশে থাকলে অবশ্যই ভালোভাবে লিখতে পারবো ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here