শুভ বিবাহ পর্ব-১০

0
996

#শুভ_বিবাহ
লেখা #AbiarMaria

পর্ব ১০

আমি সারাদিন সারারাত ভাবলাম। ঘরে বসে, ঘরের বাইরে, সিগারেট টেনে টেনে, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, ভাত খেতে খেতে, এমনকি হাই কমোডে বসেও ভাবলাম। সব শেষে জাহিদকে যখন কল করলাম, তখন ও বেশ বিরক্ত হয়ে জবাব দিল,
❝তোকে আগেও বলসি, এখনো বলতেছি, মেয়েটা ভালো। তোর এত সমস্যা হচ্ছে কেন সেটা তো বুঝতেছি না। তুই তো ওকে পছন্দই করিস!❞
❝কণাকে অপছন্দ করি না, কিন্তু ওর প্রেমে তো আমি উপুড় হয়ে পড়িনি!❞
❝পড়িসনি, এখন পড়। ভালো মানুষের সাথেই থাকবি❞
❝ভাই, ওর যেমন নাকের ডগায় সারাক্ষণ রাগ ঝুলে থাকে, আমার তো ভয় লাগে। যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকালে পরে আমাকে ধরে ক্যালায়?❞
❝কণা থাকতে অন্য মেয়ের দিকে না তাকালেই পারিস!❞
❝যাহ। সুন্দরী দেখলে মাথা ঠিক থাকে?❞
❝ ভাই, তোর যা ভাল্লাগে, তাই কর। আমাকে জ্বালাস না তো!❞

খট করে জাহিদ লাইন কেটে দিল। আমি বুকে সাহস জমিয়ে পর দিন কণার কাছে গেলাম। আমি যদি মানা করি, ও কি আমাকে মারবে ধরে? দৌড়ে পালানোর চিন্তা করে আমি ওকে ডাকলাম।

যে মুহূর্তে কণা আমার চোখের দিকে তাকালো, আমি আর ওকে মানা করাত পারলাম না। আজকে ওর চোখ জোড়ায় স্বর্গ নেমে এসেছে যেন। ওর চোখের পাপড়িতে কি লাগিয়েছে? ওমন নীল কেন? ওর আঁখি পল্লবে আমার জন্য লক্ষ কোটি প্রেম উড়ছে। মনে হলো, যা হয় হোক, এই চোখের প্রেমে একবার নাহয় পড়েই দেখি! জীবনে রিস্ক তো একটা নেয়াই যায়। কণা প্রেমিকা হিসেবে এমন আর মন্দ কি?

ভালোই চলছিল আমাদের ‘খুললাম খুললাম পেয়ার কি দাস্তান’। আমরা সবার সামনে হাত ধরে বসে থাকতাম, কণা আমার পড়াগুলো এগিয়ে দিত। অবশ্য আমি এই সুযোগে আমার আড্ডাবাজী বাড়িয়ে পড়ালেখার প্রতি একটু আলগা হয়ে গেলাম। কণা মাঝে মাঝে কান টেনে ধরত, ওসব আমার গা সওয়া হয়ে গেছে। আমরা ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকলাম যতদিন পর্যন্ত পহেলা ফাল্গুন না আসলো! সবাই জানে, আমি সুন্দরীদের দেখলে চোখ সরাতে পারি না, তাদের মানাও করতে পারি না। তাই অবশ্যম্ভাবী ভাবেই আমাদের মাঝে একটা সংঘর্ষ লেগে গেল।

ঐদিন ওরা তিন বান্ধবী কমলা লালের মিশেলে শাড়ি পরে এসেছে, আমরাও সাইন্সল্যাব থেকে দুই দিন আগে কেনা লাল রঙের পাঞ্জাবী পরে এসেছি। সবাই ম্যাচিং ম্যাচিং। কণা আমাকে দেখে পটে গেছে, আর স্নিগ্ধাকে পটিয়েছে বন্ধু ইমরান। খেয়াল করে দেখেছি, এই ইমরান নামের ছেলেগুলো মেয়ে পটাতে খুব চালু হয়! আমিও চালু, তবে কণার সাথে এখনো ডাবল ক্রস করার কথা ভাবতে পারছি না। সেখানে যখন সোহানের বড়লোক, মানে নর্থ সাউথের বান্ধবী এসে জুটলো, আমি কণার অস্তিত্ব ভুলে গেলাম!

কি মাখনের মতো ত্বক ভাই! আমি ওকে দেখে মাখনের মতো গলে গেলাম। এত সুন্দরী কোথা থেকে এলো? আমি এক ফাঁকে কণার হাত ছাড়িয়ে একটু ওর দিকে ঝুঁকলাম।
❝কে তুমি সুন্দরী?
কোথায় ছিলে এতকাল?
কোথা হতে এলে?
এই মনে বসন্তের ছোঁয়া দিয়ে গেলে!❞

আমি সুর করে গাইলাম। কণা আমার হত ধরে টেনে নিয়ে তাতে চিমটি বসিয়ে দিল। আমার চোখটা সামান্য কুঁচকালো, আবার স্বাভাবিক হয়ে হাসি দিলাম। সোহান ওর নাম বলার আগেই ও সবার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বলল,
❝হাই! আমি রূপা!❞
ছেলেরা সবাই খুশি হলেও মেয়েরা একজনও খুশি হলো না। ওদের দেখে মনে হচ্ছে কেউ ওদের মুখে কালি মেখে দিয়েছে। সারা সকাল বসে কষ্টে করা মেকাপের সব সৌন্দর্য যেন নিমেষে ম্লান হয়ে গেল। রূপা হাসিমুখে সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে, ওর হাসি এইটুকুও মলিন হলো না। আমি বললাম,
❝তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তুমি রূপা। ঠিক রূপকথার পাতা থেকে উঠে এসেছ। শরীর জুড়ে রূপার ঝলকানি ঠিকরে পড়ছে!❞

কণা রেগে বোম হয়ে গেছে, অপরদিকে রূপা লক্ষ টাকার হাসি হেসে ফেলেছে আমার কথা শুনে। আমাকে লক্ষ করে সে বলল,
❝আপনার নাম তো জানলাম না?❞
❝শুভ, আমার নাম শুভ হে অপরূপা!❞
রূপা আবার মুখ ঢেকে হাসলো।
❝আমার নাম এত বড় করে ডাকার দরকার নেই। রূপাই ভালো। আপনি কি সবসময়ই এভাবে কথা বলেন? কবির মতো?❞
❝তোমাকে দেখে কবি হয়ে গেছি!❞

নীনা কণার কানে নিচু কন্ঠে বলল,
❝শুভ কিভাবে ফ্লার্ট করে যাচ্ছে, দেখেছিস? তাও আবার তোর সামনেই?❞
কণা কিছু বলল না। আমিও শুনলাম, কিন্তু কোনো রিএকশন দেখালাম না। আমি এখন এই মুহূর্তে বাঁচব, এই মুহূর্তে মরব, এই মুহূর্তে সাঁতার কাটব! এই মূহুর্তকে আমাকে উপভোগ করতে হবে! আহা! আমি এখন ‘কার্পে ডিয়াম’ থিওরিতে চলব। এঞ্জয় দ্যা ডে! পরে৷ কি হবে, তা পরে দেখা যাবে! আহা! আআহাআ!

আমরা সব ছেলেরা ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কণা আমার হাত ছেড়ে কঠিন দৃষ্টিতে দেখছে। আমরা টিএসসির ভেতরে এসে বসলাম। আজ ভীড়ে বইমেলা ভরে যাবে, তাই সেদিকে পা রাখব না। আমরা সবাই ইচ্ছামত ফ্লার্ট করছি রূপার সাথে, রূপাও সেটা বেশ এঞ্জয় করছে। সবাই ঠিক করল পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি খাওয়া হবে। রিকশা ঠিক করে কণা আমার হাত চেপে সেখানে উঠে বসালো। সবার সাথে রিকশার দূরত্ব একটু বাড়তে ও দু হাতে আমার চুল খামচে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
❝উজবুক! পাঠা! খন্ন্যাস! খচ্চর! তোর দুই দিন পর পর একেকটা মেয়ে লাগে? মেয়ে দেখলে লালা পড়ে মুখ দিয়ে? আমার সামনে তুই ফ্লার্ট করিস? আমার সাথে ফাইজলামি? আমাকে তোর চোখে পড়ে না? আমি সুন্দরী না? ঐ মেয়েই সুন্দরী? আজকে তোর চুল টেনে ছিড়ে ফেলব! তারপর দেখব আমি ছাড়া কোন দেশের কোন ফকিন্নি তোর দিকে তাকায়! কুকুর কোথাকার! ❞
আমি ওর হাত থেকে চুল ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকলাম। হাতের মুঠ থেকে একটু আলগা হলে ও আবার নতুন উদ্যমে আরও চুল খামচে ধরে। রিকশাওয়ালা মামা একবার পেছনে ফিরে আমাদের দেখে আবার রিকশা টানছে। আমি উহ আহ করতে করতে বললাম,
❝আরেহ, ওর সাথে একটু মজা করেছি! এমন করতেছ কেন রাস্তাঘাটে? সিরিয়াসলি তুমিই সুন্দর, রূপা না। ওকে দেখলে তো সদরঘাটের ফকিন্নির মতো লাগে! পিলিজ বাবুনি, ছেড়ে দাও?❞
❝মজা করস? তুই মজা করস? তোর মজা আমি আজকে ছুটামু!❞

কণা শেষ পর্যন্ত আমার চুল ছাড়লেও সদ্য তেলে দেয়া লুচির মত ফুলে থাকলো। আমি এদিক ওদিক চেয়ে চুপটি করে ওর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। তারপর ওর হাত শক্ত করে পেঁচিয়ে তাতে বেলি ফুলের মালা পেচিয়ে দিলাম। কণা একেবারে মাখনের মত গলে গেল তৎক্ষনাৎ। মুখ তুলে আমার মুখের দিকে অপার মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকলো। আমি ওর গালে হাত রেখে আস্তে আস্তে বললাম,
❝দুষ্টুমি যাইই করি, ভালোবাসি তো তোমাকেই। বিশ্বাস হয় না?❞

কণা কিছু না বলে আমার কাঁধে মাথা রাখলো। আমি একটা বিটকেলে হাসি দিলাম। মেয়েদের ঠান্ডা করা ওয়ান টুর ব্যাপার। আমি তো জানি কিভাবে কি করতে হবে। সাপের খেলা দেখাই আমি সাপুড়ে! সব বিষের ওষুধ না থাকলে চলে?

চলবে…

(শুভকে গালি দিলে দিয়েন। আমাকে দিয়েন না কেউ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here