শুকতারা পর্ব-৩৫

0
783

#শুকতারা ( পর্ব-৩৫)
#হালিমা রহমান

রত্নার একদম ভালো লাগছে না সূচিদের বাড়িতে।এবাড়িতে এসেছিল বান্ধবীর সাথে একটু গল্প করতে।তা করার সুযোগই মিললো না।গল্পের বদলে পেঁয়াজ-বটি নিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। নাকের পানি-চোখের পানি গড়িয়ে গাল-টাল ভিজে যাচ্ছে।পেঁয়াজ তার আজীবনের শত্রু।বাড়িতে পারতপক্ষে এটার ধারে-কাছেও ঘেঁষে না।কিন্ত এখানে এসেই ফেঁসে গেল।কাকি এমনভাবে বললো,রত্না না করতে পারলো না।মনে মনে আফসোস হচ্ছে এখন।ফয়সালকে এ বাড়ি অবধি টেনে না নিয়ে এলেই ভালো হতো।
ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।নতুন জামাইয়ের পাতে ভাত দিতে হবে জোহরের পরে,দেড়টার মধ্যেই।অথচ ভালো-মন্দ রান্না হয়নি কিছুই।ছেলেটা বলা নেই-কওয়া নেই দুপুরের আগেই চলে এলো। বাড়তি রান্নার ভারটা তাই হুট করেই কাঁধে চেপে বসেছে।নতুন জামাইকে তো আর যা-তা দিয়ে খাবার দেওয়া যায় না। তবে ফয়সালের হঠাৎ আগমনে খুব একটা বিরক্ত হননি সাহিদা বেগম।মেয়ের জামাই তো ঘরেরই ছেলে।সে যখন খুশি তখন আসবে।তবে আগে থেকে বলে এলে ভালো হতো।সমাদরের একটা ব্যাপার আছে।
তিনবারের মতো ফ্রিজে আতিপাতি করে খুঁজলেন সাহিদা বেগম।গরুর মাংসের পলিথিনটা কোথাও নেই।একটা বিশাল পলিথিন ছিল। কিন্তু এখন আর খুঁজে পাচ্ছেন না।একটু বিভ্রান্ত দেখায় তাকে।গত সপ্তাহেই রেঁধে খেয়ে ফেলেছেন কি না তা মনে পড়ছে না।

” ও রত্না ”

” হুম কাকি?”

” ফ্রিজে তো গরুর গোশত নাই।কি রাঁনমু এখন?”

” কোনো মাংসই নাই? ”

” ফার্মের মুরগী আছে শুধু। ”

” তাইলে ওইটাই রান্না করেন। আর ডিম ভুনা দিয়েন।সাথে সময় থাকলে দুই পিস মাছ ভাইজ্জা দিয়েন।”— চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিগুলো ওড়নায় মুছে নিলো রত্না।বিরক্ত লাগছে তার।এরচেয়ে বাড়িতে থাকলেই ভালো হতো।আর সূচিটারও কোনো আক্কেল-জ্ঞান নেই। স্বামীর সাথে ঘরেই বসে আছে।বাইরে এসে রান্নাঘরের দিকে নজর দেওয়ার কোনো খবর নেই।নিজের স্বামীর পছন্দ-অপছন্দ বুঝে তাড়াতাড়ি করে রেঁধে-বেড়ে দে।তা,না।জোড়া ধরে বসে আছে ঘরে।যত্তসব,বেয়াক্কেল মেয়েমানুষ।

” জামাইরে ফার্মের মুরগী দিমু রত্না? কেমন দেখায় না ব্যাপারটা?”

” ক্যান? এইটা কি মুরগী না?”

” ধুর, ফার্মে এগুলিরে কি না কি খাওয়ায়।শইল্লে শধু মাংস আর মাংস।”

” এটাই তো বেশি ভালো।জামাইরে বেশি বেশি মাংস খাওয়াইবেন যাতে শরীলে মাংস হয়।”

” এরচেয়ে খোপের মুরগী ধইরা জবাই দেই।খোপের মুরগীই রান্ধি।”

” অনেক দেরি হইব কাকি।মুরগী ধরবেন,জবাই দিবেন,বাছবেন–অনেক ঝামেলা।তারচেয়ে যেটা কইছি ঐটাই করেন।”

” না,থাক। আমি তারচেয়ে জয়ার কাছে যাই।দেখি ওর কাছে ভালো কোনো মাংস আছে কি না। নতুন জামাইয়ের পাতে ফার্মের মুরগী ক্যামনে দেয়? তুমি আরো কতগুলি পিঁয়াজ কাটো।আমি একদৌড়ে যামু আর আসমু।”

দৌড় আর দিতে হলো না।ততোক্ষণে খালি ট্রেতে খালি কাপ-পিরিচ নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রান্নাঘরে এসেছে সূচি।ওগুলো সাবধানে মিটসেফের উপর রেখে,রত্নার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টি মেলে বললো, ” কী করছিস?”

” নাচি। তুই দেখোছ না কী করি?”

” এমন ছ্যাৎ করে জ্বলে উঠিস কেন বলদা? আম্মা,তুমি রান্নার ঝামেলা করছো?”

” হ।কিন্তু কী রান্ধুম ক তো? রত্নায় কয় ফার্মের মুরগী দিতে।এইটা কী হয়? জামাই কি আর নিত্যদিন আইব আমার বাড়ি।”

হাহ! স্নেহময়ী মাতৃসত্তা। হোক না অসময়, তবুও আপ্যায়নের চিন্তাটা এদের মাথায় থাকবেই। এই মা-জাতির ভাবনার সীমা-পরিসীমা ক্ষুদ্র। জীবনের অন্তিমকালেও এরা সন্তানের কথা, পরিবারের কথা,মুখরক্ষা,সামাজিকতা, আপ্যায়ন আর রান্নাঘর নিয়ে ভাবে। এর বাইরে আর কিছু নিয়ে চিন্তা করা এদের জন্য বাহুল্য। জীবনের শেষরাতেও নিজের জন্য ভাবার ফুরসৎ এরা পায় না।

” তোমার জামাই থাকবে না আম্মা।অকারণে ঝামেলা করো না।”

” থাকব না মানে?”

” থাকবে না মানে থাকবে না।আম্মাকে না বলে এসেছে।তাই দুপুরে থাকতে পারবে না।”

” এহন বেয়াইনরে ফোন কইরা বলতে বল।তাইলেই তো হয়।”

তীব্র এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের দিকে হতাশ চোখে চেয়ে রইলো সূচি।দৃষ্টিতে ফেলে রেখেছে এক প্রশ্ন,
” এদের সম্পর্কে তোমাকে সেদিন সন্ধ্যায় কী বলেছিলাম? মনে নেই?”

সূচির হতাশা হয়তো বুঝলেন সাহিদা বেগম।মেয়ের চেয়ে দ্বিগুণ হতাশ হয়ে পড়লেন মূহুর্তেই।ফ্রিজের গায়ে হেলান দিয়ে বিমর্ষ গলায় রত্নাকে বললেন,
” আর পিঁয়াজ কাটা লাগব না রত্না।তোমারে শুধু শুধু কষ্ট দিলাম।”

” আলহামদুলিল্লাহ “— ধাম করে বটিটাকে ফেলে কলতলার উদ্দেশ্যে দৌড় দিলো মেয়েটা।চোখে-মুখে পানি দিয়ে সব শান্ত করবে আগে।

” তুই আরেকবার ভালোমতো সাধ।থাকলে তো থাকতেও পারে।”

” আরে থাকবে না।দুপুরের খাবার খাওয়ার কী দরকার? নাস্তা তো খেয়েছে।তুমি এতো মন খারাপ করছো কেন?”

” তুই মা হইলে বুঝতি মন খারাপ ক্যান করতাছি।মেয়ের জামাইরা ঘরের পোলার মতো।দুপুরের আগে খালি পেটে ঘর থেকা গেলে মায়ের মনে ক্যামন লাগে তা তুই এখন বুঝবি না।যেদিন আমার জায়গায় দাঁড়াবি সেদিন বুঝবি।”

” এনার সাথে এতো আহ্লাদ করো না আম্মা।সবাই আদরের মর্যাদা দিতে জানে না। যে তোমার ঘরের ছেলের মতো হতে পারতো,তাকেই তোমরা পরিচয় দাও না। ইশতিয়াক ভাই তোমার আদরের যোগ্য।অথচ মা’হারা মানুষটার মুখও দেখো না।”

আজকাল সময়ে-অসময়ে ঐ নির্বাসিত মানুষ দুটোর কথা মনে পড়ে সূচির।যখনই মনে পড়ে তখনই এক পশলা বিমর্ষ হাওয়া ছুঁয়ে দেয় তাকে।অভ্যাসবশত মলিন স্বরে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে মনে মনে, ” আব্বার মনে বড় আপার জন্যে ভালোবাসা বানিয়ে দাও খোদা।আমি আর কিছু চাই না।”

” আচ্ছা দেখছি আরেকবার বলে।যদি থাকে।তুমি কিন্তু আগে আগেই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করো না।”

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবার নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিলো সূচি। একটু আগে ফয়সালের প্রণয় নিবেদনে ওর খুশি হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু আহামরি আনন্দ হচ্ছে না। সবটা কেমন মেকি লাগলো।মনে হলো ওর প্রশ্নটাকে ধামাচাপা দিতেই ওমন অভিনয় করলো ফয়সাল। এরচেয়ে সোজাসাপ্টা কোনো উত্তর ছুঁড়ে দিলেই ভালো হতো। বিয়ের পরে এতোদিনে একবারের জন্যেও ” ভালোবাসি ” শব্দের আদান-প্রদান হয়নি দুজনের মাঝে।তাই আজ নিজের প্রশ্নের বিপরীতে ফয়সালের এমন স্বীকারোক্তি কেমন যেন খাপছাড়া লাগলো।ছোটবেলায় অসুখ তাড়ানোর জন্যে যেমন অনিচ্ছায় ঔষধ গিলতে হতো,আজ মনে হলো তেমনি ঘটনার অস্বাভাবিকতা তাড়ানোর জন্যে ফয়সাল ওই কথাগুলো বমি করলো ওর সামনে।মনের একাংশ সূচিকে সাবধান করছে।চোখ পাকিয়ে বলছে,” এতো বিশ্বাস করিস না সূচি।মানুষ ফেরেশতা না।পরে বিশ্বাসের ঘরে আগুন লাগলে কেঁদে কুল-কিনারা পাবি না।”

মনের এই বাজে কথাটাকেই জোর করে তাড়িয়ে দিলো সূচি।খুব একটা গায়ে মাখলো না।

” আমি রত্নাকেও চিনি,তাকেও চিনি।অযথা অশান্তি করে লাভ নেই।”— নিজেকেই নিজে বুঝ দিলো যেন। পায়ের ব্যাথায় এমনিতেই শান্তি পাচ্ছে না।এর মাঝে মনের চোখ রাঙানির দিকে নজর দিয়ে লাভ নেই।পায়ের অবস্থা সত্যিই খারাপ।বিশ্রীভাবে মচকে গেছে।তার উপরে ফয়সাল আবার অতিরিক্ত ডাক্তারি করতে যেয়ে অবস্থা আরো খারাপ করে দিয়েছে। মাটিতে পা ফেললে জানটা বেরিয়ে যায়।এই অসভ্য মানুষটাকে নিয়ে আর পারা গেল না।

” এতো দেরি করে এসেছো কেন? কত দেরি হয়ে গেল আমার।”— খাটে বসে বসে ফোন গুতাচ্ছিলো ফয়সাল।সূচিকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।

” সাড়ে বারোটা বেজে গেছে।আজ থেকেই যান।দুপুরের খাবারটা খান এখানে।আম্মা রান্না করছে।”

” পাগল তুমি! আম্মা আবার ঝামেলা করছে কেন? অকারণে ঝামেলা করার দরকার নেই।আমি কিছুতেই থাকব না।”

” আম্মার কথার বাইরে একটা বেলা থাকলে কী হয়? এটুকু সাহসও আপনার নেই কেন?”

অভিযোগ নাকি প্রশ্ন? হয়তো এটা অভিযোগে মেশানো প্রশ্ন।উত্তর জানা নেই ফয়সালের। রোমেলা বানু এর মাঝে দু’বার কল করেছেন। প্রতিবার কাজের দোহাই দিয়ে দশ সেকেন্ডের বেশি কথা বলেনি ফয়সাল।আগামী আধঘন্টার মধ্যে হয়তো তিনি আরো দু’বার কল করবেন।সূচি এবাড়িতে আসার পর থেকে তিনি যেন একটু বেশিই সতর্ক।সবসময় ফোন দিয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া দেন।রাত্রি দিন ছেলেকে সাবধান করে দেন, ” শ্বশুরবাড়িতে যাবি না।তোর বউয়ের দেমাগ বাড়ছে।বাপের লগে গেছে আবার বাপের লগেই আইব।আমি যেন না শুনি তুই ঐ বাড়িতে গেছোছ।পা ভাইঙ্গা ফালামু তাইলে।”
রত্নার মোহে না পড়লে হয়তো আজ এবাড়িতে আসা হতো না।মানসিক টানা-হেঁচড়া আর সহ্য হয় না ফয়সালের।নিজেকে জেলখানার কয়েদীদের মতোই মনে হয়।সত্যিই তো,তার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।এসব ছোট-খাটো বিষয়গুলো তবে কেন আরেকজন নিয়ন্ত্রণ করবে? সেও তো মানুষ।আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা-অনিচ্ছা,কর্তৃত্ব — এই শব্দগুলো কি কোনোদিন তার আপন হবে না? চিরকাল অধরাই রয়ে যাবে?

” বাদ দিন,এতো চিন্তা করতে হবে না।যেদিন সময় হবে,সেদিন এসে খেয়ে যাবেন।আজ থাকতে হবে না।গেলে এখনই চলে যান।বাইরে অনেক রোদ,হেঁটে যাওয়ার দরকার নেই।একটা রিকশা নিয়েন।আর দেরি করার দরকার নেই।”

আক্ষেপের মাঝে কখন সূচি খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে তা বুঝতেই পারলো না ফয়সাল।যখন বুঝলো তখন এক আঙুল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বউয়ের চুলগুলোতে খুব আদরে আঙুল চালিয়ে দিলো।মেয়েটার গলায় কি সহানুভূতি ছিল? কে জানে।মানুষ সহানুভূতিতে সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।সহসা নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হলো ফয়সালের।দুঃখে-হতাশায় কন্ঠ ভেঙে এলো। খুব নিচু গলায় বললো, ” এই দুনিয়ায় আমি মনে হয় সবচেয়ে দুর্বল, সূচি। আল্লাহ জানে, আমার চেয়ে অক্ষম পুরুষ আর একটাও নেই।আমার সাথে তোমার ভাগ্যটা কেন জোড়া লাগলো? অন্য জায়গায় বিয়ে হলেই বেশ হতো। তুমি খুব সুখী হতে। মা অথবা বউ,কাউকে সুখী রাখা সামর্থ্য আমার নেই।”

ব্যর্থতার সহজ স্বীকারোক্তি। প্রিয়তমের কন্ঠে এমন দুঃখ সূচি কোনোদিন শোনেনি।কথা ফুরিয়ে গেলেও রেশটুকু কানে ঝুমঝুম করে বাজলো।সহসা অর্ধাঙ্গের প্রতি এক কোমল সহানুভূতিতে হৃদয় কানায় কানায় ভরে উঠলো।মনে হলো তার চেয়ে এই লোকটাই বেশি দুঃখী।পরিস্থিতি সূচিকে একদিকে কাটে।আর এই ভীতু লোকটাকে দু-দিকেই কাটে। গলায় একরাশ কোমলতা নিয়ে বললো, ” বাড়ি যান।নয়তো আম্মা সন্দেহ করবে। আর থাকতে হলে থেকে যান।”

” আজ না।শুক্রবারে আসব,নিয়ে যাব তোমাকে।”

” ইশ! এতো তাড়াতাড়ি আমি যাব না।দু’দিন পরেই শুক্রবার।”

” আর থাকা লাগবে না।পরে আবার এসো।”

” খবরদার না।আপনি এসে ফিরে যাবেন।আমি গুণে গুণে এক সপ্তাহ পরে যাব।”

” দেখা যাক। পায়ের ব্যাথা বাড়লে ফোন দিও।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।”

” ডাক্তারের কাছে এমনিতেও যেতে হবে আমাকে।কোমড়ের চোটটা বেড়েছে।”

ফয়সাল অবাক হলো।কপাল কুঁচকে বললো, ” কীসের চোট?”

” আরে সেদিন গোয়ালঘরে যাওয়ার সময় পড়ে গেছিলাম না? কোমড়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছি।ব্যাথাটা বাসি হওয়ায় এখন বেশি যন্ত্রণা দেয়।হুটহাট উঠতে পারি না।”

” আচ্ছা, সময় করে একদিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।এখন তাহলে যাই। আল্লাহ হাফেজ।

” আচ্ছা যান।সময় করে ফোন দিয়েন.।”

বিদায়টা ঠিক গ্রামের যাত্রাপালার মতো হলো।যবনিকাপাত হয়ে হয়েও হয় না।মিনিটের পিঠে মিনিট গড়ায়, ফয়সালও নড়ে না;সূচিও নড়ে না। এক অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেঁয়ে আছে দুজনের মন।ওদের সম্পর্কে এমন বোঝা-পড়ার সুন্দর মুহূর্ত ঠিক আসে না। অদ্ভুত এক সমীকরণ দুজনের।এই মেঘ,এই বৃষ্টি।ফয়সাল নিজেকে ঠিক বুঝতে পারে না। সে আসলে নিজেকে চেনেই না।এই একঘন্টা আগেই তার মনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রত্না,সূচি ছিল উপলক্ষ।সময় গড়ানোর সাথে সাথে রত্না ভেসে গেল।কেন্দ্রবিন্দুটা এখন সূচি। ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মনে হলো, ওকে না দেখতে পেলে হয়তো ওর প্রাণটাই বেরিয়ে যেতো।নিজের বিবাহিত স্ত্রীকেই এখন বুকপকেটে ভরে বাড়ি নিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। এই কাজ অবশ্য সে করতেই পারে।বিবাহিত স্ত্রীর সাথে এটুকু করার অধিকার তার আছে।কিন্তু এখানে শুধু অধিকারের কথাই নেই।আরোকিছু জড়িয়ে আছে।সূচিকে এই মুহূর্তে বাড়ি নিয়ে গেলে একটা তামাশা হবে। মা তেড়ে এসে বলবে,” তুই আমারে না বইল্লা শ্বশুরবাড়িতে গেছিলি? তোর এতো সাহস?”

হৃদয় নিংড়ানো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে।নতুন করে একটা কথা মনে হলো ফয়সালের। বাইরের সুন্দরীদের দল কেবল চোখের আরাম দেয়। সাময়িক তৃপ্তি বলা যায় একে।বাকি স্বস্তিটুকু ঘরের এই রমনী দেয়। এই ময়লা চামড়ার মেয়েটাই অদ্ভুত এক আকর্ষণ।বহ্নিশিখার মত সে।খুব কাছ থেকে একে সহ্য করা যায় না।আবার দূরে গেলেও অহর্নিশ আকর্ষণ করে।খুব দূরে গেলে বিশ্রী এক অবসন্নতায় চারদিক ঘিরে যায়।একে মুঠোর মাঝেও ধরে রাখা যায় না,মুঠো খুলে দূরে ঠেলে দেওয়ায় দায়।অদ্ভুত,খুবই অদ্ভুত।

একটি দীর্ঘ আলিঙ্গনের শেষে,বউয়ের কানে কানে ফিসফিসিয়ে খুব নরম গলায় ঘোষণা করলো ফয়সাল,

” একদিন তুমি খুব সুখী হবে, সূচি।পৃথিবীর সব সুখ তোমার আঁচলে ধরা দেবে।আর আমি দেখে দেখে চোখ জুড়াব।সেদিন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here