শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব পরের অংশ

0
3228

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পরের অংশ

🌼
চারদিকে পিনপতন নিস্তব্ধতা। গাড়িতে বসে থাকা মানুষ দুটোর মুখও এই মূহুতেই নিশ্চুপ। অন্য সময় হলে হয়ত টম এন্ড জেরির মত লেগে থাকতো একে অপরের পিছে।কিন্তু এই মূহুর্তে তেমন কিছুই হচ্ছে না।এই লম্বা সময়ে দু তিনটের বেশি কথা হয়নি দুজনের মাঝে।তবুও সেই কথার প্রসারতা খুব বেশি বড় ছিল না।আদি পিয়ার থমথমে মুখের দিকে তাকাল।শান্ত গলায় তৃতীয় বারের মত বলল,

-তুমি ঠিক আছো?

পিয়া অনুভূতি শূন্য চোখে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,

-আমি ঠিক আছি।বার বার জিজ্ঞাসা করার দরকার নেই।

আদি দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করল না।দির্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি চালানোতে মন দিল।বিশ মিনিটের মাথায় গাড়ি এসে থামল চৌধুরি ম্যানশনের সামনে।মেইন গেট পার করে গাড়ি পার্ক করে দুজনেই নেমে এল গাড়ি থেকে।আদি সামনের দিকে হাটতে নিলেই ডেকে উঠল পিয়া,

-আদি…?

আদি কয়েক পা পিছিয়ে এল।পিয়ার শীতল মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

-কিছু বলবে?

পিয়া শুকনো ঠোট জোড়া জিব দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বলল,

-তুমি যদি রুমে গিয়ে এটা বলতে চাও যে,,তুমি আমাকে আগেই ওয়ার্ন করেছিলে ওই ছেলেটার সাথে মিশতে তাহলে সেটা এখানেই বলে দাও প্লিজ।

আদি ভ্রু কুচকে তাকালো।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,

-এমনটা কেন?কথাটা আমি এখানে বলি বা রুমে,,, কি আসে যায়? বিষয়টা তো একই তাই না?

পিয়া আগের মতোই শান্ত গলায় বলল,

-এখানে এমন কিছু নেই যেটা আমি তোমার উপর ফেলতে পারি।কিন্তু রুমে এমন অনেক জিনিস আছে।আমি চাই না রুমের কোনো জিনিস ভাঙতে।আপাততো তোমার মাথা ফাটানোর ইচ্ছেও আমার নেই।

কথাটা শেষ হতেই শব্দহীন হাসল আদি।নরম গলায় বলল,

-আমরা কিছুক্ষন এদিকটাই বসতে পারি?

-হুম।

পিয়া আর আদি বাগানে পেতে রাখা বেতের সোফায় গিয়ে বসল।বড় গাছটার পাশেই মিটিমিটি সোনালি আলো জ্বলছে।ঝিঝি পোকার ডাক ছাড়া আরো কোনো শব্দ নেই।কিছুক্ষন চুপ থেকে মুখ খুলল পিয়া,

-আজ যেটা হল সেটার জন্যে তুমি আমাকে দ্বায়ি মনে করছো তাই না?

-এমনটা মনে হওয়ার কারন?

-কারন ছেলেরা এমনই হয়।তোমরা মনে করো সব সময় সব দোষ শুধু মেয়েদেরই হয়।ছেলেটা আমার সাথে যা করেছে সেটার জন্যে তুমি আমাকে দ্বায়ি করতেই পারো।কারন আমিই তো ছেলেটার সাথে ডান্স করেছিলাম।এই ধরনের হ্যারাজমেন্টে মেয়েদের দোষই তো সবার নজরে পড়ে।তোমার পড়াটাও স্বাভাবিক।

আদি কিছুটা সময় নিয়ে বলল,

-হ্যা কিছু মানুষ এমন আছে যারা এভাবে ভাবে।এভাবে চিন্তা করে।কিন্তু তোমার কেন মনে হচ্ছে আমি তাদের মত?পিয়া,,, ? ছেলেটা তোমার সাথে যা করেছে সেটার জন্যে তুমি দ্বায়ি নও।সম্পূর্ন দ্বায় টা ওর।ও তোমার সাথে মিস বিহেভ করেছে।এতে তোমার কোনো দোষ নেই।তবে আমি তোমাকে নিষেধ করার পরও ওর সাথে নাচা বা কথা বলাটা তোমার উচিত হয় নি।

-হুম বুঝে গেছি আমি।

-সত্যি বলতে সব মানুষ একরকম হয় না।এই দুনিয়াতে তুমি খারাপ মানুষের পাশাপাশি অনেক ভাল মানুষকেও পাবে পিয়া।সবাই সম্মান নিতে না কেউ কেউ সম্মান দিতেও জানে।অধির ভাইয়া আমাকে একদিন একটা কথা বলেছিল।বলেছিল,,,”আদি??? মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করবি ঠিক আছে।কিন্তু সেটা যেন অসভ্যতামি পর্যন্ত না পৌছায়।একটা মেয়ে ঠিক যতোটা মেনে নিবে ঠিক ততোটুকুই।এর থেকে বেশি নয়।”””।ভাইয়ার কথাগুলো মাথায় রেখেই আমি মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করি।আমি কিন্তু সব মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করি না।যে মেয়েগুলো এগুলো চাই তাদের সাথেই করি।তবে সেটা সভ্যতা বজায় রেখেই।

পিয়া বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল আদির কথাগুলো।এই ছেলেটা অদ্ভুদ।কখনো বাচ্চাদের মত বিহেব করে আবার কখনো ম্যাচিউরদের মত।পিয়া কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে উঠল,

-জানো আমি একটা জিনিস একদমই সহ্য করতে পারি না।যখন কেউ আমাকে অনুভব করায় আমি মেয়ে তাই আমি দূর্বল এবং অসহায়।এটা আমার একদম সহ্য হয় না ।তুমিও এটাই অনুভব করিয়েছিলে আমায়।

-আমি..?

-হ্যা তুমি।যেদিন হলুদের রাতে তুমি আমায় কিডন্যাপ করে আটকে রেখেছিলে।সেদিন তোমার প্রতিটা ব্যবহার বুঝিয়েছিল মেয়ে হিসেবে আমি কতোটা দূর্বল, অসহায়।

আদি চোখ নামিয়ে নিল।সেদিনের ঘটনার জন্যে এখনো পর্যন্ত তার আফসোস হয়।ভুল করেছে সে।আদি অপরাধি চোখে তাকিয়ে বলল,

-সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি ভিষন অনুতপ্ত পিয়া।জানি না সেদিন আমার কি হয়েছিল।আমি ভুল করেছি।তার জন্যে আমি লজ্জিত।সেদিনের কথা মনে পড়লে আমার নিজের প্রতিই ভিষন ঘৃনা হয়।আই এম সরি পিয়া।পারলে প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিও।

-তোমার ওই একটা ভুলের জন্যে আমার বাবার প্রানও চলে যেতে পারতো আদি।কথাটা ভাবলেও আমার শরিরে কাটা দিয়ে ওঠে।

-প্লিজ পিয়া,,,আমার অপরাধবোধটা আর বাড়িও না।আমি সত্যিই ভিষন অনুতপ্ত।আমি আঙ্কেলকে যে কষ্টটা দিয়েছি সেটা হয়ত ফিরিয়ে নিতে পারবো না কিন্তু আমি আঙ্কেলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিবো।আমার বিশ্বাস উনি আমাকে মাফ করে দিবেন।দিবে না?

পিয়া শব্দহীন হাসল। বলল,

-সেটা নাহয় নিজে গিয়েই দেখো।এখন রুমে চলো।আমার ঘুম পাচ্ছে ভিষন।

——–

সময় প্রবাহমান।কারো জন্যে থেমে থাকা তার নিয়মে পড়ে না।সে চির স্বাধীন। ধরা বাধা নিয়ম তার জন্যে না।দেখতে দেখতেই কেটে গেল পুরো একটা মাস।হাসি,কান্না, খুনসুটি আর মান,অভিমানের গল্প লিখেই পার হল গোটা মাস।অধির তখনও চৌধুরি ম্যানশনে ফেরে নি।দিনটা রবি বার।অফিসে আসার ঘন্টা খানিক পর থেকেই রোশনিকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।সকাল গড়িয়ে ঘড়িতে তখন এগারোটা বাজে।অধির শেষ বারের মত রোশনির নাম্বারে ডায়াল করেও লাভ হল না।অধিরের প্রথম দফায় রাগ লাগলেও সেটা এখন চিন্তায় রুপ নিয়েছে।অযথায় ফোন রিসিভ না করে তাকে প্যারা দেওয়াটা মেয়েটার নিত্য দিনের স্বভাব।কিন্তু আজকের বিষয়টা ভিন্ন।আজ মোটামুটি একশোর উপরে ফোন দিয়েছে অধির।অধির কাজে মন বসাতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ি ফিরে যাবে। রোশনির কানের নিচে গুনে গুনে চারটা চড় দিবে।তাকে চিন্তায় ফেলার কোনো অপশনই এই মেয়ে বাদ দেয় না।তবে বাড়ি ফিরে চড় দেওয়ার জন্যে রোশনিকে পাওয়া গেল। না।মেইন দরজা খোলা দেখেই চিন্তাটা খানিক বাড়ল অধিরের।নরমালি মেইন ডোর বন্ধই থাকে।অজানা কিছু চিন্তার বোঝা মাথায় নিয়ে শোবার ঘরে পা বাড়ালো অধির।রোশনি নেই।এক এক করে প্রতিটা রুম,ওয়াশরুম, কিচেন এমনকি ছাদ কোনো কিছুই বাদ গেল না।কিন্তু রোশনির অস্তিত্ব কোনো জায়গাতেই নেই।সমুদ্রের মাঝখানে একটা সাতার না জানা মানুষ যতোটা অসহায় বোধ করে ঠিক ততোটাই অসহায় নিজেকে মনে হচ্ছে অধিরের।হঠাৎ করে জলজ্যান্ত একটা মানুষ কি করে উধাও হয়ে যেতে পারে? অধির হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসে। দুহাতে মুখ ঢেকে শব্দ করে কেদে ওঠে।অধিরের সেই করুন আর্তনাদের সাক্ষী হয় নিস্তব্ধ রুমের প্রতিটা জিনিস।অধিরের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে,,,রোশনি ঠিক আছে তো?..অধির বুঝে উঠতে পারছে না সে কোথা থেকে খোঁজা শুরু করবে রোশনিকে।অধির যখন হতাশায় দিশেহারা তখনই ফোনের ম্যাসেজ টিউন বেজে উঠল।অধির সেদিকে পাত্তা দিল না।তার যে করেই হোক রোশনিকে খুজে বের করতে হবে।শাহিনকে ফোন করতে হবে।অধির চোখ মুছে উঠে দাড়ালো।পকেট থেকে ফোন বের করে ওপেন করতেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে দু লাইনের ছোট্ট টেক্সটটা ভেসে উঠল চোখের সামনে।

“রোশনি আমার কাছে আছে।বাচাতে চাইলে নিচের দেওয়া ঠিকানাতে চলে আয়।তোর হাতে মাত্র এক ঘন্টা।এরপরে হয়ত….!!!”

ম্যাসেজটা পড়া মাত্রই চোখ মুখ শক্ত হয়ে এল অধিরের।এই লোককে সে ছাড়বে না।তার কলিজাটাতে হাত দিয়েছে এ।জ্যান্ত পুতে ফেলবে তাকে।অধির এক সেকেন্ডও দেরি না করে ম্যাসেজে পাঠানো ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।নির্দিষ্ট সেই জায়গায় পৌছাতে পৌছাতে প্রায় চল্লিশ মিনিট লেগে গেল।পুরোনো গো-ডাউন এটা।অধির গো-ডাউনের গেইটের কাছাকাছি যেতেই দুটো লোক বন্দুক হাতে এগিয়ে এল অধিরের দিকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোক দুটোর বুক বরাবর লাথি মারল অধির।সাথে সাথেই দুজনের মুখ থেকে গড়গড়িয়ে বেরিয়ে এল তাজা রক্ত।মাটিতে পড়ে কাতরাতে লাগলো শিকারি হরিনের মত।অধির চোয়াল শক্ত করে ভেতরে ঢুকল।ভেতরটা অন্ধকার।অধির সামনের পা বাড়ালো।সামনে অনেক খানি ফাকা জায়গা।তার ঠিক মাঝ বরাবর ছোট্ট একটা কাঠের টেবিল।উপরে ঝুলছে হলুদ রঙা টিমটিমে লাইট।চেয়ারে উল্টো ঘুরে বসে আছে এক সুঠামদেহী পুরুষ।দুপাশে দুজন কালো পোশাক পরিহিতা মানব।অধির হাতের মুঠো শক্ত করে এগিয়ে যেতে নিলেই পরিচিত কন্ঠ শুনে থেমে যায় চলন্ত পা।অধির অবাক হয়।বিষ্মিত হয়।অধিরকে আরো অবাক করে দিয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে অধিরের মুখোমুখি হল লোকটা।সামনে বসা পরিপূর্ন যুবককে দেখে নিজের চোখকেই প্রথম বারের মত মিথ্যে মনে হল অধিরের।সামনে বসা যুবক অধিরের বিষ্মিত মুখটা ভালো করে পরখ করে নিয়ে বাকা হেসে বলে উঠল,

-শকড্…?তোর এই শকড্ চেহারাটা দেখার জন্যেই তো এতো আয়োজন।আরে ইয়ার,,,একটু তো অবাক হ….।এটলিস্ট আশ্চর্য হ…..

অধিরের চোখ মুখের রঙ পাল্টালো।হাতের মুঠো শক্ত হল।কপালের রগ ফুলে উঠল।সত্যি বলতে তার অবাক লাগছে না।এই দুনিয়ায় বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বড্ড কম।দেখতে গেলে কাছের মানুষরাই বড্ড নির্মম ভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে।কিছুক্ষন বাদেই যখন অধির শব্দ করে হেসে উঠল তখন ভড়কে গেল দেমির।অধিরের এই হাসির কারন তার জানা নেই।অধির বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে হাসল।পরমূহুর্তেই চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠল,

-আসল চেহারায় এসে গেছিস? এবার শত্রুতা করার মজা আসবে।কি বলতো?তুই বিশ্বাস ভেঙেছিস তার থেকেও বড় ভুল করেছি আমি তোকে বিশ্বাস করে।তুই জানিসও না রোশনি আমার কাছে কতোটা ইমপর্টেন্ট।আমার কলিজায় হাত দেওয়ার যে দুঃসাহস তুই করেছিস তার মূল্য তোকে চোকাতেই হবে।

দেমির এবার অধিরের সামনা সামনি সে দাড়ালো।বাম হাতে গাল ঘষে বলল,

-কি করবি? মারবি আমায়? ওহো.. আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।প্লিজ আমায় মারিস না।ক্ষমা করে দে আমায়।

কথাটা শেষ করেই উচ্চ শব্দে হাসতে লাগল দেমির।ওর সাথে যোগ দিল সাথে থাকা কালো পোশাকধারী লোকগুলোও।পরমূহুর্তেই হাসি থামিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে তাকালো দেমির।কপালের রগ ফুলিয়ে বলল,

-ওই হিরো…?আমাকে মারার কথা বাদ দিয়ে নিজের বউকে তো বাঁচা।নাকি এদের দেখে ভয় পেয়ে গেলি? পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিস?

কথাটা শেষ করে আবারো হাসতে লাগল দেমির।অধির তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে শক্ত গলায় বলল,

-সিংহ শুধু শিকার করতে জানে,,ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে না।রোশনি সেইভ থাকবে তো তুইও সেইভ থাকবি।

-আচ্ছা তাই নাকি!!!নয়ত কি করবি তুই? আমাকে মারবি? উঁহু….পারবি না।কারন রোশনি আমার কাছে আছে।যতোক্ষন পর্যন্ত রোশনি আমার কাছে থাকবে ততোক্ষন পর্যন্ত তুই আমার কিচ্ছু করতে পারবি না।আর এমনিতেও তোর চোখে আমি ভয় দেখতে পাচ্ছি।আমাকে হারানো তোর পক্ষে সম্ভব না।তোর কাছে মাত্র পনেরো মিনিট সময় আছে।পারলে নিজের বউকে বাচিয়ে নে।এই খেলাতে জিত আমার হবে আর হার তোর।

-এতো দিনেও তুই আমাকে ঠিক ঠাক চিনে উঠতে পারিস নি?অামি কে সেটা হয়ত ভুলে গেছিস।অধির চৌধুরি কে গুগোল করে দেখে নিস।কি ভেবেছিস,,,? রোশনিকে আটকে রাখলেই আমাকে হারাতে পারবি? তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস,,,সিংহের থেকেও বেশি হিংস্র হয় আহত সিংহ।রোশনিকে টার্গেট করাটা তোর উচিত হয় নি।আর কি যেন বললি?তুই আমাকে হারাবি? ওকে,,,, চ্যালেঞ্জ এক্সসেপটেড।এই পনেরো মিনিট ডিসাইড করবে জিত কার হবে। তোর নাকি আমার!!!একটা কথা মাথায় রাখিস,,,,,হার এবং জিত দু’কদমের মত।ব্যস মূহুর্তেই হার জিতে পরিনত হতে পারে।যেই খেলা তুই শুরু করেছিস সেই খেলা শেষ করার উইনার আমি।এই খেলা আমি শেষ করবো।

-ওই হিরো…? এই ডায়লোগ অন্য কোথাও দেখাস।আগে এখান থেকে বেঁচে ফিরে তো দেখা।স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে লাইফের প্রতিটা ক্ষেত্রে তুই ফার্স্ট হয়েছিস আর আমি সেকেন্ড।কিন্তু সময় বদলেছে।ইউ নো হোয়াট? যেমন একটা তলোয়ারের খাঁপে শুধু একটা তলোয়ারই থাকে তেমন এখানে শুধু আমি থাকবো।দেমির আহমেদ।

দেমির আরো কিছু বলার আগেই দেমিরের বুক বরাবর লাথি মেরে দেয় অধির।অাচমকা গতিশীল লাথিতে ছিটকে পিছিয়ে যায় দেমির।পড়তে পড়তেও কোনো রকমে নিজেকে সামলে নেয়।ততোক্ষনে কালো পোশাক পড়া কয়েকজন অধিরের দিকে বন্দুক তাক করে দাড়ায়।দেমির বুকের উপর থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ক্রোধ নিয়ে হাসে।বলে,

-বাপরে..! কথার মাঝেই এ্যাকশন শুরু!!!চাইলে এখুনি তোকে আমি শেষ করে দিতে পারি।কিন্তু তোকে আমি এতো সহজে মারবো না।তুই যন্ত্রনায় ছটফট করবি কিন্তু কিচ্ছু করতে পারবি না।তোর সেই অসহায়ত্বটাই দেখতে চাই আমি।তোকে আজ আমি কুত্তার মত মারবো অথচ তুই কিছুই করতে পারবি না।কারন তোর একটা অাঘাতের কারনে রোশনির জিবন ঝুঁকিতে পড়বে।আমি জানি ওকে বিপদে ফেলার ভুল তুই করবি না।

অধির হাতের মুঠো শক্ত করে হাত উঠাতে গিয়েও উঠালো না।রোশনির খোঁজটা তার জানতে হবে।রোশনির কোনো রকম বিপদ সে হতে দিবে না।অধিরের কঠিন চেহারার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসল দেমির।শিশ বাজিয়ে পেছনের দিকে ইশারা করতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।পেছনে ফিরে তাকাতেই কাচের লম্বা বক্সে রোশনিকে দেখতে পেল অধির।প্রায় সাথে সাথেই ছুটে গেল রোশনির দিকে।রোশনিও যেন এতোক্ষনে প্রান ফিরে পেল।অধির অস্থির হয়ে বক্স এর দরজা খোলার চেষ্টা করল।দরজা লক ।রোশনি ভেতর থেকে কিছু বলছে দূর্বল গলায় কিন্তু কাচ ভেদ করে তা অধিরের কান অবধি পৌছাচ্ছে না।রোশনির কষ্টটা যেন রোশনির থেকেও বেশি অধির অনুভব করছে।অধির কাচের দেওয়ালে হাত দিয়ে বারি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে করতে অস্থির গলায় বলল,

-কিচ্ছু হবে না তোমার সুইটহার্ট।আমি আছি তো।বি স্ট্রং কলিজা।আমি এখুনি তোমাকে বের করছি।

অধির আরো জোরে জোরে বারি দিতে শুরু করলো কাচে।রোশনির দমহীন কষ্ট আর অধিরের শব্দহীন আর্তনাদে পৈশাচিক আনন্দ নিতে লাগল দেমির।সময় বাড়াতেই বক্স এর মধ্যে ভরতে লাগল পানি।অধির যেন আরো ভয় পেয়ে গেল।কাচটা সাধারন কাচ নয়।এতো সহজে এটা ভাঙা সম্ভব নয়।পানি যখন রোশনির কোমর অবধি পৌছালো অধিরের ভয়টাও তরতর করে বাড়ল।আশে পাশে তাকিয়েও তেমন কিছু পাওয়া গেল না বক্সটা ভাঙার মত।পানির পরিমান বাাড়ার সাথে সাথে রোশনির হাত পা অসাঢ় হতে লাগল।দম নেওয়াটাও প্রায় মুশকিল হয়ে দাড়ালো।পানি যখন রোশনির মাথার উপর পর্যন্ত উঠে গেল তখন যেন নিজেকে সব থেকে অসহায় বলে বোধ হল অধিরের।রোশনি পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।অধির বার বার রোশনির নাম নিয়ে কাচের উপর হাত দিয়ে আঘাত করছে।অনেক আগেই হাত দুটো থেতলে গেছে তার।তবুও বিরতি নেই।একের পর এক অাঘাত করে চলেছে কাচের উপর।যদি ভেঙে যায় এই একটা আশায়। অধিরের এমন করুন আর্তনাদে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে দেমির।এই কষ্টটাই তো দেখতে চেয়েছিল সে।সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে আজ অধিরের নিদারুন আর্তনাদে অদ্ভুদ সুখ অনুভব করছে সে।কিছুক্ষন বাদেই দেমিরের ফোনে টেক্সট এলে দেমির কালো পোশাক পড়া লোকদের সবকিছু সামলাতে বলে দ্রুত বেরিয়ে যায়।এদিকে রোশনির শরির আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।রোশনির নড়াচড়া বন্ধ হতেই চিৎকার করে ওঠে অধির।কাচের দেয়ালে ক্রমাগত হাত দিয়ে আঘাত করতে থাকতে।মনে হচ্ছে কেউ টান দিয়ে কলিজাটা বের করে নিচ্ছে বুক থেকে।অধির পুরো উন্মাদের মত আচরন করতে শুরু করে।এরই মধ্যে কয়েক জন গার্ড নিয়ে আগমন হয় শাহিনের।

———-

বসার ঘর মানুষে পরিপূর্ন।সবার মুখেই তৃপ্তির হাসি।দিয়াকে এক হাতে জড়িয়ে সোফায় বসে আছে দেমির।আজ তার খুশির দিন।সে বাবা হবে,,এরথেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে!!।খুশিতে তার হাত পা কাপছে।দেমির দিয়ার কপালে আলতো করে চুমু দিতেই মুচকি হাসল দিয়া।তবে সেই হাসি বেশিক্ষন টিকলো না।তার আগেই কেউ একজন দেমিরের কলার চেপে ধরে দাড় করিয়ে সজোরে মুখ বরাবর ঘুষি মারল।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্বিতীয় বারের মত ঘুষি পড়ল দেমিরের মুখে।সাথে সাথেই ঠোট কেটে গড়িয়ে পড়ল তাজা রক্ত।দিয়া ততোক্ষনে দূর্বল শরিরে উঠে দাড়িয়েছে।বিষ্মিত চোখে চেয়ে থেকে তৃতীয় বারের মত ঘুষি পড়ার আগেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠল দিয়া,

-অধির!!!!ওকে মারছিস কেন? কি হয়েছে?

চলবে…….

(অসুস্থতার জন্য গল্প দিতে পারি নি।তার জন্যে আমি দুঃখিত।আমি চেষ্টা করেছিলাম গল্প লেখার।কিন্তু শব্দগুলো সাজাতে পারি নি।অসুস্থ অবস্থায় আর যাইহোক লেখালেখিটা সম্ভব নয় সেটা আবারো বুঝতে পারলাম।যদিও আমি প্রফেশনাল রাইটার নই তবুও লিখতে গেলে সুস্থ্য মনের সাথে সুস্থ্য পরিবেশ প্রয়োজন।যেটা আপাততো আমার কাছে ছিল না।এখনো অনেকটাই অসুস্থ। অনেক দিন গল্প দিই না নিজেরই খারাপ লাগে বিষয়টা।এলোমেলো হয়েছে পর্বটা। প্লিজ কেউ কিছু মনে করবেন না।ধন্যবাদ… ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here